কারাগারে সেলের ভিতরই হামলার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত পি.কে হালদার।
তবে একবার নয়, দুইবার। মঙ্গলবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে এই মর্মে পিটিশন দায়ের করেন তার আইনজীবী বিশ্বজিৎ মান্না।
১৬ মে, মঙ্গলবার পি.কে হালদার সহ মোট ৬ অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হয়। এদিন মামলাটি ওঠে আদালতের স্পেশাল সিবিআই কোর্ট-৩ বিচারক শুভেন্দু সাহার এজলাসে।
এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত পিকে হালদার বর্তমানে আলিপুরে প্রেসিডেন্সি কারাগারে বন্দী রয়েছেন। আর সেখানেই প্রথমবার চলতি বছরের গত ১৮ এপ্রিল কারাগারে সেলের ভিতর তার উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। পরে কারাগারের অন্য একটি সেলে স্থানান্তরিত করা হয় পিকে হালদারকে।
এর পরেও আরেকবার হামলার শিকার হন তিনি। গত ২২ এপ্রিল সেলের বাইরে তিনি যখন পত্রিকা নিয়ে পড়ছিলেন, তখনই আচমকা তার উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। দুইটি ঘটনাতেই অল্প বিস্তর আহত হন তিনি। তবে আঘাত গুরুতর না হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসার তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, হামলাকারী অভিযুক্ত ব্যক্তি হাফিজুল মোল্লা বসিরহাটের বাসিন্দা। গত বছরের জুলাই মাসের গোড়ার দিকে এই হাফিজুলের বিরুদ্ধে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর কালীঘাটের বাড়িতে আত্মগোপন করে থাকার অভিযোগ উঠে। রাতভর মমতার বাড়িতে লুকিয়ে থাকার পর তার নিরাপত্তার রক্ষীরা তাকে গ্রেফতার করে। এরপর কালীঘাট থানায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
তবে কারাগারের ভিতর পিকে হালদারের ওপর হামলার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। এব্যাপারে বিশ্বজিৎ মান্না জানান "কারাগার কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে, তারাই হামলার মোটিভ সম্পর্কে বলতে পারবে। অভিযুক্তদের কাছ থেকে নতুন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান মান্না।
এ ব্যাপারে তদন্তকারী সংস্থা 'এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট' (ইডি)র আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্ত্তী জানান 'কারাগারের ভিতরে পিকে হালদারের উপর হামলা হয়, তাকে মারধর করা হয়। ওই ঘটনায় তিনি আহত হয়েছিলেন। পরে ঘটনার গুরুত্ব বুঝে পি.কে হালদারকে কারাগারের অন্য একটি ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়।'
তিনি আরো জানান 'এদিন আদালত জানতে চায় কারাগারের নতুন যে ওয়ার্ডে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে সেখানে তিনি সন্তুষ্ট কি না, হালদারও তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এদিন স্থানীয় সময় দুপুর ১২ টা নাগাদ কলকাতার নগর দায়রা আদালতে স্পেশাল সিবিআই কোর্ট-৩ বিচারক শুভেন্দু সাহার এজলাসে তোলা হলে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আগামী ৭ জুন বিচারক মামলার পরবর্তী হাজিরার দিন ধার্য করেন।
উল্লেখ্য কলকাতার অনতিদূরে অশোকনগর সহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২০২২ সালের ১৪ মে পি.কে হালদারকে গ্রেফতার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ইডি। এই সাথেই গ্রেফতার করা হয় তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদার সহ বাকি অভিযুক্তদের।
গত ১১ জুলাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ইডি। 'অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইন-২০০২' (PMLA) এবং দুর্নীতি দমন আইন-১৯৮৮ মামলায় ওই ছয় অভিযুক্তের নামে চার্জ গঠন করা হয়।
বর্তমানে অভিযুক্ত পিকে হালদার সহ ৫ পুরুষ অভিযুক্ত রয়েছে প্রেসিডেন্সি কারাগারে, অন্যদিকে একমাত্র নারী অভিযুক্ত রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে।