
বিশ্বব্যাপী
সংঘাত, দুর্যোগ আর জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ২০২৪ সালে ৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ
অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যা জার্মানির মোট জনসংখ্যার সমান। যদিও তারা
কেউই সীমান্ত পেরোয়নি, দেশ ছেড়েও যায়নি তবে প্রাণে বাঁচতে নিজের ভিটেমাটি, গ্রাম
বা শহর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
ইন্টারনাল
ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার ও নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের যৌথ প্রতিবেদনে এ
উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয় বছর আগেও বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা
বর্তমানের তুলনায় অর্ধেকের কম ছিল। অর্থাৎ গত ছয় বছরে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত
মানুষের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
বাস্তুচ্যুতদের প্রায় ৯০ শতাংশ বা
৭ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ সংঘাত ও সহিংসতার কারণে ঘরছাড়া হয়েছেন। এই সংখ্যা ২০১৮ সালের
তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলা সুদানের পরিস্থিতি ছিল
সবচেয়ে ভয়াবহ। দেশটিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ১৬ লাখে পৌঁছেছে। আর এই
সময়ে গাজা উপত্যকায় গৃহহীন হয়েছে ২০ লাখ ফিলিস্তিনি।
এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়েছেন ৪
কোটি ৫৮ লাখ। যা এক বছরে দুর্যোগজনিত বাস্তুচ্যুতির নতুন রেকর্ড। এরমধ্যে এক কোটি
মানুষ ভিটেমাটি ছেড়েছে শুধুমাত্র ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে।
২০২৪ সালের দুর্যোগজনিত বাস্তুচ্যুতির ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশই আবহাওয়া
সম্পর্কিত, যার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে এমন দেশের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে,
যেখানে একই সঙ্গে সংঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুতি ঘটছে। আবার
সংঘাতজনিত বাস্তুচ্যুতদের প্রায় চারভাগের তিনভাগ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা
দেশগুলোর নাগরিক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাস্তুচ্যুতির কারণ ও প্রভাব প্রায়শই একে অপরের
সঙ্গে জড়িত। ফলে সংকট আরো জটিল হয়ে ওঠে এবং বাস্তুচ্যুতদের দুর্দশা দীর্ঘস্থায়ী
হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তুচ্যুত এসব মানুষ নিজের দেশ ছাড়েননি। তবু রাষ্ট্রের
সীমার ভেতরেই তারা পরিণত হয়েছেন আশ্রয়হীন, সুবিধাবঞ্চিত ও উপেক্ষিত উদ্বাস্তুতে।