ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র
গোষ্ঠী হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। তার
মৃত্যুর পর হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য খালেদ মেশাল সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত
প্রধান হিসেবে নিয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে একাধিক সংবাদমাধ্যম। যদিও এ বিষয়ে
আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি হামাস।
শুক্রবার লেবাননের বেসরকারি টিভি চ্যানেল লেবানিজ ব্রডকাস্টিং
কর্পোরেশন ইন্টারন্যাশনাল (এলবিসিআই) বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা তাস।
একটি সূত্র এলবিসিআইকে নিশ্চিত করেছে, হামাস নেতৃত্ব তুর্কি, কাতারি এবং মিশরীয়
কর্মকর্তাদের গাজার তেল আল-সুলতান অপারেশন চলাকালীন সংগঠনের প্রধান ইয়াহিয়া
সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়ে জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরোর
বৈদেশিক প্রধান খালেদ মেশাল ফিলিস্তিনি সংগঠনটির হাল ধরেছেন।
সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, মেশাল ভারপ্রাপ্ত
প্রধানের ভূমিকা নিয়েছেন এবং এখন ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনায়
তিনি নেতৃত্ব দেবেন। এ ছাড়া হামাসের মিত্রদের সঙ্গে যোগাযোগও তিনি করবেন।
কে এই খালেদ
মেশাল
খালেদ মেশাল ১৯৫৬ সালে জর্ডান অধিকৃত পশ্চিম তীরের সিলওয়াদে
জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সিলওয়াদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা
করেন। তার পিতা আব্দুল কাদির মেশাল একজন কৃষক ছিলেন । যিনি ১৯৫৭ সালে কৃষি কাজ এবং
ইমাম হিসেবে কাজ করার জন্য কুয়েতে চলে যান। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পরে, ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করলে মেশালের পরিবার জর্ডানে পালিয়ে যায়।
যেখানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই ১৯৭১ সালে মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দেন।
পরে ১৯৭৪ সালে কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্র রাজনীতিতে
জড়িত হন মেশাল। তিনি ১৯৭৭ সালে ফিলিস্তিনি ছাত্র ইউনিয়নের (জিইউপিএস) নির্বাচনে
ইসলামিক জাস্টিস লিস্টের (কায়েমাত আল-হক আল-ইসলামিয়া) নেতৃত্ব দেন, যা মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি অংশ এবং ফিলিস্তিনি ইসলামী আন্দোলনের ওপর
ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল।
হামাসের সঙ্গে
সংপৃক্ততা
১৯৭৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে মেশাল। স্নাতক
হওয়ার পরে, ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কুয়েতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে
শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠার পর মেশাল সংগঠনের কুয়েতি শাখার নেতা
হন। ১৯৯২ সালে তিনি হামাসের পলিটব্যুরোর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৯৬ সালে
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের বসন্তে ইসরায়েল শেখ আহমেদ ইয়াসিন এবং তার
উত্তরসূরি আবদেল আজিজ আল-রানতিসি উভয়কেই হত্যা করার পরে তিনি হামাসের স্বীকৃত
প্রধান হন। তার নেতৃত্বে হামাস ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনি আইনসভা নির্বাচনে
সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। ২০১৭ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর হামাসের পলিটব্যুরো
চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান মেশাল।