বিডিটুডেস ডেস্ক: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিক, অভিবক্ত বাংলার ৫ম প্রধানমন্ত্রী। ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’ হিসেবে তিনি ছিলেন সবার শ্রদ্ধার পাত্র। ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতের হোটেল কক্ষে তার হয় রহস্যজনক মৃত্যু। বাবার মৃত্যুর ৫৫ বছর পর ৭ ফেব্রুয়ারি একই কায়দায় লন্ডনে নিজ বাড়িতে ঠিক তেমনি একাকিত্বে মৃত্যু হলো সোহরাওয়ার্দীপুত্র রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর। এই মৃত্যুর তদন্ত করছে ব্রিটিশ পুলিশ। অবশ্য ব্রিটিশ নিয়মানুযায়ী হাসপাতালের বাইরে বা বাড়িতে কারও মৃত্যু হলে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে থাকে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নেন সোহরাওয়ার্দী কন্যা আখতার সোলায়মান। বৈমাত্রীয় বোন আখতার সোলায়মানের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন রাশিয়ান মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া সোহরাওয়ার্দী পুত্র রাশেদ সোহরাওয়ার্দী।
বোনকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এমন সিদ্ধান্ত নিলে বোনের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে তার বিপক্ষে গিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত সংগ্রহে মাটে নামবেন তিনি। ভাইয়ের এমন সতর্কবার্তায়ও সিদ্ধান্ত বদলাননি আখতার সোলায়মান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধেই মাটে নামেন। রাশেদ সোহরাওয়ার্দী ছিন্ন করেন বোনের সাথে সব সম্পর্ক, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে বিশ্ব জনমত সংগ্রহে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন মুক্তিযুদ্ধকালীন পুরো নয় মাস। ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’খ্যাত বাবা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মেয়ে হয়েও পাকিস্তানী সামরিক জান্তার সমর্থক হয়ে একটি জাতির মুক্তি সংগ্রামের বিরোধিতা করায় রাগে দুঃখে বোন আক্তার সোলায়মানের সাথে সেই যে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন, সেই সম্পর্ক আর কখনও পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেননি রাশেদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৮২ সালে আখতার সোলায়মানের মৃত্যু হয়। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সাথে রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর যোগাযোগ ছিলো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন সফরে এলে তার সাথে মাঝে মাঝে দেখা হতো রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তার মৃত্যুতে।
লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন আয়োজিত বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলোর অনুষ্ঠানে প্রায়ই উপস্থিত হতেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নিজের ভূমিকায় খুবই গর্বিত ছিলেন সোহরাওয়ার্দীপুত্র রাশেদ সোহরাওয়ার্দী। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বোন আক্তার সোলায়মানের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের গল্প গর্বভরে বিভিন্ন সময় করতেন তিনি। গত বছর সেভেন্থ মার্চ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসে মূল অনুষ্ঠানের ফাঁকে লন্ডনে বসবাসরত প্রবীণ সাংবাদিক, সত্যবাণীর উপদেষ্ঠা সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসানের সাথেও তার জীবনের এই গর্বিত অধ্যায়ের গল্প করেছেন রাশেদ সোহরাওয়ার্দী। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর শেষকৃত্য বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। লন্ডন বাংলাদেশ হাই কমিশন এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখছে স্থানীয় পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে।সমকাল অবলম্বনে, বিডিটুডেস/আরএ/১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯