Logo
শিরোনাম
গজারিয়ায় উদ্ধারকৃত মর্টাল শেলের অপরিকল্পিত বিস্ফোরণ!

কেঁপে উঠলো গোটা গ্রাম,ক্ষতিগ্রস্থ অর্ধশত বসতবাড়ি

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি :

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার আড়ালিয়া গ্রাম থেকে উদ্ধার করা মর্টার শেলটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এতে বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশেপাশের ৫০-৬০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তীব্র শব্দে মারা গেছে তিনটি গরু। এঘটনায় স্থানীয় লোকজন চড়াও হয় পুলিশ এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর।জানা যায়, মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) মর্টার শেলটি নিষ্ক্রিয় করতে বিকাল থেকে কাজ শুরু করে পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। রাত ৭টা ৫৬ মিনিটে মর্টার শেলটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে বিস্ফোরণের তীব্রতা এতোটাই বেশী ছিল যাতে গ্রামটির অর্ধশত ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণে সেলিম, হারেস, রশিদ, রফিজ, রেনু মিস্ত্রী, ফরিদ হোসেন, আব্দুল হান্নান, মানিক মিয়া, জলিল, মুক্তার হোসেন, আব্দুল গাফফার, সেলিম মিয়া, বারেকের বাড়িসহ গ্রামটির অর্ধশত বাড়ি ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তীব্র শব্দ আশিক নামে এক চাষীর ৩টি গরুসহ মোট ১৭টি গবাদি পশু মারা গেছে।ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চা দোকানী আব্দুর রশিদ বলেন, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মর্টার শেলটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটা বেশি ছিল, প্রায় তিনশ মিটার দূরের আমার দোকানের প্রায় সব কিছু উড়ে যায়। শুধু আমার নয় আশপাশের অন্তত ৫০-৬০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মসজিদ ও বিল্ডিং-এ ফাটল ধরেছে। তীব্র শব্দে মারা গেছে গোয়ালে থাকা গরু বাছুর।ঘটনাস্থলের চার কিলোমিটার দূরে বালুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা তানিয়া আক্তার বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ঠিক ৭টা ৫৬ মিনিটে আমরা তীব্র ঝাকুনি অনুভব করি। প্রথমে বিষয়টিকে আমরা ভূমিকম্প ভাবলেও পরে জানতে পারি আড়ালিয়া গ্রামের উদ্ধার হওয়া মর্টার শেলটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

এদিকে এই ঘটনার পর স্থানীয়দের জনরোষে পড়ে পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীরা। গণমাধ্যমকর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে স্থানীয় কয়েকজন।বিষয়টি সম্পর্কে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার গজারিয়া উপজেলা প্রতিনিধি মোয়াজ্জেম হোসেন জুয়েল বলেন, মর্টার শেলটির বিস্ফোরণ ঘটানোর পরে আশেপাশের বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। এই ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা আমাদের ওপর চড়াও হয়। কেন আমরা বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যদের মর্টার শেলটি দূরে কোথাও নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে বললাম না সেজন্য তারা আমাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, মর্টার শেলটির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করায় আশেপাশের কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে, সেনাবাহিনী সেখানে যাচ্ছে। আমি নিজেও ঘটনাস্থলে যাচ্ছি, বিস্তারিত পরে জানাবো।

উল্লেখ্য, সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামের মসজিদ সংলগ্ন হানিফের কৃষি জমিতে মাটি কেটে আইল বানাতে গিয়ে একটি মর্টার শেল উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা এটিকে প্রথমে সীমানা পিলার মনে করলেও পরবর্তীতে পুলিশ জানায় এটি একটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল।


আরও খবর



নওগাঁয় সরকারি ভিপি সম্পত্তি দখল চেস্টার অভিযোগ

প্রকাশিত:সোমবার ২৬ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৬ জুন ২০২৫ |

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :

নওগাঁয় সরকারি ভিপি সম্পত্তির দখল চেস্টার প্রতিবাদে প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে মুক্তির মোড় পার্ক ভিউ রেস্টুরেন্টের সেমিনার কক্ষে  সংবাদ সম্মেলন করেন শহরের কাজীর মোড়ের বাসিন্দা মৃত ইয়াকুব আলী কবিরাজের ছেলে  আলহাজ্ব ইউসুফ আলী কবিরাজ।   

এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্য বলেন,  নওগাঁ সদর উপজেলাধীন কাজীর মোড়স্থ চকএনায়েত মৌজার সাবেক খতিয়ান   ৫৭/৮০ নম্বর ভিপি কেস ভূক্ত সম্পত্তির ২০ শতাংশ এর কাতে ৫ শতাংশ ভূমি ইজারা গ্রহিতা। দীর্ঘ প্রায় ৪৬ বছর যাবৎ নিয়মিত সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করে শান্তিপূর্ণভাবে তা ভোগ দখল করে আসছি। সম্প্রতি শহরের কাজীর মোড় এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে মােঃ লালন সহ কতিপয় সঙ্ঘবদ্ধ ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ইজারাকৃত সম্পত্তি থেকে আমাকে উচ্ছেদ করতে এবং উক্ত সরকারি সম্পত্তি বিভিন্ন কায়দায় দখলের চেষ্টা করে আসছে। তারা বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ নেতাদের সহযোগিতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমার ইজারাকৃত সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করে আসছে। বর্তমান পূণরায় কয়েকজন বিএনপি নেতার সাথে জোগসাজস করে সেই চেস্টা করে যাচ্ছে। বিগত দিনে ওইসব ভূমিদস্যুদের হাত থেকে আমার ইজারাকৃত সরকারি সম্পত্তি দখল এবং সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মান বন্ধ সহ আমার বাড়ির সম্মুখে  আইন শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে নওগাঁ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মামলা দায়ের করি।  সে মামলায় বিজ্ঞ আদালত সম্পূর্ণ  পর্যালোচনান্তে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশ দেন। আমার ইজারাকৃত সম্পত্তি আমার চলাচলের একমাত্র রাস্তা যা বন্ধ হয়ে গেলে আমি ও আমার পরিবার সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ হয়ে পড়বো। এছাড়াও উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) এতদ্বাসংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেন, যাতে তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেন, উক্ত সম্পত্তিটি অন্যত্র ইজারা প্রদান করলে বর্তমান লীজ গ্রহীতার বাড়ির সৌন্দয্য এবং চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়বে। সেই সাথে তিনি উক্ত সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা প্রদান না করে আমার নামে ইজারা প্রদানের আদেশ দেন।  বর্তমানে উক্ত সম্পত্তিতে আমি দখলে থাকলেও উপরোক্ত কুচক্রী মহল বিভিন্ন ভাবে আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানি করে আসছে। এমতাবস্থায় আমি এবং আমার পরিবার নানা আতঙ্ক ও শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছি এছাড়াও ভুক্তভোগী দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রসাশনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিকট অতি সত্তর সরকারী সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল চেষ্টায় দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে পরিবারের চলাচলের সুবিধার্থে  ইজারার মেয়াদ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অথবা স্থায়ী ইজারার প্রদানের জন্য  রাষ্ট্রের প্রতি আকুতি জানান। 

সংবাদ সম্মেলনে আলহাজ্ব ইউসুফ আলী কবিরাজসহ তার ছেলে ইয়াছির আরাফাত নাহিদ উপস্থিত ছিলেন।অভিযুক্ত লালন বলেন, কারও সম্পত্তি দখল করিনি আমি আমার পৈতিক সম্পত্তির উপর দোকান নির্মান করেছি। আর ওই জায়গা যেহেতু সরকারি সম্পত্তি সেজন্য জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত রাখতে সকলে মিলে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি।


আরও খবর



ডায়াবেটিস ॥ ভুল ধারণা ও প্রকৃত সত্য

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২০ মে ২০25 | হালনাগাদ:সোমবার ১৬ জুন ২০২৫ |

Image

অধ্যাপক (ডাঃ) এ বি এম আব্দুল্লাহ:

ডায়াবেটিসকে বলা হয় নীরব ঘাতক। বিশ্বের বহু মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। মানুষের মাঝে এ রোগ নিয়ে একাধিক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। আসল সত্য তুলে ধরেন।

(১) ভুল ধারণা- ডায়াবেটিস কোনদিনও ভাল হয় না :

* প্রকৃত সত্য- ডায়াবেটিসকে বলা হয় চিরজনমের রোগ। তবে কিছু কিছু রোগের কারণে ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে, তাকে বলে সেকেন্ডারি ডায়াবেটিস। যেমন-এক্রোমেগালি, থাইরোটক্সিকোসিস, প্যানক্রিয়াটিক ডিজিজ, কুশিং সিনড্রোম। এ সমস্ত রোগের চিকিৎসা করলে ডায়াবেটিস ভাল হতে পারে। কিছু কিছু ওষুধ ব্যবহারে ডায়াবেটিস হয়। যেমন- অনেকদিন ধরে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেলে। এগুলো ছেড়ে দিলে আবার ডায়াবেটিস ভাল হয়ে যায়। নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চললে এবং প্রয়োজনে ওষুধ নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস সেরে যেতে পারে।

(২) ভুল ধারণা- ভাত বা কার্বোহাইড্রেট একেবারেই খাওয়া যাবে না :

* প্রকৃত সত্য- অনেকেই মনে করেন ডায়াবেটিস হলে আর ভাত খাওয়া যাবে না। কথাটা একেবারেই সত্য নয়। ভাত বা কার্বোহাইড্রেট পরিমাণ মতো খাওয়া যাবে। সাধারণত সকালে- রাতে গমের রুটি খেতে বলা হয় এবং দুপুরে পরিমাণ মতো মেপে ভাত খেতে দেয়া হয়।

(৩) ভুল ধারণা- কৃত্রিম চিনি ইচ্ছামতো ব্যবহার করা যাবে :

* প্রকৃত সত্য- ডায়াবেটিস রোগীদের কোন প্রকার মিষ্টান্ন খাওয়া উচিত নয় বলে ভাবেন অনেকে। এটি ভুল ধারণা। সাধারণ চিনি না খেয়ে কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেটাও হতে হবে পরিমিত। ইচ্ছে মতো অতিরিক্ত কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করা উচিত না।

(৪) ভুল ধারণা- ডায়াবেটিস রোগীরা ফল খেতে পারেন না:

* প্রকৃত সত্য- এটাও একটা ভুল ধারণা। ডায়াবেটিস রোগীরা যে কোন ফল খেতে পারবেন। যেমন- কলা, আপেল, কমলা, আঙ্গুর ইত্যাদি। তবে তা যেন হয় পরিমিত।

(৫) ভুল ধারণা - মিষ্টি খেলেই ডায়াবেটিস হয় :

* প্রকৃত সত্য- মিষ্টি খেলেই ডায়াবেটিস হয়- এ কথাটা ঠিক নয়। সরাসরি মিষ্টি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার কোন যোগসূত্র নেই। মিষ্টি বেশি না খেলেও ডায়াবেটিস হতে পারে। আসলে পারিবারিক ইতিহাস, ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাবার, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বা পরিশ্রমবিহীন অলস জীবন যাপন ইত্যাদি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই বলে ইচ্ছে মতো চিনি বা মিষ্টি কোনক্রমেই বেশি খাওয়া উচিত নয়।

(৬ ) ভুল ধারণা- মিষ্টিজাতীয় ওষুধ খেলে ডায়াবেটিস বাড়বে :

* প্রকৃত সত্য- কিছু কিছু সিরাপ জাতীয় ওষুধ বেশ মিষ্টি, যেগুলোতে সামান্য সুগার বা স্যাকারিন দেয়া হয়। অনেক ডায়াবেটিস রোগীর ধারণা এগুলো খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। আসলে তা ঠিক নয়। কারণ, এই সিরাপগুলোতে খুব সামান্য পরিমাণ স্যাকারিন মিশ্রিত থাকে। রোগের কারণে ওষুধটাই জরুরী। এগুলো সেবনে ডায়াবেটিস বাড়ার তেমন কোন ঝুঁকি নেই।

(৭) ভুল ধারণা- ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে হতে পারে :

* প্রকৃত সত্য- ডায়াবেটিস কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। বরং জেনেটিক বা বংশগত কারণে হতে পারে। যেমন- বাপ-মা, ভাই-বোন, নিকটাত্মীয় কারও ডায়াবেটিস থাকলে অন্যদেরও হতে পারে।

(৮) ভুল ধারণা- হোমিওপ্যাথিক বা হার্বাল মেডিসিনে ডায়াবেটিস ভাল হয় :

* প্রকৃত সত্য- আসলে এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি তিনটা ‘ডি’-

* প্রথম ডি-ডায়েট কন্ট্রোল বা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ। ৬০ থেকে ৮০ ভাগ রোগী এতেই ভাল থাকেন।

* দ্বিতীয় ডি- ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলা। সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি।

* তৃতীয় ডি- ড্রাগ বা ওষুধ, খুব অল্প সংখ্যক রোগীর ওষুধের প্রয়োজন পড়বে।

(৯) ভুল ধারণা- তিতা জাতীয় জিনিস যেমন- করলা, মেথি বা নিমপাতা খেলে ডায়াবেটিস সেরে যায় :

* প্রকৃত সত্য- তিতা স্বাদযুক্ত খাবার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ হ্রাস করে বলে মনে করেন অনেকেই। এ কারণে করলা বা নিম বা অন্যান্য তিতা খাবার খান। এটা একটি ভুল ধারণা। তিতা খেলে ডায়াবেটিস রোগে উপকার হয়, এ রকম ধারণা কমবেশি প্রচলিত থাকলেও বিজ্ঞানসম্মত এর কোন প্রমাণ নেই যে, এগুলো রক্তে গ্লুকোজের নিয়ন্ত্রণ করে।

(১০) ভুল ধারণা- সাধারণ চিনিমুক্ত খাবার বা পানীয় ইচ্ছেমতো খাওয়া যায় :

* প্রকৃত সত্য- এ কথাও সত্য নয়। বাজারে ‘ডায়াবেটিক’ পানীয় যেমন- কোক, পেপসি, সেভেন আপ ইত্যাদি এমনকি ডায়াবেটিক সন্দেশ, বিস্কুট, জ্যাম, চকলেট পাওয়া যায়। এসব খাবারের গায়ে চমকপ্রদ কিছু লেখা আর চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে স্বাভাবিকভাবেই একজন ডায়াবেটিস রোগীর খেতে মন চায়। ডায়াবেটিক রোগীরা মাঝেমধ্যে মিষ্টির বদলে এগুলো খেতে পারেন। তবে সব সময় খাওয়া উচিত না।

(১১) ভুল ধারণা- ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা প্রয়োজনে কাউকে রক্তদান করতে পারবেন না :

* প্রকৃত সত্য- ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা কখনও অন্য মানুষকে রক্তদান করতে পারেন না, এমনটাই ধারণা অনেকের। তবে এ ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে বা অন্য কোন সমস্যা না থাকলে রক্তদানে কোন সমস্যা নেই।

(১২) ভুল ধারণা- নিয়ন্ত্রণে এলে অনেকেই শারীরিক সমস্যা হচ্ছে না মনে করে ওষুধ বন্ধ করে দেন। মনে করেন ওষুধ না খেলেও চলে :

* প্রকৃত সত্য- কোন কোন রোগী একবার সুগার নিয়ন্ত্রণে এসে গেলেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু বাস্তবে ওষুধের কারণেই সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। ওষুধ বন্ধ করা হলে সুগারের মাত্রা আবার বাড়তে থাকে। তাই নিয়ন্ত্রণে এলেই ওষুধ বন্ধ করা মোটেও ঠিক নয়।

(১৩) ভুল ধারণা- ডায়াবেটিক রোগীরা ওষুধ খাওয়ার পরে যত খুশি মিষ্টি খেতে পারেন :

* প্রকৃত সত্য- এ ধারণাটা মোটেই ঠিক নয়। হয়ত মাঝেমধ্যে একটু আধটু মিষ্টি খাওয়া যেতে পারে। তার মানে যত খুশি তত মিষ্টি খাওয়া কোনক্রমেই উচিত হবে না। তবে অনেকেই ডায়াবেটিস অতিরিক্ত কন্ট্রোল করতে গিয়ে স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া একেবারেই কমিয়ে দেন বা ছেড়ে দেন। তা মোটেও ঠিক নয়। অবশ্যই পরিমিত পুষ্টিকর বিশুদ্ধ খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে।

(১৪) ভুল ধারণা- ডায়াবেটিস সারা জীবনের সঙ্গী। এটি থেকে আর কোনদিন পরিত্রাণ পাওয়া যায় না :

* প্রকৃত সত্য- এই বিষয়টি সত্যি নয়। সঠিক নিয়ম ও উপায় অবলম্বন করে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস মুক্ত হওয়া যায়।

(১৫) ভুল ধারণা- একবার ডায়াবেটিসের ওষুধ শুরু করলে আর কোন সময়ই তা বন্ধ করা যাবে না :

* প্রকৃত সত্য- এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। স্থূলকায় ব্যক্তিদের ওজন নিয়ন্ত্রণ, ডায়েট কন্ট্রোল এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। প্রয়োজনে ওষুধ বন্ধ করা যেতে পারে।

(১৬) ভুল ধারণা- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা তাড়াতাড়ি মারা যায় :

* প্রকৃত সত্য- এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। শৃঙ্খলা মেনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করলে অবশ্যই জীবনযাত্রা স্বাভাবিক থাকবে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে অনেক ধরনের জটিলতা হতে পারে।

(১৭) ভুল ধারণা- ডায়াবেটিসে ইনসুলিন সর্বশেষ চিকিৎসা :

* প্রকৃত সত্য- ইনসুলিন একজন ডায়াবেটিস রোগীর জীবনে যে কোন সময়ই লাগতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়, যে কোন অপারেশনের সময়, কোন গুরুতর রোগে হাসপাতালে থাকাকালীন। যেমন- হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক বা মারাত্মক কোন সংক্রমণের সময়, কিডনি বা যকৃতের জটিলতায় ইনসুলিনই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ। এ ছাড়া কোন কারণে রক্তে গ্লুকোজ অনেক বেড়ে গেলেও ইনসুলিন দরকার হবে। ব্যাপারটা এমন নয় যে, ইনসুলিন দেয়া হচ্ছে মানে অবস্থা খুব জটিল বা মরণাপন্ন। তবে অবস্থার উন্নতি হলে ইনসুলিন বন্ধ করা যেতে পারে এবং মুখে খাওয়ার ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। তার মানে ইনসুলিন সর্বশেষ চিকিৎসা নয়।

(১৮) ভুল ধারণা - একবার ইনসুলিন ব্যবহার করলে সারা জীবনই তা নিতে হবে :

* প্রকৃত সত্য- বিষয়টা আসলে তা নয়। নানা কারণে ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। আবার পরে তা পরিবর্তন করে বা বন্ধ করে ওষুধ খাওয়াও যেতে পারে। যেমন- গর্ভাবস্থা কেটে যাওয়ার পর বা অস্ত্রোপচারের ঘা শুকিয়ে যাওয়ার পর একসময় ইনসুলিন বন্ধ করে আবার ওষুধ খাওয়া যায়। তবে টাইপ ১ ডায়াবেটিস, কিডনি ও যকৃতের গুরুতর সমস্যা এবং সর্বোচ্চ মাত্রায় ওষুধ ব্যবহার করেও যদি গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রিত না হয়, এসব ক্ষেত্রে সব সময়ের জন্য ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে।

(১৯) ভুল ধারণা- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের গর্ভধারণ করা ঠিক নয়, এমনকি বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো যাবে না:

* প্রকৃত সত্য- এ ধারণাটা মোটেও ঠিক নয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে গর্ভধারণে কোন নিষেধ নেই, এমনকি বাচ্চাকে দুধ খাওয়ালেও বাচ্চার কোন ঝুঁকি নেই।

(২০) ভুল ধারণা- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা কখনোই রোজা রাখতে পারবেন না :

* প্রকৃত সত্য- এই ধারণা মোটেও ঠিক নয়। ডায়াবেটিসের চিকিৎসার মূলমন্ত্র হলো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা। রোজা একটা সুবর্ণ সুযোগ, যা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে রোগীরা অবশ্যই রোজা রাখতে পারবেন। প্রয়োজনে ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। এমনকি রোজা রেখে দিনের বেলায় রক্তের সুগার মাপা যাবে, প্রয়োজনে রোজা রেখে ইনসুলিন ইনজেকশন দেয়া যাবে। এতে রোজা ভঙ্গ হবে না।

(২১) ভুল ধারণা- ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে ওরস্যালাইন খেতে পারবেন না :

* প্রকৃত সত্য - অনেকে মনে করেন ওরস্যালাইনের মধ্যে গ্লুকোজ থাকে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীর ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইন খাওয়া উচিত নয়। এ ধারণাটা মোটেও ঠিক নয়। কারণ ওরস্যালাইনে সামান্য গ্লুকোজ থাকে। এতে ডায়াবেটিসের ততটা ক্ষতি হয় না।

সুতরাং যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের এসব ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ডায়াবেটিসকে ভয় না পেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।



আরও খবর



ভূমিকম্পের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি ও প্রস্তুতি

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৭ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫ |

Image

 অধ্যাপক ড. আলা উদ্দিন :চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় :

গত ২৮ মার্চ, ২০২৫ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিয়ানমারে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং প্রাণহানি ঘটে। রিখটার স্কেলে ৭.৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের মান্দালয় অঞ্চল। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, লাওস, কম্বোডিয়া এমনকি বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও কম্পন অনুভূত হয়েছিল। চট্টগ্রামে নিজেই অনুভব করেছি। তখন চেয়ারে বসা অবস্থায় টের পেয়েছিলাম। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে আঘাত হানা শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা ৩০০০ ছাড়িয়েছে, থাইল্যান্ডেও বহু হতাহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরো অন্তত কয়েক হাজার। আমাদের এই বাংলা অঞ্চলে ১৯১৮ সালে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাত ঘটেছিল সিলেটের শ্রীমঙ্গলে। ভৌগোলিক অবস্থানের বিবেচনায় ভূমিকম্পের জন্য সংবেদনশীল এই অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে ভূমিকম্প না ঘটায় এবং পার্শবর্তী দেশ মিয়ানমারের এই সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশ বর্তমানে ভূমিকম্পের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। এমতাবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে- ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কি পরবর্তীতে ৭ এর অধিক মাত্রার ভূমিকম্পের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত? অতীত দুর্যোগ থেকে বাংলাদেশ কি কোনো শিক্ষা নেয়? পরিত্রাণেরই বা কী উপায়?

মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং এর তীব্র প্রভাব : মিয়ানমারে আঘাত হানা ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় দুপুর ১২:৫০ মিনিটে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আঘাত হানে, যার গভীরতা ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ কিলোমিটার। এর মাত্র ১২ মিনিট পরেই ৬.৪ মাত্রার একটি আফটারশক আঘাত হানে। মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা ৩০০০ ছাড়িয়েছে, আহত হয়েছেন কয়েক হাজার এবং ক্ষয়ক্ষতি ছিল ভয়াবহ। নেপিদো, মান্দালয় এবং সাগাইংয়ের মতো প্রধান শহরগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, অনেক ভবন ধসে পড়েছিল। শক্তিশালী সেতু ধ্বংস হয়েছে এবং পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমার ঘোষণা করেছিল জরুরি অবস্থা। অন্যদিকে প্রতিবেশী থাইল্যান্ডও গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হয়েছিল। ব্যাঙ্ককে ধসে পড়া ৩০ তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে কমপক্ষে তিনজন মারা গেছেন এবং ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আটকা পড়েছিলেন। সৌভাগ্যবশত, ভবনটি নির্মাণাধীন ছিল। যদি এটি কোনো ব্যবহৃত আবাসিক ভবন বা অফিস হতো, তবে মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারত।

এই বিধ্বংসী ঘটনাটি ওই অঞ্চলের দুর্বলতা তুলে ধরেছে। বিশেষ করে মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশসমূহে, যেখানে প্রায়শই এত তীব্র ভূমিকম্পের প্রভাব সহ্য করার জন্য অবকাঠামো তৈরি করা হয় না। মিয়ানমারের কাছাকাছি অবস্থিত বাংলাদেশ তার নিজস্ব অনন্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যদিও বাংলাদেশ অতীতে ছোট আকারের ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়েছে। তবে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ভূমিকম্প দুর্যোগের জন্য দেশের প্রস্তুতি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ : অবকাঠামোগত দুর্বলতা ছাড়াও, মিয়ানমারের জটিল ফল্ট লাইনের কাছাকাছি অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কম্পন সমগ্র বাংলাদেশে অনুভূত হয়েছে, যা ভূপৃষ্ঠের নিচে লুকিয়ে থাকা হুমকির কথা স্পষ্ট স্মরণ করিয়ে দেয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৫৯৭ কিলোমিটার দূরে, যা এই অঞ্চলের ভূমিকম্পের ঝুঁকির খুব কাছাকাছি অবস্থিত। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ৬ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প মাঝারি বলে মনে হলেও, এটি ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মতো ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে, যেখানে দুর্বল অবকাঠামো এবং উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্ব ঝুঁকিকে প্রকট করে তুলবে।

বিশ্বের ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। দুই কোটিরও বেশি বাসিন্দার ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি। শহরটি অপরিকল্পিত নগরায়ন, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং দুর্বলভাবে নির্মিত ভবন দ্বারা জর্জরিত। উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের আরেকটি প্রধান শহর চট্টগ্রামও একই ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন। যদি একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্প আঘাত হানে তবে উভয় শহরই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ১৯১৮ সালের পর বাংলাদেশ মূলত বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ কারণে ঝুঁকি রয়ে গেছে এবং ভূতাত্ত্বিকরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে এই অঞ্চলে একটি বড় ভূমিকম্পের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেট থেকে কক্সবাজারের মধ্যে মাটির নিচে অবস্থানগত কারণে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি জমা আছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী কেবল এই উদ্বেগকেই আরো বাড়িয়ে তোলে।

প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা : বড় ভূমিকম্পের জন্য বাংলাদেশের ঝুঁকি গভীরভাবে এর অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর সঙ্গে জড়িত। অনেক ভবন, বিশেষ করে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুরোনো অংশগুলোতে, বড় ভূমিকম্পের ধাক্কা সহ্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, অনেক কাঠামো নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে নির্মিত, ভূমিকম্প প্রতিরোধের বিষয়টি খুব কমই বিবেচনা করা হয়। ফলে বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে এগুলো ধসে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। ভবনগুলো এমনভাবে নির্মিত যে, কোনো ভবনে আগুন লাগলে দমকল বাহিনীর গাড়ি কিংবা জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াতের ব্যবস্থাও থাকে না। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে দেড় লাখ এবং ঢাকায় আরো কয়েকগুণ বেশি ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে চিহ্নিত হয়েছে। তবে নেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এতো অবহেলা ও উদাসীনতার পর ভূমিকম্পের ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদ বিনষ্ট হলে কেবল ভূমিকম্প, ভৌগোলিক অবস্থান বা দুর্ভাগ্যকে দোষারোপ করা সমীচীন হবে না। তদুপরি, বাংলাদেশের জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা তার চাহিদার তুলনায় অনুন্নত। যদিও দেশটি দুর্যোগ প্রস্তুতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, বিশেষ করে বন্যা ব্যবস্থাপনা এবং ঘূর্ণিঝড় প্রতিক্রিয়ায়- তারপরও ভূমিকম্প প্রস্তুতি অপর্যাপ্ত। আধুনিক বিল্ডিং কোডের অভাব, সীমিত ভূমিকম্প মহড়া এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে বৃহৎ আকারের জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করার অপর্যাপ্ত সচেতনতা ও ক্ষমতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই ঘাটতিসমূহ যদি একটি বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে তাহলে ধ্বংস এবং প্রাণহানিকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।

একটি তীব্র ভূমিকম্পের ফলে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে, বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যেখানে মানুষ দুর্বলভাবে নির্মিত ভবনে বসবাস করছেন। তাছাড়া, জল, বিদ্যুৎ এবং পরিবহনের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো ব্যাহত হলে উদ্ধার ও ত্রাণ প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে, যা ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য সাহায্য সরবরাহকে জটিল করে তুলবে সন্দেহাতীতভাবে।

আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট- মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ : সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের সঙ্গে মিয়ানমারের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোকে বৃহত্তর ভূমিকম্পের ঝুঁকি স্মরণ করিয়ে দেয়। মিয়ানমার, যদিও গত দুই দশকে বড় আকারের ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়নি, তবুও ভূমিকম্পের দিক থেকে সক্রিয় হিমালয় বৃত্তের মধ্যে অবস্থিত। এই টেকটোনিক অঞ্চলটি ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং সাম্প্রতিক ভূমিকম্প থেকে বোঝা যায় যে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের কার্যকলাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মিয়ানমারের চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং মানবিক সংকট ভূমিকম্পের প্রতিক্রিয়ায় মুখোমুখি চ্যালেঞ্জকে আরো জটিল করে তুলেছে। ত্রিশ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতির সঙ্গে, মিয়ানমার এখন দ্বৈত সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে- চলমান সংঘাত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিণতি। মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া বাংলাদেশ, একটি বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাছাড়া, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ উভয়ের ঘন জনসংখ্যা ও দুর্বল অবকাঠামোর অর্থ হলো একটি বৃহৎ আকারের দুর্যোগের ভয়াবহ পরিণতির সমূহ সম্ভাবনা। উভয় দেশেই মানবিক প্রতিক্রিয়া, লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ, সীমিত সম্পদ এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামাজিক অস্থিতিশীলতার কারণে ব্যাহত হবে। কারণ নানা প্রেক্ষাপট পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ সাধারণত অতীতের কোনো দুর্যোগ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না এবং ভবিষ্যতের দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেয় না। তাৎক্ষণিক মানবিক ব্যবস্থাপনাই যেন ভরসা।

অতীত থেকে শিক্ষা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পণা : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ এখনো কোনো বড় ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয়নি। তবে মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক ঘটনা বাংলাদেশ সরকার এবং নাগরিকদের জন্য একটি জাগরণের সংকেত হিসেবে কাজ করা উচিত। এই দুর্যোগ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাগুলো ভবিষ্যতের অনিবার্য ভূমিকম্পের জন্য বাংলাদেশ কীভাবে আরো ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। প্রথমত, ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে ভবনগুলো যাতে ভূমিকম্পের কার্যকলাপের জন্য আরো স্থিতিশীল হয় তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে বিল্ডিং কোড এবং নির্মাণ অনুশীলন শক্তিশালী করতে হবে। আধুনিক ভূমিকম্প-প্রতিরোধী প্রযুক্তি বাস্তবায়ন এবং নিয়মিত ভবন পরিদর্শন পরিচালনা ভূমিকম্পের সময় কাঠামোগত ধসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বিনিয়োগ করা উচিত। এর মধ্যে রয়েছে ভূমিকম্পের প্রতিক্রিয়া জানাতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা উন্নত করা, নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া পরিচালনা করা এবং বৃহৎ আকারের দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি পরিষেবাগুলো সুসজ্জিত রয়েছে তা নিশ্চিত করা। ভূমিকম্পের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে সে সম্পর্কে নাগরিকদের শিক্ষিত করার জন্য জনসচেতনতামূলক প্রচারণাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, সরকারের উচিত ভূমিকম্প প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট কৌশলসহ একটি বিস্তৃত জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরিকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এই পরিকল্পনায় জরুরি সাহায্য বিতরণের জন্য পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, সরিয়ে নেওয়ার পথ এবং আকস্মিক কৌশলের উন্নয়নের রূপরেখা থাকা উচিত। সর্বোপরি দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া এবং প্রস্তুতি উন্নত করার জন্য বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা অপরিহার্য। এই অঞ্চলের আন্তঃসংযুক্ত প্রকৃতির কারণে, জ্ঞান, সম্পদ এবং দক্ষতা ভাগাভাগি ভূমিকম্প এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সম্মিলিত স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করবে।

কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ : মিয়ানমারে সাম্প্রতিক ভূমিকম্প এবং এর ব্যাপক প্রভাব বাংলাদেশের মুখোমুখি ভূমিকম্পের ঝুঁকির স্পষ্ট স্মারক হিসেবে কাজ করবে। যদিও দেশ সাম্প্রতিক সময়ে বড় আকারের ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়নি, তবে এই অঞ্চলটি এমন সংকটের মুখোমুখি হওয়া সম্ভবত সময়ের ব্যাপার। মিয়ানমারের দুর্যোগ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা বাংলাদেশে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি এবং স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করবে।

অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ, জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা উন্নতকরণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে, বাংলাদেশ তার নাগরিকদের একটি বড় ভূমিকম্পের বিধ্বংসী প্রভাব থেকে আরো ভালোভাবে রক্ষা করতে পারে। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। দেশের ঘনবসতিপূর্ণ জনসংখ্যা এবং দুর্বল অবকাঠামো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মুখোমুখি করে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সক্রিয় পরিকল্পনার মাধ্যমে, বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে পারে যে এটি ভবিষ্যতের অনিবার্য চ্যালেঞ্জের জন্য আরো ভালোভাবে প্রস্তুত।

ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ জাপান ইতোমধ্যে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নকশায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, এয়ার ড্যানশিনের ভাসমান ভবন উদ্ভাবন, যা ভূমিকম্পের সময় কাঁপুনি রোধ করার জন্য লেভিটেশন ব্যবহার করে। এই প্রযুক্তি জাপানকে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নির্মাণের অগ্রভাগে রেখেছে। ভূমিকম্পের সময় মাটি থেকে ভবন উপরে ভাসমান করে রাখার বিষয়েও তারা অগ্রগতি সাধিত করেছে। যদিও বাংলাদেশে এখনো এই ধরনের অগ্রগতি সম্ভব না হলেও, কাছাকাছি ধরনের অনুশীলন বাস্তবায়ন বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে জীবন বাঁচাতে পারে। ভবিষ্যতের ভূমিকম্পের ঝুঁকি থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের নিজস্ব, উদ্ভাবনী এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের চূড়ান্ত দাবি।



আরও খবর



অদৃশ্য মহামারি থ্যালাসেমিয়া

প্রকাশিত:রবিবার ২৫ মে 20২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৬ জুন ২০২৫ |

Image

বাংলাদেশে রেজিস্ট্রারভুক্ত থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ হলেও বাস্তবে এ সংখ্যা ৪ থেকে ৫ লাখে দাঁড়িয়েছে, যা অনেকটা অদৃশ্য মহামারিতে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসা ব্যয়ের ভার এতটাই বেশি যে, সব রোগীর জন্য সেবা দিতে বছরে প্রয়োজন অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা। অথচ রোগটি শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য— যদি সচেতনতা এবং বিবাহপূর্ব থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা নিশ্চিত করা যায়।

আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য, পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসায় প্রতি মাসে একজন রোগীর খরচ হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে দেশে প্রায় এক লাখ রেজিস্ট্রারভুক্ত রোগী রয়েছে, যাদের চিকিৎসায় বছরে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকা। আর প্রকৃত রোগী সংখ্যার ভিত্তিতে হিসাব করলে এই ব্যয় দাঁড়ায় ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া এমন একটি রোগ যার ব্যয়ে কোনো উদ্বৃত্ত নেই। এর চিকিৎসা ব্যয় শুধু বাড়তেই থাকে। সমস্যা আরও গভীর হয় যখন দুইজন বাহক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সন্তান জন্ম দেয়, যেটি এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহন করে। একমাত্র সমাধান হলো সচেতনতা এবং বিবাহপূর্ব পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা। আমি নিজে এই বিষয়ে সামাজিকভাবে কাজ শুরু করব এবং আমার তিনটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি জায়গায় এই রোগ নিয়ে আলোচনার আয়োজন করব।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন শিশু হাসপাতালের পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক। তিনি বলেন, বিবাহপূর্ব থ্যালাসেমিয়া বাহক শনাক্তকরণ বাধ্যতামূলক হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই রোগ থেকে রক্ষা পাবে।

শিশু হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হক বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। এটি প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ, কিন্তু জনসচেতনতার অভাবে প্রতিদিনই নতুন রোগী যুক্ত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, এই রোগীদের নিয়মিত রক্ত প্রয়োজন। তাই নিরাপদ রক্তের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করাও জরুরি, যাতে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে নতুন কোনো রোগ ছড়িয়ে না পড়ে।



আরও খবর



সংকটকে ঘনীভূত করার চেষ্টা করছেন কিছু উপদেষ্টা

প্রকাশিত:রবিবার ২৫ মে 20২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

কোনো দলকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। এ সময় চলমান সংকটকে ঘনীভূত করতে কিছু উপদেষ্টা বিতর্কিত ভূমিকা পালন করছেন বলেও দাবি করেন তিনি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মজয়ন্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি কাজী নজরুলের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বৈশিষ্ট্য নিরপেক্ষ হতে হবে। কোনো দলকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। এমনটা হলে জনগণ তা মেনে নেবে না।

কিছু উপদেষ্টা বিতর্কিত ভূমিকা পালন করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা চলমান সংকটকে ঘনীভূত করার চেষ্টা করছেন। উপদেষ্টারা অর্পিত দায়িত্ব বাদ দিয়ে অন্য কোনো গভীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে আমরা প্রতিবাদ করবই।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। এ সময় প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান রিজভী।

জাতীয় কবিকে নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সাম্প্রতিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ জাতীয় আন্দোলন সংগ্রামের অনুপ্রেরণা ছিল নজরুল।

তিনি বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম লেখণী, সাহিত্যকর্ম, গান থেকে যুগে যুগে মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করছে। জুলাই আন্দোলন ও বিগত ১৫ বছরের আন্দোলনে তিনি আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। শত আঘাতের মধ্যে তার কাছ থেকে বেঁচে থাকার প্রেরণা পেয়েছি।

রিজভী আরও বলেন, শৃঙ্খলমুক্ত হওয়ার জন্য নজরুল আমাদের তাগিদ দিয়েছেন। জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে তিনি আমাদের অঙ্গীকারবদ্ধ করেন। তাই তিনি আজও তিনি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

উল্লেখ্য, জন্মদিন উপলক্ষে ফুল আর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হচ্ছে বাঙালির প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে।রবিবার সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কবির সমাধিস্থলে ফুল হাতে ভিড় করেন ভক্ত অনুরাগী সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতারা।


আরও খবর