Logo
শিরোনাম

বাংলায় ইসলাম প্রচারে সুফীদের ভূমিকা

প্রকাশিত:রবিবার ২০ মার্চ ২০22 | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

মুসলিম বণিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম বাংলাদেশে ইসলামের সূচনা হয় এবং প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করে আলেম ও সুফি সাধকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক নিষ্ঠার ফলে। আরব, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, খোরাসান, মধ্য এশিয়া ও উত্তর ভারত থেকে আলেম ও সুফীগণ বাংলায় আগমন করেন। ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে তারা এক অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। তাঁদের চারিত্রিক মাধুর্যে উজ্জীবিত হয়ে হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায় দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেয়।

স্বাভাবিক কারণেই তৎকালীন হিন্দু ও অন্য শাসকবর্গ ইসলাম প্রচারকদের উপর ক্ষেপে উঠেন এবং সুফীদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাতে থাকেন। কাজেই প্রচার কাজে নিয়োজিত সুফীগণ ও তাদের শিষ্যদের সমভিব্যাহারে সমস্ত রাজাদের বিরুদ্ধে অসি চালনা করতে হয়েছিল। এ ময়দানে অনেকে হয়েছেন শহীদ আবার অনেকে হয়েছেন গাজী।

বাংলায় মুসলিম বিজয়ের পূর্বে যে সকল সুফীগণ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এদেশে আগমন করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হচ্ছেন:

শাহ মুহাম্মদ সুলতান রুমী: বাঙ্গালার সুবাদার শাহসুজার সনদপত্রে উল্লেখিত হয়েছে যে, শাহ মুহাম্মদ সুলতান রুমী ১০৫৩ সালে তাঁর মুরশিদ সৈয়দ শাহ সুখখুল আনাতিয়াসহ ময়মনসিংহ জেলার মদনপুরে আসেন। মদনপুরেই তাঁর মাযার বিদ্যমান।

শাহ সুলতান বলখী মাহী সাওয়ার: তিনি প্রথমে ঢাকার হরিরামপুর নগর এবং পরে বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ে ইসলাম প্রচার করেন। মৎস্যাকৃতি নৌকায় সমুদ্রপথে বাংলায় আগমন করার কারণে তিনি মাহী সাওয়ার ওলী নামে খ্যাত।

বাবা আদম শহীদ: রাজা বল্লাল সেনের শাসনামলে (১১৫৮-৭৯) তিনি ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার আবদুল্লাহপুর গ্রামে ইসলাম প্রচার করতে আসেন। যুদ্ধে তিনি শহীদ হন এবং এখানেই তাঁর মাযার অবস্থিত।মাখদুম শাহ দৌলা শহীদ: ইয়ামেনের অধিবাসী মাখদুম শাহ দৌলা এক বোন, তিন ভাগিনা ও বহু শিষ্যসহ পাবনা জেলার শাহজাদপুর অঞ্চলে আগমন করেন। ইসলাম প্রচারের এক পর্যায়ে স্থানীয় হিন্দু রাজার সাথে এ দরবেশের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মাখদুম শাহসহ ২১ জন মুজাহিদ শহীদ হন। এরপর সমগ্র বগুড়া অঞ্চলে ইসলাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

শাহ নেয়ামতুল্লাহ বুতশিকন: মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বহু আগে শাহ নিয়ামতুল্লাহ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন। ঢাকা নগরীর সন্নিহিত এলাকায় তিনি ইসলাম প্রচার করেন। একদা হিন্দুরা তাঁর ইবাদতে বিঘ্ন ঘটালে তিনি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে হিন্দুদের মূর্তির প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করতেই মূর্তিগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। এরপর হিন্দুরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে। ঢাকার দিলকুশায় তাঁর মাযার অবস্থিত।

সৈয়দ নাসিরউদ্দীন শাহ আউলিয়া: তিনি দিনাজপুর জেলার প্রাচীনতম ইসলাম প্রচারক। ওই অঞ্চলে তিনি সৈয়দ নেকমদ’বা নেকবাবা বলে পরিচিত।

জালালুদ্দীন তাবরিযী: পারস্যের তাবরিজ নগরে জন্মগ্রহণকারী জালালুদ্দীন তাবরিজী সুলতান গিয়াস উদ্দীন খিলজীর শাসনামলে তৎকালীন বাংলার রাজধানী মালদহ জেলার লাখনৌতি নগরে উপনীত হন এবং রাজধানী থেকে ১৭ মাইল দূরে পান্ডুয়ায় আস্তানা স্থাপন করেন। বাংলার উচ্চশ্রেণীর হিন্দু ও বৌদ্ধসমাজ তাঁর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। মুসলিম বিজয়ের পূর্বে আরো যে সকল সুফী এদেশে আগমন করেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মাখদুম শাহ, গজনবী, বায়েজীদ বোস্তামী, শায়খ ফরিদ উদ্দীন শকরগঞ্জ প্রমুখ।

মুসলিম বিজয়ের পর যে সকল সুফী-আলেমগণ ইসলাম প্রচারের জন্য এদেশে আগমন করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:

শেখ শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা: বুখারার অধিবাসী সুফী শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা বিহারের মানের হয়ে বাংলার সোনারগাঁও আসেন সুলতান বুগরাখান ও সুলতান রুকনউদ্দীন কায়কাউসের শাসনামলে। তিনিই প্রথম এদেশে বোখারী শরীফ নিয়ে আসেন। সোনারগাঁও-এ তিনি ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ১৩০০ সালে ইন্তেকালের পর সোনারগাঁও-এ তিনি সমাধিস্থ হন।

শরফুদ্দীন এহিয়া মানেরী: বিহারের অধিবাসী মানেরী ১৫ বছর বয়সে শায়খ শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামার সাথে সোনারগাঁও-এ আসেন। মানেরী ছিলেন সোনারগাঁও শিক্ষা কেন্দ্রের জ্ঞানের নিদর্শন।

মাওলানা আতা: ১৩০০ থেকে ১৩৫০ সালের মধ্যে মাওলানা আতা দিনাজপুরে ইসলাম প্রচার করেন। ১৩৬৩ সালে নির্মিত একটি গৃহের শিলালিপিতে তাঁকে ইসলামের বিশেষ পন্ডিত এবং সত্য ও ধর্মের প্রদীপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

হযরত শাহাজালাল ইয়ামেনী: পূর্ববাংলায় ইসলাম প্রচারের প্রধান পথিকৃত এই সনামধন্য সুফী দরবেশ ১৩০৩ সালে রাজা গৌড়গোবিন্দকে পরাজিত করে সিলেট অধিকার করেন। এই যুদ্ধে তাঁর সিপাহসালার ছিলেন সৈয়দ নাসির উদ্দীন। মুসলিম আনুমানিক ১৩৪৭ সালে সিলেটেই ইন্তেকাল করেন। বিশ্ব পর্যটক ইবনে বতুতা বলেন, বাংলার অধিকাংশ লোক তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। সিলেটে তাঁর মাযার অবস্থিত।

সাইয়েদ আহমদ কল্লা শহীদ: তিনি শাহজালালের অন্যতম শিষ্য ছিলেন। পরগনায় ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে হিন্দু রাজা আচক নারায়ণের সাথে যুদ্ধে শহীদ হন। ভক্তরা তাঁর কর্তিত মস্তকের সন্ধান পেয়ে তা আখাউড়ার খড়মপুর গ্রামে সমাধিস্থ করেন। আর একারণেই তিনি কল্লা শহীদ নামে পরিচিত।

শাহ মাখদুম রূপোশ: বর্তমান রাজশাহী জেলার পূর্বনাম ছিল মহাকাল গড়। ১২২৫ সালে বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচার করতে এসে তিনি মহাকাল গড় জয় করেন এবং এখানে ইসলাম প্রচার করেন। ১৩০৩ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন।

শেখ নূর কুতুবুল আলম: তিনি ছিলেন বাংলার ইলিয়াছশাহী বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা সুলতান গিয়াসউদ্দীন আজম শাহের সহপাঠী। তিনি তৎকালীন অবৈধ, কুখ্যাত রাজা গণেশের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেন।

খাজা খানজাহান আলী: সর্বজনমান্য দরবেশ হিসেবে সুপরিচিত খানজাহান আলীই দক্ষিণ বঙ্গজয়ের কৃতিত্বের অধিকারী। পরবর্তী ইলিয়াস শাহী বংশের শাসনামলে তিনি দক্ষিণবঙ্গ জয় করেন।

এ দরবেশ শাসনকর্তা বাগেরহাট শহর নির্মাণ করেন, এবং ঐ অঞ্চলের নামকরণ করেন খলিফতাবাদ, বহু রাস্তা, দীঘি, মসজিদ, শিক্ষালয় এবং বাগেরহাটের ষাট গুম্বুজ মসজিদ তিনিই নির্মাণ করেন।

শাহআলী বাগদাদী শাহআলী বাগদাদী বাংলায় আসেন ১৪৮৯ সালে। দিল্লী হয়ে প্রথমে তিনি ফরিদপুর আসেন। পরে তিনি ঢাকার আশে-পাশে ইসলাম প্রচার করেন। ঢাকার মিরপুরে তাঁর মাজার রয়েছে।

মুসলিম বিজয়ের পর আরও যারা ইসলাম প্রচার করেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন,

উলুগ-ই-আজম হুমায়ন জাফরখান বাহরাম: তিনি দিনাজপুরের দেবীকোট অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন। পীর বদরুদ্দীন ইসলাম প্রচার করেন দিনাজপুরের হেমতাবাদ নামক স্থানে।

সৈয়দ জালালুদ্দীন বুখারী: ইসলাম প্রচার করেন রংপুর জেলার মাহীগঞ্জে। ৪০ জন ইসলাম প্রচারকের একটি দল দিনাজপুর অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন, যাদেরকে চিহিল গাজী বলা হতো।

খাজা চিশতী বেহেশতী আকবরের শাসনামলে ঢাকায় ইসলাম প্রচার করতে আসেন। ঢাকার হাইকোর্টের পার্শ্বে তার সমাধি রয়েছেন। এরা ব্যতীত আরো রয়েছেন সায়্যিদ আব্বাস আলী মক্কী, শাহ সুফী শহীদ, শায়খ আবদুল্লাহ কিরমানী, মাওলানা তাকিউদ্দীন আরাবী, শাহতুর্কান শহীদ, পীর বদর আলম, শেখ রোজা বিয়াবানী, আখি সিরাজউদ্দীন উসমান, শেখ আলাউল হক, শাহ আফজল মাহম্মুদ শায়খ জালাল হালবী, শাহ সুলতান আনসারী, শাহ চাঁদ আওলিয়া।

হাজী শরীয়াতুল্লাহ (রহ.) ১৭৮০ সালে মাদারীপুর মহকুমার শামাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইংরেজ শাসন ও তৎকালীন হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন পরিচালনা করেন। তিনি ইসলামের সংস্কার করেন এবং ভন্ডপীর ও বেদাতীদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন। তাঁর পরিচালিত আন্দোলন ফরায়েজী আন্দোলন নামে পরিচিত।

মাওলানা আবুবকর সিদ্দিক (রহ.) ১৮৪১ সালে কলকাতার হুগলী জেলার ফুরফুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সুফী ফতেহ আলীর নিকট তিনি বয়াত গ্রহণ করেন। মাওলানা আবুবকরের সংস্কার ছিল বহুমুখী ও গঠনমূলক।

মাইজভান্ডারী দরবার শরীফের প্রতিষ্টাতা শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারীর। কথিত আছে, তার পুর্বপুরুষ সৈয়দ হামিদ উদ্দীন গৌড়ি ১৫৭৫ সালে ইসলাম প্রচার মানসে চট্টগ্রামে আগমন করেন। এবং পটিয়া থানার কাঞ্চননগরে বসতি স্থাপন করেন। তার এক পুত্র সন্তান সৈয়দ আবদুল কাদের ফটিকছড়ি থানার আজিম নগরে ইমামতির দায়িত্ব নিয়ে বসতি স্থাপন করেন। তার প্রপৌত্র মওলানা সৈয়দ মতি উল্লাহর পবিত্র ঔরসে  শাহসুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক বাংলা ১২৩৩ সনের ১ মাঘ রোজ বুধবার জোহরের সময় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার মাইজভান্ডার শরীফ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাওলানা শাহসুফ সৈয়দ মতিউল্লাহ এবং মাতার নাম সৈয়দা খাইরুন্নেসা বেগম।

মাওলানা নেছার উদ্দীন (রহ.) বরিশালের বর্তমান পিরোজপুর জেলার ছারছীনা গ্রামে তাঁর জন্ম। তিনি ফুরফুরার আবু বকর সিদ্দিকের শিষ্য ছিলেন। বাংলায় ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি। তিনি হাজার হাজার মসজিদ, মাদরাসা ও খানকা প্রতিষ্ঠা করেন।

মাওলানা সৈয়দ এছহাক (রহ.) বরিশালের চরমোনাইতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চরমোনাইতে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলাম প্রচার করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত চরমোনাইতে বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামী সম্মেলন অুনষ্ঠিত হয়ে থাকে। এছাড়া বাংলায় ইসলাম প্রচারে আরো যাদের অবদান রয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, মাওলানা আবদুল্লাহাহিল কাফি (রহ.), মাওলানা সামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.), মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুযুর (রহ.), কিশোরগঞ্জের মাওলানা আতাহার আলী (রহ.), চট্টগ্রামের খতীবে আযম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ (রহ.), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাওলানা তাজুল ইসলাম (রহ.), সিলেটের মাওলানা সৈয়দ আবদুল করিম শায়খে কৌড়িয়া (রহ.) প্রমুখ।


আরও খবর



ঈদের ছুটিতে রাজধানীর নিরাপত্তা জোরদার

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৯ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

ঈদের আনন্দ পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। ফাঁকা ঢাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো ঘটনা মোকাবিলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বৈঠক হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে। চুরি ছিনতাইসহ ঈদকেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধ দমনে দেয়া হয়েছে একগুচ্ছ নির্দেশনা। মহাসড়কেও ডাকাতি ছিনতাই রোধে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

গ্রামে ছুটছে মানুষ। উপলক্ষ ঈদ, তাই আগ্রহটাও বেশি, সংখ্যাও অনেক। তবে এবারের ঈদে মানুষ ঢাকা ছাড়ছে অন্যান্য বারের চেয়ে কিছুটা বেশি। কারণ লম্বা ছুটি।

ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা সাধারণ মানুষের চাপও বাড়ছে। এতে ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানী। আর ফাঁকা ঢাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অপ্রতাশিত নয়। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে স্বর্ণের দোকান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা বেশি ঘটে। মহানগর পুলিশ বলছে, এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। বৈঠক হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে। দেয়া হয়েছে একগুচ্ছ নির্দেশনা।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, বাড়িওয়ালা এবং দোকান মালিকদের নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথার্থ করে রাখার কথা বলা হয়েছে। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার, অফিসার ইনচার্জ, বিওপি (বর্ডার আউটপোস্ট) পুলিশ অফিসারদেরকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, ১৪টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে নগরবাসীকে। এর মধ্যে অন্যতম অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি।

এ বিষয়ে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ঢাকার বাসিন্দাদেরকে খুব দামি জিনিসপত্র থাকলে সেটিকে সাবধানে রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া যারা গ্রামে যাচ্ছেন, তারা প্রত্যেকে যেন গ্যাসের চুলাগুলো বন্ধ করে যান। গ্যাস সিলিন্ডার থাকলে যেন সাবধানে নিরাপদ জায়গায় বন্ধ করে রেখে যান।

এদিকে হাইওয়েতে ডাকাতি, ছিনতাইরোধে তৎপর আছে পুলিশ। ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।

ঢাকার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ঈদযাত্রা যেন সুন্দর, নির্বিঘ্ন এবং যানজটমুক্তভাবে নিরাপদে আনন্দমুখর পরিবেশে হয়, সেটি নিশ্চিত করতে আমাদের জেলা পুলিশের ১ হাজার ২০০ সদস্য ট্রাফিক এবং নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত থাকবেন।

সব ব্যাংক এবং এটিএম বুথের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি ঢাকায় প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার পথে থাকছে ২৪ ঘণ্টার চেকপোস্ট।


আরও খবর

সাত ধরনের মোটরযানের কর মওকুফ

বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪




রাজধানীর অধিকাংশ ভবনই অবৈধ

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

মেগাসিটি ঢাকার ৭৪ ভাগ ভবনই অবৈধ। অবাক করার মতো হলেও বাস্তবতা বলছে, এই নগরের মাত্র ২৬ ভাগ ভবন তৈরি হয়েছে নিয়মনীতি মেনে। বাকি সবক্ষেত্রেই হয়েছে ব্যত্যয়। তবে এবার তৃতীয়পক্ষ দিয়ে জরিপ করে নগরের শতভাগ ভবনের নকশা হাতে পেতে চায় রাজউক। তিন ধাপে চিহ্নিত করে ভেঙে ফেলা হবে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। নগরবিদরা বলছেন, কষ্টসাধ্য হলেও সম্ভব। তবে বাস্তবায়নে খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে রাজউককেই। এই মহানগরে প্রায় চার লাখ ভবন রয়েছে, যা বিধির বাইরে।

৪০০ বছরের পুরনো শহর ঢাকা। বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করে এর গোড়াপত্তন হলেও এখন টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে ঠেকেছে সীমানা। স্বাধীন বাংলার ২০ লাখ মানুষের নগরে মতিঝিল আর কারওয়ান বাজারই ছিলো দুটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র। ৫৩ বছর পর শহরের জনসংখ্যা এখন দুই কোটির বেশি।

এমন অবস্থায় আবাসিক ভবনে বাণিজ্য কিংবা বাণিজ্যিক ভবনে হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ এমনকি আবাসিক ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

রাজউকের কাগজে-কলমে ধানমন্ডি একটি আবাসিক এলাকা। কালের বিবর্তনে তা এখন পুরদস্তুর বাণিজ্যিক এলাকায় রূপ নিয়েছে। এখানকার সাত মসজিদ রোডের কথাই ধরা যাক। একটি সড়কের মধ্যে যে পরিমাণ হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রেস্তোঁরা, বাণিজ্যিক ভবন, অফিস রয়েছে; একক সড়ক হিসেবে কোন সড়কে এতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বে নজিরবিহীন বলা যায়।

যেখানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই কথিত তিলোত্তমা ঢাকায় সেখানে আলাদা করে আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক এলাকা সেটাও এখন বিলাসিতার পর্যায়। আর তাইতো অপরিকল্পিত এই নগরে কদিন বাদেই নিমতলী, এফআর টাওয়ার, চুড়িহাট্টা কিংবা বেইলী রোডের মতো ট্রাজেডি সামনে আসে।

রাজউকের তথ্যই বলছে, ঢাকায় ৭৪ ভাগ ভবনই গড়ে উঠেছে নকশার বাইরে। বাকি ২৬ ঠিকঠাক। তবে এবার এই নগরের সব ভবনের নকশা নিজেদের মুঠোয় পেতে চায় রাজউক। নীতিমালা প্রস্তুত করে তৃতীয় পক্ষ দিয়ে করা হবে জরিপ।

সংস্থাটির প্রধান নগরবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাজউকের পক্ষে একা এ কাজ করা কঠিন। তাই আমরা তৃতীয় পক্ষ নিয়োগ করার চেষ্টা করছি। তারা সরেজমিনে সব ভবন পরিদর্শন করে অগ্নি নিরাপত্তা এবং ভূমিকম্প ঝুঁকির বিষয়ে দেখবে।

তারপর তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা যতোই হোক তা গুড়িয়ে দেয়া হবে। বাকিদের দেয়া হবে সংশোধনরে সুযোগ। এরপর বিশাদ অঞ্চর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান আশরাফুল ইসলাম।

নগরবিদরা বলছেন, কেবল পরিকল্পনা নয় বাস্তবায়নও দেখতে চান তারা। আর সেজন্য দরকার প্রতিষ্ঠানটির সদিচ্ছা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এই কাজে কেউ যেন হয়রানি না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। রাজউকের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি আছে সেই খোলস থেকে বের হতে হবে। জনগণের নিরাপত্তা দিতে হবে। আর যারা অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার করতে হবে।


আরও খবর

সাত ধরনের মোটরযানের কর মওকুফ

বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪




নারীকে পাথর ছুড়ে হত্যার প্রথা ফিরিয়ে আনছে তালেবান

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

আফগানিস্তানে এবার নারীদের পাথর ছুড়ে হত্যার প্রথা ফিরিয়ে আনল তালেবান সরকার। ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে তাদের পাথর ছুড়ে হত্যা করা হবে। গত শনিবার (২৩ মার্চ) রাষ্ট্রীয় টিভিতে সম্প্রচারিত এক অডিওবার্তায় তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এই ঘোষণা দেন। দ্যা গার্ডিয়ান।

টেলিগ্রাফের হাতে আসা এক ভিডিওতে আখুন্দজাদা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নারীদের অধিকারের পক্ষে যে ওকালতি করছে তা শরিয়াহবিরোধী। আপনারা বলছেন, পাথর মেরে হত্যা করা নারী অধিকারের লঙ্ঘন। কিন্তু আমরা শিগগিরই ব্যভিচারের শাস্তি কার্যকর করব। আমরা নারীদের জনসমক্ষে বেত্রাঘাত করব। আমরা তাদের জনসমক্ষে পাথর মেরে হত্যা করব। তিনি আরও বলেন, কাবুল দখল নিয়েই তালেবানের কাজ শেষ হয়নি, এটি কেবল শুরু মাত্র। তার এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার কর্মীরা। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চুপ থাকায় এমন পদক্ষেপ নিতে পারছে তালেবান সরকার।

এ বিষয়ে কথা বলেছেন সাফিয়া আরেফি। তিনি একজন আইনজীবী এবং আফগান মানবাধিকার সংস্থা উইমেনস উইন্ডো অব হোপের প্রধান। তার মতে, এ ঘোষণাটি আফগান নারীদের ১৯৯০-এর দশকে তালেবান শাসনের অন্ধকারতম দিনে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এখন তালেবানদের শাস্তি থেকে তাদের বাঁচাতে কেউ তাদের (নারীদের) পাশে দাঁড়াচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নারী অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিতে নীরব থাকতে চাইছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একজন আফগান গবেষক সাহার ফেত্রাত বলেছেন: দুই বছর আগে, নারীদের জনসমক্ষে পাথর মেরে হত্যা করার সাহস তাদের ছিল না; এখন তারা তাও করবে। তারা তাদের কঠোর নীতিগুলো একে একে পরীক্ষা করেছে এবং এটি এই পর্যায়ে পৌঁছেছে কারণ তাদের অপব্যবহারের জন্য দায়ী করার মতো কেউ নেই।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানের নারীরা অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও জনসমাগমপূর্ণ স্থানে কোনো প্রবেশাধিকার নেই। একজন তরুণ ছাত্রীর বরাত দিয়ে জানা যায়, দেশটিতে অনেক পরিবারের জন্য মেয়েদের একমাত্র ভবিষ্যৎ হলো বিয়ে। তাদের মধ্যে হতাশা ব্যাপক। গত দুই বছরে মেয়েদের আত্মহত্যার হার অনেক বেড়েছে। এটা দুঃখজনক।


আরও খবর



প্রেম-ভালোবাসা'র বিয়ে, নওগাঁয় মেয়ের বাবার ছুরিকাঘাতে ছেলের বাবা নিহত

প্রকাশিত:শুক্রবার ২২ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :

নওগাঁয় বেয়াইয়ের ছুরিকাঘাতে আজিবর রহমান (৫০) নামে এক ব্যাক্তির মৃত্যু হয়েছে। এঘটনায় ছুরিকাঘাতকারী বেয়াইকে জনতা আটক করে পুলিশে দিয়েছে। মর্মান্তিক এঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টারদিকে নওগাঁর মান্দা উপজেলার বৈদ্যপুর বাজারে। নিহত আজিবর ভালাইন ইউনিয়ন এর বনতসর গ্রামের বাসিন্দা। ছুরিকাঘাতকারী তার বেয়াই দেলোয়ার হোসেন (৪৮) সে ও একই গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজিবর রহমানের ছেলে নাজমুল হোসেন একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেন এর মেয়ে উর্মি খাতুনের সাথে প্রেম- ভালোবাসা'র সম্পর্ক করে প্রায় ৩ বছর পূর্বে তাদের বিয়ে হয়।

এ কারণে বিয়ের পর থেকেই উভয় পরিবারের মধ্যে বিরোধ ছিলো। মেয়ের বাবা দেলোয়ার হোসেন একজন ফল ব্যবসায়ী। সে বৈদ্যপুর বাজার এর স্কুল মার্কেটে ফলের ব্যবসা করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে পারিবারিক বিষয় নিয়ে দু' বেয়াই বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে দেলোয়ার হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানে থাকা চাকু নিয়ে বেয়াই আজিবর রহমান এর পেটে ঢুকিয়ে দেয়। এসময় স্থানিয়রা তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী  মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার নিশ্চিত করে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাম্মেল হক কাজী বলেন, সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে ঘটনাস্থলে আটক করে রাখা দেলোয়ার হোসেন কে উদ্ধার পূর্বক পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিহত ব্যক্তির মৃতদেহ ময়না তদন্ত সহ আইনানুহ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।


আরও খবর



গ্যাস সিলিন্ডারে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

প্রকাশিত:শুক্রবার ১২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহারের কারণে প্রতি বছরই অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটছে। ফুটপাত, চায়ের দোকান থেকে শুরু করে যেখানে সেখানে ব্যবহার হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। এতে ঘরে ঘরে মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়েছে। দিন দিন বেড়েই চলেছে অগ্নিকাণ্ড। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পরে বের হচ্ছে নানা কারণ। তাৎক্ষণিক প্রশাসন নরেচরে বসলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার পূর্বের মতো অবস্থা। প্রতি বছর বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটছে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ ও বিদ্যুৎ থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগে থেকে সচেতনতা ও কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে এসব বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।

পরিসংখ্যান বলছে বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বিদ্যুৎ গোলযোগ, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ কিংবা জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণজনিত কারণে। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ঘটেছে ৯ হাজার ৮১৩টি দুর্ঘটনা। এছাড়া গ্যাস সরবরাহ লাইনে আগুন থেকে ঘটেছে ৭৭০টি, স্থির বিদ্যুৎ থেকে ১১টি, গ্যাস ইলেক্ট্রিক ও মাটির চুলা থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে চার হাজার ১৭৫টি। তার আগের বছর ২০২২ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ঘটেছে নয় হাজার ২৭৫টি দুর্ঘটনা। এছাড়াও গ্যাস সরবরাহ লাইনে আগুন থেকে ঘটেছে ৭৯৫টি, স্থির বিদ্যুৎ থেকে ১৯টি, সিলিন্ডার ও বয়লার বিস্ফোরণ থেকে ঘটেছে ৯৪টি অগ্নিকাণ্ড। চুলা থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তিন হাজার ৩৬৮টি। যার অধিকাংশই গ্যাস ও ইলেকট্রিক চুলা থেকে।

সম্প্রতি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে লাগা আগুনে ৪৬ জন নিহতের ঘটনা ঘটে। গেল ২৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এই আগুন লাগে। ভবনটিতে থাকা একটি রেস্টুরেন্টে এলপিজি সিলিন্ডার থেকেই এই আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হয়। আগুন মুহূর্তের মধ্যে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেখানে। তার কয়েক দিন পরেই গত ১৩ মার্চ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী জমি ভাড়া নিয়ে কলোনি তৈরি করে ঘর ভাড়া দিয়েছেন। একটি ঘরের সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে যায়। তিনি পাশের দোকান থেকে একটি সিলিন্ডার কিনে আনেন। সিলিন্ডার লাগানোর সময় চাবি খুলে গিয়ে পাশের চুলা থেকে আগুন ধরে যায়। এ সময় আশপাশের উৎসুক নারী, পুরুষ ও শিশুদের শরীরে আগুন লেগে যায়।

গেল বছরও বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালের ৭ মার্চ বিকেল পৌনে ৫টার দিকে গুলিস্তানে বিআরটিসির বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে সাততলা একটি ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় ২৩ জনের মত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছিলেন দেড় শতাধিক মানুষ। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা গ্যাসের লাইনের কারণে হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি।সিদ্দিকবাজারের ক্যাফে কুইন ভবনের নিচে ছিল গ্যাসের লাইন। সেখানে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন ছিল না। তাই লাইনের লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস জমা হয়। সেই গ্যাস থেকেই শর্টসার্কিট বা দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে হয় বিস্ফোরণের সূত্রপাত।

তারও মাত্র দুই দিন আগে ৫ মার্চ রাজধানীর ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাব এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী চারজনের মৃত্যু হয়। এছাড়াও এ ঘটনায় আহত হন অন্তত ৪০ জন। জমে থাকা গ্যাস থেকেই সায়েন্স ল্যাব এলাকার ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল।

২০২২ সালের ৫ জুন সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।আহত হন অনেক। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কারখানার আশপাশের অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা। বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়ে যায় লোহার পাত। ২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে শিশুসহ ৩৪ মুসল্লির মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ বিভাগ ও জেলা প্রশাসন পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে তিতাস সংযোগ লাইনের লিকেজে মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা এবং হঠাৎ বিদ্যুৎ স্পার্কিংয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটার বিষয়টি সামনে চলে আসে।

এই ধরনের দুর্ঘটনা হরহামেশাই ঘটে চলছে। দুর্ঘটনার পরে বেরিয়ে আসে নানা ধরনের অসঙ্গতির তথ্য। দুর্ঘটনা ঘটার পরে দায় নিতে চায় না কেউ। বিদ্যুৎ গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান, সিলিন্ডার প্রস্তুতকারী, রাজউক, সিটি করপোরেশন, বিস্ফোরক অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরকে ঠেলাঠেলি করে। তবে দায় সাধারণ মানুষেরও কম নয়। এই দুর্ঘটনাগুলোতে যেমন বহু মানুষ হতাহত হচ্ছে তেমনি হচ্ছে আর্থিক ক্ষতিও। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, শুধু ২০২৩ সালেই অগ্নিদুর্ঘটনায় ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ২০২২ সালে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৯ টাকা। এছাড়াও ২০২১ সালে ২১৮ কোটি ৩১ লাখ ৯৭ হাজার ৪০৩ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পান দোকান, মুদি দোকান, ওষুধের দোকানসহ বিভিন্ন অনিরাপদ স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকি না থাকায় লাইসেন্স ছাড়া নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে দেদারছে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। শুধু যেখানে সেখানে বিক্রিই নয়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা ছাড়াই বিভিন্ন ফুটপাত, চায়ের দোকান, রেস্তোরাঁয় এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে দেদারছে।

২০০৯ সালে পাইপলাইনে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো নতুন সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে বেড়েছে এলপি-নির্ভরতা। এলপিজি গ্রাহকের একটি বড় অংশই গ্রামাঞ্চলের। এ মুহূর্তে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩০টি কোম্পানির অন্তত দুই কোটি সিলিন্ডার বাজারে রয়েছে। বিস্ফোরক পরিদফতরের তথ্য বলছে, গত এক বছরে এলপিজি সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ছয় লাখের বেশি। এলপিজি ছাড়া অন্যান্য সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে তিন লাখের বেশি। পাশাপাশি দেশেও সিলিন্ডার নির্মাণের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করেছে দেশে নির্মিত সিলিন্ডার। কিন্তু এসব সিলিন্ডারের মান পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত কোনো পরীক্ষা কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি।

শুধু যত্রতত্র এলপিজির ব্যবহারই নয়, যেখানে সেখানে রয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। তিতাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ছয় লাখ দুই হাজার ৮৮৪টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে রীতিমত ইঁদুর বেড়াল খেলা চলে। কর্তৃপক্ষ একদিকে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, অন্যদিকে দুষ্কৃতিকারীরা সংযোগ দিয়ে দেয়। চুরি করে সংযোগ দেওয়ায় থাকে না কোনো নিয়ম নীতির বালাই। এতে দেখা দেয় দুর্ঘটনা। এছাড়াও সারাদেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগও। বিভিন্ন বস্তি ঘনবসতি এলাকা ও ফুটপাতে যেখানে সেখানে রয়েছে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ৪০ হাজার ৯২টি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ দুর্ঘটনাগুলো মূলত গ্যাস লিকেজ থেকেই ঘটে।সিলিন্ডারের হোসপাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে গ্যাস লিক হয়। সেই লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে বাইরে কোথাও জমতে থাকে। পরে তা সামান্য আগুন, এমনকি স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসতেই জমে থাকা সেই গ্যাস ভয়াবহ বিস্ফোরণ সৃষ্টি করে। সিলিন্ডারের মধ্যে এলপি গ্যাস যে চাপ তৈরি করে, মানসম্পন্ন সিলিন্ডারে তারচেয়ে চারগুণ বেশি চাপ সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে। ফলে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম। নজিরও তেমন নেই। গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়নি। লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়ে আগুন ধরে যায়। এজন্য সিলিন্ডারের সঙ্গে যে রেগুলেটর, হোসপাইপ, চুলাসহ অন্যান্য জিনিস ব্যবহৃত হয়, সেগুলো মানসম্মত হতে হবে।এই অনুষঙ্গগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটছে। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন কঠোরভাবে মানার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বলছে, ২০০৯ সালে দেশে এলপিজির চাহিদা ছিল ৬৫ হাজার টন। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১৪ লাখ টন। ২০০৯ সালে এলপিজি ব্যবহারকারী ছিল দুই লাখ ২৫ হাজার, বর্তমানে তা ৪০ লাখ। এসব এলপিজির ৮৪ শতাংশ রান্নার কাজে, ১২ শতাংশ শিল্পে এবং চার শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে যানবাহনে।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম বলেন, এসব ক্ষেত্রে যেমন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা আছে তেমনি বড় দায়বদ্ধতা হচ্ছে কনজ্যুমারদের। গ্যাস দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যেসব বাসায় গ্যাস ব্যবহার করা হয় সেসব বাসা-বাড়িতে ভেন্টিলেশন থাকতে হবে। যেখানে গ্যাসের চুলা আছে সেখানে ভালো ভ্যান্টিলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। উপরে খোলামেলা থাকতে হবে যেন গ্যাস লিকেজ গলে সেটা বের হয়ে যায়। এসব দেখভাল করার দায়িত্ব তিতাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। একটা দুর্ঘটনা ঘটার পরে অনেক ধরনের কথা হয় কিন্তু আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় দেখা যায়, দোকানপাটে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে যেখানে বৈদ্যুতিক তারের যতটুকু সক্ষমতা তার থেকে বেশি ভোল্টেজ ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বিষয় তো দায় সবারই। যে অবৈধ সংযোগ নিচ্ছে তারও। আবার যারা দিচ্ছে তাদেরও। ভোক্তা পর্যায়ে সবকিছু সঠিকভাবে হচ্ছে কি না সেটা দেখার দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগের। মূল কথা আগে থেকে সবাই সচেতন হলে এসব দুর্ঘটনা এরানো সম্ভব।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, দেশজুড়ে অসংখ্য গ্যাস বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এসব দুর্ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, দেশের গ্যাস সরবরাহ ও সংযোগ কতটা ভঙ্গুর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি।


আরও খবর

সাত ধরনের মোটরযানের কর মওকুফ

বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪