আমিনুল ইসলাম কাসেমী, শিক্ষক ও কলামিস্ট :
ইসলামী রাজনৈতিক অঙ্গনে সুবাতাস বইছে। বসন্তের হিমেল হাওয়ায় উজ্জীবিত রাজনীতির ময়দানে এখন প্রীতি - ভালবাসাার সয়লাব বয়ে যাচ্ছে। ছয়মাস আগেও যাদের সাথে মুখ দেখাদেখি হতনা, ভিন্ন ভিন্ন প্লাট ফরমে বাসা বেঁধে ছিল। যে সব মানুষদের সাথে মুখ দেখা আজীবন নিষিদ্ধ ছিল বলা যায়, সেসব লোকগুলোর সাথে এখন প্রেম- প্রীতি দেয়া- নেয়া হচ্ছে। এখন একই ছাদের নিচে, একই টেবিলে বসে গেছে সবাই। আর কেউ মুখ ভেংচি দিয়ে দুরে চলে যাচ্ছেনা। বরং দিনে দিনে প্রীতির বন্ধন মজবুত হচ্ছে বলে মনেহয়।
অবশ্য এর কারিগর পীর সাহেব চরমোনাই তথা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ । এদেশের দেওবন্দী স্রোতধারার সর্ববৃহৎ ইসলামী সংগঠন হল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এই সংগঠনের আমীর সৈয়দ রেজাউল করীম ( পীর সাহেব চরমোনাই) । নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল করীম ( শায়েখে চরমোনাই)
যারা ২৪ সনের বিপ্লবের কান্ডারী। যাদের ইসস্পাত এর ন্যায় দৃঢ়তা এবং সাহসিকতার সঙ্গে এই গণ অভ্যুথ্থানের নেতৃত্বে ছিলেন। তারাই সর্বপ্রথম ইসলামী দলগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা- ভালবাসার নজরে তাকিয়েছেন। আর কাউকে পিছনে ফেলা নয়। আর কারো প্রতি অশ্রদ্ধা নয়। বরং ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলের এ রাজ্যে ফ্যাসিস্টদের চিরতরে উৎখাত করে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে এ জাতি যেন নতুন দিগন্তে পৌছাতে পারে, এদেশ থেকে দুর্নীতির শেকড় উপড়ে ফেলে একটা সুস্হ- সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে যেতে পারে তার জন্য পীর সাহেব চরমোনাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
পহেলা কাজ কিন্তু পীর সাহেব করেছেন। তিনিই সকলের সাথে বারবার বৈঠকে বসছেন।তার দলের নেতাদের পাঠাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গাতে। নিজের আমিত্ব মিটিয়ে দেশের ওলামায়েকেরামের দারস্ব হচ্ছেন বারবার। ইসলামী রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কুশল বিনিময়, কখনো তাদের অফিসে যাতায়াত, কখনো বিভিন্ন প্রোগ্রামে ইসলামী দলগুলোর প্রধান এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সাথে মিলে একাকার হয়ে যাচ্ছেন।
জামায়াতের আমীর চরমোনাইতে গেলেন! এটা কি কল্পনা করা যায়? আমিতো কোনদিন ভাবতেও পারিনি জামাত আর চরমোনাই এর মধ্যে বরফ গলবে কোনদিন। বরং রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মন্তব্য হল, জামায়াতের সাথে কোন দিন চরমোনাই এর সম্পর্ক হবেনা। কিন্তু সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জামায়াতের আমীর চরমোনাইতে গেলেন। আর সেখানে পীর সাহেব তাকে অভ্যর্থনা জানাল। বেচারা ডা: শফিকুর রহমান তো শেষমেষ চরমোনাই এর ভূয়সী প্রশংসা করলেন। চরমোনাইকে একটি দ্বীনি মারকাজ বলে আখ্যা দিলেন।
চরমোনাই ওয়ালাদের বড় চমক হল, এবারের চরমোনাই এর ওলামা সন্মেলনে দেশের শীর্ষস্হানীয় আলেমদের হাজির করতে পেরেছেন। বিশেষ করে বর্তমান সময়ের দেওবন্দী হালকার সবচেয়ে জনপ্রিয় আলেম আল্লামা মামুনুল হক সাহেবকে দাওয়াত দিয়ে সেখানে নিয়ে গেছেন, এটা সময়পোযোগী সিদ্ধান্ত। তাছাড়া এদেশের তাওহিদী জনতার মনের কামনা- বাসনাও ছিল এটা। এ সময়ে সবচেয়ে বড় সেলিব্রিটি হলেন তিনি। যদিও মামুনুল হক সাহেব বরিশালের প্রোগ্রামে পীর সাহেব চরমোনাই এর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ প্লাট- ফরমে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন, তারপরেও চরমোনাই এর ওলামা সন্মেলনে মামুনুল হক সাহেবের উপস্হিতি পীর সাহেব এর সফলতা বলা যায়।
এভাবে পীর সাহেব চরমোনাই এগিয়ে যাচ্ছেন। ইসলামী দলগুলো নিয়ে একটা ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ তৈরী করতে চাচ্ছেন, অন্তত আগামী নির্বাচনে যেন ইসলামের পক্ষে একটা বাক্স থাকে। মানুষ ইসলামের পক্ষে রায় দিতে পারে এমন কোশেশ তিনি করে যাচ্ছেন।
তবে পীর সাহেব চরমোনাই কী পারবেন সবাইকে এক দস্তারখানে নিয়ে আসার? এখনো কিছু কিছু রাজনৈতিক দল বসে আছেন। যাদের থেকে কোন আভাস পাওয়া যাচ্ছেনা। আবার যাদের সাথে নতুন করে প্রীতি গড়ে উঠছে, তারা কী এই প্রেমবন্ধন রাখবেন?
তবে সাধারণ জনতার প্রাণের দাবী, আর ছিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকা নয়। এবার এক ছাতার নিচে যখন বসা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত প্রীতির এ বন্ধন টিকে থাকুক। সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে চলুক। এই প্রত্যাশা সকলের।
আল্লাহ তায়ালা কবুল করুন। আমিন।