Logo
শিরোনাম

আহা মানুষ কত অসহায় !!

প্রকাশিত:বুধবার ২০ জুলাই ২০22 | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

মাজহারুল ইসলাম মাসুম সিনিয়র সাংবাদিক,লেখক ও গবেষক ঃ

কে নায়ক, কে ভিলেন। এটাকে একটা সহজ প্রশ্ন মনে হতে পারে। তবে উত্তরটা খুব কঠিন, দুর্বোধ্য ও জটিল। বেশিরভাগ মানুষ এ প্রসঙ্গে সিনেমা, গল্প, নাটকের বিষয়টি টেনে আনতে পারেন। কারণ এ দুটো চরিত্র নাটক, গল্প ও সিনেমার ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। তবে ইতিহাসের বিশ্লেষণেও অনেক নায়ক ও ভিলেনের কথা উঠে এসেছে। আমাদের চারপাশে তাকালে মানুষ আর মানুষ। সব মানুষ কি মানুষ। সব মানুষ কি নায়ক। সব মানুষ কি ভিলেন। আবার যাকে আমরা নায়ক ভাবছি সে কি আসলে নায়ক। নাকি যাকে আমরা ভিলেন ভাবছি সে প্রকৃত নায়ক। এমনটা কি হতে পারে নায়ক ছিলেন ভিলেন, ভিলেন ছিলেন নায়ক, যা আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। যখন বুঝেছি তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। সময়ের স্রোতে তা হারিয়ে গেছে। যাক এর মধ্যে মন্দের ভালো, ভালোর মন্দ একটা পরিবর্তন ঘটেছে। ভিলেন শব্দটার একটা প্রতিশব্দ আবিষ্কৃত হয়েছে। খল নায়ক, নায়ক শব্দটা তো আছে।

মানুষের মধ্যে আরেক মানুষ এটাকে কি আয়নাবাজি বলে। যদি উত্তরটা হ্যাঁ হয়, তবে আয়নাবাজি সিনেমার কথাটা আনতে না চাইলেও প্রাসঙ্গিকভাবেই চলে আসে। যেখানে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পরিবর্তে ভাড়ায় দিনের পর দিন জেল খাটে সিনেমার নায়ক আয়না। অপরাধী না হয়েও সে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য অপরাধীর রূপ ধরে অপরাধী সাজে আর অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। আয়নাকে কি নায়ক বলা যায়। নাকি খল নায়ক। কারণ নিজেকে বাঁচাতে সে অপরাধীদের আড়াল করেছে। একটা অপরাধী যে একটা জনপদকে, একটা দেশ, একটা পৃথিবীকে খেয়ে ফেলতে পারে আয়নার নিজের খালি পেটের হাহাকার স্বার্থ তার চাইতে কি বড় হতে পারে। কে জানে এর উত্তরটা কি। যেমন ফ্রান্সের বিখ্যাত সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক ভিক্টর হুগো তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘লা মিজারেবল’ প্রসঙ্গে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট চিঠিটি বইটির প্রকাশককে উদ্দেশ করে লিখেছিলেন।

কোনো শব্দ, বাক্য ও ভাষার ব্যবহার না করে মাত্র একটা যতি চিহ্ন দিয়ে লিখলেন ‘?’। কেউ কেউ ভাবলেন এটি মনে হয় বইটির বিক্রি কেমন তা তিনি বুঝতে চেয়েছেন। তবে আসল এই চিঠির অর্থটা কি ছিল তা আজ পর্যন্ত কেউ বের করতে পেরেছে কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ থাকতে পারে। আবার নাও পারে। তবে প্রকাশকও কম যাননি তিনিও চিঠির উত্তরটা দিয়েছেন আরেকটা যতিচিহ্ন দিয়ে। তিনি তার চিঠিতে লিখলেন ‘!’। বিস্ময়বোধক চিহ্ন। কেউ কেউ ভাবলেন চিঠির উত্তরে তিনি বুঝিয়েছেন বিস্ময়কর। তবে আসলে তিনি কি বুঝিয়েছেন তার অমীমাংসিত একটা তর্ক বিতর্ক বোধ হয় এখনও রয়েছে। হয়তো এই দুটো শব্দের অর্থ উদ্ধার করতে গিয়ে গবেষকের পর গবেষক, ইতিহাসবিদের পর ইতিহাসবিদ শরীরের ঘাম ঝরিয়েছেন। প্রশ্ন আর বিস্ময় আমাদেরও আছে।

হয়তো আমরা জানি কে ভিলেন, কে নায়ক। মুখ ফুটে বলতে চাই না। কেননা মানুষ নিজেই তো নিজেকে বিচার করার মতো জায়গায় রাখতে পারেনি। মুখের আড়ালে মুখোশ, মুখোশের আড়ালে মুখ। অনেকটা এ রকম হয়তো বা। একটা উদাহরণ এখানে আনা যেতে পারে। একটা মানুষ, তার সামনে আয়না। কিন্তু তার আশপাশের লোকজন বলছে আয়নার ভিতরের মানুষটা সে নয়। মানুষটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতেও পারছে না যে আয়নার ভিতরের লোকটা সে নিজে, অন্য কেউ নয়। কারণ পৃথিবীর যত প্রতাবশালী, ক্ষমতাবান মানুষ হোক না কেন, অনেক কিছু তারা হয়তো দেখতে পায় কিন্তু নিজের মুখটা নিজে দেখতে পায় না। আয়নার মুখটাকে নিজের মুখ বলে বিশ্বাস করে নেয়। আহা মানুষ কত অসহায়। দিনকে রাত, রাতকে দিন বানাতে পারে কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় মানুষ খুব অসহায়। মানুষ যে মুখটা দেখতে পায় না সেটা কি নায়কের মুখ। নাকি ভিলেনের। আয়নার মুখটা কার। ভিলেনের না নায়কের।

সব কিছু কেমন যেন গোলমেলে। একটু আধটু রহস্যময়। একটু চোখ বন্ধ করে নিজেকে নিয়ে ভাবুনতো। চারপাশটা যেন অন্ধকার থাকে, পিন পতন নিস্তব্ধতা থাকে। আপনার আমার ছেলে-মেয়েগুলোর মায়াবী মুখগুলো যেন অন্ধকার চোখে আলো হয়ে ভাসতে থাকে। জীবনকে পিছন থেকে টেনে নিয়ে একটু ভাবুনতো আপনি নায়ক নাকি ভিলেন। মিথ্যে বলবেন না, নিষ্পাপ সন্তানের প্রিয় মুখগুলো আপনাকে সত্য বলতে বলছে। মনে পড়ছে আপনার হাতটা কিভাবে অবৈধ হয়ে মানুষকে শোষণ করেছে। কিভাবে আপনার লোভী মন দেশের স্বার্থকে বিক্রি করে বিদেশে টাকা পাচার করতে আপনাকে প্রভাবান্বিত করেছে। কিভাবে আপনার হাতে পুড়েছে মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা। যে বাবা তার মেয়ের বিয়ে দেবে বলে ভিটে মাটি বিক্রি করে টাকা জোগাড় করেছিল কিভাবে আপনি তা হাতিয়ে নিয়েছেন। মনে পড়ছে কিভাবে ক্রমাগত সততা হারিয়ে আপনি টাকার ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছেন। মদের নেশায় বুদ্ হয়েছেন।

কিভাবে মাদক আর নেশা ছড়িয়ে দিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের হাতে। মনে রেখেছেন তো আপনার সন্তানও এখন মাদকের দাসে পরিণত হয়েছে। এটা কি নিজ হাতে নিজের সন্তানকে হত্যা করা নয়। এটা কি আপনার রক্তাক্ত হাতে তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করা নয়। দেশ ধ্বংস আর বিক্রি করা নয়। মনে পড়ছে জলসা ঘরের রঙের কথা। মানুষকে ঠকানোর কথা। মনে পড়ছে নিজেকে আড়ালে রেখে চাঁদাবাজির কথা। মনে পড়ছে লুটপাট, টেন্ডার, দখল, আধিপত্য, ক্ষমতা প্রয়োগের কথা। মনে করতে চাইছে না ভিলেন মন। কিন্তু সন্তানদের মুখ মনে করতে বাধ্য করছে। কিভাবে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়েছেন। মনে করুন তো। কিভাবে ভালোকে মন্দ আর মন্দকে ভালো বানিয়েছেন।

একবার হলেও চিন্তা করুন তো। হয়তো অনুতাপ হচ্ছে। অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছে জীবন। একজন নায়ক আপনার মধ্যে একদিন ছিল। সরল শান্ত প্রকৃতির। আজ কেন হারিয়ে গেল। একবার ভাবুন তো। আপনার সন্তানরাও জানে আপনি ভিলেন। আপনার আশপাশের সবাই জানে আপনি ভিলেন। কেউ মুখ খুলতে চায় না। ভয় পায় আপনাকে। সামনে লোকদেখানো প্রশংসা হয়তো করে তা মন থেকে নয়। আপনি কি আবার নায়ক হতে পারেন না। ভেবে দেখবেন। কারণ জীবন বদলানোর আত্মশক্তিটা আপনার হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। মরে যায়নি হয়তোবা। এতো এতো টাকার কি প্রয়োজন আছে জীবনে। যে টাকা একটা মানুষকে অন্ধ করে দেয় তার কি কোনো মূল্য আছে। হয়তো টাকাই মানুষকে কখনো নায়ক, কখনো ভিলেন বানায়। মরে গেলে সব টাকা আঁস্তাকুড়ে পড়ে থাকে। কুকুর বিড়ালও তার ধারে-কাছে যায় না। কিন্তু একটা পচনশীল সমাজ রেখে যায়। ঘুনেধরা মনুষ্যত্ব তৈরি করে যায়।

অন্ধ চোখ হয়তো সব আলো দেখে কিন্তু খোলা চোখ সব আলো দেখতে পায় না। কোথায় যেন জীবনবোধের সঙ্গে মূল্যবোধের লড়াই হয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি কবিতার একটা ছত্র মনে পড়ে গেলো, আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। কবি একজন মানুষের কথা বলেছেন, যিনি নিজেকে কুকুর ভাবছেন। কারণ মানুষ ভিলেন হলেও কুকুর অনেক সময় নায়ক হয়। একটা কুকুর বিশ্বাসী হয়, প্রভুভক্ত হয়। আর মানুষ বিশ্বাসঘাতক হয়, খুনি হয়, নির্মম হয়। সুযোগ বুঝে ছোবল মারে আর নায়ক থেকে মহানায়ক হবার অভিনয় করে। 

অদৃশ্য সুতোয় হাত নাচিয়ে রঙ্গমঞ্চ সাজায়, পর্দার আড়ালে কলকাঠি নাড়ায়। সারাজীবন সে ষড়যন্ত্রের খলনায়কের অদেখায়ই থেকে যায়। সেই খলনায়কদের পায়ের নিচে মানুষ নামের কিছু মানুষ বসে থাকে। খলনায়কদের ভিতরের হিংস্র কুকুরটাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালায়। প্রকৃত নায়কেরা বীরের মতো সত্যকে বের করে আনতে একবারই সিংহের মতো মরে। কাপুরুষেরা ধুঁকে ধুঁকে মরে। এমন করেই হয়তো আমরা প্রতিদিন নায়কের মধ্যে ভিলেন আর ভিলেনের মধ্যে নায়ক খুঁজি। কিন্তু শেষ পরীক্ষায় কে নায়ক কে ভিলেন তা হয়তো বুঝে উঠতে পারি না।


আরও খবর



যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে জিডি

প্রকাশিত:বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন। মঙ্গলবার ঢাকার শাহবাগ থানায় তিনি এ জিডি করেন।

১৪২৭ নম্বর জিডিতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে মোজাম্মেল হক চৌধুরী মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

জিডিতে বলা হয়, গত ২০ এপ্রিল ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেছেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ২০ বছর যাবত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তিনি পরিবহন সেক্টরে কোনো কাজ করেন নাই। এক পর্যায়ে মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরেো বলেন, যেহেতু আমাদের দেশে পদত্যাগের সংস্কৃতি নেই। সেহেতু মন্ত্রী ইচ্ছা করলে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করতে পারেন।

জিডিতে শ্রমিক লীগের ওই নেতা আরো বলেন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি যাত্রীদের কল্যাণ করবে এটাই তাদের কাজ। কিন্তু সুপরিকল্পিতভাবে মোজাম্মেল হক চৌধুরী সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এতে মন্ত্রীর সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে। কারণ বর্তমান সরকার টানা চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন। এখন সরকারের ক্ষমতায় থাকার বয়স ১৫ বছর ৩ মাস। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সেখানে ২০ বছর মন্ত্রী থাকেন কীভাবে? মোজাম্মেল হক চৌধুরী সুপরিকল্পিতভাবে মন্ত্রী ও সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছেন। এ মিথ্যাচারের বক্তব্যগুলো দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। তার এই মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্যে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন ও মন্ত্রীর মানহানি হয়েছে। তাই বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য জিডি করে রাখা একান্ত প্রয়োজন।

শাহবাগ থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, এখন আইন অনুযায়ী জিডির কপি আদালতে পাঠানো হবে। আদালত অনুমোদন দিলে তদন্ত শুরু হবে।

 


আরও খবর

তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা

বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪




হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে খামারের শত শত মুরগি

প্রকাশিত:রবিবার ২১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪ |

Image

বছর ১৭ আগে মুরগির খামার শুরুর পর ভালোই চলছিল বরিশালের আমানতগঞ্জের সেলিনা হোসেনের। কিন্তু ব্যবসায় বিপত্তি শুরু হয় করোনা মহামারীকালে। এরপর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ান। সম্প্রতি বয়ে চলা তাপপ্রবাহ ও তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে হিটস্ট্রোকে মারা গেছে তার প্রায় ৭০০ মুরগি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্বামীহারা এ খামারি। 

সেলিনা হোসেন বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনের উৎস আমার এ মুরগির খামার। করোনার সময় একবার বড় লোকসান হয়। অনেক মুরগি মারা গিয়েছিল তখন। অনেক কষ্টে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। ৮০০ ব্রয়লার মুরগি তুলেছিলাম। কিন্তু এবার সব শেষ। বিদ্যুৎ যায় আসে। যে গরম পড়ছে তাতে ফ্যান চালিয়ে রাখতে হয়। টিনে পানি দিতে হয়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে আরো বেশি স্ট্রোক বেড়েছে। ওষুধ খাইয়েছি, তবু মুরগিগুলোকে রক্ষা করা যায়নি। আবার মুরগি ওঠানোর ক্ষমতা আমার নেই।

সেলিনার মতো অন্য খামারিদের একই হাল। অতিরিক্ত গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি খামারেই দেখা দিয়েছে মড়ক। প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে শত শত মুরগি। অনেক খামারি লোকসান গুনে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে হিটস্ট্রোকে মুরগি মারা গেলেও প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে তাদের কাছে কেউ যাচ্ছে না বলে অভিযোগ খামারিদের। 

খামারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনার পর থেকে পোলট্রি খাতে দুর্ভোগ যেন কাটছেই না। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পোলট্রিখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামার গুটিয়ে নেন বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের প্রায় ৪০ শতাংশ খামারি। এছাড়া খাদ্য ও মুরগির বাচ্চার অতিরিক্ত দামের পাশাপাশি এখন পোল্ট্রি খাতের অন্যতম নীরব ঘাতক হয়ে উঠছে জলবায়ু পরিবর্তন। গত কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র তাপপ্রবাহে খামারগুলোয় ব্যাপক হারে ব্রয়লার মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে ডিম উৎপাদনও। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য খামারিরা বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে সেটিও ব্যাহত হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পাঁচদিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি ছাড়াচ্ছে, আবহাওয়ার পরিভাষায় যাকে বলা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। গতকালও চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া বাগেরহাট ও কুষ্টিয়ায়ও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। এ তাপপ্রবাহ আরো বেড়ে সামনে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এতে ভবিষ্যৎ নিয়ে আরো বেশি শঙ্কায় রয়েছেন পোলট্রি খামারিরা।

বরিশালে গত কয়েক দিনে ৬১৭টি খামারে প্রায় পাঁচ হাজার ব্রয়লার মুরগি মারা গেছে বলে জানিয়েছেন জেলার পোলট্রি মুরগির খামার মালিকদের সংগঠনের নেতা কালাম শিকদার। তিনি জানান, জেলায় ১ হাজার ৬০৮টি মুরগির খামার রয়েছে। এর মধ্যে ব্রয়লার মুরগির ৬১৭টি, লেয়ার ৫৩৫টি ও সোনালি মুরগির ৪৫৬টি। মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে পোলট্রি খামারে দেখা দিয়েছে হিটস্ট্রোক। তাপপ্রবাহ থেকে মুরগি বাঁচাতে অনেক খামারে বৈদ্যুতিক পাখা সংযুক্ত করলেও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেটিও কাজে আসছে না। ফলে পোলট্রি খামারে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

তীব্র গরমে খামারে মড়ক লাগলেও কোনো তথ্য দিতে পারেনি জেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আবু সুফিয়ান বলেন, গরমের সময় খামারে বারবার পানি স্প্রে ও টিনের চালে ছালার চট ভিজিয়ে রাখার পরামর্শসহ একাধিক গাইডলাইন দেয়া হয়েছে বিভাগের প্রত্যেক মাঠ কর্মকর্তাকে। তারা খামারিদের এ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে গরমে মুরগির মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের অবহিত করা হয়নি এখনো। 

চট্টগ্রামের খামারিরা জানিয়েছেন, ওষুধ ও পানি স্প্রের মাধ্যমে হিটস্ট্রোক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও প্রতিনিয়ত ব্রয়লার মুরগি মারা যাচ্ছে। আবার লেয়ার মুরগির ডিম উৎপাদন কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। 

বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটনের খামারে দেড় কেজির বেশি মুরগি ছিল প্রায় চার হাজার। কিন্তু গত দুদিনের গরমে প্রায় এক হাজার মুরগি মারা গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ছোট মুরগি মারা যায় কম। কিন্তু এক কেজি ওজনের বেশি মুরগি প্রচুর মারা যাচ্ছে। আমার বড় মুরগির খামারে গত দুদিনে ২৫ শতাংশই মারা গেছে। আশপাশের সবার ক্ষেত্রেই এমন হচ্ছে। যত ভালো খামার ব্যবস্থাপনাই থাকুক এ গরমে মুরগি মারা যাবেই। তবে এ বছর মৃত্যুটা বেশি। 

একই কথা জানান রাউজান উপজেলার অর্ণব পোলট্রি ফার্মের স্বাত্বাধিকারী দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, গত কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহে আমার খামারের বেশকিছু মুরগি মারা গেছে। আরো কিছু মুরগির অবস্থা সংকটাপন্ন। লেয়ার মুরগির ডিম উৎপাদন কমে গেছে। স্যালইন, ভিটামিন সি খাওয়ানোর পাশাপাশি ঠাণ্ডা পানি দিয়ে স্প্রে করে খামারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। অন্যদিকে গরমের কারণে ভূগর্ভস্থ পানিও তোলা যাচ্ছে না। এ কারণে পানিরও সংকট আছে। এভাবে গরম পড়তে থাকলে খামার রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হবে না। কম দামে তখন বিক্রি করে দিতে হতে পারে।

চট্টগ্রাম প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় প্রায় চার হাজার ব্রয়লার ও পাঁচ শতাধিক লেয়ার মুরগির খামার আছে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মুরগি খামারের উপপরিচালক মো. আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, অনেক বেসরকারি পর্যায়ের খামারে গরমের কারণে মুরগি মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। তবে সরকারি খামারগুলোয় এখন কোনো মুরগি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। খামারগুলোয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।

যশোরে গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বোচ্চ। আগের দিন ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক দিনের তীব্র গরমে ১০ হাজারের মতো মুরগি মারা গেছে। শহরের নাজির শংকরপুর এলাকার খামারি সানজিদা বেগম বলেন, প্রচণ্ড গরমে মুরগি মারা যাচ্ছে। আমার খামারে ৭০০ মুরগি ছিল। এখন আছে ২৫০টি। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যশোরে মুরগি খামার রয়েছে ১ হাজার ৫৩৪টি। সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তপু কুমার জানান, তার অধীনে ২৪৯টি ব্রয়লার ও ২৫টি লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে। কয়েক দিন ধরে যশোরে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এতে মুরগির হিটস্ট্রোক বেড়ে গেছে। খাওয়া কমে গেছে। তবে কী পরিমাণ মুরগি মারা গেছে তার হিসাব নেই।

তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় রংপুরের খামারিরাও দুশ্চিন্তায় আছেন। লোডশেডিং তাদের আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। জেলায় লেয়ার মুরগির খামার আছে দেড় শতাধিক এবং ব্রয়লার চার শতাধিক। 

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গরমে সাধারণত ৩৪ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে সহনীয় ধরা হয়। এর ওপরে গেলে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বলা হয়, যা সব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। হিটস্ট্রোকসহ নানা অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ মুহূর্তে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর তাতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ আরো বেড়েছে খামারিদের। এ গরম চলতে থাকলে মুরগির মৃত্যু আরো যে কত বাড়বে তা নিয়েই আতঙ্কিত তারা।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বেশি ছিল। কিছু স্থানে হালকা বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা কমেনি। আগামী দুদিন তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে। খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোয় বেশি গরম পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করছে। এর সঙ্গে নগরায়ন ও গাছপালা কেটে ফেলার কারণে খারাপ হচ্ছে বাংলাদেশের আবহাওয়া।

পোলট্রি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুরগির বাচ্চার তাপমাত্রা সহ্যক্ষমতা বেশি থাকে। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তা কমে আসে। এ কারণে বড় আকারের মুরগি হিটস্ট্রোকে বেশি মারা যায়। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী বলেন, অতিরিক্ত গরমে তুলনামূলক ব্রয়লার মুরগি বেশি মারা যায়। কারণ তাদের সহ্যক্ষমতা কম। গরমে ব্রয়লার মুরগি খাবার কমিয়ে দেয়। সে কারণে তার খাবারে এনার্জির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। টিনের চালে পানি বা ভেজা বস্তা দিতে হবে যেন শেড ঠাণ্ডা থাকে।


আরও খবর

তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা

বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪




৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারে ইরান

প্রকাশিত:শুক্রবার ১২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারে ইরান। এমন বার্তা দিয়ে সতর্ক করেছে মার্কিন গোয়েন্দারা। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের মাটিতে ইরানের সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে তেল আবিব প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই হামলা সংঘটিত হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ অথবা উত্তর ইসরায়েলে সম্ভাব্য এই হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জানিয়েছে, ইসরায়েলের উত্তর বা দক্ষিণ অঞ্চলে এই হামলা হতে পারে। তবে প্রতিবেদনে ইরান সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, তেহরানের পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

এর আগে গতকাল অপর মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিলযুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো মনে করছে, ইসরায়েলে বড় ধরনের ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলা অত্যাসন্ন। এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলের সরকারি ও সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে ইরান।

এদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলে মার্কিন সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মধ্য ইসরায়েল, জেরুজালেম ও বীরশেবার বাইরের অঞ্চলে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে দেশটির উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের শহরগুলোতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। 


আরও খবর



প্রতিফলন দেখা যাবে উপজেলা নির্বাচনে

গাজীপুর-৩ আসনে আ.লীগের রাজনীতিতে বাড়ছে ক্ষোভ

প্রকাশিত:সোমবার ০৮ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

সদরুল আইন,সিনিয়র রিপোর্টার:

গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ক্ষোভ হতাশা বিভেদ এবং বিভক্তি বাড়ছে।

আশাহত মানুষের কাফেলায় প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন মুখ।নেতৃত্বের অদুরদর্শিতা ও একক স্বার্থের নব ইতিহাসের সমুখে  সরোবমুখগুলো আবার খুঁজছে এমন একটি মুখ, যে মুখ তাদেরকে নিরাশ করবে না।এমন অভিযোগ ও প্রত্যাশা রয়েছে সর্বত্রই।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে ঐক্যবদ্ধ কাফেলার সরোব পদচারণা এবং বিভিন্ন জনপদে যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠি,সেই ঐক্যবদ্ধতায় ফাটল ধরেছে ফ্যাক্টরির ঝুট ব্যবসার বখরা না পেয়ে।

কথা দিয়ে কথা না রাখা,বিশেষ ব্যক্তির একক সিদ্ধান্ত,সুসম ফ্যাক্টরী ব্যবসা না পাওয়ায় এই জনপদের রাজনীতির অভ্যন্তরে যে চাপা কষ্টের সূচনা হয়েছে তার প্রতিফলন দেখা যাবে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় যে ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের মুখর উদ্দীপণা ও এক মঞ্চে এসে পরিবর্তনের যে স্বপ্ন ও প্রতিশ্রুতি ছিল,বাস্তবে তা আর নেই।বাহ্যিকভাবে তা প্রকাশ না হলেও বঞ্চিত নেতৃত্বের আশীর্বাদ আর পাচ্ছেন না ক্ষমতাসীনরা।

যার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাবে উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায়।ইতোমধ্যেই চুড়ান্ত মিটিং করে উপজেলায় প্রার্থি কে,তার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন বিক্ষুব্ধ নেতৃত্ব।একথা অনস্বীকার্য যে,সিংহভাগ নেতৃত্ব যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গোপনে গ্রহন করেছেন জনমত তাদের দিকেই থাকবে।

যেহেতু এবারের উপজেলা নির্বাচন প্রতিকবিহীন হতে যাচ্ছে,সে কারনে বঞ্চিত নেতৃত্ব এবার তাদের পছন্দের প্রার্থির পক্ষেই অবস্থান গ্রহন করবেন। নির্বাচিত হলে এই প্রার্থিই বঞ্চিতদের বঞ্চণা নিরসনে শক্ত অবস্থান গ্রহন করবেন।আর ঠিক সেসময়ই ক্ষমতাসীনদের সাথে ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হবে।

এছাড়াও এখানকার রাজনীতির মূল চাবিকাঠি চলে যাবে উপজেলা চেয়ারম্যানের হাতে।সেক্ষত্রে বর্তমান নেতৃত্বকে হয় একলা চলো নীতি গ্রহন করতে হবে,না হয় ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের সকল শর্তাবলী মেনে নিতে হবে।বাস্তবতা হল উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব মানা ক্ষমতাসীনদের পক্ষে সম্ভব হবে না।

কারন তারা যদি ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের প্রস্তাব মেনে নেয় তবে পারিবারিক সম্পর্কে ফাটল ধরবে।রাজনৈতিকভাবে তাদেরকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্ভর হতে হবে।কাঠের পুতুল হয়ে তাদের কথা মেনে চলতে হবে,যা মানা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব।

এছাড়া ফ্যাক্টরি ও অন্যান্য অর্থনৈতিকখাতে যাদেরকে বসানো হয়েছে তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন তালিকায় শুরু করতে গেলে অনুসারিদের মধ্যে বিতর্কের জন্ম হবে এবং রাজনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরবে।দূর্বল হয়ে যাবেন ক্ষমতাসীনরা।ব্যবসায় পরিবর্তন আনতে গেলেই উত্তাল ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে রাজনীতি বর্তমান নেতৃত্বের।সেই ঝুঁকি তারা নেবেন বলে মনে হয় না।

ফলে বর্তমান নেতৃত্ব উপজেলায় তাদের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার বদলে হারাবেন নিজেদের আধিপত্ত।আর এখান থেকেই সূচনা ঘটবে '২৯ সালে সংসদ নির্বাচনে আবার প্রার্থি পরিবর্তনের পদযাত্রা।

তখনও ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বই সফল হবেন।কারন সামনের বছরগুলোতে বর্তমান নেতৃত্ব একাধিক ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন এবং তারা জনক্ষোভের মুখে পড়বেন,যার আলামত দেখা যাচ্ছে এখনই।

অর্থাৎ সরলরেখায় বললে বলা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারনায় যে মুখগুলো প্রার্থি পরিবর্তনের পক্ষে মঞ্চ ও মাঠ কাঁপিয়েছিলেন তাদের অবস্থানের পরিবর্তন আসন্ন। সেই সব নেতৃত্ব উপজেলায় ক্ষমতাসীন পরিবারের প্রার্থির বিপক্ষে অবস্থান গ্রহন করবেন বলে নানা সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কাজেই আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন পরিবার উপজেলায় তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।আর উপজেলায় যদি সত্যিই তাদের পরাজয় ঘটে তবে গাজীপুর-৩ আসনে '২৯ সালের সংসদ নির্বাচনে আবার প্রার্থি পরিবর্তন ঘটতে পারে।

এছাড়াও ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের চোখে এই আসনের কর্মকান্ড নিয়ে যেসব অভিযোগ জমা হয়েছে তা সুখকর নয়।সেসব অভিযোগ এবং আগামি সাড়ে ৪ বছরে যা যা ঘটবে তাতে জনক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে।

সেসব বিষয়সমুহ কেন্দ্রিয় নেতৃত্ব আমলে নিলে হয়ত বা '২৯ সালে গাজীপুর-৩ আসনবাসি দেখবেন এমন এক নতুন মুখ,যে মুখ হবেন সম্ভাব্য আলোচিত প্রার্থিদের বাইরের কেউ,এতে সন্দেহের অবকাশ নেই।কাজেই সাধু সাবধান!


আরও খবর



বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী দিতে আ’লীগের সভা

প্রকাশিত:শনিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

জামালপুর প্রতিনিধি:

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দল থেকে একক প্রার্থী দিতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। সেই লক্ষে শনিবার দুপুরে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামীলীগ কতৃক আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নূর মোহাম্মদ এমপি। সভায় দলের ৭ জন নেতা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিয়ে বক্তব্য রাখেন। যারা প্রার্থী হতে চান তারা হলেন এমপি’র ছোট ভাই ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সাত্তার,উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহীনা বেগম,সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ফড়িং, উপদেষ্ঠা সমাজসেবক এমদাদুল হক এমদাদ,উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবু জাফর,সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয় ও সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম সওদাগর। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহীনা বেগমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবুল তালুকদারের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আগা সাইয়ুম,বগারচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি গাজী হোসেন আলী, কামালপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হাসান জুবায়ের হিটলার, নিলাক্ষিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম খোকা,মেরুরচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আলী,যুবলীগ নেতা মারুফ সিদ্দিকী, ছাত্রলীগের আহবায়ক রাজন মিয়া ও সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক আরিফুজ্জামান প্রমূখ। 

বক্তারা বলেন,দীর্ঘ ৩৫ বছরেও আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থী বকশীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হতে পারেনি। তাই এবার সকল ভেদাভেদ ভুলে জনপ্রিয় একজনকে একক প্রার্থী করতে হবে,তাহলেই দলীয় প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে। 

এমপি নূর মোহাম্মদ বলেন,যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা সকলেই দলের নিবেদিত। সকলেই উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার মত যোগ্য প্রার্থী। তাই আমি প্রত্যাক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কারো পক্ষে অবস্থান নিতে পারি না। যারা প্রার্থী হয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বসে আপনারাই ঠিক করেন কে হবেন প্রার্থী। তখন দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের পক্ষে কাজ করবে। তাহলে দীর্ঘদিন পরে হলেও জয় নিশ্চিত হবে। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান যিনি আছে তিনি অবশ্যই শক্তিশালী প্রার্থী। তাকে পরাস্ত করতে হলে অবশ্যই দলের একক প্রার্থী থাকতে হবে।


আরও খবর