
মইনুল ইসলাম মিতুল :সরকারের নির্বাহী আদেশে বাড়ল খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম। একই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে পাইকারি বিদ্যুতেরও দাম। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি। গত ১২ জানুয়ারিতে সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের যে দাম বাড়ানো হয়েছিল, সেই জারিকৃত প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন দাম কার্যকর হবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে।
এর আগে ১২ জানুয়ারি গড়ে ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয় বিদ্যুতের। ওই দাম জানুয়ারি মাসেই কার্যকর করা হয়। জানুয়ারি মাসের বিল গ্রাহককে ফেব্রুয়ারি মাসে দিতে হবে। এবার ফেব্রুয়ারি মাসের বাড়তি দামের বিদ্যুতের বিল গ্রাহককে দিতে হবে মার্চ মাসে।
বিদ্যুতের ব্যবহার ভেদে ছয় ধরনের গ্রাহক রয়েছে, যে গ্রাহক যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, তাকে বিদ্যুতের দাম তত বেশি দিতে হবে। এর মধ্যে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ যারা ব্যবহার করে, তাদের অতি দরিদ্র মনে করা হয়; তাদের বিদ্যুতের ধাপকে লাইফলাইন বলা হয়। এ বাদেই ছয়টি ধাপ রয়েছে। সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফলাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ১৪ পয়সা, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬২ পয়সা এবং ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে সঙ্গে ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬২ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৯৯ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বেড়ে ১০ টাকা ৯৬ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২ টাকা ৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ৬৩ পয়সা করা হয়েছে।
দেশের পাইকারি বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ৪০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হবে। এর মধ্যে সরকার দেবে ১৭ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২৩ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
এর আগে চলতি মাসেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার দেওয়া মূল্যবৃদ্ধি প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করে। বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি প্রায় ২০ শতাংশ খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে। এর মধ্যেই ১২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগ ৫ শতাংশ খুচরা পর্য়ায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে বিইআরসির আদেশকে পাশ কাটিয়ে। মঙ্গলবার ফের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করল বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার একবারে ২০ শতাংশ দাম বাড়াতে চায়নি। সে কারণে মাসে মাসে সমন্বয়ের নামে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। কম কম করে দাম বাড়ালে গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া কম হবে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বিদ্যুতের দাম একবারে ১৫ থেকে ২০ ভাগ বাড়লে বাজারে পণ্যের দাম অনেকটা বেড়ে যায়। এজন্য সরকারের যদি কিছুটা লোকসানও হয় তাহলেও ধাপে ধাপে দাম বাড়ালে মানুষের ওপর পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব খুব একটা পড়ে না।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সরকার সম্প্রতি বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এর ফলে গ্যাস বিক্রি থেকে অতিরিক্ত যে অর্থ পাওয়া যাবে তা দিয়ে বিশ্ববাজার থেকে এলএনজি কেনা হবে। এই এলএনজি দিয়ে যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তাহলে গড়ে এলএনজি চালিত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়বে সাড়ে আট টাকা। কিন্তু দেশের তেলচালিত (ফার্নেস) অয়েলে উৎপাদন খরচ ২৯ টাকার কাছাকাছি। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২০ টাকার মতো কম প্রয়োজন হবে। যাতে সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভর্তুকি কম প্রয়োজন হবে। যাতে বিদ্যুৎ জ্বালানিতে সামগ্রিক ভর্তুকির হার কমবে।