
সরকার নির্ধারিত মূল্যে কিছু পরিমাণ বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও সেটা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। আবার কারখানা থেকেই খোলা সয়াবিন তেলের দাম চাওয়া হচ্ছে সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট :
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন বাজার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল উধাও হয়ে গেছে। বেশি দামেও মিলছে না বোতল জাত সয়াবিন তেল।
ক্রেতা রফিকুল ইসলাম জানান, গত বুধবার বাজারে সয়াবিন তেল কিনতে গেলে বোতল জাত তেল নেই বলে দোকানদার জানায়। পরে দাম বেশি দেওয়ার কথা বললে ৫ লিটার বসুন্ধরা তেল দেয়। কিন্তু বোতলের সঙ্গে তেলের মূল্য ৭৬০ টাকা লেখা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ৮৬০ টাকা। বাজারের বিভিন্ন ক্রেতা জানান, বসুন্ধরা ৫ লিটার তেলে সঙ্গে ৫ কেজি আটা, তীর ৫ লিটার তেলের সঙ্গে ২ লিটার সরিষার তেল নিতে বাধ্য করছে, তা না হলে তারা সয়াবিন তেল বিক্রি করছে না। এতে বাধ্য হয়ে অনেকেই তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাউফল (পটুয়াখালী) : গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাউফল বাজারের বিভিন্ন দোকানে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে বোতলজাত তেল নেই। আবার খোলা তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক দোকানদার বোতলজাত তেলই বিক্রি করছেন না। এদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটে সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
সোয়াবিন তেলের দাম জানতে গেলে পৌর সদরের লোকনাথ ভান্ডারের দোকানি সঞ্জয় কুমার বনিক সাংবাদিকদের বলেন, এক সপ্তাহ থেকে বোতলজাত তেল সংকট চলছে।
পৌরসদরের বাসিন্দা ক্রেতা রিয়াজ বলেন, গত ১০ দিন আগে খোলা সয়াবিন তেল কিনলাম ১৮০ টাকা কেজি। সেই তেল এখন কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে।
পৌর সদরের বাংলাবাজার এলাকার আরেক ব্যবসায়ী আবদুল জলিল বলেন, সয়াবিন তেলের চাহিদা আছে কিন্তু সরবরাহ নেই। ডিলাররা বলছেন সরবরাহ বন্ধ।’
বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) : বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার সয়াবিন তেল ২০০ টাকা লিটার মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এতে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। বিক্রেতাদের দাবি, এক সপ্তাহ যাবত কোনো কোম্পানি সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। তাই বাজারে তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। যাও পরিমাণে অল্প পাওয়া গেলেও বেশি দরে কিনে বেশি মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বোয়ালমারী বাজারের মেসার্স সাহ স্টোর, দত্ত ভান্ডারসহ বিভিন্ন স্থানের একাধিক মুদি দোকানদার বলেন, ইন্দোনেশিয়া তেল রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই মুনাফালোভীরা তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ফরিদপুরের সভাপতি শেখ ফয়েজ আহমেদ বলেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পেছনে ডিলার ও পাইকারদের হাত রয়েছে বলে আমাদের ধারণা। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর নজরদারি ও বিশেষ অভিযান নিয়মিত করা হলে সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অবৈধভাবে মুনাফা অর্জন করতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। প্রায়দিনই বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। খোঁজখবর নিয়ে এর সত্যতা মিললে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাগেরহাট : বাগেরহাটে সয়াবিন তেলের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তেল কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন ভোক্তারা। খোলা তেলও বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত তেলের থেকে বেশি দামে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অগ্রিম টাকা দিয়েও কোম্পানি থেকে তেল পাচ্ছেন না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট শহরের প্রধান বাজারসহ অধিকাংশ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। যেসব দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল রয়েছে, তারা ১৬০ টাকা গায়ের রেটে ১৭০ টাকা লিটার বিক্রি করছেন। এছাড়া খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল ইমরান বলেন, দাম বেশি নেওয়ার অপরাধে আমরা বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করেছি। বর্তমানে যদি কোনো ব্যবসায়ী এ ধরনের কাজ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।