
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ হামলা
চালিয়েছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডজুড়ে চালানো সিরিজ এই হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত
হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ।
সর্বশেষ এই হামলায় গাজায় জাতিসংঘ-পরিচালিত
স্কুলেও হামলা করেছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার দক্ষিণ ও
মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও বহু মানুষ আহত
হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হামলার
ঘটনাটি ঘটেছে সম্প্রতি ঘোষিত মানবিক অঞ্চল দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের পশ্চিমে
আল-মাওয়াসিরে।
মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘ
পরিচালিত একটি স্কুলে বাস্তুচ্যুত লোকজনের ওপর আরেকটি হামলা হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক
বাহিনীর দাবি, উভয় হামলার ক্ষেত্রেই তারা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু
করেছিল এবং সেখানে বেসামরিক হতাহতের প্রতিবেদনগুলো খতিয়ে দেখছে তারা।
ইসরায়েলি বাহিনী আরও দাবি করেছে, হামাসের
সামরিক শাখার নেতৃত্বের অর্ধেক সদস্য নিহত হয়েছে এবং গাজায় ৯ মাসের ইসরায়েলি বিমান
হামলা এবং স্থল অভিযানে প্রায় ১৪ হাজার ‘সন্ত্রাসী’ নিহত বা
আটক হয়েছেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় আগ্রাসন
চালাচ্ছে রাশিয়া। সেই থেকে গত ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা হামলায় ভূখণ্ডটিতে ৩৮ হাজার
৭১০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে অঞ্চলটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
নিহতদের এই পরিসংখ্যানে বেসামরিক মানুষ
এবং যোদ্ধাদের সংখ্যা আলাদা করে উল্লেখ করা হয় না। তবে গত এপ্রিলের শেষ নাগাদ গাজার
এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, মৃতদের মধ্যে ১৪ হাজার ৬৮০ জন শিশু, নারী এবং বয়স্ক ব্যক্তি
রয়েছেন।
মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি
জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে
তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন
আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে
যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার
হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায়
২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে
পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ
ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে
গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো
ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার
অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।