
মোঃ মুজাহিদ সরকার কিশোরগঞ্জ ঃ
ইতিহাসের পাতায় জজমিয়ার কাহিনী এক নাটকীয় মিথ্যা গল্প। কোন বানানো গল্প বা নাটকীয় মিথ্যা গল্পের কথা আলোচনা হলেই ইতিহাসের পাতা থেকে "জজমিয়ার" নাম চলে আসে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমল; ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে তাঁর সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এই হামলায় ২২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আড়াইশর বেশি লোক, যারা এখনো গ্রেনেড হামলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে এই গ্রেনেড হামলার কথা উঠলেই হতাহত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি আরেকটি নাম ঘুরে ফিরে আসে। তিনি জজ মিয়া।
গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিচারের প্রহসনের নামে লজ্জাজনক এক নাটক সাজায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ইতিহাসের পাতায় এটি ‘জজ মিয়া নাটক’ নামে জায়গা করে নেয়। গ্রেনেড হামলার সত্যিকারের অপরাধীকে আড়াল করার জন্য নিরপরাধ সিডি বিক্রেতা জজ মিয়াকে আটক করে হামলার মূল হোতা বানানোর চেষ্টা করে বিএনপি সরকার।
তেমনি আর একটি জজমিয়ার কাহিনীর মত ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের ভয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তদন্ত রিপোর্টে।
গত ২৮ আগস্ট "ইটনায় সরকারি স্কুলে বেলা ১২টায় শিক্ষক আসে নাই, ক্লাস নিচ্ছেন দপ্তরী" নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একই নিউজ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা যেমনঃ দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক আমার সংবাদ, দৈনিক দেশবাংলা, দৈনিক আজকের পত্রিকা সহ বেশ কিছু অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশিত হবার পর কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার বণিক তদন্তের নির্দেশ দেন ইটনা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন কে। নির্দেশ মোতাবেক ২৯ আগস্ট তদন্ত করার জন্য ভয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কে তদন্ত রিপোর্ট পাঠান তদন্ত কর্মকর্তা।
০৫ আগস্ট (সোমবার) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার বণিক তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়ে দুইজন সহকারী শিক্ষক মুক্তাহার ইয়াসমিন এবং পপি দাস কে শোকজ করেছেন বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার বণিক জানান, উপজেলা থেকে তদন্ত রিপোর্টে তিনি পেয়েছেন 'ভয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের নৈমিত্তিক ছুটি ছিল এবং উক্ত স্কুলে একজন সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসাইন যথাযথ সময়ে স্কুলে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি স্কুলের দ্বিতীয় তলায় ক্লাসে ছিলেন।
এবার আসি নতুন "জজমিয়ার গল্পে" গত ২৮ আগস্ট প্রকাশিত সংবাদ কে মিথ্যা বানানোর জন্য জজমিয়ার গল্পের মতোই তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে কারন উক্ত তারিখে প্রতিবেদক সরজমিনে যখন ভয়রা স্কুলে উপস্থিত হন তখন ঘড়ির কাটায় সময় আনুমানিক সকাল সারে এগারোটা (১১:৩০) বাজে।
স্কুলে প্রতিবেদক উপস্থিত হবার পর দেখা যায় একটা স্কেল হাতে একজন ব্যক্তি ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনা করাচ্ছেন। তখন সংবাদ প্রতিবেদক ঐ ব্যক্তি পরিচয় জিজ্ঞেস করলে জানতে পারেন তিনি স্কুলের দপ্তরী, উনাকে জিজ্ঞেস করা হয় স্কুলে কোন স্যার-ম্যাডাম নাই? তখন দপ্তরী নূরে আলম প্রতিবেদক কে জানান, প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম স্যারের ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে হাসপাতালে আছেন, বাকি স্যার ম্যাডাম এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করতেছি উনারা মনে হয় রাস্তায় আছেন আপনি একটু অফিসে এসে বসেন, আমি স্যার ম্যাডামকে ফোন দিচ্ছি আর আপনার জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করতেছি আপনি একটু বসেন। তখন সংবাদ প্রতিবেদক অফিস কক্ষে ঢুকতেই দেখতে পান একজন বসে আছেন তিনি উক্ত বিদ্যালয়ের নতুন কমিটির বিদ্যোৎসাহী মোঃ মাহাতুবুদ্দিন (স্কুলে স্যার-ম্যাডাম নাই এবং দপ্তরী নূরে আলম স্যার-ম্যাডাম কে ফোন দিচ্ছে ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত)।
কোন শিক্ষকদের না পেয়ে প্রতিবেদক সকাল ১১: ৩৯ মিনিটে ইটনা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন কে মুঠোফোনে বিষয়টি জানানোর পর তিনি বিষয়টি খোঁজ খবর নিচ্ছেন জানান (রেকর্ড সংরক্ষিত)।
প্রতিবেদক বিদ্যোৎসাহী মোঃ মাহাতুবুদ্দিন কে নিয়ে স্কুলে ক্লাস গুলো দেখার জন্য দ্বিতীয় তলায় যান, তখন সাথে উক্ত স্কুলে সাবেক শিক্ষার্থী এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক ছিলেন। স্কুলের দপ্তরী নূরে আলম দ্বিতীয় তলার শ্রেণিকক্ষে তালা খুলে দেখান। তখন দ্বিতীয় তলায় ৬-৮ জন শিক্ষার্থী ছাড়া কোন শিক্ষক ছিলেন না (ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত)। স্কুলের প্রতিটা ক্লাস কক্ষ ঘুরে দেখার পর উপস্থিত সবার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় (ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত)।
তদন্ত রিপোর্টে সরকারী শিক্ষক ইকবাল হোসাইন লিখেছেন তিনি স্কুলে ছিলেন এবং ক্লাস করাচ্ছিলেন তাহলে প্রশ্ন ০১) যখন দ্বিতীয় তলায় সংবাদ প্রতিবেদক, অভিভাবক গিয়েছিলেন দপ্তরি সহ তখন তিনি কোথায় ছিলেন? ০২) দপ্তরী নূরে আলম কেন বলেন নাই একজন শিক্ষক উপরে আছেন? ০৩) একজন অপরিচিত মানুষ স্কুলে গিয়ে ছবি তুলেছেন তখন সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসাইন কেন উনার পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন না? ০৪) সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসাইন প্রায় বারোটার সময় স্কুলে উপস্থিত হয়ে সংবাদ প্রতিবেদক চলা যাবার সময় তার সাথে কথা বলেন, বিভিন্ন রিকোয়েস্ট করেন, পরে তিনি কেন প্রতিবেদক এর নৌকা ভাড়া ২০টাকা নৌকার মাঝি কে জোর করে ধরিয়ে দেন? ০৫) সংবাদ প্রতিবেদক স্কুল থেকে চলে আসার পর
সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসাইন কেন সংবাদ প্রতিবেদকের মুঠোফোনে ফোন দিয়ে রিকোয়েস্ট করেন যেন উনার বিষয়টি একটু দেখার জন্য, তিনি যে ১২টার সময় স্কুলে আসছেন এই সময়টা একটু কমিয়ে লেখার জন্য ০৬) প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামকে মুঠোফোনে শিক্ষক নাই বিষয়টি অবগত করলে, তিনি তখন কেন বললেন সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসাইন এবং পপি দাস কিশোরগঞ্জ থেকে আসতেছেন রাস্তায় আছেন, আপনি একটু বসেন (রেকর্ড সংরক্ষিত )। তদন্ত রিপোর্ট জানাজানি র পর আলোচনা ঝড় উঠেছে সচেতন নাগরিক এবং শিক্ষক সমাজে। কেউ কেউ বলছেন ঐ দিন প্রায় ১২:০০ টার সময় ইকবাল কিশোরগঞ্জ থেকে স্কুলে এসেছে এটা আমরা সবাই জানি কিন্তু এখন তদন্ত রিপোর্ট বলতেছে ইকবাল নাকি ঐদিন স্কুলে ছিল, তদন্ত রিপোর্ট মিথ্যা। সচেতন নাগরিক সমাজের দাবি সত্য কে মিথ্যা করার জন্য এই তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে, আবার সঠিক ভাবে তদন্ত করা উচিত। প্রতিবেদক মোঃ মুজাহিদ সরকার বলেন, আমার তথ্য বহুল সত্য প্রতিবেদন কে মিথ্যা করার জন্য একটা অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। তাদের উদ্দেশ্য আমার সংবাদ টি যেকোন উপায়ে মিথ্যা প্রমাণিত করার পর আমার ক্ষতি করার। সাংবাদিক মুজাহিদ সরকার আরও বলেন, হাওর এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আরও প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে ইনশাল্লাহ।
তদন্ত রিপোর্ট পাঠানোর বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এবং ইটনা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ইকবাল হোসাইন যদি মিথ্যা লিখিত দিয়ে থাকেন এবং তথ্য গোপন করে থাকেন তাহলে আবার তদন্ত করে রিপোর্ট দিব এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার বণিক জানান, তদন্ত রিপোর্টে আলোকে দুইজন সহকারী শিক্ষক কে শোকজ করেছি। শোকজ এর উত্তর আসলে সন্তুষ্টমূলক না হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিব। সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসাইনের তথ্য গোপন করা এবং তিনি ১২টার সময় স্কুলে এসে লিখিত তদন্ত রিপোর্টে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি স্কুলে ছিলেন এই বিষয়ে তিনি বলেন, আপনার কাছে যত প্রমাণ আছে আমাকে পাঠান আমি দেখতেছি এই রকম হলে সেও শাস্তি পাবেন।