
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ঃ
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকে মিলেছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪ শত ১৫ টাকা। এছাড়া মিলেছে বৈদেশিক মুদ্রা পাউন্ড, রিয়াল, দিনার, রিঙ্গিত ও দিনারসহ বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার। ৩ মাস ২০ দিন পর আটটি দান সিন্দুক খোলা হয়। শনিবার সকালে দান সিন্দুকগুলো খুলে গণনা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা এ তথ্য জানান। এর আগে এ বছরের ১২ মার্চ সর্বশেষ দান সিন্দুক খোলার পর ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল বলে তিনি জানান।
সকাল ৮টার দিকে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আটটি দান সিন্দুক খোলা হয়। এরপর টাকাগুলো ১৬ টি বড় বস্তায় ভরা হয়। এরপর চলে সারাদিনব্যাপী গণনার কাজ। বিপুল পরিমাণের এ টাকা গণনায় ১৩২ জন মসজিদের এতিমখানার ছাত্র, ৮০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ৩৪ জন মসজিদ-মাদ্রাসার কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ মোট ২৩৬ জন অংশ নেন।
সিন্দুক খোলা ও টাকা গণনার কাজে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট. উবায়দুর রহমান ও মাহবুব হাসান, পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা, রূপালী ব্যাংকের এজিএম মো. রফিকুল ইসলাম দিনব্যাপী তত্ত¡াবধান করেন। বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম মসজিদ পরিদর্শন করেন। এসময় জেলা প্রশাসক জানান, দেড় বছর ধরে পাগলা মসজিদের টাকা জমা রাখা হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে মসজিদের পরিধি বৃদ্ধিসহ আর্ন্তজাতিক মানের ইসলামী কমপ্লেক্স করা হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, পাগলা মসজিদের বিপুল পরিমাণের টাকা পাগলা মসজিদ এবং এই মসজিদ কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও গোরস্থানের ব্যায় নির্বাহ করাসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানায় সহায়তার পাশাপাশি গরিব ছাত্র ও দুঃস্থদের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক কাজেও টাকা প্রদান করা হয়ে আসছে।
এ মসজিদে মানত করলে মানুষের মনোবাসনা পূর্ণ হয় বলে জনশ্রæতি রয়েছে। তাই সকল ধর্মের মানুষ সেখানে দান করে থাকেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় অবস্থিত পাগলা মসজিদাট প্রায় চার একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজ বিশিষ্ট তিনতলা বিশাল পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জে অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা। প্রায় পাঁচশত বছর পূর্বে বাংলার বারো ভুঁইয়া অন্যতম ঈশা খাঁর আমলে দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা নামক একজন ব্যক্তি নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে ওই স্থানটিতে মসজিদটি নির্মিত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারেই মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায়।