এম, নুরুন্নবীঃ জহুরা খাতুন (৭০) বয়সের ভারে ঠিক মতো উঠে দাড়াতেই কষ্ট হয়। ৫২ বছর আগে স্বামী মোঃ আলীকে হারালেও চার ছেলে মেয়ের কেউই আজ পাশে নেই তার। নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র সঙ্গী দশ বছরের নাতি শাকিল। স্বামীর মৃত্যুর পরপরই নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যান।
আশেপাশের এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করেই চলে জহুরা খাতুনের সংসার। থাকেন তজুমদ্দিনের চাঁদপুর ইউনিয়নের কেয়ামুল্যা বেড়িবাঁধ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় একটি ঝুঁপড়ি ঘরে। এখানে দীর্ঘ ৪-৫ বছর ধরে বসবাস করছেন। রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়েই জহুরা বেগমকে এই বয়সে এসেও জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রতি রাতে ঘুমানোর চিন্তায় বরাবরই ব্যাকুল হয়ে পড়েন। বেড়িবাঁধের এই ঝুপড়ি ঘরটিতে একটু বাতাস কিংবা বৃষ্টি এলেই নির্ঘুম রাত কাটে তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি তজুমদ্দিনের ইউএনও মরিয়ম বেগমের কাছে সাহায্যের জন্য গেলে তিনি জানতে পারেন গৃহহীন জুহুরার বর্তমান অবস্থার কথা। পরে ইউএনও তাকে মুজিব বর্ষের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের ঘরের ব্যবস্থা করে দেন।
জহুরার মতোই গৃহহীন চাঁদপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের স্বামী পরিত্যক্তা নুরজাহান বেগম (৭২)। ওসমান ফারুক নামের স্থানীয় এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে ওই নারীর ভূমিহীন ও দারিদ্রতার চিত্র তুলে ধরলে বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এর। পরে সাংসদ শাওনের নির্দেশে তাকে আবাসনের ব্যবস্থা করে উপজেলা প্রশাসন। অবশেষে সেই জহুরা খাতুন এবং নুর জাহানরা পেয়েছেন মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের ঘর।
ঘরের চাবি পেয়ে দুজনেই বেশ উচ্ছ্বসিত। অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে বারবার কেঁদে ফেলছেন। জহুরা বললেন, "স্বামীর মৃত্যুর পর নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছি। আর কখনোই নিজের ঘর ছিলোনা। ৫২ বছর পর নিজের ঘরে ঘুমাবো। এর চেয়ে শান্তি আর কিছুই নেই। শেখ হাসিনা কে আল্লাহ বেশিদিন বাচিয়ে রাখুক।" অপরদিকে নুর জাহান ঘর পাওয়ার আনন্দে ধন্যবাদ দেন সাংসদ শাওনকে। নুর জাহান অসহায় মানুষের পাশে থাকার জন্য এমপি শাওনকে বারবার এ-ই এলাকার মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে চান বলে জানান।
২৬ এপ্রিল সারাদেশের সাথে একযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব গৃহহীনদের ঘরের চাবি ও দলিল হস্তান্তর অনুষ্ঠানের উদ্ভোদন করেন। এর অংশ হিসেবে অত্র উপজেলার ৪৯ ভুমিহীনের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উপহারের ঘরের চাবি ও ২ শতাংশ জমির দলিল হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ইউএনও মরিয়ম বেগমের সভাপতিত্বে দলিল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন দুলাল, ইউএনও মরিয়ম বেগম, চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল্যাহ কিরন, সোনাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিশু, চাচড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের, শম্ভুপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রাসেল, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাসেদ খান প্রমুখ।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার তিনটি ইউনয়নে ১৮৪ গৃহহীন ও ভুমিহীনকে নির্বাচিত করা হয়। এদের মধ্যে ৪৯ জনকে জমির দলিল হস্তান্তর করা হলেও বাকীদের খুব শীঘ্রই ঘর বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানানো অনুষ্ঠানে।