Logo
শিরোনাম

একটি মহল সরকার বনাম শিক্ষার্থী গেম খেলে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে

প্রকাশিত:শুক্রবার ০২ আগস্ট 2০২4 | হালনাগাদ:শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |

Image

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটার দাবি পূরণের পরও একটি মহল সরকার বনাম শিক্ষার্থী গেম খেলে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন।


ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের মূল দাবি পূরণ হয়েছে।  শিক্ষার্থীরা কোন অবস্থাতেই সরকারের প্রতিপক্ষ নয়। আদালতে রায়ের পর দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তারপরও একটি মহল সরকার বনাম শিক্ষার্থী গেম খেলে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের আওতা বাড়ানো হয়েছে। তিনজন বিচারপতিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তে জাতিসংঘসহ যে কোন দেশ কিংবা সংস্থা চাইলে যোগ দিতে পারে। সরকার তাকে স্বাগত জানাবে।


ওবায়দুল কাদের বলেন, নিহতদের পরিবারের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। তাদের অনেকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। আহতদের দেখতে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শনে গেছেন।


শিক্ষার্থীদের আটক নিয়ে সেতু মন্ত্রী বলেন, তাদের অযথা হয়রানি অথবা আটক না করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা যেন নির্বিঘেœ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে সেজন্য পুনঃসময়সূচী করা হয়েছে।


 তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি যেহেতু পূরণ হয়েছে, সেহেতু বিশ্বাস করি তারা শ্রেণিকক্ষে, পরীক্ষার হলে ফিরে যাবে। তারা কোন অশুভ শক্তির ঢাল হিসেবে ব্যবহার হোক এটা জাতি চায়না।


নাগরিক সমাজকে গুরুত্ব দিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, তাদের ব্যক্তিগত মতামতকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় কোন পক্ষ যাতে ফায়দা নিতে না পারে। রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তার বিষয়টি সকলের বিবেচনায় নেয়া উচিত আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, জামাত-শিবির নিষিদ্ধে দেশের জনগণ সাধুবাদ জানালেও অসন্তুষ্ট বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বিবৃতিতে স্পষ্ট বিএনপির সাথে জামাতের সম্পর্ক কতটা নিবিড়। সে কারণে তারা জামাত শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে সাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক বলেছেন। বিএনপি-জামাত সব সময় গাটছড়া বেঁধে পথ চলেছে।


সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী  লীগের  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম ও সুজিত রায় নন্দী এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াও উপস্থিত ছিলেন।

 


আরও খবর

সাগরে লঘুচাপ, তিন নম্বর সতর্ক সংকেত

শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪




মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে

প্রকাশিত:বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |

Image

স্বাধীনতার লাভের ১৩১৪ দিন পর মর্মান্তিক ভাবে আমরা জাতির পিতা কে হারিয়েছিলাম। জাতি দিশেহারা হয়েছিল। 

বৈপরীত্যের ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৭ বছর এদেশের মুক্তি পাগল মানুষকে ভ্রান্ত পথে শান্ত ক্লান্ত পথ চলতে হয়েছে। 

 মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার-পরিজন এই সময়ে চেতনা পৃষ্ঠ, ক্ষুধা ক্লিষ্ট, অস্তিত্ব বিপন্নতার সংকটকে ধারণ করে বেঁচে থাকার প্রাণান্ত চেষ্টা নিয়েছে। 

সম্মান, গৌরব, অহংকার তাদের স্পর্শ করেনি। 

রাজাকার, আল বদর, আল শামস, দুর্বৃত্ত পান্ডাদের রিকশা টানা, দিনমজুরি করা, উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ-গ্রহণ তখন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অতি সাধারণ ঘটনা হিসেবে প্রচলিত ছিল।

তখনও দেশে সমাজ ছিল, সংস্কৃতি ছিল, সভ্যতা ছিল, মানবতা ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা অপরাধী হয়ে, উচ্ছিষ্ট হয়ে সমাজে অপাঙ্কতেয় ছিল। 

যৌবন যাদের মুক্তিযুদ্ধের তাড়নায় তাড়িত করে জীবনের বিপরীতে দেশ ভাবনায় সিক্ত করেছিল,  আগুনমুখী পতঙ্গের মতো যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, জীবন দিয়েছিল তারাই হয়ে গিয়েছিল এদেশের উচ্ছিষ্ট। 

তখনও দেশের সাহিত্য রচনা হতো, কবিতা লেখা হতো, গল্পপাঠ হতো, সভ্য দুনিয়ার সুশীল অনেক কাজ ধারাবাহিকভাবে চলত। 


সদ্য স্বাধীন দেশে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের মঞ্চায়ন ঘটানো হয়েছিল। স্বাধীনতার শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুদের সংখ্যা অনেক কম ছিল। যদিও বঙ্গবন্ধুর আমলেই ১৪০ টি দেশের স্বীকৃতি অর্জিত হয়েছিল।

৭৫ এর পর মুক্তিযোদ্ধাদের পাখি মারার মত ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছিল। 

মুক্তিযোদ্ধা বাদ দিয়ে ১৯৭৩ সালে শত্রু দেশ পাকিস্তান ফেরত এরশাদের মত বিতর্কিত মানুষ এদেশের সেনাবাহিনী প্রধান হয়েছিল। তখনো এদেশে মেধা ছিল, সুজন ছিল, সখি ছিল।


জাতিসংঘে পাকিস্তানের হয়ে  মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে সাক্ষী দেয়া ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছিল। 

ক্ষুধার্ত, আবাসনহীন নিঃস্ব মুক্তিযোদ্ধাদের তা দেখতে হয়েছিল, হজম করতে হয়েছিল এবং মেনেও চলতে হয়েছিল। 

এভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আর্থিক, সামাজিক, নৈতিক, পারিপার্শ্বিক যাতাকলে নিশ্চিহ্ন হওয়ার দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছিল। নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছিল।


হাজার বৈপরীত্যকে অতিক্রম করে অবশেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে এদেশের মানুষ ক্ষমতায় বসালো। অবশিষ্ট  দিশেহারা মুক্তিযোদ্ধারা নতুন করে জীবনকে উপলব্ধি, উপভোগ করার প্রয়াস পেতে শুরু করল। ততদিনে তারা বয়সের শেষ প্রান্তে।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের সাধ্যমত সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা করা হলো। ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি করা হলো। 

মুক্তিযোদ্ধারা ভুলেই গিয়েছিল, তাদের মহান ত্যাগের অর্জন- উপহার এই বাংলাদেশ তাদের অস্তিত্বের একমাত্র ঠিকানা। 

বঙ্গবন্ধু কন্যা ধাপে ধাপে মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সহ অন্যান্য নৈতিক, সামাজিক, বৈষয়িক সুযোগ-সুবিধা দিতে মনোনিবেশ করলেন। 

বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, 'পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে।.. পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয় তাকে 'পরশ্রীকাতর' বলে। এক শ্রেণীর বাঙালির বিশেষ চরিত্র এটি। নির্লিপ্ত সুবিধাভোগী বাঙালি পরশ্রীকাতরতায় সিক্ত-তিক্ত, ক্ষুব্ধ হতে থাকল।

তাদের ক্ষোভ, অহংকার, অপচিন্তা সমাজে বিষবাস্পের মত ছড়াতে থাকল ।

মুক্তিযোদ্ধার অবশিষ্ট যা থাকল, তারা অস্তিতে নির্ভরতা খুঁজে পেতে থাকল। ততদিনে তারা বার্ধক্যের দুই সীমানায়। 


বঙ্গবন্ধু কন্যা আকাঙ্ক্ষার চাইতেও বেশি করে তাদের দিকে মনোযোগ দিলেন। 

সরকার প্রধানের এই মনোযোগ প্রতিহিংসা পরায়নতায় পর্যবসিত হতে থাকল।

কথিত ইন্টেলেকচুয়ালরা কলম খুলে বসল। তথ্য দিতে থাকল। তাত্ত্বিক কথা বলতে থাকল। 

বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্বলতার সুযোগে তারা অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা বনে যেতে থাকল। 

সময় ও সুযোগ বুঝে সচকিত, উচ্ছ্বসিত হওয়া অথবা নীরবতা তাদের চরিত্রের অংশ। 

দীর্ঘদিন যোদ্ধাপরাধীদের প্রজন্মের নিরাপদ বিনিয়োগ অর্থ, সম্পদ, ব্যাংক- বীমা, আবাসন তাদের সমৃদ্ধিকে মজবুত ভিত্তি দিতে থাকল।


একদিকে অশিক্ষিত ,অর্ধশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের প্রজন্ম, অন্যদিকে ধূর্ত সবাইকে আঁকড়ে ধরা, অনেকটা দূরদর্শী স্বাধীনতার ভ্রান্ত প্রজন্ম, পাকিস্তান ফেরত সৈনিকদের বংশধর, রাজাকার আল বদর, আল শামস, মুসলিম লিগার, জামাতে ইসলামীদের প্রজন্ম প্রতিবেশে, সমাজের সকল স্তরে মজবুত ভিত্তি গড়ে তুলেছে ইতিমধ্যেই।


সরকার ইতিমধ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের 'বীর মুক্তিযোদ্ধা' সম্বোধনের প্রজ্ঞাপন জারি করল এবং রাষ্ট্রীয় ভাবনাচিন্তায় তাদের প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করার প্রয়াস গ্রহণ করল। 

এখানেও হাইবিডাইজেশন আশ্রয় নিল। শিক্ষিত একটি শ্রেণি সুযোগ গ্রহণ করে রাতারাতি মুক্তিযোদ্ধার রূপ ধারণ করল। সনদের অধিকারী হল। প্রজন্মকে দুহাতে সুবিধা দেয়ার প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হল। 

মন্ত্রী মিনিস্টার, আমলা- কামলা, বণিক- ব্যবসায়ী, আস্তিক- নাস্তিক, বাম-রাম- ডান, বিপরীত রাজনীতির প্রতিনিধিরা- কেউই বাদ থাকল না।

সরকারিভাবে কোন এক সময় ঘোষণা আসলো মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ নাতি নাতনিদের বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা প্রদানের। 

এটা ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যয়ের, প্রতিদান। রক্তের মূল্য দেওয়ার প্রচেষ্টা। শ্রমের মর্যাদা দেয়ার প্রক্রিয়া। মুক্তিযুদ্ধের অস্তিত্বকে মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্মের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা। 


আসল মুক্তিযোদ্ধারা নকল মুক্তিযোদ্ধাদের ভীরে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেল।

 

কোন ভূখণ্ডের মুক্তির সৈনিকদের অর্থ দিয়ে সম্মান দিয়ে পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করা যায় না। জাতির সকল অংশকে তাদের প্রতি নিঃশর্ত কৃতজ্ঞ থাকতে হয়। এই থাকার মধ্য দিয়েই তাদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হয়। ঋণ সুদের প্রচেষ্টা নিতে হয়।


মুক্তিযুদ্ধের সরকার সেই ঐতিহাসিক প্রচেষ্টা চালাতে চেষ্টা করেছে। 

আমাদের কতিপয় জ্ঞানপাপী সারা দুনিয়ার উদাহরণ খোঁজার চেষ্টা করে কেতাব খুলে, তত্ত্ব তথ্য খুঁজে জ্ঞানের ভ্রান্তিবিলাস দিয়ে লেখালেখি, বক্তৃতা- বিবৃতি দিয়ে চলেছে। এটি তাদের জীবন ধারণের উপায়ও বটে।


বীর মুক্তিযোদ্ধারা চাকরিতে সার্বিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি সময়ের বৈপরীত্য এবং বয়সের কারণে। সমাজের দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয় তাদের প্রজন্মকে নিরাপদ এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার। যেহেতু ইতিমধ্যেই এক প্রজন্ম পিছনে ফেলে দেয়া হয়েছিল। তাই এদের সন্তান প্রজন্ম দিয়ে শুরু করলে আপনা আপনি  সন্তানের সন্তান প্রজন্ম অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি নাতনির অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। 


এখানে যারা সংবিধান ঘাটে, প্রক্রিয়া খোঁজে, তারা শয়তানের দোসর। রাজাকার, আল বদর, আলশামসদের রক্তের উত্তরাধিকারী। 


এদের সংকট মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি নাতনির সুবিধা নিয়ে নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে চর্চা ও প্রবৃদ্ধি করার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করা।

দীর্ঘ ২৭ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সরকারের নির্লিপ্ততা, নীরবতা কিংবা অনাগ্রহ দৃশ্যমান ছিল। এটা ছিল পাপাচার। 


মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের সর্বসাকুল্যে ২৬ বছরের প্রক্রিয়ার ফসল আজকের বই বয়োবৃদ্ধ অবশেষ মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনের ভার লাঘব করে রাষ্ট্রীয় দায় পালনের প্রচেষ্টা মাত্র। 

যোদ্ধাপরাধীদের যে প্রজন্ম, পাকিস্তান ফেরতদের যে প্রজন্ম, রাজাকার, আল বদর, আল শামস, শান্তি কমিটি, শান্তি বাহিনীর যে প্রজন্ম, মুসলিম লীগ, জামাত ইসলামীসহ অন্যান্য ডান- বাম, অর্ধ, অস্তিত্বে বিতর্কিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলগুলোর যে প্রত্যয়ী প্রজন্ম, তার সাথে মুক্তিযুদ্ধের, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্মের ফারাক অনন্তকালের। 

বর্তমান সরকার প্রধানের চেতনায় জাগ্রত আছে, কখনও কোন মুক্তিযোদ্ধা ন্যূনতম সুযোগ সুবিধার জন্য মিছিল- মিটিং, আহাজারি, বিলাপ, উত্তাপ, লেখালেখি কিংবা আস্ফালন, উচ্ছ্বাস প্রদর্শন করেনি। কেননা তাদের সে যোগ্যতাও ছিল না। আর তারা তা জানতও না। তাদের চক্ষুলজ্জা ছিল, আছে।

এখন অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, তারা সরকারকে প্রভাবিত করে, প্রচার করে, বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছে। পাশাপাশি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাহীন কথিত মেধাবীদের আহাজারি, আস্ফালন, উশৃংখলতা, আন্দোলন দেখে মনে হয়, তাদের মেধার উপর কখনোই তাদের দৃঢ় আস্থা তৈরি হয়নি। সফলতার তীরে পৌঁছতে দারুন ঘাটতি আছে তাদের। 


আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। ভারতের মেঘালয়ের তুরা ট্রেনিং ক্যাম্পের ৮ নাম্বার উইং এ প্রায় ৩০ দিন প্রশিক্ষণ নিয়েছি। 

স্বাধীনতার পরবর্তীতে বিরতি দিয়ে লেখাপড়া করে অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সনদ নিয়েছি।

এসব কিছু করতে গিয়ে বয়সে ঘাটতি হয়েছে। আশির দশকের শেষ এবং নব্বই দশকের প্রথম দিকে বার বার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়েছি। 

স্পষ্ট করে বলছি, প্রিলিমিনারি , লিখিত , মনস্তাত্ত্বিক, স্বাস্থ্য  এবং মৌখিক পরীক্ষা, সবগুলো ধাপ অতিক্রম করে কোটা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে বিভিন্ন বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছি। শেষে চিঠি পেয়েছি, আমাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয়নি। এভাবেই দশম, একাদশ, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ বিসিএস। আর একজন মুক্তিযোদ্ধাকেও এই পরীক্ষায় আমার সাথে অংশগ্রহণের উপযুক্ত আমি দেখিনি বয়সের কারণে। দেখার সুযোগ আমার হয়নি। 


অবশেষে চতুর্দশ বিসিএস পরীক্ষায় বোর্ড প্রধানের সাথে বিতর্ক করে আমাকে প্রমাণ করতে হয়েছে, আমি যোগ্য। 

আমাকে সম্মান দেয়া হয়েছে উত্তীর্ণ সকল পরীক্ষার্থীর শেষে অবস্থান দিয়ে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটি ছিল আমার সম্মানজনক (!) প্রাপ্তি। এর ফল আমাকে ভোগ করতে হয়েছে চাকরির শেষ দিন পর্যন্ত। সবার শেষে প্রমোশন। শিক্ষা ক্যাডারে বিশেষ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও(যা কখনোই আর কারো ছিল না) আমি আমলাতান্ত্রিকতায় এরকম অবিচারের  শিকার হয়েছি।


মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বরাবরই প্রতারিত হয়ে এসেছে। পরীক্ষার সবগুলো ধাপে যারা যোগ্যতা প্রমাণ করে এসেছে , তারাও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিংবা পরের প্রজন্ম হওয়ার কারণে কথিত মেধাবীদের দ্বারা, একশ্রেণীর প্রশাসকদের দ্বারা তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছে, হচ্ছে। মেধায় পঙ্গু এইসব প্রজন্ম  নিজেদের মেধাকে অস্থায় নিতে না পেরে অপপ্রচার করে এবং আন্দোলন করে। অন্যরা তেল এবং তাল দেয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অতন্দ্র ধারক- বাহক। মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি ধারাবাহিকভাবে সম্মান দেখিয়ে যাচ্ছেন, সম্মান করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ সংযোজন তার সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং মন্তব্য। 


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হচ্ছে আমার একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন, লাখো মা-বোন নির্যাতিত। তাদের এই অবদান ভুলে গেলে চলবে না।' দু'লাখ মা- বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশের বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রীরা বলে, 'তারা রাজাকার। তুমি কে, আমি কে- রাজাকার, রাজাকার।' 

এই স্লোগান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সকল বিসর্জন ও অর্জনকে দারুন ভাবে আঘাত করে। ৫৩ বছরের পরের বাংলাদেশের প্রজন্ম গর্বের ইতিহাসকে ও ঐতিহ্যকে, এ দেশকে যে প্রক্রিয়া ধারণ করতে যাচ্ছে, তাকে মেধার নামে সাধারণীকরণ করা, অস্তিত্বের সাথে বেইমানি করা। 

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এভাবে ভ্রান্তিতে আবৃত করছে কারা। চেতনা কি বৃদ্ধ হয়? চেতনা কি পঙ্গু হয়? চেতনা কি প্রতিবন্ধী হয়?

 আমাদের মনে রাখতে হবে চেতনার বয়স নেই। চেতনা চির সবুজ, চির অম্লান, চির জাগ্রত। 


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, 'মুক্তিযোদ্ধাদের সব সময় সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে। তাদের সম্মানটা সর্বোচ্চ থাকবে।' ৫৩ বছর পরে এসে সরকার প্রধানের এই বক্তব্য মুক্তিযোদ্ধাদের সকল ক্ষোভকে নিভৃত করছে বলে মুক্তিযোদ্ধারা মনে করে। এখান থেকে হয়তো একটা শ্রেণীকে বুঝে নিতে হবে মেধার গুরুত্ব সর্বোচ্চ, নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনের গুরুত্ব সর্বোচ্চ। 

আহমদ ছফা বলেছিলেন, 'বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান চললে দেশ স্বাধীন হতো না।' 

আজকের কথিত মেধাবিরাই তো কালকের বুদ্ধিজীবী। বলার কি অপেক্ষায় রাখে? 


প্রধানমন্ত্রী উদাত্ত কণ্ঠে বলেছেন, 'জাতির পিতার আহবানে সাড়া দিয়ে জীবনের মায়া, পরিবার- সংসার সবকিছু ছেড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাদের অনেকেই জীবন দিয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করে শত্রুকে পরাজিত করে আমাদের বিজয় এনে দিয়েছেন। কাজেই তাদের সব সময় সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে।' 

তিনি আরো বলেন, দল মত নির্বিশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করতে হবে। যেন তারা গর্ব করে বলতে পারেন, 'আমি মুক্তিযোদ্ধা'। এদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে তাদের সম্মানটা দেবে, সেটাই আমরা চাই।'

মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের প্রজন্মের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে যারা মেধাকে সামনে এনে রাষ্ট্রের সংহতি, সম্প্রীতি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির কথা বলতে চেষ্টা করছেন, তারা মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করলে, প্রজন্মকে অস্বীকার করলে তাদের ষোল আনাই মিছে হয়ে যায়। 


আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি রাষ্ট্রের পরিচালনায় কোটাসহ অন্যান্য বিষয়গুলোর যৌক্তিক সংস্কার থাকবে। রাষ্ট্রই সেটি ভাববে। তারুণ্য দিয়ে,  বিশৃঙ্খলা দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বৈপরিত্য দিয়ে, অধিকারের নামে, উস্কানির নামে এবং বিভাজনের নামে তা প্রতিষ্ঠার পথ পরিহার করতে হবে। 

আমাদের বিশ্বাস করতে হবে, একজন শেখ হাসিনা দেশ বুঝেন, মুক্তিযুদ্ধ বুঝেন, সংবিধান বুঝেন, দেশের আগামী তারুণ্য কিভাবে স্বপ্ন জয় করবে- সেটিও বুঝেন। 

সুজনে কুজনে, ভিআইপি,পিআই বি কিংবা মিলার কিলার তত্ত্ব দিয়ে, প্রচারণা দিয়ে '৬৯, '৭০, '৭১ এ বিভ্রান্তি ছিল। '৭৪, '৭৫ এ ষড়যন্ত্র ছিল। পরবর্তীতে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র- বৃক্ষ ডালপালায়, ফলে ফুলে সুশোভিত হয়েছে কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে চেতনা, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ইতিহাস থেকে মুছে যায়নি, যাবে না কখনও। 


প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী 

মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর- ১১

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ অধ্যয়ন কেন্দ্র, চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়ক।


আরও খবর



সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২০ আগস্ট ২০24 | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |

Image

 সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।



এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন  বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন।



আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।



আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্র পক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে জানান এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।



সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক রিটটি দায়ের করেন। রিটে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করা হয়।



উল্লেখ ২০১১ সালের ৩০ জুন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতিও দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বাতিল করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়।


আরও খবর

সাগরে লঘুচাপ, তিন নম্বর সতর্ক সংকেত

শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪




কক্সবাজার সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ চলছেই

প্রকাশিত:বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |

Image

 

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ চলছে। এক শ্রেণির দালাল টাকার বিনিময়ে তাদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করছে।

স্থানীয়দের হিসাবে, গত একমাসে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।

তবে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের মতে, সংখ্যা আট থেকে নয় হাজার। সংখ্যা যাই হোক, ফের নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

সীমান্ত এলাকার লোকজন বলছে, মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু শহরে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই তীব্র হয়ে উঠেছে। মংডু টাউনশিপ ঘিরে লড়াইয়ে আবারও রোহিঙ্গাদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।

প্রাণভয়ে ভিটেমাটি ফেলে গত একমাস ধরে মংডু আশপাশের এলাকা থেকে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। এমনকি অনুপ্রবেশের আশায় সীমান্তের ওপারে জড়ো হয়েছে আরও অন্তত ৬০ হাজার রোহিঙ্গা।

অভিযোগ উঠেছে, বর্তমানে টেকনাফ সীমান্ত দিয়েই বেশির ভাগ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। রোহিঙ্গারা কাঠের নৌকায় করে নাফ নদী পার হয়ে দালালদের সহযোগিতায় টেকনাফে ঢুকছে। এরপর তারা টেকনাফ উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে ঢুকে পড়ছে। অনেকে টেকনাফে বিভিন্ন বাসাবাড়িতেও আশ্রয় নিচ্ছে।

সীমান্তে বিজিবি কোস্ট গার্ডসহ প্রশাসনের কড়া নজরদারির মধ্যেই আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা।

কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, ১২ লাখ রোহিঙ্গার বোঝায় এমনিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, অবস্থায় নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ উদ্বেগের।

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকার কঠোর অবস্থানে না গেলে ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় ৬০-৬৫ হাজার রোহিঙ্গা

সীমান্ত ঘেঁষা বাসিন্দারা বলছেন, গত এক মাসে ১৮ থেকে ২০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এমনকি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য মংডু আশপাশের সীমান্তে আরও ৬০-৬৫ হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছে বলে দাবি করছেন তারা।

সীমান্তের একাধিক সূত্র বলছে, টেকনাফের জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছড়া, বাহারছড়া উপকূল, উখিয়ার বালুখালী, ঘুমধুম সীমান্তসহ অন্তত ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। মংডুর উত্তরের প্যারাংপুরু দক্ষিণের ফাদংচা এলাকায় জড়ো হয়ে থাকা রোহিঙ্গারা দালালদের সহায়তায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, এক শ্রেণির দালাল চক্র রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ কিয়াত (বার্মিজ নোট) বা বাংলাদেশি ২০ হাজার টাকা নিয়ে সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না। এতে নতুন করে আরও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে।

তিনি বলেন, রাখাইনের দখল নিয়ে জান্তা বাহিনী আরাকান আর্মির যুদ্ধের কারণে সেখানে নতুন সংকটে পড়েছে রোহিঙ্গারা। অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। এসব বন্ধে আন্তর্জাতিক মহলের কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি স্বীকার করে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, বিজিবির কঠোর নজরদারির পরও অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। গত এক মাসে আট-নয় হাজারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি কোস্ট গার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে।

অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়ে বাংলাদেশে অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। সাত বছরে কাউকেই ফেরত নেয়নি মিয়ানমারের জান্তা সরকার। সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কার্যক্রম শুরু হলেও রাখাইনের যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তা থেমে যায়।

নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গত রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা নতুন আগতদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছিল, যা সরকার দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে বলে জানান তিনি। উপদেষ্টা বলেন, আমরা ইউএনএইচসিআরকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, আমাদের পক্ষে আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়।

অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা টেকনাফ উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ক্যাম্পে আত্মীয়-স্বজনদের ঘরে অবস্থান করছে। এর মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ আহত রয়েছে। তাদের চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে নতুনদের আবাসন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

উখিয়া, টেকনাফ নোয়াখালীর ভাসানচরসহ ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাস করছে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে আসে।

মংডু টাউনশিপ ঘিরে তীব্র লড়াই

গত ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে আরকান আর্মির সঙ্গে সরকারি বাহিনীর লড়াই শুরু হয়। আরাকান আর্মি ইতোমধ্যে রাখাইনের ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তের সবকটি সীমান্তচৌকি দখলে নিয়েছে। এখন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মংডু টাউনশিপ আশপাশের এলাকায় যুদ্ধ চলছে।

যুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িও জ্বালিয়ে দিচ্ছে আরকান আর্মি। এমনকি তারা মংডু টাউনশিপের পাশের পাঁচটি গ্রাম সুধাপাড়া, মংনিপাড়া, সিকদারপাড়া, উকিলপাড়া নুরুল্লাপাড়া দখল করে অন্তত ৫০-৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে উচ্ছেদ করেছে। মংডু আশপাশের গ্রামগুলোতে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস রয়েছে।

রোহিঙ্গারা জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরও মংডু এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখন তাদেরও উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এমন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ফের বাংলাদেশে আশ্রয় খুঁজছে তারা।

 



আরও খবর

সাগরে লঘুচাপ, তিন নম্বর সতর্ক সংকেত

শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪




নোবিপ্রবিতে পিএইচডি প্রোগ্রামের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

প্রকাশিত:বুধবার ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |

Image

মোঃ সিনান তালুকদার - নোবিপ্রবি প্রতিনিধি,


নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগে আনুষ্ঠানিকভাবে পিএইচডির যাত্রা শুরু হয়েছে। 


দুইজন শিক্ষার্থী মো: মাহমুদুল হাসান ও মো: মাহবুবুল আলম শাওন-এর পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মত পিএইচডি প্রোগ্রামের সূচনা হয়।


পিএইচডি প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত হওয়া শিক্ষার্থীদ্বয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত  প্রশাসনিক ও আর্থিক প্রধান অধ্যাপক ড: মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড: আবদুল্লাহ আল মামুন ও  অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ।  


তিনি শিক্ষার্থী ও বিভাগীয় শিক্ষকদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং শিক্ষার্থীদের সার্বিক সফলতা কামনা করেন। 


উল্লেখ্য, DANIDA (Danish International Development Agency) এর অর্থায়নে "Climate-resilient aquatic food systems for healthy lives of young women and girls in Bangladesh (AQUAFOOD)" প্রকল্পের আওতায় দুজন শিক্ষার্থীই পূর্ণ শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত হবেন।


পিএইচডি প্রোগ্রামের বিষয়ে উক্ত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত ফিশারিজ এন্ড মেরিন সাইন্স বিভাগ পিএইচডি প্রোগ্রাম শুরু করল। পিএইচডি গবেষণার মাধ্যমে নোবিপ্রবি উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণায় অনন্য অবদান রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

আরও খবর



নিষেধাজ্ঞার আগেই দেশ ছাড়েন হাছান মাহমুদ

প্রকাশিত:শুক্রবার ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |

Image

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ দুবাই-জার্মানি হয়ে বেলজিয়ামে গেছেন। জার্মান শাখার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক আলী ভূঁইয়া বকুল গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গ্রেপ্তার হন বলে গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর কয়েকদিন পর জুনাইদ আহমেদ পলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে হদিস মেলেনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে লিখেছেন হাছান মাহমুদ দেশ ছেড়েছেন। তবে তিনি কোথায় আছেন সে বিষয়ে চলছে আলোচনা

জানা গেছে, হাছান মাহমুদ এখন বেলজিয়ামের লিমবুর্গ প্রদেশের হ্যাসেল্ট সিটিতে তার নিজের বাড়িতেই আছেন। দুবাই হয়ে জার্মানিতে যান তিনি। জার্মান শাখার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক আলী ভূঁইয়া বকুল দেশের একটি গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন

তিনিই ড. হাছান মাহমুদকে ডসেলড্রপ বিমানবন্দরে বেলজিয়ামের বাড়িতে পৌঁছে দেন

বকুল জানান, গত ২৬ আগস্ট বিকেল পৌনে ৩টায় জার্মানির ডসেলড্রপ বিমানবন্দরে পৌঁছেন হাছান মাহমুদ। সেখান থেকে সড়কপথে বেলজিয়ামের নিজ বাড়িতে যান

বকুল গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি এখানে আছেন এবং সেভ আছেন, এটুকু আর কি। এখানে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতেছেন না, কারো সঙ্গেই তার যোগাযোগ নেই।

এদিকে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ২ সেপ্টেম্বর হাছান মাহমুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়। দেশ ছাড়লেও সরকার পতনের পর হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে ঢাকা-চট্টগ্রামে অনেকগুলো হত্যা মামলা হয়েছে


আরও খবর