মাহবুবুল আলম রিপন, স্টাফ রিপোর্টার:
গেল বছর বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে বেশ লোকসান হওয়ার পর হাল ছেড়ে দেন মানিকগঞ্জের তরুণ চাষি সাইফুল ইসলাম। পুঁজি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন। তবে নিজের পুঁজি না থাকলেও তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বিত কৃষি ইউনিট। ফলে চলতি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদ করে গতবারের লোকসান কাটিয়ে লাভের আশায় স্বপ্ন বুনছেন ওই কৃষক।
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের পশ্চিম বাস্তা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম। গত বছর তিনি শসা, চিচিংগা, করলা চাষ করেন। তবে কাঙ্ক্ষিত ফলন আর বাজার দর ভালো না পাওয়ায় লাভ তো দূরের কথা সেচ, সার-কীটনাশসহ শ্রমিকের মুজুরি খরচও তুলতে পারেননি। ফলে চলতি মৌসুমে আর কৃষি কাজ করবেন বলে চিন্তা করেন। অবশেষে আর্থিক সহযোগিতাসহ কৃষি কাজে সবজি চাষের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা পাওয়ায় নিজের সিদ্ধান্ত বদলে চলতি মৌসুমের বিভিন্ন ধরণের সবজির চাষবাদ শুরু করেছেন। স্বপ্ন বুনছেন গতবারের লোকসান কাটিয়ে ওঠার।
জানা গেছে, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক সহায়তায় মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে ওয়েভ ফাউন্ডেশন সমন্বিত কৃষি ইউনিট। এ কার্যক্রমের আওতায় চলতি বছর গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে কৃষক সাইফুলকে বিভিন্ন সবজির বীজ, জৈব সার, ফেরোমন ফাঁদ, আঠালো ফাঁদ এবং প্লাস্টিক মালচিং পেপার সরবরাহ করা হয়। যা দিয়ে ২৫ শতাংশ জমিতে শসা, চিচিংগা, করলার আবাদ করেন তিনি। প্লাস্টিক মালচিং পেপার ব্যবহার করায় পানি সেচ এবং রাসায়নিক সার কম লেগেছে। ফলে গতবারের তুলনায় তার উৎপাদন খরচও প্রায় অর্ধেক হয়েছে। এ জন্য এবার চাষাবাদের খরচ বাদে লাভের প্রত্যাশ করছেন এই কৃষক। শুধু কৃষক সাইফুলই নয়, তার উপজেলার উপকারভোগী কৃষক রয়েছেন ৫৯১ জন। আর গ্রীষ্মকালীন মৌসুমের উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ৮০ জনের মতো।
সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় কৃষক সাইফুলের। আলাপকালে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতবছর সবজি চাষ করে লোকসান হয়। চাষাবাদের খরচও তুলতে পারি নাই। হতাশ হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর সবজি চাষাবাদ করবো না। আর আমার তেমন পুঁজিও ছিল না। তবে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমি আর্থিক সহযোগিতা পাই এবং কৃষি কাজের নানা ধরনের দিকনির্দেশনাসহ প্রশিক্ষণ নিই।
তিনি বলেন, এবার ২৫ শতাংশ জমিতে চিচিংগা, করলা আবাদ করেছি। তারা (ওয়েভ ফাউন্ডেশন) আমাকে
আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে বলেই এবারও সবজি চাষ করছি। প্লাস্টিক মালচিং পেপার ব্যবহার করে আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯০ কেজি চিচিংগা এবং প্রায় ৫০ কেজি করলা বিক্রি করেছি। আশা করছি এবার লাভবান হবো। গত বছরের তুলনায় এবার খরচ কমেছে প্রায় অর্ধেক, ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। আমার দেখা দেখি গ্রামের অনেকেই এবার প্লাস্টিক মালচিং পেপার ব্যবহার শুরু করেছেন।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কৃষি কর্মকর্তা মৃন্ময় রায় বলেন, জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করছি। কৃষি কাজে জৈব সার ও জৈব বালাইনাশকের ব্যবহারে এখন আগের তুলানায় বেড়েছে। এ ছাড়া আবাদে খরচ কম হওয়ায় দিন দিন কৃষকরা মালচিং পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন।
মালচিং পদ্ধতিতে কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি ফলনও বেড়েছে।
সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, মাটির উর্বরতা বাড়াতে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের বিকল্প নেই। মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদকে জনপ্রিয় করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিরলসভাবে কাজ করছে। শুরুতে পুরো উপজেলায় কয়েকজন কৃষক এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলেও এখন এর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।