আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাসে আক্রান্তদের ক্লাস্টার শনাক্ত করেছে। আইসিডিডিআর,বি’র বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি প্রচলিত জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য একটি ছোট আকারে স্ক্রিনিং করেছেন। তারা ২০২৩ সালে সংগৃহীত রোগীদের নমুনার মধ্যে পাঁচটি কেস শনাক্ত করেছেন, যা ঢাকায় জিকা সংক্রামিত রোগীদের একটি ক্লাস্টার হিসেবে প্রথমবারের মতো চিহ্নিত করা গেছে। এর মধ্যে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ছিলেন।
সোমবার (৩ মার্চ) আইসিডিডিআরবি তাদের ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
জিকা ভাইরাসকে একটি প্রধান উদীয়মান রোগজীবাণু হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায় প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত হলেও পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এশিয়া ও আফ্রিকায় নীরবে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ২০০৭ সালে ফেডারেটেড স্টেটস অব মাইক্রোনেশিয়ার ইয়াপ দ্বীপে প্রথম বড় জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যায়। ২০১৫ সালে, ব্রাজিলে একটি বড় প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল এবং পরবর্তীকালে দক্ষিণ আমেরিকার বাকি অংশ, ক্যারিবিয়ান এবং অবশেষে বিশ্বের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন এবং ভারতে জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) রেট্রোস্পেকটিভ সার্ভিল্যান্স স্টাডিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একজন জিকা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়। ২০১৪ সালে বিদেশ ভ্রমণের পূর্ব ইতিহাস নেই এমন এক রোগীর কাছ থেকে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে, ব্রাজিলে ২০১৫ সালের প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল।
আইসিডিডিআরবি জানায়, এই গবেষণায় ২০২৩ সালে মহাখালীতে আইসিডিডিআর,বি’র ডায়াগনস্টিক ফ্যাসিলিটিতে আসা রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করেন এবং জ্বর ও জিকা ভাইরাসের অন্য কোনও লক্ষণ নিয়ে ১৫২ জন রোগীর নমুনায় জিকা ভাইরাসের জন্য পিসিআর পরীক্ষা করেন। এর মধ্যে পাঁচটি নমুনায় জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশে রোগের প্রকৃত বোঝা পরিমাপের জন্য দেশব্যাপী আরও বড় পরীক্ষার প্রয়োজন। পাঁচ জন রোগীই একে অপরের থেকে এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে বসবাস করতেন এবং গত দুই বছরে দেশের বাইরেও ভ্রমণ করেনি তারা। সব রোগীকে প্রায় এক মাসের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে তারা একই সংক্রমণের শৃঙ্খলের অংশ ছিল। জিকা ভাইরাসে আক্রান্তদের পাঁচ জনের মধ্যে একজন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন- বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই সহ-সংক্রমণ শনাক্ত হলো বলে জানায় আইসিডিডিআরবি।
আইসিডিডিআর,বি’র জিনোম সেন্টারে গবেষকরা তিন জনের নমুনার পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং করেন। বিশ্বজুড়ে সংগৃহীত অন্যান্য জিকা ভাইরাসের ধরনের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণে তারা দেখেছেন যে বাংলাদেশি ধরনগুলো আফ্রিকান বংশের বিপরীতে জিকা ভাইরাসের এশীয় বংশের অন্তর্গত। ২০১৯ সালে কম্বোডিয়া ও চীনের স্ট্রেইনের সঙ্গে বাংলাদেশের স্ট্রেইনের সবচেয়ে বেশি মিল পাওয়া গেছে। জিকা-আক্রান্ত দেশগুলো থেকে ভ্রমণকারীদের জন্য রুটিন জিকা ভাইরাস, পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে আরও ডায়াগনস্টিক ক্ষমতা এবং পদ্ধতিগত নজরদারি ভবিষ্যতে বড় প্রাদুর্ভাবের চেয়ে এগিয়ে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করে আইসিডিডিআর,বি।