Logo
শিরোনাম

২৮৬ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দিয়েছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভা

প্রকাশিত:সোমবার ২৩ জানুয়ারী 20২৩ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

চাঁদপুর প্রতিনিধি :

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভার আয়োজনে ২০২২ইং সনের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ (এ প্লাস) প্রাপ্ত ২৮৬ জন কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। সোমবার দুপুরে পৌরসভার মাঠে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সাবর্বিক তত্বাবধান করেন পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন। এতে পৌর এলাকার শিক্ষার্থীদেরকে এ সংর্ধনায় ক্রেষ্ট ও  সনদ প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে টেলিকনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মালেক গাজী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মো. বাবর গাজী।

শিক্ষক জাহিদ হাসানের সঞ্চালনে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবু ছাইদ, বলাখাল জেএন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ খোদেজা বেগম, হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন, পৌরসভার শহর সমন্বয় কমিটির সদস্য ডাঃ পেয়ারা বিল্লাল প্রমুখ।

 বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথির পক্ষে কৃতি শিক্ষার্থীদের হাতে সংবর্ধনা ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। 

এসময় পৌর প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম আযহার আলম বেপারীসহ পৌরসভার সকল কাউন্সিলর, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহকারী শিক্ষক, আগত অতিথিবৃন্দ, সাংবাদিক, কৃতি শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ২০১৯ সাল থেকে হাজীগঞ্জ পৌরসভার আয়োজনে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হচ্ছে । 


আরও খবর



তাপপ্রবাহ থাকবে এপ্রিল জুড়ে

প্রকাশিত:শনিবার ০৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

ঢাকাসহ দেশের চারটি বিভাগের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বইছে। তাই এসব এলাকায় তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বা হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এপ্রিল জুড়ে সারাদেশে এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানের আবহাওয়ার এ অবস্থা আরো এক সপ্তাহ বিরাজ করবে।

রবিবার দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হতে পারে। হালকা বৃষ্টিপাত হলেও তাপমাত্রা কমবে না। আর ঈদের সময় তাপমাত্রা থাকবে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ আরো কিছুদিন স্থায়ী হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই এপ্রিলে গড়ে সাধারণত দুই-তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ও একটি-দুটি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। তারা আশঙ্কা করছেন, এ বছরের তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে।


আরও খবর

সাত ধরনের মোটরযানের কর মওকুফ

বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪




গ্যাস সিলিন্ডারে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

প্রকাশিত:শুক্রবার ১২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহারের কারণে প্রতি বছরই অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটছে। ফুটপাত, চায়ের দোকান থেকে শুরু করে যেখানে সেখানে ব্যবহার হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। এতে ঘরে ঘরে মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়েছে। দিন দিন বেড়েই চলেছে অগ্নিকাণ্ড। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পরে বের হচ্ছে নানা কারণ। তাৎক্ষণিক প্রশাসন নরেচরে বসলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার পূর্বের মতো অবস্থা। প্রতি বছর বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটছে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ ও বিদ্যুৎ থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগে থেকে সচেতনতা ও কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে এসব বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।

পরিসংখ্যান বলছে বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বিদ্যুৎ গোলযোগ, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ কিংবা জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণজনিত কারণে। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ঘটেছে ৯ হাজার ৮১৩টি দুর্ঘটনা। এছাড়া গ্যাস সরবরাহ লাইনে আগুন থেকে ঘটেছে ৭৭০টি, স্থির বিদ্যুৎ থেকে ১১টি, গ্যাস ইলেক্ট্রিক ও মাটির চুলা থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে চার হাজার ১৭৫টি। তার আগের বছর ২০২২ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ঘটেছে নয় হাজার ২৭৫টি দুর্ঘটনা। এছাড়াও গ্যাস সরবরাহ লাইনে আগুন থেকে ঘটেছে ৭৯৫টি, স্থির বিদ্যুৎ থেকে ১৯টি, সিলিন্ডার ও বয়লার বিস্ফোরণ থেকে ঘটেছে ৯৪টি অগ্নিকাণ্ড। চুলা থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তিন হাজার ৩৬৮টি। যার অধিকাংশই গ্যাস ও ইলেকট্রিক চুলা থেকে।

সম্প্রতি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে লাগা আগুনে ৪৬ জন নিহতের ঘটনা ঘটে। গেল ২৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এই আগুন লাগে। ভবনটিতে থাকা একটি রেস্টুরেন্টে এলপিজি সিলিন্ডার থেকেই এই আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হয়। আগুন মুহূর্তের মধ্যে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেখানে। তার কয়েক দিন পরেই গত ১৩ মার্চ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী জমি ভাড়া নিয়ে কলোনি তৈরি করে ঘর ভাড়া দিয়েছেন। একটি ঘরের সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে যায়। তিনি পাশের দোকান থেকে একটি সিলিন্ডার কিনে আনেন। সিলিন্ডার লাগানোর সময় চাবি খুলে গিয়ে পাশের চুলা থেকে আগুন ধরে যায়। এ সময় আশপাশের উৎসুক নারী, পুরুষ ও শিশুদের শরীরে আগুন লেগে যায়।

গেল বছরও বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালের ৭ মার্চ বিকেল পৌনে ৫টার দিকে গুলিস্তানে বিআরটিসির বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে সাততলা একটি ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় ২৩ জনের মত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছিলেন দেড় শতাধিক মানুষ। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা গ্যাসের লাইনের কারণে হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি।সিদ্দিকবাজারের ক্যাফে কুইন ভবনের নিচে ছিল গ্যাসের লাইন। সেখানে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন ছিল না। তাই লাইনের লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস জমা হয়। সেই গ্যাস থেকেই শর্টসার্কিট বা দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে হয় বিস্ফোরণের সূত্রপাত।

তারও মাত্র দুই দিন আগে ৫ মার্চ রাজধানীর ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাব এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী চারজনের মৃত্যু হয়। এছাড়াও এ ঘটনায় আহত হন অন্তত ৪০ জন। জমে থাকা গ্যাস থেকেই সায়েন্স ল্যাব এলাকার ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল।

২০২২ সালের ৫ জুন সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।আহত হন অনেক। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কারখানার আশপাশের অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা। বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়ে যায় লোহার পাত। ২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে শিশুসহ ৩৪ মুসল্লির মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ বিভাগ ও জেলা প্রশাসন পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে তিতাস সংযোগ লাইনের লিকেজে মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা এবং হঠাৎ বিদ্যুৎ স্পার্কিংয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটার বিষয়টি সামনে চলে আসে।

এই ধরনের দুর্ঘটনা হরহামেশাই ঘটে চলছে। দুর্ঘটনার পরে বেরিয়ে আসে নানা ধরনের অসঙ্গতির তথ্য। দুর্ঘটনা ঘটার পরে দায় নিতে চায় না কেউ। বিদ্যুৎ গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান, সিলিন্ডার প্রস্তুতকারী, রাজউক, সিটি করপোরেশন, বিস্ফোরক অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরকে ঠেলাঠেলি করে। তবে দায় সাধারণ মানুষেরও কম নয়। এই দুর্ঘটনাগুলোতে যেমন বহু মানুষ হতাহত হচ্ছে তেমনি হচ্ছে আর্থিক ক্ষতিও। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, শুধু ২০২৩ সালেই অগ্নিদুর্ঘটনায় ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ২০২২ সালে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৯ টাকা। এছাড়াও ২০২১ সালে ২১৮ কোটি ৩১ লাখ ৯৭ হাজার ৪০৩ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পান দোকান, মুদি দোকান, ওষুধের দোকানসহ বিভিন্ন অনিরাপদ স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকি না থাকায় লাইসেন্স ছাড়া নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে দেদারছে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। শুধু যেখানে সেখানে বিক্রিই নয়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা ছাড়াই বিভিন্ন ফুটপাত, চায়ের দোকান, রেস্তোরাঁয় এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে দেদারছে।

২০০৯ সালে পাইপলাইনে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো নতুন সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে বেড়েছে এলপি-নির্ভরতা। এলপিজি গ্রাহকের একটি বড় অংশই গ্রামাঞ্চলের। এ মুহূর্তে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩০টি কোম্পানির অন্তত দুই কোটি সিলিন্ডার বাজারে রয়েছে। বিস্ফোরক পরিদফতরের তথ্য বলছে, গত এক বছরে এলপিজি সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ছয় লাখের বেশি। এলপিজি ছাড়া অন্যান্য সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে তিন লাখের বেশি। পাশাপাশি দেশেও সিলিন্ডার নির্মাণের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করেছে দেশে নির্মিত সিলিন্ডার। কিন্তু এসব সিলিন্ডারের মান পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত কোনো পরীক্ষা কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি।

শুধু যত্রতত্র এলপিজির ব্যবহারই নয়, যেখানে সেখানে রয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। তিতাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ছয় লাখ দুই হাজার ৮৮৪টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে রীতিমত ইঁদুর বেড়াল খেলা চলে। কর্তৃপক্ষ একদিকে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, অন্যদিকে দুষ্কৃতিকারীরা সংযোগ দিয়ে দেয়। চুরি করে সংযোগ দেওয়ায় থাকে না কোনো নিয়ম নীতির বালাই। এতে দেখা দেয় দুর্ঘটনা। এছাড়াও সারাদেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগও। বিভিন্ন বস্তি ঘনবসতি এলাকা ও ফুটপাতে যেখানে সেখানে রয়েছে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ৪০ হাজার ৯২টি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ দুর্ঘটনাগুলো মূলত গ্যাস লিকেজ থেকেই ঘটে।সিলিন্ডারের হোসপাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে গ্যাস লিক হয়। সেই লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে বাইরে কোথাও জমতে থাকে। পরে তা সামান্য আগুন, এমনকি স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসতেই জমে থাকা সেই গ্যাস ভয়াবহ বিস্ফোরণ সৃষ্টি করে। সিলিন্ডারের মধ্যে এলপি গ্যাস যে চাপ তৈরি করে, মানসম্পন্ন সিলিন্ডারে তারচেয়ে চারগুণ বেশি চাপ সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে। ফলে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম। নজিরও তেমন নেই। গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়নি। লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়ে আগুন ধরে যায়। এজন্য সিলিন্ডারের সঙ্গে যে রেগুলেটর, হোসপাইপ, চুলাসহ অন্যান্য জিনিস ব্যবহৃত হয়, সেগুলো মানসম্মত হতে হবে।এই অনুষঙ্গগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটছে। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন কঠোরভাবে মানার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বলছে, ২০০৯ সালে দেশে এলপিজির চাহিদা ছিল ৬৫ হাজার টন। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১৪ লাখ টন। ২০০৯ সালে এলপিজি ব্যবহারকারী ছিল দুই লাখ ২৫ হাজার, বর্তমানে তা ৪০ লাখ। এসব এলপিজির ৮৪ শতাংশ রান্নার কাজে, ১২ শতাংশ শিল্পে এবং চার শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে যানবাহনে।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম বলেন, এসব ক্ষেত্রে যেমন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা আছে তেমনি বড় দায়বদ্ধতা হচ্ছে কনজ্যুমারদের। গ্যাস দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যেসব বাসায় গ্যাস ব্যবহার করা হয় সেসব বাসা-বাড়িতে ভেন্টিলেশন থাকতে হবে। যেখানে গ্যাসের চুলা আছে সেখানে ভালো ভ্যান্টিলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। উপরে খোলামেলা থাকতে হবে যেন গ্যাস লিকেজ গলে সেটা বের হয়ে যায়। এসব দেখভাল করার দায়িত্ব তিতাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। একটা দুর্ঘটনা ঘটার পরে অনেক ধরনের কথা হয় কিন্তু আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় দেখা যায়, দোকানপাটে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে যেখানে বৈদ্যুতিক তারের যতটুকু সক্ষমতা তার থেকে বেশি ভোল্টেজ ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বিষয় তো দায় সবারই। যে অবৈধ সংযোগ নিচ্ছে তারও। আবার যারা দিচ্ছে তাদেরও। ভোক্তা পর্যায়ে সবকিছু সঠিকভাবে হচ্ছে কি না সেটা দেখার দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগের। মূল কথা আগে থেকে সবাই সচেতন হলে এসব দুর্ঘটনা এরানো সম্ভব।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, দেশজুড়ে অসংখ্য গ্যাস বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এসব দুর্ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, দেশের গ্যাস সরবরাহ ও সংযোগ কতটা ভঙ্গুর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি।


আরও খবর

সাত ধরনের মোটরযানের কর মওকুফ

বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪




ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ২৫ কি.মি. দীর্ঘ যানজট

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৯ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ঢল নেমেছে মহাসড়কে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

দুপুরের পর গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ায় বিকেলের দিকে শ্রমিকদের স্রোত নামে মহাসড়কে। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের পাশাপাশি সড়কে বাসের সংখ্যাও বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে যানজটও। এতে চরম দুর্ভো‌গে পড়েছেন ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ। গভীর রাতে শুরু হওয়া এ যানজট ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব মহাস‌ড়কের টাঙ্গাইল সদরের আশেকপুর বাইপাস থেকে সেতু টোলপ্লাজা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়কে এ যানজটের সৃ‌ষ্টি হয়েছে। এর আগে ভোরে সেতুর উপর ২২ নম্বর পিলারের কাছে এক‌টি ডাবল ডেকার বাস বিকল হয়ে যাওয়ার পর সে‌টি উদ্ধারে ৫‌ মি‌নিট টোল আদায় বন্ধ ছিল। এতে মহাসড়কে প‌রিবহনের চাপ আরও বেড়ে যায়।

বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সেতুর ওপর বাস বিকল ও সেতুতে টোল আদায় বন্ধ থাকার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। পরে রাত যত গভীর হয়েছে যানজটের আকার তত বেড়েছে। এ ছাড়াও সেতুর ওপর প‌রিবহনের দীর্ঘ সারি তৈ‌রি হয়েছে।

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, মহাসড়কে প‌রিবহনের খুব চাপ রয়েছে। এতে পরিবহনগুলো খুবই ধীরগ‌তিতে চলাচল করছে। এ ছাড়া সেতুর ওপর এক‌টি বাস নষ্ট হওয়ায় ৫‌ মি‌নিট বন্ধ ছিল প‌রিবহন চলাচল। পরিবহনগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার কারণেও অন‌্য প‌রিবহনগুলোতে ধীরগ‌তির সৃ‌ষ্টি হয়েছে।

এদিকে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এক দেড় সপ্তাহ আগে পরিকল্পনা নিয়েছি মহাসড়কের ওপর যত্রতত্র কোনো গাড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলতে পারবে না। এখন তার বাস্তবায়ন করছি। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত আমাদের হাইওয়ে পুলিশ তারা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে। বিভিন্ন জায়গায় অ্যাম্বুলেন্স আছে। সিসিটিভি ও ড্রোনের মাধ্যমে মনিটরিং করতেছি, যেখানেই অসঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আজকে ৬০ শতাংশের বেশি পোশাক কারখানা ছুটি হয়েছে। শ্রমিকদের একটি বড় চাপ আছে, এ কারণেই গাড়ির সংখ্যা বেশি। কোথাও গাড়ি থেমে নেই, চলছে। বিশেষ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ি চলছে, কোথাও থেমে নেই।


আরও খবর

সাত ধরনের মোটরযানের কর মওকুফ

বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪




প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া কমছে ৩ পয়সা

প্রকাশিত:সোমবার ০১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় বাস ভাড়া কমছে প্রতি কিলোমিটারে পয়সা আজ সোমবার রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে বাসভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন

দেশের বাজারে আরেক দফা কমেছে ডিজেল কেরোসিনের দাম। গতকাল রোববার জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এপ্রিল মাসের জন্য জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। আজ থেকে টাকা ২৫ পয়সা কমে প্রতি লিটার ডিজেল কেরোসিন বিক্রি হবে ১০৬ টাকায়

জ্বালানির দামের সঙ্গে পরিবহন ভাড়া কমবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে ছিল যাত্রীরা। তবে এবার কিলোমিটার প্রতি পয়সা কমবে বাস ভাড়া। সোমবার রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ সদর দপ্তরে ব্যাপারে ভাড়া নির্ধারণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাস মালিকরাও ভাড়া কমানোর সুপারিশে একমত পোষণ করে

কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাসে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া টাকা ১৫ পয়সা থেকে কমিয়ে টাকা ১২ পয়সা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীতে টাকা ৪৫ পয়সা থেকে কমিয়ে টাকা ৪২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে

২০২২ সালের আগস্টে ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়লে, দূরপাল্লার ভাড়া বাড়ে কিলোমিটারে ৪০ পয়সা। কয়েক সপ্তাহ পর ডিজেলের দাম টাকা কমে ১০৯ টাকা হলে ভাড়া পয়সা করে কমানোর সিদ্ধান্ত হয়

জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবার অকটেন পেট্রোলের দাম অপরিবর্তিত রেখেছে। প্রতি লিটার বিক্রি হবে যথাক্রমে ১২৬ টাকা ১২২ টাকায়


আরও খবর

সাত ধরনের মোটরযানের কর মওকুফ

বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪




দেশের ৩৮ শতাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে

প্রকাশিত:রবিবার ২৪ মার্চ 20২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

রোকসানা মনোয়ার :  অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ৩৮ শতাংশ ভবন। এর মধ্যে আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাছাড়া দেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ শহর ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৫৪ শতাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে ।

সম্প্রতি প্রকাশিত ফায়ার সার্ভিসের একটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর সারা দেশে ভবনগুলোর অগ্নিনিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয় পরিদর্শন করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

এদিকে চট্টগ্রামের বিএম ডিপো কিংবা বনানীর এফআর টাওয়ার, পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা ও নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এখনও সবার মনে দাগ কাটে। এসব ঘটনায় হতাহতের পরিবারগুলো এখনও লাল আগুনের নীল কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছে। প্রায় প্রতিবছরই ঢাকাসহ সারা দেশে এমন অগ্নিকাণ্ডে হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরও কার্যকর উদ্যোগ নেন না সংশ্লিষ্টরা। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও টনক নড়ে না তাদের। বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কেউ মাথাও ঘামান না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিবেদনটি তৈরি করতে ৫ হাজার ৮৬৯টি ভবন পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস। এতে ২ হাজার ২২৩টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। এর মধ্যে অতিঝুঁকিপূর্ণ ৬৭১টি এবং ১ হাজার ৬০৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। একই সঙ্গে অগ্নিনিরাপত্তায় ৩ হাজার ৯৬টি ভবনে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া গেছে।

সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ৫৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম ময়মনসিংহে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। চট্টগ্রামে অগ্নিঝুঁকি রয়েছে ৫৪ দশমিক ২৯ শতাংশ ভবনে। এ ছাড়া বরিশালে ২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, খুলনায় ৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, রংপুরে ২৪ শতাংশ, সিলেটে ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকায় সরকারি-বেসরকারি ১ হাজার ১৬২টি ভবন পরিদর্শন করে ৬৩৫টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ফায়ার সার্ভিস। যার মধ্যে ১৩৬টি ভবন অতিঝুঁকিপূর্ণ এবং ৪৯৯টি ঝুঁকিপূর্ণ। আর ৫২৭টি ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা সন্তোষজনক।

চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১ হাজার ৬৭৬টি ভবন পরিদর্শন করে ৯১০টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ফায়ার সার্ভিস। এ এলাকায় অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ৪৬৩টি ভবন অতিঝুঁকিপূর্ণ এবং ৪৪৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন করা ভবনগুলোর তথ্যানুযায়ী, বরিশালে ৬৯২টি ভবন পরিদর্শন করে ২০৫টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। খুলনায় ৪১০টি ভবন পরিদর্শন করে ১৭০টি, রাজশাহীতে ৯৩৫টি ভবন পরিদর্শন করে ১৪০টি, রংপুরে ৫১২টি ভবন পরিদর্শন করে ১২৩টি, সিলেটে ১৭২টি ভবন পরিদর্শন করে ৩৪টি এবং ময়মনসিংহে ৩০৬টি ভবন পরিদর্শন করে ৬টি ভবন অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিদর্শনের সময় ভবনের মাটির নিচের জলাধারের ধারণক্ষমতা, অবস্থানকারীর সংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, ধোঁয়া ও তাপ শনাক্তকরণ যন্ত্রের উপস্থিতি, মেঝের আয়তন, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, লিফট ইত্যাদি খতিয়ে দেখে ভবনগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ও ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এর আগে ঢাকায় বড় কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ২০১৭ সালে ভবনগুলোর ওপর বিশেষ জরিপ চালায় ফায়ার সার্ভিস। হাসপাতাল, মার্কেট, আবাসিক হোটেল ও উঁচু ভবনগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায় ঢাকার অধিকাংশ ভবনই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। ওই রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার ৯৬ শতাংশ বিপণিবিতান, ৯৮ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৯৮ শতাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিক অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে।

ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করা হলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কর্তৃপক্ষ কেউই আমলে নেয় না। ফায়ার সার্ভিসের কাছে আইনি ক্ষমতা না থাকায় কোনো ধরনের ব্যবস্থাও নিতে পারে না তারা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপরেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে মালিকদের চিঠি দেই। আমাদের কাজ সমস্যা চিহ্নিত করা, মানুষকে সচেতন করা।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বল প্রয়োগ করা আমাদের কাজ নয়। যারা মানছে না আমরা তাদেরও চিহ্নিত করি। আইন প্রয়োগ করার জন্য অন্য সংস্থা রয়েছে।

জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘অগ্নিনিরাপত্তার সঙ্গে অনেকগুলো সংস্থা জড়িত। এসব সেবা-সংস্থার মধ্যে আন্তঃযোগাযোগের ঘাটতি আছে। যথাযথ সমন্বয় ও আইনের প্রয়োগ না থাকায় অনেকেই অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে উদাসীন। তবে মানুষের জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের কঠোর হতে হবে।

তিনি বলেন, ‘সংস্থাগুলোর মধ্যেও অনেক সময় ভীতি কাজ করে। কেননা বহুতল ভবনগুলোর মালিক সবাই প্রভাবশালী। কখন কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে কী হয়ে যায়, তাদের ভেতর এমন এক ধরনের চাপ কাজ করে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, ‘সরকারি ভবনের চেয়ে ব্যাক্তিমালিকানাধীন ভবনে অগ্নি ঝুঁকি বেশি। সরকারি ভবনগুলোতে অনেকাংশেই অগ্নিনির্বাপক ব্যাবস্থা থাকে। তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভবন মালিকদের নিজ থেকে উদ্যোগী হতে হবে। তারা নিজেরা ভবনের অগ্নিনির্বাপক ব্যাবস্থা নিশ্চিত না করলে ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের সংস্থাগুলোকে জননিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে কঠোর হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসেরর অবশ্যই করণীয় আছে। ভবন নির্মাণের আগে তারা সার্টিফিকেট দেয়। অগ্নিনির্বাপক ব্যাবস্থা যথাযথভাবে অনুসরণ করা না হলে ভবনের অনুমোদন হওয়ার কথা না। যারা ফায়ার সেফটি ছাড়া ভবন নির্মাণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

অন্যদিকে গত বছরের ৪ জুন চট্টগ্রামের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হন ৫১ জন। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন মারা যান। একই বছর ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লেগে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ৭০ জন আহত হন। ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন মানুষ প্রাণ হারান।

ফায়ার সার্ভিসের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২২ সালে সারা দেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৪০৭ জন। নিহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন ১৩ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৯ টাকা। আর উদ্ধার করা মালামালের আনুমানিক মূল্য ১ হাজার ৮০৮ কোটি ৩২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬০ টাকা। এ ছাড়া ৯ হাজার ৫১৭টি অগ্নিকাণ্ডের অপারেশনে যাওয়ার আগে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

এসব অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে পুরুষ ৭২ জন ও নারী ১৩ জন। অগ্নিনির্বাপণে গিয়ে দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিহত হয়েছেন ১৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৪০৭ জন।

প্রতিবেদন আরও বলা হয়, নদীপথসহ পুকুর ও ডোবায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সাহায্যের জন্য ফায়ার সার্ভিসে কল আসে ১ হাজার ৫৫৬টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৩৮ জন। আহত হয়েছেন ১৪৪ জন। যাদের সবাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া ৫১৪টি দুর্ঘটনার কবল থেকে ৫৩০টি পশুপাখি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ১১ হাজার ৯১১টি অন্যান্য দুর্ঘটনায় আহত হন ১৩ হাজার ১৬৮ জন। আর নিহত ২ হাজার ৫২২ জন। এসব দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ১০ জন কর্মীও আহত হয়েছেন।

সারা দেশে সবচেয়ে বেশি ৩৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে। এ ছাড়া বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে ১৬ দশমিক ০৮ শতাংশ, চুলা থেকে ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং ১৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ অজ্ঞাত কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ।


আরও খবর

সাত ধরনের মোটরযানের কর মওকুফ

বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪