Logo
শিরোনাম

গাজা ও লেবাননে একদিনে নিহত ২২০

প্রকাশিত:বুধবার ৩০ অক্টোবর ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ও লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতা থামছেই না। প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। দখলদার দেশটির বর্বর হামলায় গতকাল মঙ্গলবার দুদেশে একদিনে আরও ২২০ জন নিহত হয়েছেন।

এর মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে ১৪৩ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়িয়েছে

এ ছাড়া লেবাননেও নিরলস হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। সেখানে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় আরও ৭৭ লেবানিজ নিহত হয়েছেন বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। খবর আলজাজিরার


আরও খবর



শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক বিআরটিএ’র মাহাবুবুর রহমান

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

সরদার মাহাবুবুর রহমান। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআরটিএ) ক্যাশিয়ার হিসেবে যোগ দেন। তখন তাঁর বেতন ছিল দেড় হাজার টাকা। পদোন্নতি পেয়ে ২০২৩ সালে উপপরিচালক (ডিডি, অর্থ) হন তিনি। এখন তাঁর বেতন প্রায় ৭০ হাজার টাকা। সরকারি এই কর্মকর্তা ঢাকায় গড়েছেন বহুতল ভবন, ফ্ল্যাট। কিনেছেন গাড়ি। গোপালগঞ্জ জেলা শহরে নির্মাণ করছেন ১৪ তলা ভবন।

মাহাবুবুর রহমানের পুরো চাকরিজীবনের হিসাব করলে দেখা যায়, বেতন পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৮৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে তাঁর প্রয়াত কৃষক বাবা কিছু আবাদি জমি রেখে গেছেন, সেগুলো সেভাবেই আছে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর বিপুল সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

 

বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (অর্থ) সরদার মাহাবুবুর রহমান যেন টাকার কুমির। ঘুষ ছাড়া তিনি কিছুই বোঝেন না। ঘুষ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি। ঢাকার মোহাম্মদপুরে রয়েছে তার বাড়ি, মিরপুর ও গোপালগঞ্জে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট। এছাড়া স্ত্রীর নামেও রয়েছে গাড়ি, সন্তানদের নামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার এফডিআর। ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা বেতনের একজন কর্মকর্তা বছরের পর বছর শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জের প্রভাব ব্যবহার করে এসব অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন।


মাহাবুবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামে। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া আবাদি জমিজমা এখন পর্যন্ত বিক্রি করেননি মাহাবুবুর রহমান বা তাঁর শরিকরা। তাঁর স্ত্রী মিন্নি বেগম গৃহিণী। তিন ছেলেমেয়ে এখনও শিক্ষার্থী। শ্বশুরবাড়ি থেকেও বড় ধরনের আর্থিক সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতির অর্থ দিয়েই গড়েছেন এসব সম্পদ।

বিআরটিএর একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেলা ও সার্কেল অফিসগুলোর জন্য বার্ষিক বরাদ্দ হয়। কোন অফিস কত বরাদ্দ পাবে তা নির্ধারণ করতেন মাহাবুবুর রহমান। একক ক্ষমতা ছিল তাঁর হাতে। বাজেট বাড়িয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট সার্কেল থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন তিনি। কেনাকাটার ভাউচার পাস করাতেও কমিশন দিতে হতো তাঁকে। এ ছাড়া বিআরটিএর বেসরকারি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের বিল পাস করাতে উৎকোচ নিতেন। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাজেট সংক্রান্ত কমিটি হওয়ায় বর্তমানে তাঁর ক্ষমতা অনেকটা খর্ব হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহাবুবের বাবা আব্দুর রাশেদ সরদার প্রায় ৩০ বছর আগে মারা গেছেন। তারা দুই ভাই ও দুই বোন। ডুমুরিয়া গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ছয়জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাহাবুবের বাবা রাশেদ সরদার কৃষিকাজ করতেন। তিনি চাষাবাদের যে জমিজমা রেখে গেছেন, তা ছেলেমেয়েরা বিক্রি করেননি। পৈতৃক টিনের বাড়ি ছিল। সেটি ভেঙে এখন একতলা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

 

ঢাকার মোহাম্মদপুরে ৯তলা বাড়ি
টোলারবাগ, মিরপুরে ফ্লাট
স্ত্রীর নামে গাড়ি ও একাধিক সিএনজি
গোপালগঞ্জ সদরে জমি ও আলিশান বাড়ি
ছেলের নামে কোম্পানী খুলে ব্যবসা
স্ত্রী ও কন্যাদের নামে কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও এফডিআর
নড়াইল ও গোপালগঞ্জে কয়েকশ বিঘা জমি


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানের ২নং রোডের ব্লক-এ তে ৬.৫ শতাংশ জমির উপর তিনি গড়েছেন ৯তলা বাড়ি, যার বাড়ি নম্বর ১৯। বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের আমলে, ২০২১ সালে। এছাড়া ১৯/সি/২ উত্তর টোলারবাগ, মিরপুর এবং গোপালগঞ্জে রয়েছে ফ্লাট। তার স্ত্রী রাশিদা খানম (মিন্নী) একজন গৃহিনী, নিজের কোন আয় না থাকলেও তার নামে রয়েছে গাড়ি (রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-৩১-৪৩২৩) এবং ২টি সিএনজি। স্ত্রীর নামে গোপালগঞ্জ সদরের ক্রয় করেছেন ৬ শতাংশ জমি। গোপালগঞ্জ সদরে রয়েছে আবেদা মঞ্জিল নামে কয়েক কোটি টাকা মুল্যের আলিশান বাড়ি। সরকারী কর্মচারীদের ব্যবসা করার বিধিনিষেধ থাকলেও সরদার মাহাবুবুর রহমান তা উপেক্ষা করে তার ছেলে এস.এম মাহিরের নামের সাথে মিল রেখে খুলেছেন মেসার্স মাহির এন্টারপ্রাইজ নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তার স্ত্রী ও দুই কন্য সন্তানদের নামে রয়েছে কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র এবং এফডিআর।

সরদার মাহাবুবুর রহমান ধানমন্ডি ৩ নম্বর রোডের ২৯/বি নম্বর বাড়ির যে ফ্লাটে ভাড়া থাকে সেই ফ্লাটের মাসিক ভাড়া সত্তর হাজার টাকা। গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার পদ থেকে উপ-পরিচালক(অর্থ) পদে প্রমোশন পাওয়ার পর তার বেসিক বেতন হয় ৩৫,৫০০ টাকা। সবকিছু মিলিয়েও তার মাসিক বেতন ষাট হাজার টাকার কম। অথচ অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দিয়ে সরদার মাহাবুব নড়াইল জেলার নড়াগাতি থানার ডুমারিয়া গ্রামে এবং এবং আশপাশের এলাকায় কয়েকশত বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। একইভাবে তিনি তার স্ত্রীর নামে গোপালগঞ্জের মিয়াপাড়ায় কয়েশ শতক জমি ক্রয় করেছেন। এমনকি তার ছেলে এস.এম মাহির অর্ক এবং জমজ দুই মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস অর্থি এবং জান্নাতুল মাওয়া অর্নি নামকরা কলেজ অধ্যয়ন করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও হিসাব শাখার কয়েকজন কর্মচারী এবং বিআরটিএর একাধিক ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন সরদার মাহবুবের ঘুষ নেওয়ার বিভিন্ন পন্থা। ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান সিএনএস লিমিটেডের সাথে বিআরটিএর চারটি সার্ভিস চুক্তি রয়েছে, যেগুলোর বিল প্রতি মাসে মাসে পরিশোধ করা হয়। এগুলো হলো এমভিট্যাক্স, বিআরটিএ-আইএস, আর্কাইভিং এবং মোটর ভেকল ইনসফেক্সন সেন্টার (ভিআইসি) চুক্তি। এর মধ্যে এমভিট্যাক্সের বিল সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে এমভিট্যাক্সের বিল বাবদ প্রতি মাসে দুই কোটি টাকার উপরে সিএনএসকে বিল প্রদান করা হয়। সরদার মাহাবুব হিসাব রক্ষণ কর্মকতা থাকাকালীন এমভিট্যাক্সের বিল ছাড় বাবদ ১% হারে মাসিক ২ লক্ষ টাকার উপরে ঘুষ নিতেন। উপ-পরিচালক (অর্থ) পদে প্রমোশন পাওয়ার পরে তিনি ২% হারে ঘুষ গ্রহণ করেন।

সিএনএস লিমিটেড ডিসেম্বর মাসে এমভিট্যাক্সের ছয় কোটি টাকার উপরে বিল সাবমিট করেছে, সেই বিল ছাড় বাবদ ইতোমধ্যে সিএনএস তাকে ৬ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছে এবং ৬ লক্ষ টাকা দেওয়া এখনও বাকী আছে। এছাড়া এমভিট্যাক্স চুক্তির বিল থেকে প্রতি মাসে সিএনএস লিমিটেড এই চুক্তির ডেক্স অফিসার অর্থাৎ যার মাধ্যমে কন্ট্রাক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং বিল আপ হয়, বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের সহকারী প্রোগ্রামার মোঃ শাহাজান কবিরকে ১% হার ঘুষ প্রদান করে। শাহাজান কবিরের ৬ লক্ষ টাকা ইতোমধ্যে সিএনএস লিমিটেড দিয়েছে। একইভাবে সরদার মাহাবুবকে প্রতি মাসে আর্কাইভিং-এর বিলের জন্য এক লক্ষ টাকা টাকা, ভিআইসির জন্য এক লক্ষ টাকা, বিআরটিএ-আইএস এর জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘুষ দেয় সিএনএস লি.। সিএনএস লিমিটেডের পক্ষ থেকে এই মাসোহারা দেওয়ার কাজ করে সিএনএসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মতিউর রহমান। মোঃ মতিউর রহমান বিআরটিএ-আইএস চুক্তির আওতায় টিম লিডার হিসেবে বিআরটিএ সদর কার্যালয়ে মাসিক এক লক্ষ টাকা বেতনে চাকরি করে এবং তার প্রধান কাজ সিএনএস লিমিটেডের এই চারটি চুক্তির প্রতি মাসের বিল ছাড়ানো।

অন্যদিকে মাদ্রাজ প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের (এমএসপিপিএল) সাথে বিআরটিএর ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। প্রত্যেকটি বিল পরিশোধের সময় টাকার পরিমাণের উপর নির্ভর করে এমএসপিপিএল এক/দুই/তিন/চার লক্ষ টাকা ঘুষ দেয় সরদার মাহাবুবকে। সর্বশেষ কয়েকটি বিল বাবদ এমএসপিএল যে আট কোটি টাকা বিল নিয়েছে যেখান থেকে সরদার মাহাবুবকে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছে এমএসপিএল। দাবিকৃত অর্থ সরদার মাহাবুবকে দিতে দেরি হলে তিনিও বিভিন্ন অজুহাতে বিল প্রদান করতে বিলম্ব করেন। তবে ডিআরসি এবং নম্বর প্লেটের চুক্তি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিএমটিএফ) অর্থাৎ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখান থেকে কোন ঘুষ নিতে পারে না সরদার মাহাবুব।

এই কর্মকর্তার বিষয়ে আরও জানা যায়, বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের জন্য খোলাবাজার থেকে পন্য ক্রয় করা হলে ১৫% হারে তাকে ঘুষের টাকা প্রদান না করলে বিভিন্ন অজুহাতে সেই বিল আটকে দেয়। আরএফকিউএর মাধ্যমে ক্রয় করা হলে নুন্যতম বিশ হাজার টাকা তাকে দিতে হয়। ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে কোন পন্য ক্রয় হলে ক্রয় মূল্যের ৫-৬% হারে তাকে ঘুষ দিতে হয়। ঘুষের সব অর্থই তিনি এজি অফিসের কথা বলে নেন। এজি অফিস থেকে ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানসমুহের বিলের চেক নিজের কাছে এনে রাখে এবং তার দাবিকৃত অর্থ প্রদানের পর সেই চেক সংশ্লিষ্ঠ ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করে।

এছাড়া বিআরটিএ সদর কার্যালয়ে কোন কর্মচারী নিয়োগ পেলে, সরদার মাহাবুবকে ঘুষ না দিলে সহসা তাদের বেতন হয় না। বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের একাধিক ড্রাইভারের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের ওভারটাইমের টাকার একটা নির্দিষ্ট অংশ সরদার মাহাবুবকে না দিলে, নানা কারণ দেখিয়ে তাদের ওভারটাইমের টাকা দিতে বিলম্ব করে এমনকি কেটেও রাখে। বিআরটিএতে এগুলো ওপেন সিক্রেট। বিআরটিএর বিভিন্ন বিভাগীয়, মেট্রো এবং সার্কেল অফিসের খরচের বাজেট বরাদ্দ সদর কার্যালয়ের অর্থ শাখার মাধ্যমে হয়ে থাকে। যে সব অফিস থেকে তাকে অর্থ দেওয়া হয়, সেই সব অফিসে সে বেশি বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং অন্যান্য অফিসে অনেক কম। এই বিষয়ে ২০২৩ সালের প্রথম দিকে বিআরটিএর মাসিক সমন্বয় সভায় বিআরটিএর বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক প্রশ্ন উত্থাপন করলে বিআরটিএর তখনকার চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার সরদার মাহাবুবকে তিরস্কার করে। সাবেক চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার তাকে অর্থমন্ত্রী বলে ডাকতো।

অভিযোগ রয়েছে, বিআরটিএর লিফটের ভেন্ডর কনসেপ্ট এলিভেটরস ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিল আটকে রেখে তাদের দিয়ে সরদার মাহাবুব তার ঢাকা উদ্যানের বাড়ির লিফটের কাজ করিয়ে নেয়। একইভাবে বিআরটিএর এসির ভেন্ডর অলোকের ইঞ্জিনিয়ারিংস লিমিটেডের বিল আটকে রেখে, তাদের সার্ভিস ম্যান দিয়ে বাসার এসি সার্ভিসিং করায়। বাংলাদেশের সকল জেলায় বিআরটিএর নিজস্ব অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টার এবং ভিআইসি স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান। এই কাজে এখন পর্যন্ত যে সকল জেলায় জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে, সেসব জমি অধিগ্রহনের অর্থ ছাড় দিতেও তাদের কাছ থেকে ঘুষ দাবি করে এবং আদায় করে। সম্প্রতি বিআরটিএ ভবন এবং ডাটা সেন্টারের ইলেকট্রিক লাইন স্থাপন, বেইজমেন্ট-এ টাইলস স্থাপনসহ ভবনের সার্ভিসিং এর কাজ পিডব্লিউডির মাধ্যমে তিন কোটি টাকার উপরে কাজ করানো হয়েছে। কিন্তু সরদার মাহবুব পিডব্লিউডির মাধ্যমে কাজ করানোর ঘোর বিরোধী ছিলো। কারণ পিডব্লিউডি কাজ করলে এজি অফিসের কথা বলে সরদার মাহবুব কোন ঘুষ নিতে পারে না।

জানা গেছে, সরদার মাহাবুবুর রহমানের বাড়ি নড়াইল জেলার নড়াগাতি থানার ডুমারিয়া গ্রামে। শ্বশুরবাড়ী গোপালগঞ্জের মিয়াপারায় হওয়ায় সকলের কাছে বাড়ি গোপালগঞ্জ বলতো এই দুর্নীতিবাজ সুবিধাভোগী কর্মকর্তা। ৫ আগষ্টের পর আবার সবার কাছে বলে আমার বাড়ি নড়াইল জেলায়। তার বড় ভায়রা খন্দকার আজিজুর রহমান পুলিশের সাবেক পরিদর্শক। খন্দকার আজিজুর রহমানের বাড়ি গোপালগঞ্জে। খন্দকার আজিজুর রহমানের মাধ্যমে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের সাথেও সরদার মাহাবুবের সখ্যতা ছিলো। হাবিবুর রহমানের সঙ্গে একসাথে তোলা ছবি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যবহার করে ক্ষমতার জাহির এবং অপব্যবহার করতো। তার নামে পূর্বে একাধিকবার দুদকে মামলা হলেও, গোপালগঞ্জ বাড়ি, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের সাথে সখ্যতা এসব বিভিন্ন চতুর উপায় অবলম্বন করে পার পেয়ে গেছেন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা।

বিএরটিএর একাধিক কর্মকর্তা জানান, যেহেতু বর্তমান সরকার ঘুষ দুর্নীতিমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রতিষ্ঠিত, তাই বিআরটিএর মত জনবান্ধব এবং সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানে উপ-পরিচালক (অর্থ)-র মত গুরুত্বপূর্ণ পদে এই ধরনের ঘুষখোর, চতুর, সুবিধাবাদী এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে রাখলে তা নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে অন্তরায় হবে। বিআরটিএর বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াসীন (গ্রেড-১) দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানেরও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। তাই আশা করা যায়, সরদার মাহাবুবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে, তার দুর্নীতির ব্যাপারে আরও গভীর অনুসন্ধান করে যথপোযুক্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত সরদার মাহাবুবুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এমনকি মুঠোফোনে টেক্সট করা হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।

মাহাবুবুর রহমানের একটি প্রাইভেটকার রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন। তবে ব্যক্তিগত চালক রাখেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, মাহাবুবুর রহমানের সরকারি গাড়ির চালক সেলিমকে দিয়ে ওই গাড়ি চালানো হয়। মাহাবুবুর রহমান সরকারি গাড়িতে সকালে অফিসে আসেন, ছুটি হয় বিকেলে। এই সময়ের মধ্যে পরিবারের সদস্যদের কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হলে তিনি চালক সেলিমকে ধানমন্ডির বাসায় পাঠিয়ে দেন প্রাইভেটকার ড্রাইভিং করার জন্য।


আরও খবর

৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আশঙ্কা

মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫




সরকারি চাকরিজীবীদের শাস্তিতে হচ্ছে নতুন বিধান

প্রকাশিত:সোমবার ২৬ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধাভোগী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর বিপাকে পড়েন। তাদের সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা করতে দেখা গেছে। সরকারি কর্মচারীরা দায়িত্বে অবহেলা বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে, দীর্ঘ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় না গিয়ে, তাদেরকে দ্রুত বরখাস্ত করার বিধান আনছে সরকার।

এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘সরকারি চাকরি আইন-২০১৮’ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, এ ধরনের অভিযোগ গঠনের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সংশোধিত আইনের খসড়া ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে। শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বছরের পর বছর ধরে চলা শাস্তিমূলক মামলার দীর্ঘসূত্রিতা এড়াতে এ সংশোধন আনা হচ্ছে।

নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, সরকারি দায়িত্বে অবহেলা বা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাকে জবাব দিতে হবে। এরপর অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে সর্বোচ্চ ২০–২৫ কার্যদিবস সময় লাগবে। কেউ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে জবাবদানের সময়সীমা শেষ হওয়ার দিন থেকেই প্রক্রিয়া শুরু হবে। সর্বোচ্চ ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারবেন। নতুন আইন অনুযায়ী, দাবি আদায়ে দলবদ্ধ কর্মসূচি, বলপ্রয়োগ, সভা-সমাবেশ, কর্মবিরতি—সবকিছুই শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হবে।

সূত্র বলছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে জনপ্রশাসনের একাংশের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, একদল কর্মকর্তা দলবদ্ধভাবে জনপ্রশাসন সচিবকে অবরুদ্ধ করে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি আদায় করেছেন। প্রশাসন ও অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে। কেউ কেউ কর্মবিরতিতে গেছেন, কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন। এসব বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মনে করছে, সরকারি চাকরিজীবীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে এবং আন্দোলন, সভা-সমাবেশ ও কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিকে নিরুৎসাহিত করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ প্রয়োজন রয়েছে। ফলে নতুন সংশোধিত আইনে সরকার সভা-সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি ও ধর্মঘটসহ যেকোনো ধরনের দলবদ্ধ কর্মসূচিকে শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে এসব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তিতে পাঁচ বছর

বর্তমান প্রক্রিয়ায় কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে গেলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, তদন্ত কমিটি গঠন, প্রতিবেদন দাখিল এবং মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ প্রশাসনিক ধাপে যেতে হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আপিল করার অধিকারও রয়েছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে নতুন আইনে এসব বাদ দিয়ে সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকলে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তির বিধান রাখা হচ্ছে।

নির্দিষ্ট সময়সীমা

নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, সরকারি দায়িত্বে অবহেলা বা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাকে জবাব দিতে হবে। এরপর অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে সর্বোচ্চ ২০–২৫ কার্যদিবস সময় লাগবে। কেউ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে জবাবদানের সময়সীমা শেষ হওয়ার দিন থেকেই প্রক্রিয়া শুরু হবে। সর্বোচ্চ ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারবেন। নতুন আইন অনুযায়ী, দাবি আদায়ে দলবদ্ধ কর্মসূচি, বলপ্রয়োগ, সভা-সমাবেশ, কর্মবিরতি—সবকিছুই শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হবে। কেউ এসব কর্মসূচিতে অংশ নিতে অন্যকে প্ররোচিত করলেও একই শাস্তির আওতায় পড়বেন। কর্মস্থলে অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকলেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতির বিধান রাখা হয়েছে। তবে আইনের এই খসড়া নিয়ে সরকার জনমত নেয়নি। সচরাচর আইন প্রণয়নের আগে মতামত আহ্বান করা হলেও এবার গোপনীয়ভাবে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।


আরও খবর

৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আশঙ্কা

মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫




দুর্নীতির বড়পুত্র ঝালকাঠির প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

হাসিবুর রহমান , ঝালকাঠি প্রতিনিধি :

দেশের নানা প্রান্তে যখন বিশ্ব দুগ্ধ দিবসে শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুষ্টিকর দুধ, তখন ঝালকাঠিতে দিবসটি যেন হারিয়ে যায় প্রশাসনিক ফাইলের ভাঁজে। হয়নি কোনো র‍্যালি, বিতরণ করা হয়নি এক ফোঁটা দুধও। অথচ বরাদ্দ ছিল—দুই লাখ আট হাজার টাকা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালনে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর বদলে উঠেছে অনিয়ম, গাফিলতি ও দুর্নীতির অভিযোগ।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান স্বীকার করেছেন, এ বছর দিবসটি পালন করা হয়নি। তিনি বলেন, 'বেশ ক’দিন ধরে বৃষ্টি, সামনে ঈদ, র‍্যালির টি–শার্ট এখনো তৈরি হয়নি। তাই কর্মসূচি করা যায়নি।'

তবে বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, 'ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে পাওয়া ২ লাখ ৮ হাজার টাকা এখনো আমার কাছে গচ্ছিত আছে। পরে এই টাকা দিয়ে দিবস পালন করব।'

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—যে অর্থ নির্ধারিত ছিল ১ জুনের কর্মসূচির জন্য, তা ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ঘুরে ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু দুগ্ধ দিবস নয়, দপ্তরের অন্যান্য কার্যক্রমেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। সরকারি অনুদান, খামার উন্নয়ন প্রকল্প, এমনকি ভেটেরিনারি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও ঘুষ ও পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন অনেক খামারি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খামারি বলেন, 'টাকা না দিলে কোনো কাজ হয় না। সেবা নিতে এলেই হয়রানি শুরু হয়।'

আরেক খামারি বলেন, 'সরকার তো আমাদের উন্নয়নের জন্যই এসব প্রকল্প দেয়। কিন্তু এখানে এসে দেখি উল্টোভাবে চলছে সব কিছু।'

স্থানীয় কয়েকজন খামারি ও সচেতন নাগরিক বলছেন, এমন অনিয়ম চলতে থাকলে জেলার প্রাণিসম্পদ খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর প্রভাব পড়বে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও।

তাঁদের মতে, এখনই এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। না হলে সরকারের ভালো উদ্যোগগুলো মাঠপর্যায়ে পৌঁছাবে না।


আরও খবর



মিয়ানমার উপকূলে নৌকা ডুবে ৪২৭ রোহিঙ্গার মৃত্যু

প্রকাশিত:শনিবার ২৪ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

সমুদ্রপথে যাত্রার সময় মিয়ানমার উপকূলে পৃথক দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ৪২৭ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে নৌকাডুবির ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। ২৩ মে রাত ৮টার দিকে কক্সবাজারস্থ ইউএনএইচসিআরের যোগাযোগ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ধরনের বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু বা নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সমুদ্রপথগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

সংস্থাটির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দুটি নৌকায় মোট ৫১৪ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। ৯ মে প্রথম নৌকাটি ডুবে যায়, যেখানে ২৬৭ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের অনেকেই বাংলাদেশে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে এবং বাকিরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে যাত্রা করেছিলেন। এই দুর্ঘটনায় মাত্র ৬৬ জন বেঁচে যান। পরদিন ১০ মে দ্বিতীয় নৌকাটিও ডুবে যায়। তাতে ২৪৭ জন রোহিঙ্গা ছিলেন, যারা একইভাবে কক্সবাজার ও রাখাইন থেকে এসেছিলেন। এই নৌকা থেকে মাত্র ২১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা যায়।

বর্তমানে বেঁচে যাওয়া মানুষদের পরিচয় ও বিস্তারিত তথ্য যাচাই করছে ইউএনএইচসিআর। এছাড়া আরও একটি নৌকার খবর পাওয়া গেছে, যাতে ১৮৮ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। নৌকাটিকে ১৪ মে মিয়ানমারে আটকে দেওয়া হয়।

ইউএনএইচসিআরের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক হাই কিয়ং জুন এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, সহায়তা তহবিল কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ফলে নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের আশায় অনেকেই প্রাণঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- আশ্রয়প্রদানকারী প্রথম দেশগুলোতে কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করা, দায়িত্ব ভাগাভাগি এবং সমুদ্রপথে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানো জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। ফলে সাগর উত্তাল, বাতাস ও বৃষ্টি প্রবল। এই সময়ে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া আরও বিপজ্জনক। সমুদ্রে বিপদগ্রস্তদের জীবন রক্ষা করা আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের অধীনে একটি মানবিক বাধ্যবাধকতা ও দীর্ঘদিনের দায়িত্ব। ইউএনএইচসিআর এ অঞ্চলের দেশগুলোকে অনুরোধ করছে, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইউএনএইচসিআরের ৩৮৩ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর জীবন স্থিতিশীল করতে এই তহবিল ব্যবহার হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ সংগ্রহ করা গেছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মো. জোয়ের বলেন, দালালদের প্রলোভনে পড়ে সাগরপথে পাড়ি দিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। মূলত রোহিঙ্গারা যাতে রাখাইনে ফেরত না যায় সেজন্য দালালরা এ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। ফলে এ ধরনের মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। আসলে এটি খুবই দুঃখজনক। এটি বন্ধে সরকারের উচিত মানব পাচারকারী (দালালদের) বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।


আরও খবর



ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি যে কারণে হয়ে থাকে

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

ডা. মো. তালহা চৌধুরী

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিতে স্নায়ুর ক্ষতি হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ঘটতে পারে, বিশেষ করে যদি দীর্ঘ সময় ধরে তার রক্তে শর্করার মাত্রা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়। এটি অসাড়তা, ঝনঝন, ব্যথা এবং পেশি দুর্বলতাসহ বিভিন্ন উপসর্গের কারণ হতে পারে। প্রায়ই পায়ে শুরু হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে অগ্রসর হতে পারে। ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির চিকিৎসার লক্ষ্যÑ লক্ষণগুলো উপশম করা, স্নায়ুর ক্ষতির অগ্রগতি ধীর করা এবং অন্তর্নিহিত ডায়াবেটিস পরিচালনা করা।

প্রকারভেদ : ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি বিভিন্ন ধরনের। প্রতিটি ধরন স্নায়ুকে প্রভাবিত করে এবং নির্দিষ্ট উপসর্গ সৃষ্টি করে। এ ধরনগুলোর অন্তর্ভুক্ত হলো-

পেরিফেরাল স্নায়ুরোগ : এটি সবচেয়ে সাধারণ ফর্ম এবং এটি হাত-পায়ের স্নায়ুকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে পায়ে।

অটোনমিক নিউরোপ্যাথি : এ ধরনের স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে, যা হজম, হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপের মতো অনিচ্ছাকৃত ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি : ডায়াবেটিক অ্যামিওট্রফি নামে এটি পরিচিত। এটি ঊরু ও নিতম্বকে প্রভাবিত করে এবং পেশি দুর্বলতা ও ব্যথা হতে পারে।

ফোকাল নিউরোপ্যাথি : এতে নির্দিষ্ট স্নায়ু বা স্নায়ুর গোষ্ঠীতে হঠাৎ এবং প্রায়ই গুরুতর দুর্বলতা বা ব্যথা হয়। এটি সাধারণত শরীরের একদিকে প্রভাবিত করে এবং বিভিন্ন অংশে ঘটতে পারে।

উপসর্গ : অসাড়তা এবং টিংলিং, জ্বলন্ত বা শ্যুটিং ব্যথা, পেশির দুর্বলতা, সংবেদন হারানো, অতি সংবেদনশীলতা, ভারসাম্য সমস্যা, হজমের সমস্যা, প্রস্রাবের সমস্যা, যৌন কর্মহীনতা, রক্তচাপের পরিবর্তন, পা, ত্বকের সমস্যা।

আমাদের করণীয় : রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ডায়াবেটিসের ওষুধ, যেগুলো সামঞ্জস্য করতে পারে বা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, এমন ইনসুলিন আপনার চিকিৎসক লিখে দিতে পারে। সুষম খাদ্য খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার অপরিহার্য উপাদান। ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথা উপশমকারী, যেমন- অ্যাসিটামিনোফেন বা ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস। প্রেসক্রিপশনের ওষুধ যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস (যেমন- অ্যামিট্রিপটাইলাইন, ডুলোক্সেটাইন), অ্যান্টিকনভালসেন্ট (যেমন- গ্যাবাপেন্টিন, প্রিগাবালিন) বা ওপিওড ওষুধ (আসক্তির আশঙ্কার কারণে সাবধানে ব্যবহার করা হয়)।

শারীরিক থেরাপি পেশি শক্তি এবং সমন্বয় উন্নত করতে, ব্যথা কমাতে এবং সামগ্রিক গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া সাময়িক চিকিৎসা হিসেবে ওভার-দ্য-কাউন্টার ক্রিম বা প্যাচযুক্ত ক্যাপসাইসিন (মরিচ থেকে প্রাপ্ত) স্থানীয় ব্যথা থেকে সাময়িক উপশম দিতে পারে। ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক্যাল নার্ভ স্টিমুলেশন থেরাপিতে এমন একটি যন্ত্রের ব্যবহার জড়িত যা স্নায়ুর প্রান্তে বৈদ্যুতিক আবেগ সরবরাহ করে, সম্ভাব্য ব্যথা উপশম প্রদান করে। এছাড়া জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। এজন্য নিয়মিত পায়ের যত্ন নিন এবং জটিলতা রোধ করতে পা পরিষ্কার ও ময়েশ্চারাইজ করুন। ধূমপান নিউরোপ্যাথির লক্ষণগুলো আরও খারাপ করতে পারে, জটিলতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বেশি অ্যালকোহল সেবন নিউরোপ্যাথির লক্ষণগুলো বাড়িয়ে তুলতে পারে।

চিকিৎসা : আপনি নির্দিষ্ট যেসব লক্ষণ অনুভব করেন, তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসক অতিরিক্ত চিকিৎসার সুপারিশ করতে পারেন।

নিয়মিত পর্যবেক্ষণ : নিউরোপ্যাথির অগ্রগতি নিরীক্ষণ করতে এবং প্রয়োজন অনুসারে আপনার চিকিৎসা পরিকল্পনা সামঞ্জস্য করতে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত চেক-আপ বজায় রাখা অপরিহার্য।

লেখক : কনসালট্যান্ট, ফ্যামিলি মেডিসিন, ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল

চেম্বার : আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা

হটলাইন : ১০৬৭২, ০৯৬৭৮৮২২৮২২


আরও খবর