
রাশেদ আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক :
‘আমাদের ছেড়ে গেলি দীপক দা’
আশি দশকের শেষ দিকে কিছু টগবগে তরুণ কাজ করতাম সাপ্তাহিক সন্দ্বীপ নামক একটি পত্রিকায়। আমাদের টিম লিডার মানে নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন কবি সালেম সুলেরী। ছিলাম আমি, সুমন মাহমুদ, শহিদুল আজম, দীপক সাহা, নঈম নিজাম, ফেরদৌস সালাম, অসিম সাহা, আফরোজা নাজনীন, ফরিদ বাশার। পরে অবশ্য যুক্ত হয় কুদ্দুস আফ্রাদ, শিমুল মাহমুদ। সাপ্তাহিকটিতে নিয়মিত লিখতেন আমীর খসরু, আশরাফ খান, মতিউর রহমান চৌধুরী, সাইফুল আলম, শফিকুল কবীর, আলী মামুদ সহ অনেকে। ফকিরের পুল টয়েনবি সার্কুলার রোডের সেই অফিসে খুবই আড্ডার মধ্য দিয়ে সময় কাটতো, কাজও হতো। আমরা সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা প্রাণোচ্ছাস ভাগাভাগি করে নিতাম।
আজকের কথাগুলো দীপক সাহাকে নিয়ে। একটি ক্যামেরা নিয়ে অফিসে আসতেন। খুবই স্মার্ট তরুণ। দুর্দান্ত এক ফটোসাংবাদিক। আমি তার গ্রিন রোডের বাসায় যেতাম, মুন্নী সাহার সাথে সেখানেই পরিচয়, দীপক দার ছোটো বোন। তিনিও পরে ওই পত্রিকায় লেখা শুরু করেন।
স্মৃতিতে আজ ভাসছে;
শিশু একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে এসাইনমেন্টে গেছি আমি আর দীপক দা। শিশু-কিশোরদের সঙ্গীত প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান। শুরুর আগে আমরা দর্শক সারিতে বসে আছি। দেখি কয়েকজনের মধ্যে একটি সুন্দরী তরুনী খুবই চটপটে । দীপক দা আমাকে দেখিয়ে বললেন দেখো রাশেদ মেয়েটি কতো সুন্দরী, ঠিক যেনো স্বরস্বতী। চলো পরিচিত হই। মেয়েটি যদি হিন্দু হয় তাহলে আমি সম্পর্ক করবো। আর মুসলমান হলে তোমার জন্য ছেড়ে দেবো। প্রমিজ। সঙ্গীত প্রতিযোগিতা শুরু হলো। তনুশ্রী চক্রবর্তীর নাম ঘোষণার পর দেখি স্টেজে সেই মেয়ে উঠলো। রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে মন মাতালো। দীপনদার তখন খুশি আর ধরেনা, হাততালিও থামেনা। আমি নিশ্চুপ। অনুষ্ঠান শেষে দেখা করতে গেলাম। বন্ধুর জন্য চেষ্টা করতে হয়। দীপকদা ছবি তুললেন। আলাদা ইন্টারভিউ করার জন্য ওর বাবার কাছে সময় এবং বাসার ঠিকানা চেয়ে নিলাম। পরে একদিন বাসায় গেলাম। এভাবে দীপক দার সাথে তনুশ্রীর সম্পর্কের সূচনা। কিন্তু বাঁধ সাধলো জাঁত ভেদ নিয়ে। ব্রাক্ষণ মেয়ের সাথে তো সাহার ছেলের বিয়ের রীতি নেই। তখন দীপক দা কাঁদে, আমরাও কষ্ট পাই। সুলেরী ভাইতো গানই লিখে ফেললেন।আমরা সেই দুঃখের গান গাই অফিসে বসে। যাহোক আনুষ্ঠানিক কোনো কিছু করতে না পেরে দীপকদাকে পালিয়ে কোর্টে গিয়ে বিয়ে করতে হলো। সেই সংসারই করেছেন দীপক দা। বউকে এতো ভালোবাসতেন, পারলে শোকেস এ রেখে দিতেন। পরবর্তীতে আমরা যখন সন্দ্বীপ পত্রিকা ছেড়ে যে যার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। বন্ধনের অনুভুতিও হালকা হয়ে গেছে। যোগাযোগ হয়নি বছরের পর বছর। হঠাৎ আজ মুন্নী সাহার ফেসবুক স্টাটাসে দেখলাম। ‘আমাদের ছেড়ে গেলি ছোট দা’। মনটা ভেঙে চুড়ে গেলো। অনেক কষ্ট লাগছে। প্রিয় তনুশ্রী এই শোক সইবে কি করে? আমি কি আর লিখবো শুধু বলি দীপক দার দেহাবশেষর ছাইগুলো চুমকি হয়ে উড়ুক বিশাল আকাশে।……..
(আমার অনেক ছবি তুলে দিয়েছেন দীপক দা কিন্তু তার সাথে মিলে ছবি খুঁজলাম এখন পাচ্ছিনা। একটি ছবিই পেলাম। কোনো এক বই মেলায়। পেছনে কবি নির্মলেন্দু গুন, কবি মহাদেব সাহা, আমি, দীপকদা, বায়রন বিশ্বাস, সামনের বায়ে কুদ্দুস আফ্রাদ। আরেকটি ছবিতে সন্দ্বীপ পত্রিকার প্রকাশক মুস্তাফিজুর রহমান সহ সংবাদকর্মীরা।)