১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে বীর শহীদদের প্রতি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)র পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানোর পর উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স গত ৫৪ বছরে বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে, অবিলম্বে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করা এবং সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের যেসব স্মারক চিহ্ন ধ্বংস করা হয়েছে তা পুনঃর্নিমাণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ঘাতকদের ক্ষমা নেই। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিচার দাবি করেই যাব।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর অন্যতম ঘাতক মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর পরিকল্পনায় আলবদর, আল সামস, রাজাকার বাহিনী দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের আগে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এই হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত করা হয়। হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দেয় আল বদর বাহিনীর চৌধুরী মইনুদ্দিন আশরাফুজ্জামান খান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এই হত্যাকাণ্ড শুরু হলেও পরবর্তীতে ওই সময় (১৪-১৬ ডিসেম্বর) ভয়াবহ রূপ নেয়।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন নিশ্চিত তখন এ ধরনের হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত করা হয় যাতে স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে এসব বুদ্ধিজীবীরা যেন অবদান না রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আজ অনেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা এই আন্দোলনকে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। আবার গণতন্ত্রহীনতা ও স্বৈরাচারী ক্ষমতা রক্ষার জন্য বিগত দিনের শাসকরা মুক্তিযুদ্ধকে অপব্যবহার করেছে। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে মুক্তিযুদ্ধ ও তার দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাসের প্রকৃত তথ্য এবং দেশ-বিদেশের শত্রু মিত্রদের অবস্থান দেশবাসীর সামনে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি কর্তব্য হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, এখনকার সময় আমাদের অন্যতম কর্তব্য হলো-মূক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করে সিপিবি ও বামপন্থীরা নীতিনিষ্ঠ অবস্থানে থেকে এই কাজটি করে চলেছে।
তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে বুকের রক্ত দিয়ে বিজয়ী হই। কিন্তু আমাদের বিজয় ছিনতাই হয়ে যায়। ব্যবস্থা বদল ছাড়া এই বিজয় আমরা ধরে রাখতে পারব না। সেই ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করতে সচেতন দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আজ ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, শনিবার, সকাল ৯টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
এ সময় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যান মাহবুব আলম, প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, কোষাধ্যক্ষ ডা.ফজলুর রহমান, সম্পাদক কাজী রুহুল আমীন, লূনা নুর, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আহসান হাবিব লাভলু, মানবেন্দ্র দেব, লাকী আক্তার, জাহিদ হোসেন খান, সাদেকুর রহমান শামীম, ঢাকা উত্তরের নেতা মোতালেব হোসেন, ঢাকা দক্ষিণের নেতা সাইফুল ইসলাম সমীর, আখতার হোসেনসহ নেতাকর্মীর উপস্থিত ছিলেন।
এরপর শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার ও সাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত বধ্যভূমি থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত পদযাত্রায় সিপিবির বিভিন্ন কর্মীরা অংশ নেন
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সিপিবির শ্রদ্ধা নিবেদন
এছাড়া সকাল ৯টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এ সময় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক, ঢাকা উত্তরের সভাপতি ডা. সাজেদুল হক রুবেল, মিরপুরের পার্টি নেতা রিয়াজ উদ্দিন, সালামাত উল্লাহ, রাসেল ইসলাম সুজন, আলী কাউসার মামুন, প্রলয় মৈত্র, জামাল হোসেনসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।