সুফী একটি আত্মা বিষয়ক অধ্যায় ।
আত্মা সম্পর্কিত আলোচনা এর মুখ্য বিষয়। সুফিবাদের একমাত্র মূল বিষয়টি হল, আপন নফসের সঙ্গে
যুদ্ধ করে বিজয়ী হওয়া। জীবাত্মাকে পরমাত্মার অধীন করা। আল্লাহ পাক যে শয়তানটিকে
আমাদের পরীক্ষা করার জন্য
দেওয়া হয়েছে তার সাথে জিহাদ করে তার থেকে মুক্ত হয়ে এ জড় জগত থেকে মুক্তি
পাওয়া। আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হলো এই দর্শনের
মর্মকথা। পরম সত্তা মহান আল্লাহ কে জানার
এবং আকাঙ্খা মানুষের চিরন্তন।
স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আধ্যাতিক ধ্যান ও জ্ঞানের মাধ্যামে
জানার প্রচেষ্টাকে সূফী দর্শন বা সূফীবাদ বলা হয়।
হযরত ইমাম গাজ্জালী (রঃ) এর মতে, “আল্লাহর ব্যাতীত অপর মন্দ সবকিছু
থেকে আত্মাকে প্রবিত্র করে সর্বদা আল্লাহর আরাধনায় নিমজ্জিত থাকা এবং সম্পূর্ন
রূপে আল্লাহুতে নিমগ্ন হওয়ার নামই সূফী বাদ বলে।
সুফীবাদের মূলনীতি ও স্তর সমূহঃ
সুফীবাদ এক প্রকার রহস্যময়
হৃদয়ভিত্তিক ও আত্মোপলব্ধিমূলক মতবাদ। একে রুহানী প্রশিক্ষণও বলা হয়। ব্যক্তির
আত্মার পরিশুদ্ধি ও পরম সত্তার সন্ধানই এর লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য সুফীগণ
কতগুলো মূলনীতি ও স্তর তৈরি করেছেন। নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো।
মূলনীতি সমুহঃ-
১. তাওবা : অন্যায় ও পাপের
ওপর আন্তরিক অনুশোচনা, অন্যায়ের স্বীকৃতি ও বিষ্যতে এ কাজ না
করার দীপ্ত শপথ। তাওবা হচ্ছে সুফী মতবাদের প্রথম মূলনীতি।
২. তাওয়াক্কুল : সর্বাবস্থায়
দয়াময় আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করাই তাওয়াক্কুল।
৩. পরিবর্জন: এ প্রসঙ্গে
নিজামুদ্দীন আওলীয়া বলেন : “স্বল্প আহার, স্বল্প কথন,
স্বল্প মেলামেশা, স্বল্প নিদ্রার
মধ্যেই নিহিত
আছে মানুষের পূর্ণতা।
৪. সবর : যে কোন অবস্থায়
অস্থির না হয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্তকে মাথা পেতে মেনে নেয়াই সবরের একমাত্র দাবী।
৫. আত্মসমর্পণ : গুরুও কাছে
নিজ আত্মাকে সোপর্দ করে দিতে হবে।
৬. ইখলাস : নিছক আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সব কাজ করতে হবে।
৭. আল্লাহর প্রেম : অন্তরে
পার্থিব জগতের কোনকিছুর প্রেম ও মোহ থাকতে পারে না। সর্বক্ষণ আল্লাহকে পাওয়ার
চিন্তায় মগ্ন থাকতে হবে।
৮. আল্লাহর যিকর : আধ্যাত্মিক
উন্নতি সাধন ও অন্তরকে পরিশুদ্ধি করার জন্য সর্বদা আল্লাহর যিকর ।
৯: শুকুর : আল্লাহর অফুরন্ত
নেয়ামতের স্বীকৃতি প্রদান ও আনুগত্যকরণ শুকর বলা হয়।
স্তরসমুহঃ
১. ফানাফিস শায়েখ : এই স্তরে
সাধক তার মোরশেদের সাথে বিলীন হয়ে যায় আর সে ওই ভাবেই চলে যেভাবে তার মোরশেদ
চালায়। আর এই অবস্থায় স্থায়ী হলে মোরশেদ তাকে রাসুল (দ:) এর কাছে পৌছে দেন।
২. ফানাফির রাসূল : এই স্তরে
সাধক গন রাসুল (দ:) এর সাথে বিলীন হয়ে যায় আর সে ওই ভাবেই চলে যেভাবে রাসুল (দ:)
চালায়। আর এই অবস্থায় স্থায়ী হলে রাসুল (দ:) তাকে এর মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে
পৌছে দেন।
৩. ফানাফিল্লাহ ও বাকাবিল্লাহ
:
ফানা ফিল্লাহ এবং বাকাবিল্লাহ
হচ্ছে সুফী সাধনার সর্বোচ্চ স্তর। এ স্তরে পৌঁছলে সুফী নিজের ব্যক্তিগত চেতনাকে
মুছে দিয়ে ঐশী চেতনায় উন্নীত হন। ব্যক্তিগত চৈতন্য খোদার ধ্যান ও প্রেমে সমাহিত
হয়। তাই আত্মচেতনার অবলুপ্তিকেই বলা হয় ফানা।
ফানার শেষ পর্যায়ে শুরু হয়
বাকার প্রাথমিক পর্যায়। এ স্তরে সুফী সাধক আল্লাহর চিরন্তন সত্তার অবস্থান করেন।
প্রাপ্তি কাশফ : সুফীগণ যখন আধ্যাত্মিক সাধনার চরম
পর্যায়ে উপনীত হন তখন তার অন্তদৃষ্টি খুলে যায় এবং তার সামনে গোপনীয় সকল
রহস্যদ্বার খুলে যায়। এক পর্যায়ে তিনি আল্লাহর অসীমতার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন।