
বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ লাখ ৭০
হাজারের বেশি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর এর অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ
রক্তচাপ।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘ইশ্রুভিং কার্ডিওভাসকুলার হেলথ ইন
বাংলাদেশ’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), গ্লোবাল হেলথ
অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এবং রিজলভ টু সেভ লাইভস (আরটিএসএল) যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির
আয়োজন করে।
এসময় হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের জন্য দায়ী এই উচ্চ রক্তচাপ
প্রতিরোধযোগ্য উল্লেখ করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ এবং
স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে রিজলভ টু
সেভ লাইভসের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড
প্রিভেনশনের (সিডিসি) প্রাক্তন পরিচালক ডা. টম ফ্রিইডেন বলেন, বাংলাদেশে প্রতি ৪
জনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। সংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু
প্রতিরোধে বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রগতি সাধন করেছে। একইভাবে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক
প্রতিরোধেও বিশ্বে অনুকরণীয় হতে পারে দেশটি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ
ইতোমধ্যে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা গ্রহণকারীর সংখ্যা ২০ গুণ এবং চিকিৎসা সেবার মান
দ্বিগুণ করতে সক্ষম হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা প্রদানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা
শক্তিশালী করা হলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে এবং বাঁচানো
যাবে অসংখ্য জীবন।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ উল্লেখ করে ডা. টম ফ্রিইডেন আরও বলেন, বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি,
দ্রুত নগরায়ন, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ এবং অন্যান্য আর্থ-
সামাজিক ও জীবনযাত্রা সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ
রক্তচাপজনিত অন্যান্য অসংক্রামক রোগের প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। উচ্চ রক্তচাপজনিত
অসংক্রামক রোগের বোঝা কমাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
এবং এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা জরুরি।
ন্যাশনাল হার্ট
ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ
বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে উচ্চ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বিগত কয়েক বছরে এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য
অগ্রগতি হয়েছে। এই কর্মসূচি এখন দেশের ১৭১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু
রয়েছে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের হার বেড়ে ২৬ শতাংশ থেকে ৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
জিএইচএআই'র বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, স্বাস্থ্য
কর্মসূচি হতে হবে সমন্বিত। আমরা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ওষুধ প্রাপ্তি বৃদ্ধি এবং লবণ
ব্যবহার হ্রাসে বাংলাদেশের চলমান অগ্রগতিতে অব্যাহতভাবে সহায়তা প্রদানে আগ্রহী।
জিএইচএআই এবং তার সহযোগী সংস্থাসমূহ বাংলাদেশে হৃদরোগ পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ
করছে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো
হয়, বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অলাভজনক সংস্থা রিজলভ টু সেভ লাইভস’র
সহযোগিতায় ২০১৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
অধীনে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ
যৌথভাবে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার উদ্দেশ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে
উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা, চিকিৎসা প্রদান এবং ফলোআপ কার্যক্রম শক্তিশালী করা।