সরবরাহে ঘাটতি দেখিয়ে চিনির দাম
প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এবার সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই চিনির দাম বাড়িয়েছেন
ব্যবসায়ীরা। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৮ টাকায়। যা সরকার
নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৩ টাকা বেশি। কিন্তু বাজারে কোনো তদারকি নেই। ফলে বেশি দামেই
চিনি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। তবে নতুন করে চিনির দাম আর বাড়বে না বলে মনে করছেন
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
রংপুরে রিটার্নিং
অফিসারের কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
চিনির দাম প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যেটা বাড়ছে আপনারা সবাই জানেন ডলারের
ভ্যারিয়েশনে দাম বাড়ে-কমে। যেহেতু আমদানি করে আনতে হয়, ডলারের দামটা যদি একটু কমে
আসে, তাহলে কমানো যায়। আবার ডলারের দাম যদি বেড়ে যায় তাহলে ইন্টারন্যাশনাল ভ্যালু
সেটেল করতে গেলে দামটা বাড়ে। এই মুহূর্তে আমার ডলারটা একটা লেভেলে আছে, হয়তো আর
বাড়বে না কিন্তু আমাদের তো চিনি হয় না—সবটাই আমদানি করতে হয়। ভারত থেকেও
আনতে পারি না, দূর থেকে আনতে হয়। যার জন্য চিনির ওপর একটু প্রভাব পড়েছে কিন্তু আমি
মনে করি না যে, আর বাড়বে।
পবিত্র রমজান উপলক্ষে
কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এজন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা
নিয়েছি। টিসিবির মাধ্যমে চিনি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ বুকিং দেওয়া হয়েছে। আরো
বুকিং চলছে।
আমদানিকারকরা নতুন করে
এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারছেন না, এ ব্যাপারে টিপু মুনশি বলেন, 'যারা বড় আমদানিকারক,
খাদ্যপণ্যের ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জানা গেছে, গত ৬ নভেম্বর চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন ব্যবসায়ীরা, তাতে সাড়া
দেয়নি সরকার। তারপরও বেশি দামে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি করছে কোম্পানিগুলো।
রাজধানীতে প্রতি কেজি
প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৮ টাকায়। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দাম ১৩৫ টাকা। খোলা
চিনি ১৩০ টাকা ঠিক করে দিলেও বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে।
রাজধানীর সবুজবাগ
এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন বলেন, ‘বাজারে এসে দেখি চিনি দাম বাড়তি। পাকেটে
প্রতি কেজি ১৪৮ টাকা দরে কিনলাম।
ডলারের উচ্চমূল্যকে
অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই লোকসান এড়াতে নিজেরাই দাম ঠিক করেছে।
ইগলু সুগার প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ডলারের
দাম বেশি। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করলে আমাদের লোকসান হয়।
চিনির বাজারের কারসাজি
থামাতে বাজারে তদারকি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে ক্যাব। ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজির
হোসেন বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যাতে কারসাজি করে দাম না বাড়াতে পারে সে ব্যাপারে
নিয়মিত বাজার তদারকি দরকার।
এর আগে, জুলাই মাসেও
চিনির দাম নিয়ে কারসাজি হয়েছিল। ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে বেরিয়ে আসে, যে কয়েকটি
কোম্পানি চিনি আমদানি করে তারাই দাম কমায়-বাড়ায়। দেশে প্রতি বছর চিনি আমদানি হয় ২০
থেকে ২২ লাখ টন। অন্যদিকে, স্থানীয় উৎপাদন ৩০ হাজার টনের মতো, যা মোট চাহিদার ১
শতাংশের কিছুটা বেশি। ফলে চিনির বাজার প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। আবার চিনি
আমদানি করে অল্প কয়েকটি কোম্পানি। স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা দিতে অবশ্য চিনি
আমদানিতে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ রয়েছে।