বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড
(বিসিবি) অসদারচণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে চাকরিচ্যুত করে।
৪৮ ঘণ্টার শোকজ নোটিশ দিলেও মূলত ওইদিনই লঙ্কান কোচকে অব্যাহতি দিয়ে দেয় বোর্ড।
গতকাল বৃহস্পতিবার ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বিসিবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির
মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে হাথুরুসিংহের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টি
জানিয়েছে। শোকজ নোটিশে সাবেক কোচ কী জবাব দিয়েছিলেন, সেটি জানার আগ্রহ ছিল সবার। কিন্তু
বিসিবি সেই ব্যাপারে কিছু জানায়নি। হাথুরুসিংহে নিজেই গণমাধ্যমে পাঠানো এক
বিবৃতিতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন।
দুটি
অভিযোগের ভিত্তিতে হাথুরুসিংহে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই চাকরি হারালেন। প্রথম
অভিযোগ বাংলাদেশের ক্রিকেটারের গায়ে হাত তোলা। ভারতে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালে
নাসুমের গায়ে হাত তোলেন হাথুরুসিংহে। ওই বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ ছিল
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে,
ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছিল সেদিন। ম্যাচে বিরতির সময় একাদশের বাইরে
থাকা নাসুমকে পানি নিয়ে মাঠে যেতে বলেন কোচ হাথুরুসিংহে। সবকিছু গুছিয়ে পানি নিয়ে
মাঠে যেতে নাসুমের ৩০ সেকেন্ড দেরি হয়। যে কারণে সেদিন তাকে চড় মারেন হাথুরুসিংহে।
হাথুরুসিংহের এমন ব্যবহারে সেদিন নাসুম কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন, উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। প্রধান কোচের এমন ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন
দলের ট্রেইনার এবং বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড। ম্যাচ শেষে ক্রিকেটাররাও ঘটনাটি
জানতে পারেন।
শুধু
অসদাচরণই নয়। হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে ইচ্ছে মতো ছুটি কাটানোর অভিযোগও আছে। তার জন্য
বছরে ছুটি বরাদ্দ ছিল ৪৫ দিনের। তবে গত বছর তিনি কাটিয়েছেন ৬৭ দিন ছুটি। আর চলতি
বছর এখন পর্যন্ত ৫৯ দিন ছুটি কাটিয়েছেন এই লঙ্কান কোচ। অতিরিক্ত ছুটির জন্য
বিসিবির কাছে থেকে অনুমতিও নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এটাকে আচরণবিধি ভঙ্গ হিসেবে
দেখছে বিসিবি।
এসব
অভিযোগের ভিত্তিতে নিজের অবস্থান জানিয়ে এক লম্বা চিঠি গণমাধ্যমের কাছে পাঠিয়েছে
হাথুরুসিংহে, ‘২০২৩ বিশ্বকাপের ম্যাচ চলাকালে একজন খেলোয়াড়ের উপর কথিত হামলা
এবং অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত ছুটি নেওয়ার দাবির বিষয়ে আমার সততা এবং পেশাদারিত্বকে
প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা সাম্প্রতিক অভিযোগের ব্যাপারে আমি এই চিঠি লিখছি। এই
ব্যাপারে চুপ থেকে আমি এই ধরনের অনুমানভিত্তিক বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ না করে থাকতে
পারবো না। আমি বিশ্বাস করি, এই ধরনের বিষয়গুলো স্পষ্ট করা দরকার। আমি আমার
কথাগুলো বলতে চাই।
নাসুমকে
চড় মারার অভিযোগ নিয়ে লঙ্কান কোচ বললন, ‘প্রথমত, অভিযুক্ত ঘটনাটি
খেলোয়াড়দের ডাগআউট বা ড্রেসিং রুমে ঘটেছিল, যে জায়গায়
বিশ্বকাপের ম্যাচ চলাকালে সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকে। ৪০ থেকে ৫০টিরও বেশি ক্যামেরা
খেলার প্রতিটি মুহূর্ত সঙ্গে সঙ্গে ধারণ করে। আমি অভিযোগকারীকে যাচাই করার সুযোগ
পাইনি বা কোনও সাক্ষীও পাইনি, আদৌ যদি থেকে থাকে।
অভিযোগ
দেরিতে ওঠা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি, ‘আরেকটি বিষয় হলো, ঘটনাটি যতটা
গুরুতর হিসেবে দাবি করা হয়েছে, আশ্চর্যের ব্যাপার যে
সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড় ইভেন্টের পরে অবিলম্বে টিম ম্যানেজার বা কোনও কর্তৃপক্ষকে
ঘটনাটি জানায়নি। যদি অভিযোগ করাও হয়, আমি বিস্মিত যে কেন
আমাকে প্রশ্ন করা হয়নি কিংবা আমার কাছ থেকে কিছু জানতে চায়নি। প্রশ্ন উঠছে,
কেন এটি কয়েক মাস পরে ইউটিউবে একজন ব্যক্তির মাধ্যমে প্রকাশিত হলো?’
অতিরিক্ত
ছুটি নেওয়া প্রসঙ্গে হাথুরুসিংহে বললেন, ‘ছুটি নেওয়ার দাবির বিষয়ে, আমি স্পষ্ট করতে
চাই যে আমি ব্যক্তিগতভাবে ছুটি নেওয়ার বেলায় সবসময় সিইও এবং ক্রিকেট অপারেশন্সের
চেয়ারম্যান উভয়ের কাছ থেকে অনুমতি চেয়েছি এবং পেয়েছি। কোনও সময়ই বিসিবি আমাকে
বলেনি যে তারা আমার ছুটি নিয়ে অসন্তুষ্ট। বরং আমি যতবারই ছুটি চেয়েছি, বিসিবি তা মঞ্জুর করেছে। তাদের অনুমতি ছাড়া আমি কখনও ছুটিতে যাইনি।
তিনি
আরও যোগ করেছেন. ‘নতুন বোর্ড সদস্যরা অভিযোগ
করলো যে আমি অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছি। আমার ছুটির মধ্যে পড়া সরকারি ছুটির হিসাব
করেনি, যেমন ঈদের দিন, শুক্রবার। আমি যখন সরকারি ছুটির সময
আমি ছুটি নেইনি, তখন তারা বাহবা দেয়নি। আমি এটা বুঝতে
পেরেছি, বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, আমি শুক্রবারে করা কাজের জন্য পরে সেই ছুটি পাওয়ার দাবি রাখি। একজন বিসিবি
চাকরিজীবী হিসাবে, আমি শুক্রবার ও বৃহস্পতিবারের অর্ধেক দিন
মিলিয়ে দেড় দিনের ছুটি পাই। আরেকটি ব্যাপার মনে করাতে হবে যে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সময় বিদেশি কোচদের ছুটি নেওয়াটা
একটা সাধারণ রীতি। এটি আমার কাছে ব্যতিক্রম কিছু নয় বরং আমার মেয়াদের আগে অনেক
বিদেশি কোচের জন্য এটি স্বীকৃত ব্যাপার।
এসব
অভিযোগকে পূর্বপরিকল্পিত দাবি করলেন তিনি, ‘আমার মনে হচ্ছে এসব অভিযোগ
পূর্বপরিকল্পিত। নতুন সভাপতির মেয়াদের প্রথম দিনে, তিনি প্রধান কোচকে অপসারণের ইচ্ছা
প্রকাশ করে একটি প্রকাশ্য বক্তব্য দিয়েছিলেন। আরেকজন প্রধান কোচ নিয়োগের মাত্র
চার ঘণ্টা আগে শোকজ নোটিশ পেয়ে আমি হতভম্ব। সেখানে বলা হয়েছে যে নিজেকে নির্দোষ
প্রমাণ করার জন্য হাতে আছে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। ঘটনার ক্রমধারা এই কর্মকাণ্ডের পেছনের
উদ্দেশ্য সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
সবকিছু
এত দ্রুত হওয়া হাথুরুসিংহে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতির
প্রেক্ষিতে আমার নিরাপত্তা শঙ্কায় আমাকে বাংলাদেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। এসব অভিযোগ, দ্রুত নতুন
প্রধান কোচের নিয়োগ এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাব নতুন ম্যানেজমেন্টের উদ্দেশ্য এবং
বিসিবির ভেতরের কর্মীদের আচরণের ব্যাপারে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করছে।
নিজের
ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখার লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি, ‘আমি
আমার সম্মান রক্ষা করতে সংকল্পবদ্ধ এবং এই বিষয়ে যে কোনও তদন্তে সম্পূর্ণ
সহযোগিতা করবো। শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হবে, এবং আমি আমার ভালোবাসার খেলাতে ইতিবাচকভাবে অবদান
রাখতে পারবো।