হাড় কাঁপানো শীতে রংপুরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাপমাত্রা উঠানামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। জবুথবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। হিমেল বাতাসে কাঁপতে থাকে শীতার্ত মানুষজন। হাড়কাঁপানো শীতে রংপুরের বিপর্যস্ত জনজীবন। দিনমজুর আর খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। শীতের ঠাণ্ডাকে অপেক্ষা করে পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হয়েছে নিজ কর্মে পেশাজীবীরাও।
রংপুরের গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, কাউনিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৩০টি চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষজনের দুর্ভোগ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। শীতবস্ত্র না পেয়ে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে। শীতের কুয়াশামাখা সরিষা ফুলের দানা, আবার মাকড়সার জালে বিন্দু বিন্দু কুয়াশাচ্ছল, প্রকৃতিতে ডেকে রাখা সূর্যের আলো আসার অপেক্ষা।
আলতাব হোসেন,মাসুদ রানা, বকুল মিয়াসহ কয়েকজন শ্রমজীবী মানুষ বলেন, উত্তরবঙ্গে শীত এমনিতেই একটু বেশি। এর মধ্যেই রংপুরে এক সপ্তাহ থেকে কুয়াশার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছে নিম্নয়ের মানুষ। হিমেল হাওয়া ও কনকনে এই শীতে গ্রামের শিশু ও বৃদ্ধারা অসুস্থ হচ্ছে। শিশুদের দেখা দিচ্ছে নেমোনিয়া। এই শীতের ছিন্নমূল মানুষের দেখা দিয়েছে ঠান্ডা জনিত রোগ । কোথাও থেকে পাচ্ছে না শীতবস্ত্র। তীব্র শীতে মাঠে গিয়ে কাজকর্ম করতে পারছে শ্রমজীবী মানুষ।
কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে দুপুরের পর অল্প সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও তাতে থাকছে না উষ্ণতা। ঠাণ্ডায় শিশু ও বৃদ্ধদের কষ্ট চরমে পৌঁছেছে। ভোর থেকে কুয়াশার কারণে মহাসড়কে বাস-ট্রাকসহ সকল যানবাহনের চালকদের হেড লাইট জ্বালিয়ে সতর্ক থেকে গাড়ি চালাতে দেখা গেছে। রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের সাতমাথা এলাকায় কথা হয় ট্রাক চাল আজিজুল হকের সাথে। তিনি বলেন ঘন কুয়াশায় গাড়ি চালাতে খুব বেগ পেতে হচ্ছে, দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। নগরীর এলাকাগুলো কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে।
রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক চালকরা পড়েছেন বিপাকে। দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তারা স্বাভাবিক দিনের মতো যাত্রী পাচ্ছেন না। রিকশাচালক নাজিম হোসেন বলেন, এতো কুয়াশা যে প্যাডেল মারতে অসুবিধা হচ্ছে। সাথে শির শির বাতাস, যাত্রীও আগের মতো নাই। সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন বারোটা পর্যন্ত বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দু পাল্লার বাস গুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে, কেউ আবার শীতের মধ্যে কর্মের সন্ধানে, শীতের দাপটে কেউ আবার ঘরের ভেতরে। অনেকেই আবার একত্রিত হয়ে আগুন তাপানো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, এনিয়ে পথযাত্রীরা বললেন, আবহাওয়ায় মিল না থাকায় মানুষের কষ্ট বেশি বাড়বে এবার…।
রংপুর আবহাওয়া অফিসার মোস্তাফিজার রহমান জানান, রংপুরে এবার যথা সময়ে শীত হচ্ছে, সাধারণত ডিসেম্বর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি শীতের তীব্রতা মাঝে মধ্যে থাকবে বলে এমনটাই জানালেন আবহাওয়া অফিসের
এই কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রংপুরে ডিসেম্বর মাস থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখন তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১০ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকার কথা। সেখানে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। দিনের তাপমাত্রা ২৬ থাকার কথা সেখানে ২৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা। এই সময়টা সূর্যের আলো উপস্থিতি দিনের বেলায় বেশি সময় থাকতে সেই জন্য তাপমাত্রা একটু বেশি। ২৩, ২৪ তারিখের দিকে তাপমাত্রা আরো বেশি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার রংপুরের তাপমাত্রা ছিল সর্বনিম্ন ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি জানান,শীতের প্রকোপের কারণে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাচ্ছে না। এ কারণে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে। দিনে নগরীতে মানুষের উপস্থিতি কম থাকলেও সন্ধ্যার পর ফাঁকা হয়ে পড়ে নগরী। শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। এ কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, প্রচণ্ড শীতে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। রংপুর শিশু বিভাগে দুদিনে কিছু শিশু ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। চলতি মৌসুমে পরিবারের অর্থ যোগাতে মধ্যবিত্ত পরিবারসহ হিমসিম খাচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ। তাই শীতের কনকনে ঠান্ডা মোকাবেলা করেও কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে কাজ করতে হচ্ছে কর্মজীবী মানুষদের।