
আমাদের এই দেশটা টিকে আছে মূলত মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার ওপর। শুভচিন্তা ওপর। আকস্মিক এই ভয়াবহ বন্যায় হতদরিদ্র পরিবারগুলোর কাছে যখন দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানো ভীষণ জরুরী হয়ে উঠেছিল তখনও বরাবরের মতই এই আমাদের মত সাধারণ মানুষেরাই ছুটে গিয়েছি নিজের সবটুকু দিয়ে।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম একেবারেই তলিয়ে গেছে। এই এলাকাগুলোতে কিছুটা প্রাথমিক সহায়তার বন্দোবস্ত হলেও যেসব পরিবার নিজেদের চলার সবটুকু হারিয়ে ফেলেছে। তাদের সামনের দিনগুলোর কথাও ভাবতে হবে এই আমাদেরই। বন্যা চলে গেলেই বিপদ চলে যায় না। বন্যা নিয়ে আসছে নানান পানিবাহিত রোগ। চিকিৎসার কথা ভাবতে হবে। ভেসে গেছে ঘর, বাড়ি। ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে পানিতে। গেরস্তের গরু হারিয়ে গেছে।
গত বন্যায় আমরা দেখলাম কৃষক তার সোনার ফসল পানিতে ডুবে ডুবে কাটছে। সেই শস্যের একটি দানাও বাঁচাতে পারা গেলো না এবারে। বানের জলে ভেসে গেছে শেষ সম্বলটুকুও।
প্রাথমিকভাবে আমরা সবাই মিলে হয়তো এই মানুষগুলোকে প্রাণে বাঁচাতে পারলাম কিন্তু এই মানুষগুলোকে জীবন সংগ্রামে ফিরিয়ে আনতে পাশে দরকার মানুষদের সহায়তা।
আমরা কি করতে পারি?
আমরা কাজ করতে চাই দুর্যোগটার প্রাইমারি ইমপালসটা কেটে যাবার পর। আমি হাওরের মানুষ। আমার পরম পরিচিত ছোটবেলা মত প্রিয় গ্রামগুলোই মর্মান্তিকরকম ক্ষতিগ্রস্থ। আশেপাশের গ্রামের মানুষগুলোও কোন না কোনভাবে আমার রক্তেরই আত্মীয়। এই গ্রামগুলোতে যারা সবকিছু হারিয়েছেন তাদের আমরা অল্প অল্প করে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে চাই।
কারো আয়ের একমাত্র পথ ছোট মুদি দোকান ভেসে গেছে, তাকে সামান্য পুঁজি তুলে দিতে চাই। কারো গোয়ালের তিনটা গরু ভেসে গেছে, তাদের কিনে দিতে চাই একটা গরু। যেই দরিদ্র মানুষটার বেড়ার ঘরটা ভেঙে গেছে তাদের একটা ছোট ঘর তুলে দিতে চাই আমরা।
সহমর্মী সুহৃদ ডাক্তারদের একটা দল নিয়ে আমরা পানিবাহিত রোগাক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করে দিতে চাই। বন্দোবস্ত করে দিতে চাই ওষুধের।
বন্যায় শিশুদের শারীরিক আর মানসিক ক্ষতিটা হয় সবচেয়ে বেশি। স্কুল ঘর তো ভেসে গেছেই, চলে গেছে বই, খাতা, কলম, শিক্ষার সব অনুষঙ্গ। দরিদ্র পরিবারের শিশু সন্তানটির প্রিয় খেলনাটা হারিয়ে যাওয়ার কষ্ট কোন অংশে কি কম? নিজ চোখে এই বন্যা দেখে শিশুদের মানসিক ক্ষতিটা হয়েছে অনেক বেশি। তাদের আবারও পড়াশোনা আর খেলাধূলায় ফিরিয়ে নিতে হবে। আমরা তাদের জন্যও কিছু করতে চাই দীর্ঘ মেয়াদের কথা মাথায় রেখে।
এসবকিছুই জন্যই আপনাদের কাছে সাহায্য চাইছি। আসুন আমরা সবাই সাধ্যমত সহায়তা করি। আমরা ঠিক কতজনকে পুনঃবাসন করে দিতে পারবো, কতজনকে আবার আগের জীবনটাতে ফিরিয়ে নিতে পারবো সেটা নির্ভর করছে আমরা ঠিক কি পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করতে পারছি তার ওপর। যদি কম টাকা হয় তাহলে হতোয় একটা পরিবারকেই আবার আমরা মূলস্রোতে নিয়ে আসতে পারবো। টাকা বেশি উঠলে হয়তো একশ বা এক হাজার মানুষকে পুরনো জীবনটা ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করতে পারবো আমরা।
আসুন আমরা সবাই মিলে সবার শক্তিটা নিয়ে পাশে দাড়াই। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সবচেয়ে দুর্গম গ্রামে সবকিছু হারিয়ে ফেলা মানুষটা আর এই লেখাটা এই মুহূর্তে যিনি পড়ছেন সে আমরা সবাই মিলেই যে 'আমরা সবাই' সেটা প্রতিষ্ঠিত হোক!
সহায়তা করতে:
আতিক রহমান
বিকাশ (পার্সোনাল): 01913925026
নগদ (পার্সোনাল): 01913925026