জ্যৈষ্ঠের
শুরুতেই রসালো দেশি ফলে ভরে গেছে রাজধানীর বাজার। তবে এসব ফলের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের
মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। খুচরা থেকে ভ্রাম্যমাণ দোকান- সবখানেই রাজত্ব
করছে আম, লিচু, তালের শাঁস, আনারস, জাম, লটকন, বেতফল, আতাফল, জামরুলের মতো নানা স্বাদের
ফল। এমনকি অনলাইন প্লাটফর্মেও বিক্রি হচ্ছে ফল। কিন্তু অনেক ফলের দাম এখনও নিম্ন ও
মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।
বাসাবো এলাকার বাসিন্দা মো. নজরুল
ইসলাম ফরিদ বলেন, আপেল, কমলা, মাল্টা, আনার- এগুলো এখন দামি ফল। জ্যৈষ্ঠ মাসে
অপেক্ষা করি সামর্থ্যরে মধ্যে দেশি ফল খাওয়ার। কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখি লিচু,
আম, জাম- সবকিছুর দাম অনেক বেশি। একই অভিজ্ঞতা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. ওয়াহেদ উজ
জামানের। তিনি বলেন, ১০০ পিস ছোট আকারের লিচুর দাম ৪০০-৫০০ টাকা। বড় আকারের
রাজশাহীর লিচুর দাম আরও বেশি। জামের কেজি চাইছে ৪৫০-৫৫০ টাকা।
তবে তালের শাঁস ও
আনারসের মতো কিছু ফল এখনও তুলনামূলক সস্তায় মিলছে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের ধারে।
দিনের বেলায় গরমের মধ্যে একটু স্বস্তি পেতে পথচারীরা ভিড় করছেন এসব ভ্রাম্যমাণ
দোকানগুলোয়। রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় ভ্যানে করে তালের শাঁস বিক্রি করছেন মো.
হাসনাত রুবেল। তিনি জানান, তালশাঁসের সরবরাহ বেড়েছে, খুচরায় ১০ টাকা পিস বিক্রি
করছি। আস্ত তাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা।
এক ক্রেতা মো. নুরুল
হক বলেন, এই গরমে পানিজাতীয় ফল খেতে ভালো লাগে। এক পিস ছোট ডাবের দাম ১২০-১৫০
টাকা হলেও তালশাঁস মাত্র ১০ টাকায় পাচ্ছি। আনারসও ৩০-৫০ টাকায় মিলছে।
বিদেশি ফলের দাম বেড়ে
অনেক আগেই নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। খুচরা বাজারে আপেলের কেজি ২৮০
থেকে ৩৫০ টাকা, কালো আঙ্গুর ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, সাদা আঙ্গুর ২২০ থেকে ২৫০ টাকা।
একইভাবে মাল্টা, কমলা, আনারসহ অন্যান্য বিদেশি ফলের দামেও আগুন জ্বলছে যেন। চড়া
দামে এসব ফল কিনে খাওয়া অনেকের কাছে এখন বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে। এমনকি
মধ্যবিত্তদেরও এগুলো কিনে খেতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হচ্ছে। তাই সামর্থ্যরে মধ্যে
রসালো ফলের খোঁজে সবার নজর এখন জ্যৈষ্ঠের ফলের দিকে।
কারওয়ানবাজারের ফল
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশি ফলের সরবরাহ গত দুই সপ্তাহে
উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সাতক্ষীরা, রাজশাহী, যশোর থেকে আম আসছে। রাজশাহী ও
দিনাজপুরের বড় আকারের লিচুর চালানও শিগগির বাড়বে।
পাইকারি বিক্রেতা মো.
আসফাক আলী ও সুরুজ মিয়া জানান, দিন যত এগোবে আমের সরবরাহ বাড়বে। চলতি সপ্তাহের
মধ্যেই রাজশাহী ও দিনাজপুরের বড় লিচুর সরবরাহ বাড়বে। তখন দামও কিছুটা কমে আসবে।
অন্যদিকে গাজীপুর ও সাভারের পাকা কাঁঠাল রাজধানীর বাজারে পুরোপুরি উঠতে আর সপ্তাহ
দুয়েক সময় লাগবে। জাম, লটকন, বেতফল, আতাফলসহ অন্যান্য দেশি ফলগুলোর সরবরাহ সন্তোষজনক
রয়েছে।
খুচরা বিক্রেতারা
জানান, বর্তমানে আমের কেজি বিক্রি হচ্ছে জাতভেদে ১০০-১৫০ টাকা, ১০০ পিস লিচু
বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। কালোজামের কেজি ৪০০-৬০০ টাকা, আনারসের পিস ৩০-৫০
টাকা, তাল ৩০-৪০ টাকা, আর ডাবের দাম ১২০-১৫০ টাকা।
তবে বাজারে এখনও সুলভ
দামে পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে, কলা, পেয়ারা, বাঙ্গি, ও মৌসুম শেষে থাকা তরমুজ।
জ্যৈষ্ঠের শুরুতে দেশি ফলের সরবরাহ বাড়লেও দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেই বাজারে
ফিরবে স্বস্তি- এই প্রত্যাশাই এখন সাধারণ ক্রেতাদের।