
জেসমিন আক্তার, সিনিয়র সাংবাদিক :
ফেরাউনের অত্যাচার বনাম সভ্য সমাজের নীরবতা: আজকের শিশু আছিয়াদের আর্তনাদ
আছিয়া! এক নাম, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ধৈর্য, ত্যাগ আর ঈমানের এক দুর্দান্ত কাহিনি। ইতিহাস বলে, হযরত বিবি আছিয়া (আ.) ছিলেন মিসরের সবচেয়ে ক্ষমতাধর পুরুষ ফেরাউনের স্ত্রী। কিন্তু তাঁর সত্যের প্রতি অবিচল বিশ্বাস, ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে তাঁকে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। তিনি ছিলেন এক অত্যাচারী শাসকের স্ত্রী, তবু তাঁর ঈমান টলানো যায়নি। তিনি মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও সত্যকে আঁকড়ে ধরেছিলেন।
আজকের সমাজেও আছিয়ারা আছে, তবে তারা শিশু। তারা ফেরাউনের মতো কোনো শাসকের প্রাসাদে নয়, বরং নিজেদের ঘরেই নির্যাতনের শিকার। কখনো বাবার হাতে, কখনো সৎ বাবার হাতে, কখনো চাচা কিংবা দাদার হাতে, এমনকি কখনো আপন ভাইয়ের হাতেও ধ্বংস হচ্ছে তাদের শৈশব। ফেরাউন তো প্রকাশ্যে অত্যাচার করেছিল, কিন্তু এই আধুনিক সমাজের ফেরাউনরা পর্দার আড়ালে, সমাজের নীরবতার সুযোগ নিয়ে প্রতিদিন জন্ম দিচ্ছে নতুন নতুন ট্র্যাজেডি।
সম্প্রতি এক ৮ বছরের শিশুর গল্প ভাইরাল হয়েছে—যাকে তারই আপন বোনের স্বামী-শ্বশুরের মতো আপনজনেরা নির্মম নির্যাতন করেছে। এই সমাজ কি সত্যিই সভ্য? যেখানে শিশুর আর্তনাদ কেউ শোনে না, যেখানে একটি ফুটফুটে প্রাণকে নিষ্ঠুরতার বলি হতে হয়?
ফেরাউনের রাজত্বে আছিয়া ছিলেন এক প্রতীক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক। কিন্তু আজকের শিশুরা প্রতিরোধ গড়ে তোলার আগেই হারিয়ে যাচ্ছে।
আজ যদি আমরা নীরব থাকি, তবে প্রতিটি ঘরেই একেকজন শিশু আছিয়া জন্ম নেবে, যারা নিজেদের জীবন দিয়ে প্রমাণ করবে—আমাদের সমাজ শুধু পুঁজিবাদ আর প্রযুক্তির দিক থেকে উন্নত হয়েছে, মানবিকতা ও নৈতিকতার দিক থেকে নয়।
এখন প্রশ্ন একটাই: আমরা কি ফেরাউনের অনুসারী হবো, নাকি আছিয়ার মতো অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবো?