
আজ তো বিশেষণ দেওয়ারই দিন। হিমালয়ঘেঁষা নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে ইতিহাস গড়েছে বাংলার মেয়েরা। স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে নিয়েছেন সাবিনারা।
চোটে থাকা সত্ত্বেও শিরোপা লড়াইয়ের ম্যাচে স্বপ্নার ওপর ভরসা রেখেছিলেন বাংলাদেশের কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন। ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে শুরুর একাদশে মাঠে নামিয়েছেন স্বপ্নাকে। তবে দুর্ভাগ্য স্বপ্নার। ইনজুরির কারণে ম্যাচের ১০ মিনিটের মধ্যে দলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকারকে উঠিয়ে শামসুন্নাহার জুনিয়রকে মাঠে নামান কোচ। তার এই সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে মাত্র ৪ মিনিট সময় নেন শামসুন্নাহার।
শামসুন্নাহার-কৃষ্ণার দারুণ ফিনিশারে নেপালের জালে ৩ গোল দিয়ে ছিনিয়ে আনলেন শিরোপা। এই জয়টা তাদেরই প্রাপ্য। সাফের এই ঐতিহাসিক জয়কে কোনোভাবেই আর অবিশ্বাস্য বলা চলে না। নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে ১৫ হাজার দর্শককে স্তব্ধ করে, তাদের সাক্ষী রেখে শামসুন্নাহার-কৃষ্ণারা সেখানকার আকাশে-বাতাসে লিখে দিয়ে এলেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নারী ফুটবল দল আমরাই।
ম্যাচের প্রথম মিনিটেই আক্রমণে যায় বাংলার মেয়েরা। ডি-বক্সের বাইরে থেকে মারিয়া মান্ডার জোরালো শট আটকে দেন নেপাল গোলরক্ষক। ফিরতি শটে সিরাত জাহান স্বপ্না চেষ্টা করলেও লক্ষ্যভেদ হয়নি।
ম্যাচের ১০ মিনিটে গর্জে ওঠা দশরথ স্টেডিয়ামে নীরবতা নামিয়ে আনেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। চোট পাওয়া স্বপ্নার জায়গায় মাঠে নেমে মনিকা চাকমার ক্রস থেকে ডান পায়ের দারুণ ভলিতে গোল করেন তিনি। এই টুর্নামেন্টের প্রথমবারের মতো গোল হজম করে স্বাগতিক নেপাল।
পিছিয়ে পড়ে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উইং ধরে বেশ ক’বার আক্রমণে উঠেছিল নেপাল। এদিন গোলরক্ষক রুপনা চাকমা ও ডিফেন্ডারদের কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছেন নেপালি ফরওয়ার্ডরা। তবে বিপদ হতে দেননি তারা। ৩৫ মিনিটের মাথায় নেপালের আনিতা বাসনেতের দারুণ এক ফ্রিকিক দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে রুপনা ঠেকিয়ে দিলে কর্নার পায় নেপাল।
সেই কর্নার থেকে জটলার মধ্য দিয়ে লক্ষ্যভেদের চেষ্টা করেও ব্যর্থ নেপাল। গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করেন ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন। ঝিমিয়ে পড়া দশরথ স্টেডিয়াম আবারও জেগে ওঠে তখন। তবে ৪২ মিনিটে কৃষ্ণা রানীর বাঁ-পায়ের দারুণ এক ফিনিশিংয়ে আবারও নীরবতা নেমে আসে গ্যালারিতে। নেপালি ডিফেন্ডারদের ভুলকে কাজে লাগিয়ে অধিনায়ক সাবিনার বল বাড়ান ডি-বক্সে। সেখান থেকে বাঁম পায়ের দারুণ এক ফিনিশিংয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কৃষ্ণা। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে বাংলাদেশ।
টানা আক্রমণের ফল নেপাল পেয়েছে ম্যাচের ৭০ মিনিটে। আনমার্কড অবস্থায় থাকা আনিতার জোরালো শটে প্রথম গোলের দেখা পায় নেপাল কিন্তু সেটা কেবল ব্যবধানই কমায়।
ঘুরে দাঁড়াতে প্রত্যয়ী নেপালের জালে তৃতীয় গোলটা দেন কৃষ্ণা। কাউন্টার অ্যাটাকে ম্যাচের ৭৭ মিনিটে মনিকার বাড়ানো থ্রু ঠাণ্ডা মাথার দারুণ ফিনিশিংয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন এই কৃষ্ণা। ৩-১ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন সাবিনারা।