বুলবুল আহমেদ সোহেল; নারায়ণগঞ্জঃ
আজ নারায়ণগঞ্জের ভয়াল ১৬ জুন। ২০০১ সালের এই দিনে চাষাঢ়ায় আওয়ামীলীগ অফিসে বর্বরোচিত বোমা হামলায় প্রাণ হারায় ২০জন। ঘটনার দীর্ঘ ২১বছর পেরিয়ে গেলেও গত প্রায় নয় বছর আগে তদন্ত সংস্থা মামলাটির চার্জশিট প্রদান করে। বিচারকার্য্য চলছে ধীর গতিতে। নিহতদের পরিবারের দাবি তারা বেঁচে থাকতে এই ঘটনার কারণ জানাসহ দোষীদের বিচার দেখে যেতে চান।
২০০১,সালের ১৬জুন রাতে পৌনে ৯টায় নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় অবস্থিত আওয়ামীলীগ অফিসে বর্বরোচিত এ বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। সেদিনের নৃশংস বোমা হামলার ঘটনায় নিহত হয়ে ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা সাঈদুল হাসান বাপ্পি ও অজ্ঞাত নারীসহ ২০জন। তৎকালিন সংসদ সদস্যসহ আহত হয় অর্ধশত। অনেকেই চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে এ মামলাটি পূণরুজ্জীবিত করা হয়। দুটি মামলায় ১৪ বছরে ৭বার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন এবং ৮ম বার ১৩ বছর পর ২০১৩ সালের ২ মে মামলার তদন্ত সংস্থা ৬ জনের নাম উল্লেখ করে সিআইডি আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। বর্তমানে আদালতে মামলাটির স্বাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। চার্জশীট ভুক্তদের মধ্যে মুফতি হান্নানকে ২০১৭ সালে অন্য একটি মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়। মামলার অপর ২ আসামী জমজ সহোদর আনিসুল মোরছালিন ও মুহিবুল মোত্তাকিন ভারতের কারাগারে আটক রয়েছে। ওবায়দুল্লাহ রহমান নামে অপর এক আসামী পলাতক রয়েছেন। আরেক আসামী নাসিকের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু জামিনে এবং শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল কারাগারে রয়েছেন।
বোমা হামলায় নিহত নিধুরাম বিশ্বাসের পরিবারের সঙ্গে কথা হলো। তারা জানালো ছেলে মেয়ে সহ ছয় জনের সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জন ক্ষম ব্যাক্তি ছিল নিধিরাম। ঘটনার পর থেকে দিন কাটাচ্ছে অনাহারে-অর্ধাহারে। ঘটনার পর পর প্রধানমন্ত্রী ছেলের চাকরীসহ আর্থীক সহযোগীতা সহ অনেক আশ্বাস দিলও সেটির কোন সুফল পায়নি তারা। তারপরও এত বছরেও বিচারটা পর্যন্ত পেলনা বলে আক্ষেপ করেন তারা।
এ ঘটনার বিচারকার্য নিয়ে হতাশ প্রকাশ করেন এ ঘটনায় দু’পা হারানো রতন কুমার দাশ। আর সময়ক্ষেপন না করে দ্রুত যাতে বিচার কার্য শেষ করা হয়, তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মামলার বাদী অ্যাডভোকেট খোকন সাহা জানান, মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। অন্যান্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ না হওয়ায় নিজেও হতাশা প্রকাশ করেন। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি চান তিনি।
বোমা হামলার ঘটনার দায়ের করা মামলা নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এমামলায় ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। যারা সাক্ষ্য গ্রহণ করেনি তাদের বিরুদ্ধে আদালত সমন ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। সকল সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে জানা রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী মনিরুজ্জামান বুলবুল।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে সকালে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া শহীদ মিনারের পাশে অবস্থিত স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কোরআনখানী ও কাঙ্গালি ভোজের আয়োজন করেছেন বিভিন্ন সংগঠন ও নিহতের স্বজনরা।
ভারত থেকে মোরছালিন ও মুত্তাকিমকে দেশে এনে প্রকৃতভাবে জিঞ্জাসাবাদ করলে এ ঘটনায় কোন বড় শক্তি, বড় দল, বড় নেতানেত্রী জড়িত ছিল তা বেড়িয়ে আসবে---- শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় আওয়ামীলীগ অফিসে শক্তিশালী বোমা হামলায় ঘটনায় আহত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান দৃঢ়তার সাথে দাবী জানিয়ে বলেন, ভারত কারাগারে আটক দুই সহোদর আনিসুল মোরছালিন ও মাহাবুবুল মুত্তাকিমকে দেশে এনে প্রকৃতভাবে জিঞ্জাসাবাদ করা গেলে এ ঘটনা পিছনে কোন কোন বড় শক্তি বা কোন কোন বড় দল কিংবা কোন কোন বড় নেতানেত্রী জড়িত ছিলেন তা বেড়িয়ে আসবে। আর এটা হওয়া উচিত ভবিষ্যতে ঘটনা থামানোর জন্য। তিনি বলেন, বোমা হামলার টার্গেট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রমান হলো একটি পত্রিকায় মোরছালিন ও মুত্তাকিম বলেছিল শামীম ওসমান আমাদের প্রাথমিক ও শেখ হাসিনা স্থায়ী টার্গেট।
আওয়ামীলীগ অফিসে বোমা হামলার দ্রুত বিচারের দাবি করে বুধবার বিকেলে নগরীর চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
২০০১ সালের ১৬ জুন নগরীর চাষাঢ়া শহীদ মিনার সংলগ্ন আওয়ামীলীগ অফিসে শক্তিশালী বোমা হামলায় ৪ নারীসহ ২০ জন প্রাণ হারায়। আহত হয় তৎকালিন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। অনেকেই চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন।