-- আমিনুল ইসলাম কাসেমী :
আমরা মাঝে- মাঝে ভুল করি। বড় ভুল হয় আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের। তবে সে ভুল শোধরানোর চেষ্টা করিনা। বরং কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে তাকে গালমন্দ করে থাকি।
আমরা কেউ চাই না আমাদের কোন সন্তান ভাদাইম্মা হয়ে যাক।কেউ চায়না তার ছেলে কট্টরপন্হী গ্রুপে যোগদান করুক। এমনকি আজকাল কোন অভিভাবক চায়না তার সন্তান প্রচলিত রাজনীতিতে শরীক হোক বা মিছিল - মিটিং-এ যাক। কিন্তু বর্তমান যে অবস্হা তাতে সন্তানেরা গার্জিয়ানের অপছন্দের ওইসব কর্মকান্ড টপকিয়ে ভাদাইম্মার স্তর থেকেও উপরে উঠে গেছে। এখন আর স্বাভাবিক অবস্হাতে নেই। বরং বর্তমান তাদের কার্যকলাপগুলো স্কুল- কলেজ- ভার্সিটির ছেলে-মেয়েদের হার মানিয়ে দিচ্ছে।
আমরা কারো পাগড়ি বাঁধা দেখলে ফেরেস্তা মনেকরি। মনেহয় দুনিয়ার সবচেয়ে ভাল মানুষ। কিন্তু বর্তমানে কিছু কিছু পাগড়ির নিচেও শয়তানে বাসা বেঁধে ফেলেছে সেটা ভেবে দেখিনা।
এজন্য আত্মসমালোচনার রাস্তা খোলা রাখতে হবে। নিজের সন্তানদের ভুল হলে সেটা সংশোধনের নিয়্যাতে ধরিয়ে দিতে হবে। যাতে তারা ইসলাহ হয়ে যায়। সামনে থেকে আর ওই ভুলগুলো না করে।
মরহুম আইনুদ্দিন আল আজাদ( রহ,) একটা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে "কলরব" গঠন করেছিলেন। বিশেষ করে অপসংস্কৃতির মোকাবেলায় একটা সুস্হ - সুন্দর এবং শালীন সংস্কৃতি জাতিকে উপহার দিবেন। কিন্তু বর্তমান "কলরব" এর শিল্পিদের যে অবস্হা তাতে আর সুস্হ- সংস্কৃতি বাকি নেই। বিশেষ করে কদিন পর পর "কলরব" এর শিল্পিদের ব্যাপারে যে সব আপত্তিকর আওয়াজ শোনা যায় সেটাতো জাহেল আর হুজুরদের মাঝে কোন ফারাক নেই।
"কলরব" এর শিল্পিদের ব্যাপারে আমি কোন আপত্তি করতাম না। তারা পাগড়ি - জুব্বা খুলে কলরবের সাইনবোর্ড সরিয়ে ওরা যা ইচ্ছে তাই করুক। কোনদিন আমি কথা বলবনা। কিন্তু জুব্বা- পাগড়ি লাগিয়ে আবার প্রখ্যাত শিল্পি আইনুদ্দিন ( রহ,) এর নাম ভাঙিয়ে নিজের ইচ্ছেমত চলবেন, শরীয়াতের হুকুমের তোয়াক্কা করবেন না, তাহলে সেক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে চরম অন্যায়।
কদিন আগে কলরব এর এক শিল্পি বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। তার বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ভিডিওগুলো অনলাইনে ঘুরছে। তার বিয়ের গান নাকি তিন দিনেই একলক্ষ ভিউ হয়েছে। যেটা নিয়ে তিনি খুব শুকরিয়া আদায় করলেন। তবে আজব ব্যাপার হল অধিকাংশ কমেন্টার এবং রিয়েক্টার মহিলা। তারাই ওইসব ভিডিওর আগাগোড়া দেখছে,আর অন্যরকম অনুভূতি ফিল করছে।
দেখলাম, শিল্পিরা গান গাচ্ছে " বিয়ে সুন্নাত মোতাবেক হোক"
মানে মুখে এক বুলি আর কর্মে আরেকটা। ওনাদের কোন জিনিসটা সুন্নাত মোতাবেক হয়েছে? হিন্দি- বাংলা সিনেমার নায়কদের স্টাইলে শেরওয়ানী আর টোপর পরে কোন সুন্নাত আদায় হয়েছে এখানে? সারা জীবন পাগড়ি আর জুব্বা পরে গান গাইলেন আর বিয়ের সময় শাহরুখ খান আর সাকিব খানের বেশধরা এটা কোন সুন্নতের আওতায় পড়ে।
আমি এটা নিয়ে কিছু বলতাম না, শুনেছি তিনি নাকি যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস পাশ করেছেন। তাহলে একজন আলেম হয়ে এভাবে নায়কের বেশধরা কতটা যুক্তিযুক্ত?
বিয়ের আদ্যপান্ত ভিডিও করে ছাড়া হল। শেরওয়ানী গায়ে জড়ানো থেকে নিয়ে ওয়ালীমা সবকিছু ধারণ করে ইউটিউব অনলাইনে ছাড়া হল। আবার বিশাল বহর নিয়ে বিয়ে বাড়িতে হানা দেওয়া হল, এগুলো কোন সুন্নাতের আওতায় পড়ে? মানে সুন্নাতের কোন খোঁজ নেই, ওদিকে গান গাওয়া হচ্ছে " সুন্নাত মোতাবেক বিয়ে হোক, মানে স্পষ্ট প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।
এই তো বেশীদিন আগের কথা নয়, মরহুম সৈয়দ ফজলুল করীম ( রহ,) এক বিয়েতে বর পক্ষকে গালমন্দ করেছিলেন। ছেলে নাকি দ্বীনদার। বিয়ে পড়ানোর সময় ছেলে এবং অভিভাবকদের বলেছিলেন, আপনারা কেমন দ্বীনদার? মেয়ের বাড়িতে গাড়ির বহর নিয়ে আসলেন এটা কেমন দ্বীনদারী?
নব্বইদশক এবং এর পরবর্তি সময়গুলোতে দেখেছি, কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে ভিডিও করা আমাদের ওলামায়েকেরাম সে বিয়েতে শরীক হতেন না। বয়কট করতেন। অহেতুক ছবি তোলা, ভিডিও করা এটা কোন আলেম জায়েজ বলেন নি। আজ পর্যন্ত কোন আলেম বৈধতার ফতোয়া দেয়নি। আর এখন বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু ভিডিও করে আপলোড করা হচ্ছে।
এখানেও আমি সমস্যা মনে করতাম না। যদি ওনারা এভাবে পাগড়ি - জুব্বা লাগিয়ে পাক্কা হুজুর না সাজতেন। অথবা রাজনৈতিক কোন উদ্দেশ্য বা ইসলামী কোন বিষয় প্রতিষ্টার চিন্তাভাবনা থাকত। কিন্তু অহেতুক এবং মানুষকে বোকা বানানোর উদ্দেশ্যে এমন ভিডিও সত্যি আপত্তিকর। এর দ্বারা দলিল হয়ে গেল। হুজুরেরা বিয়ের শুরুতে শেষ পর্যন্ত ভিডিও করে অনলাইনে ছাড়ে, তারা সিনেমার নায়কদের মত শেরওয়ানী আর টোপর পরে, তাহলে আর আমরা করলে সমস্যা কোথায়? দিনে দিনে মানুষ অহেতুক এবং অনার্থক কাজের দিকে ঝুকে যাবে। এখন তাদের বড় দলিল "কলরব"এর হুজুরদের বিয়ে।
হাদীস শরীফে এসেছে, " ইন্না আ'জমান নিকাহে বারাকাতান আইছারুহু মায়ুনাতান"
অর্থাৎ ওই বিয়েতে বরকত যেখানে আড়ম্বরি কম হয়। কিন্তু বিয়েতে আজকাল হুজুরেরা, আলেমেরা, পীর সাহেবরা যেভাবে আড়ম্বারিতা দেখাচ্ছেন তাতে কোন বরকত বিয়ে- শাদীতে থাকছেনা। যার কারণে দেখবেন, কদিন পর পর এখন হুজুর শিল্পিদের বউ ডিভোর্স হচ্ছে। বেশীদিন থাকছেনা। জাহেলদের বিয়েশাদীতে যা হয় আলেমদের বিয়েতে এখন তাই হচ্ছে। একারণে বিয়ের পরে প্রায় জায়গাতে আজকাল কিছু কিছু হুজুরদের সংসার ভেঙে যাচ্ছে। এর একমাত্র কারণ বিয়েতে সুন্নাত নেই। এরপর জাহেলদের মত কিছু হুজুর শরীয়াত মানছেনা।যে কারণে বিপত্তি ঘটে যাচ্ছে।
শরীয়াতের গন্ডির মধ্যে থাকার চেষ্টা করতে হবে। টাকা পয়সা বেশী হলেই যে খুব বাড়াবাড়ি করতে হবে তা নয়। কেননা এখন তো শিল্পিদের টাকার অভাব নেই। আইতেও টাকা যাইতেও টাকা। তাই বলে "অর্থই যেন অনার্থের মুল" এটা না হয়ে দাঁড়ায়।
আমি কলরবের বিলুপ্তি চাই না। আমি চাই সংশোধন। তারা নিজেদের ভুলগুলো ঠিক করে সামনে কদম রাখুক। অপসংস্কৃতির মোকাবেলায় জেগে উঠুক এমনটি চাই।
আল্লাহ আমাদের সহী বুঝ দান করুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট