বিশ্বজুড়ে গড়ে প্রতি ৪ জনের মধ্যে একজনের জীবদ্দশায়
স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার(ডব্লিউএইচও) মতে এটি বিশ্বজুড়ে
মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। সেই সঙ্গে শারীরিক অক্ষমতার তৃতীয় প্রধান কারণ।
খবর হিন্দুস্থান টাইমসের।
খবরে বলা হয়, মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে বা কমে
গেলে স্ট্রোক হয়। এটি মস্তিষ্কের টিস্যুকে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি এবং অক্সিজেন
গ্রহণে বাধা দেয়। এর ফলে কোষের মৃত্যু হয়। তাই যখন কারও স্ট্রোক হয় তখন দ্রুত
চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। প্রথম কয়েক মিনিটই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ইন্ডিয়ান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর ১.৭ কোটি ব্যক্তি
স্ট্রোকের শিকার হন। এর মধ্যে প্রায় ৬০ লাখের বেশি প্রাণহানি হয়। ৫০ লক্ষ স্ট্রোক
আক্রান্ত স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে যান।’ অতিরিক্ত ওজন, শারীরিক
নিষ্ক্রিয়তা, অতিরিক্ত মদ্যপান, যথেচ্ছ
ওষুধের ব্যবহার, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ,
উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ঘুমের মাঝে শ্বাসকষ্ট ও কার্ডিওভাসকুলার রোগসহ বেশ কিছু কারণ একজন
ব্যক্তির স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। হার্ট ফেলিয়র এবং স্ট্রোকের
পারিবারিক ইতিহাস থাকলেও প্রয়োজন বাড়তি সাবধানতা। বয়স, জাতি,
লিঙ্গ এবং হরমোনের মতো অন্যান্য কারণেও মাঝে মাঝে স্ট্রোক কারণ হয়।
আমাদের জীবনযাত্রা এবং দৈনন্দিন অভ্যাসই আমাদের স্ট্রোকের
ঝুঁকিকে প্রভাবিত করতে পারে। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস
করতে পারে। অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসে ঝুঁকি বাড়ে। যারা বেশি লবণযুক্ত খাবার বা
স্যাচুরেটেড ফ্যাট,
ট্রান্স ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেন, তাদের স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
অনেক প্যাকেটজাত খাবার বেশি নুন এবং নাইট্রেটের মাধ্যমে
সংরক্ষণ করা হয়। এগুলি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। উচ্চ লবণযুক্ত খাদ্যাভ্যাস
রক্তচাপ বাড়ায়। অন্যদিকে কম লবণযুক্ত খাবার খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমে
যায় বলে জানান ডা. প্রবীণ গুপ্ত।
নিষ্ক্রিয় জীবনযাত্রা:
অলস বা যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, তাদের
স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই বসে থাকার জীবনযাত্রা এবং স্থূলতা হলো স্ট্রোকের
ঝুঁকির প্রধান কারণ। কারণ এতে মেদ, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
প্রকৃতপক্ষে এগুলিই স্ট্রোকের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম
আপনার স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে। সপ্তাহে অন্তত মোট ১৫০ মিনিট হাঁটার
মতো সাধারণ ব্যায়ামই স্ট্রোকের ঝুঁকি যথেষ্ট পরিমাণে কমাতে পারে বলে জানিয়েছেন
ডা. প্রবীণ গুপ্ত।
মদ পান:
স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে চাইলে মদ্যপান ছেড়ে দিন। অত্যধিক অ্যালকোহল
রক্তচাপের মাত্রা বাড়াতে পারে। ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে। এটি
ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও বৃদ্ধি করে। এটি রক্তে থাকা একধরনের স্নেহ পদার্থ।
ট্রাইগ্লিসারাইড ধমনিতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন
ধমনির প্রাচীরকে দুর্বল করে দেয়। ফলে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়
এমনটাই জানালেন ডা. গুপ্ত।
ধূমপান এবং তামাক:
ধূমপান এবং তামাক স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। ধূমপান হার্ট এবং
রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে। এর থেকে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। সিগারেটের নিকোটিন
রক্তচাপ বাড়ায়। অন্যদিকে সিগারেটের ধোঁয়া থেকে কার্বন মনোক্সাইড আপনার রক্তের
অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আবার, আপনি ধূমপান না
করলেও অন্য লোকের ধোঁয়ায় শ্বাস নেয়ার ফলেও (প্যাসিভ স্মোকিং) আপনার স্ট্রোক
হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। সিডিসির নির্দেশিকা (রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ
কেন্দ্র) অনুসারে ধূমপান বন্ধ করার ৫ বছরের মধ্যে আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকি স্বাভাবিক
জনসংখ্যার কাছাকাছি নেমে আসতে পারে।
অনিদ্রা বা ঘুমের অভাব:
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব স্ট্রোকের একটি প্রধান কারণ। ঘুমের অভাবে
ক্যাটেকোলামাইনের মতো হরমোনের বৃদ্ধি ঘটে। এটি রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করা বাড়ায়।
এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ভেসেল ওয়াল ইনজুরি ঘটাতে পারে।