সারা দেশে সরকারি জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা নেওয়ার হার কমছে। অনেকে হাতের নাগালের প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেন। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে সাত ধরনের সেবা নেওয়ার হার কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। আর ছয় বছরের হিসাব করলে এসব সেবা নেওয়ার হার কমে দাঁড়ায় প্রায় ৩৭ শতাংশ। তবে ঢাকার দম্পতিদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি গ্রহণের হার কমছে বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচারের অভাবে দম্পতিরা দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এ কারণে তারা গর্ভধারণ রোধে হাতের নাগালে থাকা পদ্ধতিই বেশি গ্রহণ করেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মানুষকে সচেতন করতে প্রচার চলছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত অর্থবছর ধরে উপাত্তের হিসাব রাখে। ২০১৭–১৮ থেকে ২০২১–২২ অর্থবছরের উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আটটি বিভাগেই দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি গ্রহণের হার কমেছে। পাঁচ বছরে সারা দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণে সব ধরনের সরকারি সেবা নেওয়ার হার প্রায় ২৪ শতাংশ কমেছে। আর স্থায়ী পদ্ধতি নেওয়ার হার কমেছে ৩৩ শতাংশ।
দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী পদ্ধতির ৯০ শতাংশের বেশি সেবা দিয়ে থাকে সরকারি সেবাকেন্দ্র। বেসরকারি সংস্থা সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানিও (এসএমসি) কিছু সেবা দিয়ে থাকে।
ঢাকায় কমেছে যে কারণে : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি, যৌন অক্ষমতা, ভবিষ্যতে সন্তান নিতে পারবেন না-অনেকের মধ্যে এমন ভুল ধারণা রয়েছে। এসব ধারণা ভাঙাতে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ নেই।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের জন্মনিরোধ সেবা ও সরবরাহ কর্মসূচি (সিসিএসডিপি) ইউনিটের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সেবার ক্ষেত্রে সরকারি সুবিধা গ্রামপর্যায়ে বেশি। ঢাকাসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় এ সুবিধা কম। তবে প্রশিক্ষণ, বিলবোর্ড, বিজ্ঞাপন, টক শো ইত্যাদি উপায়ে দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতির বিষয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে।
সচেতনতা বাড়াতে হবে : স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম বলেন, কনডমে ৮ শতাংশ অকার্যকারিতা আছে। খাওয়ার বড়িতে ৯৯ শতাংশ কার্যকারিতা থাকলেও বেশির ভাগ নারী নিয়ম মেনে সেবন করেন না।
ফেরদৌসী বেগম বলেন, অপরিকল্পিত গর্ভধারণে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে, শিশুটিরও যত্নের ঘাটতি হয়। অস্ত্রোপচারে সন্তান জন্ম দেওয়া (সি সেকশন) নারী বারবার গর্ভধারণ করলে প্লাসেন্টা আক্রিটা সিনড্রোম বা পিএএস দেখা দেয়। এটা একধরনের অস্বাভাবিক গর্ভধারণ। এতে জরায়ুতে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নিতে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার দরকার।