কর ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রায় ১২ কোটি টাকা পরিশোধ
করতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
বুধবার (৩১ মে) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি রাশেদ জাহাঙ্গীরের
হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নোটিসের
বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা খারিজ করে
দিয়েছে আদালত।
আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুস্তাফিজুর
রহমান খান,
সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে
শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে
ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ফারজানা রহমান।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, নিজের চিকিৎসা, দেশ-বিদেশে যাওয়ার জন্য অর্থ খরচ করছেন। স্ত্রী ও সন্তান ট্রাস্ট থেকে
ভাতা পাবেন বলা হয়েছে। যে কারণে মৃত্যুচিন্তা করে তিনি ট্রাস্টে দান করেননি। উনি
কর পরিহার করার চেষ্টা করেছেন। রেফারেন্সে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। কর আরোপ নিয়ে
আদেশ সঠিক কি না? রায়ে কর আরোপের সিদ্ধান্ত সঠিক বলা হয়েছে।
রেফারেন্স আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। খারিজের ফলে আরোপিত দানকর দিতে হবে। এই অর্থের
পরিমাণ ১২ কোটি টাকার বেশি হবে।
ড. ইউনূসের আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, হাইকোর্টের রায়ের প্রত্যায়িত
অনুলিপি পাওয়া সাপেক্ষে আপিল করা কিংবা দানের বিপরীতে আরোপিত কর পরিশোধ বিষয়ে
পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আইনজীবীদের তথ্য মতে, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট,
ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট এবং ইউনূস সেন্টার ট্রাস্ট এই তিন ট্রাস্টে
ড. ইউনূস দান করেন। তিনটি ট্রাস্টে তার দান করা অর্থের পরিমাণ ৭৬ কোটি ৭৩ লাখ ৩৪
হাজার টাকা। পরে ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্সেস (ডিসিটি) মূল্যায়ন করে ২০১১-১২,
২০১২-১৩ এবং ২০১৩-১৪ করবর্ষের জন্য ওই অর্থের ওপর ‘দানকর’ হিসেবে ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা
আরোপ করেন। ‘দানকর’ আরোপের বিরুদ্ধে ড. ইউনূস
কমিশনার অব ট্যাক্সেসে আপিল করে বিফল হন। ডিসিটির সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।
এরপর কর ট্রাইব্যুনালে আপিল করে বিফল হন ড. ইউনূস। এ
অবস্থায় ২০১৫ সালে হাইকোর্টে পৃথক তিনটি আবেদন (রেফারেন্স) করেন তিনি। প্রাথমিক
শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল দিয়ে দানকর আদায়ে নোটিশের কার্যক্রম
অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য স্থগিত করেন। এরপর রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশের
মেয়াদ বাড়ানো হয়। সম্প্রতি রাষ্ট্রপক্ষ এ সংক্রান্ত রুল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয়।
আবেদনগুলো ১৬ মে কার্যতালিকায় উঠলে সেদিন আদালত শুনানির জন্য ২৩ মে দিন রাখেন।
সেদিন আবেদনগুলোর ওপর শুনানি শেষে রায়ের জন্য দিন রাখে হাইকোর্ট। বুধবার সেই রায়
ঘোষণা করা হলো।