

শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে বেইজিংয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি ফেসবুক পেজে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় বৈঠকের এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
এদিন স্থানীয় সময় বেলা পৌনে ১২টায় বেইজিংয়েই বিনিয়োগ-বিষয়ক এক সম্মেলনে যোগ দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের তথ্য জানাতে এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
হাসিবুর রহমান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি নৃশংস গণহত্যা ও বর্বরোচিত হামলার ঝালকাঠি জেলাজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বিশ্বব্যাপী মজলুম গাজাবাসীদের আহুত হরতালের সমর্থনে দিনব্যাপি জেলার ঝালকাঠির সদর, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলায় বিভিন্ন ব্যানারে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। ঝালকাঠির সদরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে জনতা।
সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে ফায়ার সার্ভিস মোড়ে জড়ো হন সাধারন মানুষ। এসময় এ সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জরুরি সেবা ছাড়া সবধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঝালকাঠি জেলার সেক্রেটারি মাওলানা ইব্রাহিম আল হাদী বলেন, গাজাবাসীর ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি আহ্বান করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক লোকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।
অন্যদিকে নলছিটিতে সকাল ১১ টায় বাসস্ট্যান্ড থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নলছিটি উপজেলা শাখা ও বিকেলে মার্চেন্টস স্কুল সংলগ্ন থেকে হেফাজতে ইসলাম এর ব্যানারে দুটি পৃথক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিল দুটি উপজেলার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পৃথক পৃথক স্থানে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
এদিকে রাজাপুরে সোমবার বেলা ১১টায় শহীদ মিনার চত্বরে রাজাপুর কামিল মাদরাসার ব্যানারে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করেছে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ,বিকেল ৫ টায় রাজাপুর মডেল মসজিদ সংলগ্ন থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজাপুর উপজেলা শাখা ও বাইপাস সংলগ্ন থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ব্যানারে দুটি পৃথক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিল দুটি উপজেলার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়। একই সময় রাজাপুর উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে কাঁঠালিয়া বাসস্ট্যান্ডে সকাল ১০ ঘটিকায় সর্বস্তরের জনগণ ও বিকেলে ৫ ঘটিকায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কাঠালিয়া উপজেলা শাখার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিল দুটি উপজেলার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পৃথক পৃথক স্থানে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
এসব বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অবিলম্বে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। একইসাথে ফিলিস্তিনের মানুষদের প্রতি সবাইকে সহায়তার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল সেনাবাহিনী কর্তৃক নারী, শিশু, স্কুল, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে জঘন্য ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। এই বর্বরোচিত হামলা সারা বিশ্বে শান্তিকামী সাধারণ মানুষকে ব্যথিত করছে এবং তা মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধ। আমরা এই প্রতিবাদী বিক্ষোভ থেকে বর্বরোচিত এই হামলার প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানাই।
শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা দিতে দেশের নাগরিকদের স্মার্ট কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিতরণ কর্মসূচি শুরুর পর প্রায় সাড়ে আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো স্মার্টকার্ড পাননি সাড়ে ছয় কোটির মতো নাগরিক।
ইসির সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। এখন পর্যন্ত স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন ৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৪ হাজার নাগরিক। অর্থাৎ স্মার্ট কার্ড হাতে পায়নি এমন ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৬৬ লাখ ১ হাজার ১৫৩ জন, যার মধ্যে বিতরণের অপেক্ষায় আছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৩ হাজার ২৭১টি।
২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। সে হিসাবে আট বছর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও সব নাগরিকের হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দিতে পারেনি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি।
স্মার্ট কার্ড বিতরণে ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এস এম হুমায়ুন কবীর ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের এখন প্রায়োরিটি কাজগুলো হচ্ছে আমরা যে ভোটার নিবন্ধন করছি সেটি সংশোধনের যেসব আবেদন করা হচ্ছে, সেগুলো নিষ্পন্ন করা এবং ইসির প্রতিদিনের যেসব কাজ থাকে সেটা। এসব কাজের কারণে আমরা কিন্তু স্মার্ট কার্ড বিতরণ করতে পারছি না। নিবন্ধনের কাজ শেষ হয়ে গেলে তখন আমরা স্মার্ট কার্ড বিতরণে মনোযোগ দিতে পারব। এছাড়া সকলকে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার লক্ষে আমরা নতুন স্মার্ট কার্ড কেনার প্রক্রিয়া চলমান রেখেছি।’
জানা গেছে, ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নাগরিকদের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০১১ সালে আইডিইএ (স্মার্টকার্ড) প্রকল্পটি হাতে নেয় কমিশন। তারপর দীর্ঘ চার বছর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে স্মার্টকার্ড তৈরির দিকে এগোয় সংস্থাটি। এক্ষেত্রে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান অবার্থার টেকনোলজিসের সঙ্গে ওই সময়ের ৯ কোটি ভোটারের জন্য নয় কোটি ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড তৈরি করে দিতে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি চুক্তি করে ইসি। যার মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। কিন্তু মেয়াদ বাড়ানোর পরেও ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তিতে উল্লেখিত কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সে বছরের শেষের দিকে অবার্থারের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, অবার্থার ১ দশমিক ৫১ ডলার দরে ৭ কোটি ৭৩ লাখ কার্ড সরবরাহ করতে পেরেছিল। সেই মোতাবেক আগের ১ কোটি ২৭ লাখ নাগরিকের কার্ড ঘাটতি ছিল। এই কয়েক বছরে ভোটার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। সব মিলিয়ে আরও প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটির মতো ব্ল্যাংক কার্ড তৈরি এবং তাতে নাগরিকের তথ্য সংযুক্ত করে বিতরণে যেতে হবে। এজন্য ইতিমধ্যে আইডিইএ দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আর ১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে তিন কোটি কার্ড দেওয়ার কথা থাকলেও ডলারের দাম বাড়ায় ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০টি কার্ড দেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি-বিএমটিএফ। অবশিষ্ট কার্ডগুলো প্রকল্পের মেয়াদ শেষে রাজস্ব খাত হতে ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। তবে নতুন প্রকল্প থেকে কার্ড তৈরি ও বিতরণেও তেমন অগ্রগতি নেই। ১১৪ উপজেলার ভোটারের স্মার্টকার্ড ছাপানোই হয়নি বলে জানিয়েছেন অনেক কর্মকর্তা।
ইসির স্মার্ট কার্ড বিতরণের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত মোট স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট হয়েছে ৮ কোটি ৬৭ লাখ ৩৭ হাজার ৬৬৩টি। বিতরণ করা হয়েছে ৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯২টি। আর বিতরণের অপেক্ষায় আছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৩ হাজার ২৭১ টি।
নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এনআইডির (স্মার্ট কার্ড) যে ব্লাংক কার্ড, এটা একটা ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে বেশ কিছু দিন ধরে। তিন কোটি কার্ড কেনার জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তি হয়। কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সেনাবাহিনী আমাদের দিতে পারছে না মর্মে চিঠি দেয়। পরে এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, তারা ১৭২ টাকা করে আমাদের কার্ড দেবে। কিন্তু সে সময় সেনাবাহিনী রাজি ছিল না। পরে এটা নিয়ে একটা ওপেন টেন্ডারে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। এরপর সেনাবাহিনী ১৭২ টাকা করে দিতে রাজি হয়। সে অনুযায়ী কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৪০৬ কোটি টাকায় যতগুলো কার্ড হয় সেগুলো তাদের কাছ থেকে নেওয়ার।
শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয়ে থাকা আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে আংশিক যাচাই-বাছাইয়ে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের অংশ হিসেবে ছবি ও নাম মিলিয়ে দেখার কাজ চলছে। ওই তালিকার বাকি সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই কাজও দ্রুত সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মিয়ানমার।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পের অধিকাংশ রোহিঙ্গা আশার আলো দেখছেন। দীর্ঘদিন পর নিজের জন্মভূমিতে ফেরার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন তারা। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার খবরে ইতোমধ্যে অধিকাংশ ক্যাম্পে হুলুস্থুল কাণ্ড বয়ে যাচ্ছে, অনেকে আনন্দ উল্লাসে মেতেছে। তবে উদ্বিগ্ন ও ভয়ের কারণও দেখছেন অনেক রোহিঙ্গা। এছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরানোর ক্ষেত্রে জটিল সমীকরণও দেখছেন বিশ্লেষকরা।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ফয়েজ উল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন পর একটা সুসংবাদ পেলাম। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আরাকানে ফিরে যেতে। আরাকান আমাদের দেশ আমাদের চিরস্থায়ী বসবাস সেখানে হবে৷ রোহিঙ্গা ফয়েজ উল্লাহ আরও বলেন, আমাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
রোহিঙ্গা বাসিন্দা আব্দুল মালেক জানান, জন্মভূমি আরাকানে ফিরতে পারবো খবরটি শুনে খুব ভালো লেগেছে। জানি না কবে সেটি কার্যকর হবে। তবে দাবি থাকবে আরাকানে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জীবন জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে হবে। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে আজকেই আমরা (রোহিঙ্গা) মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।
রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা সালাউদ্দিন বলেন, আরাকান আমাদের জন্মভূমি, সেখানে ফিরতে পারলে আমাদের সকলের জন্যে ভালো। কিন্তু এই প্রত্যাবাসন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে কি না! সেটিও ভাবতে হচ্ছে। বর্তমানে আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে লড়াই তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের অনেক রাজ্য আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের (রোহিঙ্গা) প্রত্যাবাসন সঠিক প্রক্রিয়ায় হবে কি না সেটি নিয়েও ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় নাগরিকেরা জানান, অনেক হয়েছে এবার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। তাদের কারণে স্থানীয়রা অনেক হয়রানি, বিড়ম্বনা ও ঝুঁকির মধ্যে আছে। এসব রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের বনভূমি, কৃষিজমি, শ্রম বাজার নষ্ট হয়ে গেছে। বেড়ে গেছে খাদ্য পণ্যের দাম। রোহিঙ্গাদের বর্জ্যের কারণে শত শত একর কৃষিজমি অনাবাদি পড়ে আছে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা জন্মসনদ ও জাতীয়তা সনদ নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। স্থানীয় এবং দেশকে ঝুঁকিমুক্ত করতে রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এত সহজ হবে না। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এই প্রক্রিয়াটি আলো'র মুখ দেখতে পারে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা আরাকানে ফিরতে ইচ্ছুক। তবে কিছু এনজিও সংস্থার 'প্রেসক্রিপশন' এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থামিয়ে দিতে পারে। এতদিন রোহিঙ্গাদের ভুলভাল বুঝিয়ে কিছু এনজিও সংস্থা ফায়দা নিয়েছিল। কারণ রোহিঙ্গারা যতদিন বাংলাদেশে থাকবে, ততদিন তাদের (এনজিও) লাভ। দেশ এবং কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ রক্ষায় দ্রুত সময়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হোক। তারা যতদিন থাকবে, ততদিন বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে থাকবে বলে মনে করেন এই জনপ্রতিনিধি।
বাংলাদেশের একজন সাবেক কূটনীতিক মুন্সী ফয়েজ আহমদ জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক অগ্রগতি। তবে, এখনই কোনো উপসংহারে পৌঁছানো উচিত হবে না বলে মনে করছেন তিনি। নিঃসন্দেহে এটি একটি পজিটিভ ডেভেলপমেন্ট। কিন্তু, এর মধ্য দিয়ে কনক্লুসিভ ডেভেলপমন্টে পৌঁছানো সহজ হবে না। কারণ রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি ও রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। সময়টা একটু জটিল। রাখাইন এখন প্রধানত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। সেখানে জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। ফলে, জান্তার তৎপরতার পাশাপাশি অন্যদের সম্পৃক্ততা জরুরি। যেহেতু এক লাখ আশি হাজার রোহিঙ্গার একটা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিললো, আজ হোক কাল হোক প্রত্যাবাসনের জন্য একটা প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করবে এই স্বীকৃতি। তবে, রাখাইনে জান্তা বাহিনী নিয়ন্ত্রণ ফিরে না পেলে, সেগুলো নিছকই দলিল হয়েও থেকে যেতে পারে। আর যদি জান্তা বাহিনী বা কেন্দ্রীয় সরকার কখনো নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়ও, স্থানীয় প্রশাসনে রাখাইনদের আধিপত্য থাকবেই। সেক্ষেত্রে, তাদের সঙ্গেও একটা বোঝাপড়া কিংবা আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন সাবেক এই কূটনীতিক।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। রাখাইনের পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল, যেখানে নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিবও বলেছেন, রাখাইনে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই প্রত্যাবাসনের কথা বিবেচনা করা হবে। এখন সেখানে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য বাড়িঘর নেই। দ্বিতীয়ত, যেসব এলাকায় রোহিঙ্গাদের বসতি ছিল, সেসব এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে? কখন, কীভাবে, কার ক্লিয়ারেন্সে তা সম্ভব হবে এসবই অনিশ্চিত।
সরকার প্রধানের দফতর জানিয়েছে, শুক্রবার ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে এক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সঙ্কট ও সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানকে এ তথ্য জানান মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউ। বাংলাদেশ ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ছয়টি ধাপে ওই আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিল।
প্রধান উপদেষ্টার দফতর বলছে, মিয়ানমার প্রথমবারের মতো ‘প্রত্যাবাসনের যোগ্য’ রোহিঙ্গাদের এমন তালিকা দিল, যা দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা ঢলের শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে ওই এলাকার ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর থেকে কক্সবাজার ও উখিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাঁশ আর প্লাস্টিকের খুপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করে রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং পরিণত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও সই করে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলার এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতিতে রোহিঙ্গারা আস্থা রাখতে না পারায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়।
এরপর আসে কোভিড মহামারী; রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগেও ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সংকটের মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু চির সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। তাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আসে নতুন ধাক্কা।
এর মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে কয়েকবার রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের যুদ্ধের তীব্রতার মধ্যে প্রত্যাবাসনের আলোচনা কমে আসে। উল্টো রাখাইনে যুদ্ধের কারণে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়।
এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আরও ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের তথ্য দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
মিয়ানমারের জাতিগত সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া সব এলাকা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি দখলে চলে যাওয়ার মধ্যে নেপিদোর সঙ্গে যোগাযোগেও ভাটা পড়ে ঢাকার।
এর মধ্যে গত ১৪ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কষ্ট নিজের চোখে দেখেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে তিনি সেদিন ইফতারও করেন।
প্রত্যাবাসনই যে রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান, সে কথা তুলে ধরে জাতিসংঘ প্রধান সেদিন বলেন, “শেষমেষ মিয়ানমারেই সমাধান পেতে হবে আমাদের। এখানে থাকা সব শরণার্থীর স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হব না।
শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :
নওগাঁয় ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি নৃশংস গণহত্যা ও বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজ শেষে শহরের কাচারী মসজিদ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুক্তির মোড়ে গিয়ে শেষ হয়ে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে ছাত্র শিবিরের সভাপতি বলেন, পবিত্র মাহে রমজানে সন্ত্রাসী অবৈধ রাষ্ট্র শান্তি চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় হামলা ও নির্মম গণহত্যা চালিয়েছে। এ হামলায় মাধ্যমে তারা শুধু শান্তি চুক্তি ভঙ্গই করেনি বরং যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন করেছে। ইতিহাস সাক্ষী মুসলমানরা কখনো পরাজিত হয়নি বরং পবিত্র মাহে রমজানে ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে সীমিত সামর্থ ও জনবল নিয়ে বিশাল কাফির বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। তাই চূড়ান্ত বিজয় গাজা ও ফিলিস্তিনবাসীর জন্য অপেক্ষা করছে।
এ সমাবেশে ছাত্রশিবির নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি সারওয়ার হোসেন, সেক্রেটারি আব্দুর রাকিব অফিস সম্পাদক আজফারুল হকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫