
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে। বছর খানেক ধরে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশব্যাপী মাঠে আছে বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কিন্তু সম্প্রতি জেলা পর্যায়ে বিএনপির এক নেতার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতাদের বিরূপ মন্তব্যকে দেশবিরোধী কাজ ও ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছে আওয়ামী লীগ। তাই বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিএনপি নেতাদের বিরূপ মন্তব্যে এবার সরাসরি প্রতিরোধের ডাক
দিয়েছেন দলটির উচ্চ পর্যায়ের নেতারা। বিএনপির নেতাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না। কারণ
আওয়ামী লীগ শন্তিপূর্ণ কর্মসূচি বিএনপির নেতাদের সহ্য হয় না। আওয়ামী প্রধানের
বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আবার বিদেশিদের কাছেও নালিশ করে। বিএনপিকে মোকাবিলা করতে
প্রয়োজনে নির্বাচন পর্যন্ত সারা দেশে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের বিক্ষোভ সমাবেশের
মাধ্যমে মাঠে থাকবেন ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মূলত, দ্বাদশ নির্বাচনে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনে
রয়েছে বিএনপি। কিন্তু গত ১৯ মে রাজশাহীর পুঠিয়ায় এক জনসভায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক
আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘এক দফা শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে।’ বিরোধী দলীয় নেতার এমন
বক্তব্যের পরিপেক্ষিতে নড়েচড়ে বসেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের
নেতারা। এই বক্তব্যের মধ্যমে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনার নীলনকশা
হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির
প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী
লীগের এই বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কর্মসূচি পালন করে।
ভিন্ন ভিন্নভাবে কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও বাকি সংগঠনগগুলো। এর আগে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে
রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে এ নির্দেশের পর ঢাকা মহানগরের দুটি বড় ইউনিট উত্তর ও
দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সব থানায় এ বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে। আগামী নির্বাচন
পর্যন্ত কঠোরভাবে মাঠে থাকবেন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বড় দুই
ইউনিট উত্তর ও দক্ষিণ। তারা আগামীতেও রাজনীতির মাঠে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিরোধ
গড়ে তুলবেন বলে জানিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর
দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নির্দেশে সোমবার মহানগরের অন্তর্গত প্রতিটি থানায় বিক্ষোভ
মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। একইভাবে ঢাকা মহানগর উত্তরও বিক্ষোভ
কর্মসূচি পালন করে। সকাল থেকে নিজ নিজ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে তারা বিকেলে
মহানগরের সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কর্মসূচি পালন করে। এসব
কর্মসূচিতে মহানগরের থানা-ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের
পাশাপাশি মহানগরের নেতারাও নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিরোধে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার
আহ্বান করেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, বিএনপি সরকার উৎখাত করে নির্বাচনে আসতে চায়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি তাদের (বিএনপি) গভীর ষড়যন্ত্র। বিএনপি ও তাদের দোসররা এখনো খুন-হত্যা থেকে বের হতে পারেনি। তাদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে।
রাজধানীতে রবিবার এক শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি সরকার পতনের ‘এক দফার’ নামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার ষড়যন্ত্র’ করছে। বিএনপির সমাবেশে শেখ
হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এজন্য এখন থেকে শান্তি সমাবেশ নয়, সারা দেশে বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন
তিনি। বলেছেন, আর শান্তি সমাবেশ নয়, তাদের
প্রতিরোধ করা হবে। দলীয় সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ অনুসারেই আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও
সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও মাঠে প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়।