মো: হ্নদয় হোসাইন মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের পরে শিক্ষার্থীরাও তাদের বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরাও শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা দাবি-দাওয়া তুলছেন এবং ইতিবাচক পরিবর্তনও দেখতে চাচ্ছেন। বিদায়ী বছরটির প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির স্মৃতি পেছনে ফেলে নতুন বছরে নতুন আশায় বুক বাঁধতে পিছিয়ে নেই তরুণরাও। নতুন বছরে কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থীর ভাবনা, প্রত্যাশা-প্রাপ্তি আর স্বপ্নের কথা তুলে ধরেছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মো: হৃদয় হোসাইন।
'পুরাতন প্রশাসন এর স্বৈরাচারী মনোভাব ও ভুল-ভ্রান্তি যেন আবার নতুন প্রশাসন এর গায়ে না লাগে' -তরফদার রোহান, শিক্ষার্থী, গনিত বিভাগ।
মাস্টার্সের গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী তরফদার রোহান আরও বলেন, মানুষ নতুনত্বকে ভালোবাসে। পুরোনো জিনিসের প্রতি মায়া থাকলেও নতুন জিনিস এর প্রতি আগ্রহ মানুষের সুপ্রাচীন। তাই তো কালের বিবর্তনে মানুষ পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় অত্যন্ত আনন্দের সাথে। ২০২৪ কেউ আমরা ঠিক একইভাবে বিদায় জানিয়ে ২০২৫ কে গ্রহণ করে নিয়েছি উৎসাহ, উদ্দীপনা নিয়ে। সেই সাথে পুরোনো বছরের ভুল ভ্রান্তিকে ছাপিয়ে নতুন বছর এবার এসেছে জুলাই অভ্যুত্থান এ ছাত্র-জনতার বিজয় নিয়ে। তাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীরাও আশাবাদী পুরোনো প্রশাসন এর স্বৈরাচারী মনোভাব ও ভুল-ভ্রান্তি যেন আবার নতুন প্রশাসন এর গায়ে না লাগে। আমরা চাই একটি শিক্ষার্থীবান্ধব প্রশাসন সাথে শিক্ষার্থীসুলভ শিক্ষকদের মনোভাব। তবে সবার আগে আমি যেটা মনে করি সেটা হচ্ছে পরীক্ষার আগে রেজাল্ট পাবলিশ করা জরুরি। এই রেজাল্ট এর জন্য অনেক শিক্ষার্থীকে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। নতুন বছরে আরেকটি প্রত্যাশা আমরা যাতে সুন্দর একটি অডিটোরিয়াম,জিমনেশিয়াম ও টিএসসি এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের উপহার দেয় যেটার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মনমানসিকতার উৎকর্ষ সাধন ত্বরান্বিত হয়।
'তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তি, গবেষণা, এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনায় দক্ষ করে গড়তে হবে।- এআর রুপক, শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ
মাস্টার্সের ইংরেজি বিভাগের এআর রুপক আহমেদ আরও বলেন, ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় সূচনা হয়েছে। এই বিপ্লব শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, এটি জাতির নতুন স্বপ্ন ও আশার প্রতীক। নতুন বছরের সূচনা লগ্ন থেকেই আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এক নতুনত্বের উন্মোচন করতে চাই। আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে নববর্ষের শুরু থেকেই নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন, প্রত্যাশা এবং চেতনার প্রতিফলন উন্মোচন করতে হবে। তরুণরাই নতুন বাংলাদেশের প্রকৃত স্থপতি। তরুণদের মধ্যে যদি সঠিক দিকনির্দেশনা থাকে, তবে তারা অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারবে,তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তি, গবেষণা, এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনায় দক্ষ করে গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাজনৈতিক সংস্কারের গুরুত্ব অপরিসীম, দেশে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এটি দূর করতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। তরুণ নেতৃত্ব এবং সুশিক্ষিত ব্যক্তিদের রাজনীতিতে আসার আহ্বান করছি । পাশাপাশি, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে একটি শক্তিশালী আইন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রস্তাব করছি
আমরা মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, নতুন বছরের শুরুতেই আমরা ভাসানীয়ানরা চায়, একে অপরের সাথে ভাতৃত্ববোধ বজায় রেখে সকল অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। যেমনটা আমরা জুলাই বিপ্লবে একে অপরের কাঁধে কাঁধ দেখে হেঁটেছিলাম। ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একে অপরের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। জুলাই বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। নতুন বাংলাদেশ হবে এমন এক দেশ, যেখানে ধর্ম, জাতি, বা শ্রেণির ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য থাকবে না। নারীর অধিকার, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন এবং উদ্যমই এই পথচলার মূল শক্তি। বাংলাদেশকে একটি ন্যায়বিচারপূর্ণ, মানবিক, এবং উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই।
'কাম্পাসে গুণগত শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে হবে' - তুষার আহমেদ, শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ
পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তুষার আহমেদ আরও বলেন, কাম্পাসে গুণগত শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে হবে, শিক্ষার্থীদের রাজনীতি সচেতন হওয়া উচিৎ যেন নিজ স্বার্থে কোন ব্যাক্তি বা দল ক্যাম্পাসকে ব্যবহার না করতে পারে। আমরা আশা রাখি শিক্ষার্থীবান্ধব প্রশাসন এবং শিক্ষকদের যথাযথ সহযোগিতা পেলে আমাদের শিক্ষার গুনগতমান উন্নয়ন সম্ভব হবে। আমরা সবাই এক সাথে থেকে নতুন বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ়
প্রতিজ্ঞা করছি।
শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার- মো. কামাল, শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ
অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. কামাল আরও বলেন, মাভাবিপ্রবির ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টার পর্যায়ে রয়েছে এবং ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চতুর্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টার শেষ করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে । করোনা মহামারি আমাদের শিক্ষা জীবন প্রায় দেড় বছর কেড়ে নিয়েছে । আমরা চাই ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা, ভাইভা, ল্যাব নিয়ে আমাদের ফাইনাল ইয়ার শেষ হয়ে যাক। এই লক্ষ্য অর্জনে নিরন্তর পরিশ্রম, নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষার প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ২০২৫ সালে শেষ করতে । শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষকরা যদি পাশে থেকে ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে এই যাত্রাকে সহজতর করে আমাদের জন্য মঙ্গল হয় । আশা করি ছাত্র, শিক্ষক ও প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ২০২৫ সালের মধ্যেই এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সফল সমাপ্তি নিশ্চিত করবে।