পলাশ রহমান :
ঈদ উল আজহার পবিত্রতা ও ধর্মীয় আবেগে আজ শুক্রবার (৬ জুন) ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত মুসলিম সম্প্রদায় ঈদের নামাজ আদায় ও কোরবানির মধ্য দিয়ে পালন করেছেন মহান ত্যাগের এই দিনটি।
ইতালির রাজধানী রোম, মিলানো, সিসিলি, ভেনিসসহ নানা শহরে লাখো মুসলিম প্রবাসীর অংশগ্রহণে ঈদের জামায়াত ধর্মীয় সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এক দৃশ্যের অবতারণা করে।
প্রায় লক্ষাধিক মুসলিম অভিবাসীর শহর ভেনিসে সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় ঈদের নামাজ। মসজিদুল ইত্তিহাদসহ স্থানীয় কমিউনিটির উদ্যোগে আয়োজিত প্রায় ৩০টি জামায়াতে অংশগ্রহণ করেন ৪০ হাজারের বেশি মুসল্লি। নামাজে অংশ নেয় নানা বয়সের মুসলিম অভিবাসীরা। ঈদের নতুন পোশাক পরে, আনন্দ ও উৎসাহ নিয়ে মুসল্লিরা জামায়াতে শরিক হন।

ঈদের খুৎবায় মাওলানা আরিফ মাহমুদ বলেন, ত্যাগ, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা নিতে হবে পবিত্র ঈদুল আযহার পশু কোরবানির মাধ্যমে।
তিনি বলেন, কোরবানি কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো- হালাল ইনকাম। হালাল আয় দিয়েই কোরবানি করতে হবে, অন্যথায় তা শুদ্ধ হবে না।
নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দোয়া করা হয়।
ঈদের নামাজ শেষ করে প্রবাসীরা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন, প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন ঈদের আনন্দ। প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিও কলে দেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সংযুক্ত হন অনেকে। এ সময় তাদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে আবেগঘন মুহূর্ত। ভেনিস বিএনপি'র সাবেক সভাপতি আব্দুল আজিজ সেলিম বলেন, প্রবাসে আমাদের আলাদা একটা সমাজ গড়ে উঠেছে ঠিকই, কিন্তু দেশের মানুষদের মিস করি প্রতি মুহূর্তে।
শিশু-কিশোরদের ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে তুলতে মসজিদুল ইত্তেহাদ কর্তৃপক্ষ তাদের হাতে তুলে দেন ঈদ উপহার। শহরের পার্ক, খোলা মাঠ ও রেস্টুরেন্টগুলোয় জমে ওঠে আড্ডা। বিকেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভেনিসের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে বেড়ান অনেকেই।

বাংলাদেশিদের ঘরে ঘরে রান্না করা হয় ঈদের মজাদার খাবার। সেমাই, পোলাও, বিরিয়ানি, ফিরনি, পায়েস, জর্দার ঘ্রাণে ভরে ওঠে চারদিক। গরুর মাংসের সুগন্ধে ঈদের ঐতিহ্য যেন ছুঁয়ে যায় দেশীয় আবেগকে।
ইতালীয় নাগরিকদের মাঝেও মুসলিমদের এমন রঙিন ও সুশৃঙ্খল ঈদ উদযাপন ভিন্নমাত্রার আগ্রহ ও সৌহার্দ্য সৃষ্টি করে। তারাও উপভোগ করেন মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা।
তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, শুক্রবার কর্মদিবস হওয়ায় ও স্কুল খোলা থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী প্রবাসী ঈদের নামাজে অংশ নিতে পারেননি। ইতালিতে বসবাসরত প্রায় ৭ লাখ মুসলিমের পক্ষে কমিউনিটি ব্যক্তিত্বরা সরকারের কাছে দুই ঈদে ছুটির দাবি জানিয়ে বলেন, প্রাচীন সভ্যতার দেশ ইতালিতে অভিবাসীদের ধর্মীয় অধিকারের প্রতি মানবিক সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। এতে ইতালির মানবিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা হবে। পারস্পরিক ভ্রাতিত্ববোধ ও সম্মান বৃদ্ধি পাবে। মানবাধিকার রক্ষা হবে।
পবিত্র ঈদ উল আজহা মুসলিমদের জন্য শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং আত্মিক পরিশুদ্ধির এক অনন্য উপলক্ষ। ইউরোপের মাটিতে তা আজ আরও একবার প্রমাণিত হলো ধর্মীয় শ্রদ্ধা, আনন্দ ও একতার মহা মিলনমেলায়।
মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন- ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যক্তিবর্গ।
ভেনিস প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি শাহানুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, প্রবাসীদের ঈদ আর বাংলাদেশের ঈদের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব রয়েছে। প্রবাসীরা প্রবাসে ঈদ করলেও তাদের মন পড়ে থাকে প্রিয় বাংলাদেশে। প্রবাসীরা বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করেই বেঁচে থাকে।