Logo
শিরোনাম

কতটা বুঝে উঠতে পারি আমরা মানুষকে?

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৯ জুলাই ২০২২ | হালনাগাদ:শনিবার ২০ এপ্রিল ২০24 |

Image

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী ঃ

 হয়তো আমাদের বোঝার মধ্যেই একটা অস্পষ্টতা থেকে যায়। এ অস্পষ্টতাই অনেক সময় মানুষকে মৃত্যু পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। সময় এখানে একটা মহামূল্যবান উপাদান হিসেবে কাজ করে। সময়ের বোঝাটা সময়ে বুঝতে না পারাটাই ‘আমি অন্ধের দেশে চশমা বিক্রি করি’-এর মতো। ১৯৩১ সালের একটা ঘটনা মনে পড়ল।

কৌতুক অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানান তার একটি শো দেখার জন্য। তখন চ্যাপলিনের ‘সিটি লাইটস্’ সিনেমার প্রদর্শনী চলছিল। শো-এর পরে তারা দুজন শহরের পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন চ্যাপলিন আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সবাই আমাকে সহজেই বোঝে, এজন্যই আমার এত জনপ্রিয়তা। কিন্তু মানুষ আপনাকে কেন এত পছন্দ করে বুঝলাম না।’ আইনস্টাইন সহাস্যে জানালেন, ‘কেউ আমাকে সহজে বুঝতে পারে না বলেই আমার এ জনপ্রিয়তা।’

তাহলে মানুষ যাকে সহজে বোঝে আর যাকে বোঝে না, তারা দুজনই কি জনপ্রিয় হয়? বোঝা না বোঝার এ ঘোরের মধ্যেই মানুষকে বোঝার গভীর তত্ত্বটা অনেকটা এক টুকরো আলোর মতো ছড়িয়ে থাকে। মানুষের মধ্যে মহানুভবতা থাকলে সময় মানুষের মধ্যে বোধশক্তি তৈরি করে। কিন্তু মানুষের মধ্যে মহানুভবতা না থাকলে সময় তখন অপেক্ষা করে।

সে অপেক্ষা কতটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে, তা অনেকটা অনিশ্চিত। কারণ সময় তখন নিজেকে আড়াল করে, নিরুদ্দেশ হয়। যাযাবর হয়। কেউ সময়ের এ রহস্যকে ভেদ করতে পারে না। তবে চার্লি চ্যাপলিন আইনস্টাইন-এর ‘কেউ আমাকে সহজে বুঝতে পারে না বলেই আমার এ জনপ্রিয়তা’ এ উত্তরটার ভেতরের অর্থ বুঝতে পেরেছিলেন। আত্মজীবনীতে তাই চ্যাপলিন লিখছেন, আইনস্টাইনকে তার ঘরোয়া ‘আলপাইন জার্মান’দের মতোই লেগেছিল। তবে চমৎকার অনুভূতিসম্পন্ন, হাসিখুশি আর বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন আলবার্ট।

তিনি খুব শান্ত ও ভদ্র। তবে এসব ছাপিয়ে ফুটে উঠেছিল আইনস্টাইনের গভীর ও অনন্য সংবেদনশীল মনের পরিচয়। চ্যাপলিনের ধারণা, এ সংবেদনশীল মনই আইনস্টাইনের অনন্য সাধারণ পাণ্ডিত্যের আধার।

আইনস্টাইনের সংবেদনশীল মনের পাণ্ডিত্য সবার পক্ষে বুঝে উঠাটা হয়তো কঠিন ছিল; কিন্তু তিনি যে কিছু একটা করে পৃথিবীর চিন্তাধারা বদলে ফেলতে পেরেছেন, সেটি সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা সহজাত কৌতূহল তৈরি করতে পেরেছিল। মানুষের এ কৌতূহল থেকে আইনস্টাইন মানুষের কাছে সাধারণ থেকে অসাধারণ মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। সাধারণ মানুষ আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বকে না বুঝলেও তার চিন্তার শক্তিকে বুঝতে পেরেছিল। যেটি সে সময় নীরবে, নিভৃতে আইনস্টাইনকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিল।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আর রাজা রামমোহন রায় সে সময় সমাজ যা বিশ্বাস করত, তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছেন। রাজা রামমোহন রায় যেমন ‘সতীদাহ প্রথা’ বন্ধের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। অন্যদিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও বাল্যবিবাহ ও কৌলীন্য প্রথা বন্ধে এবং বিধবা বিবাহ চালু করতে সমাজ সংস্কারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেছিলেন। সমাজ এগুলোকে সে সময় জীবনের অপরিহার্য অংশ ও নৈতিকতা বলে প্রচার করেছিল।

গতানুগতিক ধারার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সে সময় ঈশ্বরচন্দ্র ও রাজা রামমোহন রায় সমাজের কাছে ভিলেন বলে পরিগণিত হলেও আজকের সময় ও সমাজ তাদের মহানায়কে পরিণত করেছে। সে সময়ের সমাজের পশ্চাৎপদ ধারণার মানুষদের কেউ মনে না রাখলেও ঈশ্বরচন্দ্র ও রাজা রামমোহন রায়কে সময় এখনো মনে রেখেছে। এটাই সময়ের ধর্ম।

ইতিবাচক দিকগুলো যতই পুরনো হোক না কেন, তাতে যদি মানবিক ধারণার নান্দনিকতা থাকে; তবে তার আলো কখনো নিভে যায় না। প্রযুক্তির আভিজাত্যের রঙ মেখে দারুণ এ সময়ে আমরা কতটুকু মানুষকে বোঝার চেষ্টা করেছি, কতটা করছি; সে বুঝতে পারার শক্তিটাই কেমন, যা ‘বোঝা’ হয়ে ঝুলে পড়েছে কোনো একটা আস্থাহীনতার জায়গায়! যাদের আমরা ভালো বলছি, তারাই হয়তো খারাপ। আবার যাদের আমরা খারাপ বলছি, তারাই হয়তো ভালো। এ এক গোলক ধাঁধা। সময়ের পরীক্ষা। যে পরীক্ষাটা সময় নেয়। উত্তরটাও সময় দেয়।

তবে সময়ের টমটম ঘোড়ায় চড়ে মানুষের সম্পর্কগুলো কেমন যেন অগোছালো, আলগা, ফসকা গেড়োর মতো হয়ে গেছে। মা, বাবা, ভাই, বোনের সম্পর্কগুলো কেমন যেন অচেনা হয়ে পড়েছে। আপন প্রাণের টানটায় কেমন যেন ঘুণে ধরেছে। মরিচা পড়েছে। সময়টা কি তবে অচেনা হয়ে গেল! মায়া-মমতা সব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল! সেই পুরনো দিনের সম্পর্কের মখমলটা বিবর্ণ সুতার রক্তে যেন পচে গেছে। মা ছুটছে হাই সোসাইটিতে নিজের বড়ত্বের প্রমাণ দিতে; বাবা ছুটছে অবৈধ টাকার পিছনে।

অনৈতিকতাকে নৈতিক বানানোর রঙ-রূপ-রসে ছেলেমেয়েরা উচ্ছন্নে গেছে। মাদক আর ভোগবাদী দুনিয়াতে তারা ডুব দিয়েছে। না আছে মন, না আছে মানবিকতা, না আছে জীবনবোধ। সব মিছে খেলা হয়ে কাদামাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বন্ধুতে-বন্ধুতেও আর চাকচিক্য নেই, আছে স্বার্থের রুগ্ন দেহ। লোভ, কামনা, বাসনা। বন্ধুর মধ্যে আর সেই মায়ার বন্ধন নেই, জাদুকরী চিন্তার শক্তি নেই। সবাই কাঁচা পয়সার তেলেসমাতিতে বেসামাল হয়ে দড়ি টানাটানির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। মানুষের ভেতর এখন আর কিছু নেই।

আছে কেবল অস্তিত্বহীন কিছু হাড় ও কংকাল। তবুও জীবন, তবুও সময় কখনো ভুল করে না। সময় সময়ের মতো করে জেগে উঠে। যেমন সময় কখনো ডানা মেলে উড়াল দেয়, আবার কখনো ডানাটা খুলে নেমে আসে মাটির পৃথিবীতে। সময়কে মানুষ যদি বুঝতে পারে, মানুষও সময়কে তখন বুঝে; যা একদিন বাস্তব হয়ে স্বপ্নের সময় হয়। সময়ের পরীক্ষাটা খুব কঠিন বরফের মতো। কখনো এটা পানি, কখনো জলীয়বাষ্প, আবার কখনো বরফ। কখনো গন্তব্যহীন।

রোমান সম্রাট নিরোর কথা মনে পড়ছে। নিরোকে নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত কথাটি হলো-রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল। এটা সত্য না মিথ্যা ছিল, সে বিচারের ভার সময়ের হাতে। কারণ সময় সর্বদাই বেঁচে থাকে, কিন্তু মানুষ সময়ের গর্ভে হারিয়ে যায়। রোমান সম্রাট নিরো ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম ও পাগলাটে ধাঁচের শাসক ছিলেন। কথিত আছে, নিরোর মা নিরোকে ক্ষমতায় বসালেও তিনি তার মাকে হত্যা করেন। ক্ষমতার উন্মুক্ততায় নিরোর হত্যার শিকার হয়েছেন তার সৎভাই ও স্ত্রীরা।

বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর তার দমন-পীড়নের কাহিনী এখনো মানুষের মুখে মুখে। একটা আবেগতাড়িত শিল্পমনস্কতা তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল। নিরো থিয়েটার করতে খুব পছন্দ করতেন। তিনি বীণা জাতীয় বিশেষ একটি বাদ্যযন্ত্র বাজাতেন, গান গাইতেন, কবিতা লিখতেন এবং মঞ্চে অভিনয়ও করতেন। সম্রাট নিরোর শাসনকালের প্রথম পাঁচ বছর তার জনপ্রিয়তা ছিল ঈর্ষণীয়। এ সময়টা রোমান জনগণের জন্য ‘স্বর্ণযুগ’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সময় তাকে মানুষের রাজা বানিয়েছিল। সময়ের ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা আবার তাকে পথের মাটিতে ছুড়ে মেরেছে। এটা তো সময়ের খেলা, সময়ের নাটক। সেনাবাহিনী ও সিনেট তাকে ‘জনগণের শত্রু’ হিসেবে ঘোষণা করে। নিরোকে যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই তাকে হত্যা করার আদেশ জারি হয়। বিশাল রাজপ্রাসাদে থাকা সম্রাট নিরো গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। কিন্তু সেটা আর কতক্ষণ? রক্ষীরা তার গন্তব্যের খোঁজ পেয়ে যখন অগ্রসর হচ্ছিল, তখন তিনি আত্মহত্যা করেন।


মৃত্যুর আগে তিনি ‘কোয়ালিস আর্টিফেক্স পেরেও’ বলে চিৎকার করছিলেন। কী অদ্ভুত! সময় যেটা তাকে উচ্চারণ করতে প্ররোচিত করেছিল, সেটার অর্থ ছিল বহুমাত্রিক। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য অর্থ হিসেবে যা বিবেচনা করা হয়, তা হলো- ‘আমার মৃত্যুর সময়ে আমি কী দারুণ এক শিল্পী’, ‘আমার সঙ্গে কী এক শিল্পীর মৃত্যু হচ্ছে’ অথবা ‘আমি একজন বণিকের মতো মারা যাচ্ছি।’ কী বিচিত্র সময়ের রং বদলানোর জাদু; যার অস্থিমজ্জার পচনশীলতায় মানুষ একসময় পচে যায়। কখনো সময়ের সম্মোহনী জাদুতে মানুষ প্রাণশক্তি ফিরে পায়।


আরও খবর



গ্যাস সিলিন্ডারে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

প্রকাশিত:শুক্রবার ১২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহারের কারণে প্রতি বছরই অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটছে। ফুটপাত, চায়ের দোকান থেকে শুরু করে যেখানে সেখানে ব্যবহার হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। এতে ঘরে ঘরে মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়েছে। দিন দিন বেড়েই চলেছে অগ্নিকাণ্ড। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পরে বের হচ্ছে নানা কারণ। তাৎক্ষণিক প্রশাসন নরেচরে বসলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার পূর্বের মতো অবস্থা। প্রতি বছর বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটছে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ ও বিদ্যুৎ থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগে থেকে সচেতনতা ও কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে এসব বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।

পরিসংখ্যান বলছে বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বিদ্যুৎ গোলযোগ, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ কিংবা জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণজনিত কারণে। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ঘটেছে ৯ হাজার ৮১৩টি দুর্ঘটনা। এছাড়া গ্যাস সরবরাহ লাইনে আগুন থেকে ঘটেছে ৭৭০টি, স্থির বিদ্যুৎ থেকে ১১টি, গ্যাস ইলেক্ট্রিক ও মাটির চুলা থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে চার হাজার ১৭৫টি। তার আগের বছর ২০২২ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ঘটেছে নয় হাজার ২৭৫টি দুর্ঘটনা। এছাড়াও গ্যাস সরবরাহ লাইনে আগুন থেকে ঘটেছে ৭৯৫টি, স্থির বিদ্যুৎ থেকে ১৯টি, সিলিন্ডার ও বয়লার বিস্ফোরণ থেকে ঘটেছে ৯৪টি অগ্নিকাণ্ড। চুলা থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তিন হাজার ৩৬৮টি। যার অধিকাংশই গ্যাস ও ইলেকট্রিক চুলা থেকে।

সম্প্রতি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে লাগা আগুনে ৪৬ জন নিহতের ঘটনা ঘটে। গেল ২৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এই আগুন লাগে। ভবনটিতে থাকা একটি রেস্টুরেন্টে এলপিজি সিলিন্ডার থেকেই এই আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হয়। আগুন মুহূর্তের মধ্যে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেখানে। তার কয়েক দিন পরেই গত ১৩ মার্চ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী জমি ভাড়া নিয়ে কলোনি তৈরি করে ঘর ভাড়া দিয়েছেন। একটি ঘরের সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে যায়। তিনি পাশের দোকান থেকে একটি সিলিন্ডার কিনে আনেন। সিলিন্ডার লাগানোর সময় চাবি খুলে গিয়ে পাশের চুলা থেকে আগুন ধরে যায়। এ সময় আশপাশের উৎসুক নারী, পুরুষ ও শিশুদের শরীরে আগুন লেগে যায়।

গেল বছরও বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালের ৭ মার্চ বিকেল পৌনে ৫টার দিকে গুলিস্তানে বিআরটিসির বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে সাততলা একটি ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় ২৩ জনের মত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছিলেন দেড় শতাধিক মানুষ। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা গ্যাসের লাইনের কারণে হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি।সিদ্দিকবাজারের ক্যাফে কুইন ভবনের নিচে ছিল গ্যাসের লাইন। সেখানে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন ছিল না। তাই লাইনের লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস জমা হয়। সেই গ্যাস থেকেই শর্টসার্কিট বা দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে হয় বিস্ফোরণের সূত্রপাত।

তারও মাত্র দুই দিন আগে ৫ মার্চ রাজধানীর ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাব এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী চারজনের মৃত্যু হয়। এছাড়াও এ ঘটনায় আহত হন অন্তত ৪০ জন। জমে থাকা গ্যাস থেকেই সায়েন্স ল্যাব এলাকার ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল।

২০২২ সালের ৫ জুন সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।আহত হন অনেক। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কারখানার আশপাশের অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা। বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়ে যায় লোহার পাত। ২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে শিশুসহ ৩৪ মুসল্লির মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ বিভাগ ও জেলা প্রশাসন পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে তিতাস সংযোগ লাইনের লিকেজে মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা এবং হঠাৎ বিদ্যুৎ স্পার্কিংয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটার বিষয়টি সামনে চলে আসে।

এই ধরনের দুর্ঘটনা হরহামেশাই ঘটে চলছে। দুর্ঘটনার পরে বেরিয়ে আসে নানা ধরনের অসঙ্গতির তথ্য। দুর্ঘটনা ঘটার পরে দায় নিতে চায় না কেউ। বিদ্যুৎ গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান, সিলিন্ডার প্রস্তুতকারী, রাজউক, সিটি করপোরেশন, বিস্ফোরক অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরকে ঠেলাঠেলি করে। তবে দায় সাধারণ মানুষেরও কম নয়। এই দুর্ঘটনাগুলোতে যেমন বহু মানুষ হতাহত হচ্ছে তেমনি হচ্ছে আর্থিক ক্ষতিও। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, শুধু ২০২৩ সালেই অগ্নিদুর্ঘটনায় ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ২০২২ সালে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৯ টাকা। এছাড়াও ২০২১ সালে ২১৮ কোটি ৩১ লাখ ৯৭ হাজার ৪০৩ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পান দোকান, মুদি দোকান, ওষুধের দোকানসহ বিভিন্ন অনিরাপদ স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকি না থাকায় লাইসেন্স ছাড়া নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে দেদারছে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। শুধু যেখানে সেখানে বিক্রিই নয়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা ছাড়াই বিভিন্ন ফুটপাত, চায়ের দোকান, রেস্তোরাঁয় এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে দেদারছে।

২০০৯ সালে পাইপলাইনে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো নতুন সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে বেড়েছে এলপি-নির্ভরতা। এলপিজি গ্রাহকের একটি বড় অংশই গ্রামাঞ্চলের। এ মুহূর্তে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩০টি কোম্পানির অন্তত দুই কোটি সিলিন্ডার বাজারে রয়েছে। বিস্ফোরক পরিদফতরের তথ্য বলছে, গত এক বছরে এলপিজি সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ছয় লাখের বেশি। এলপিজি ছাড়া অন্যান্য সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে তিন লাখের বেশি। পাশাপাশি দেশেও সিলিন্ডার নির্মাণের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করেছে দেশে নির্মিত সিলিন্ডার। কিন্তু এসব সিলিন্ডারের মান পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত কোনো পরীক্ষা কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি।

শুধু যত্রতত্র এলপিজির ব্যবহারই নয়, যেখানে সেখানে রয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। তিতাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ছয় লাখ দুই হাজার ৮৮৪টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে রীতিমত ইঁদুর বেড়াল খেলা চলে। কর্তৃপক্ষ একদিকে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, অন্যদিকে দুষ্কৃতিকারীরা সংযোগ দিয়ে দেয়। চুরি করে সংযোগ দেওয়ায় থাকে না কোনো নিয়ম নীতির বালাই। এতে দেখা দেয় দুর্ঘটনা। এছাড়াও সারাদেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগও। বিভিন্ন বস্তি ঘনবসতি এলাকা ও ফুটপাতে যেখানে সেখানে রয়েছে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ৪০ হাজার ৯২টি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ দুর্ঘটনাগুলো মূলত গ্যাস লিকেজ থেকেই ঘটে।সিলিন্ডারের হোসপাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে গ্যাস লিক হয়। সেই লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে বাইরে কোথাও জমতে থাকে। পরে তা সামান্য আগুন, এমনকি স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসতেই জমে থাকা সেই গ্যাস ভয়াবহ বিস্ফোরণ সৃষ্টি করে। সিলিন্ডারের মধ্যে এলপি গ্যাস যে চাপ তৈরি করে, মানসম্পন্ন সিলিন্ডারে তারচেয়ে চারগুণ বেশি চাপ সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে। ফলে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম। নজিরও তেমন নেই। গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়নি। লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়ে আগুন ধরে যায়। এজন্য সিলিন্ডারের সঙ্গে যে রেগুলেটর, হোসপাইপ, চুলাসহ অন্যান্য জিনিস ব্যবহৃত হয়, সেগুলো মানসম্মত হতে হবে।এই অনুষঙ্গগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটছে। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন কঠোরভাবে মানার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বলছে, ২০০৯ সালে দেশে এলপিজির চাহিদা ছিল ৬৫ হাজার টন। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১৪ লাখ টন। ২০০৯ সালে এলপিজি ব্যবহারকারী ছিল দুই লাখ ২৫ হাজার, বর্তমানে তা ৪০ লাখ। এসব এলপিজির ৮৪ শতাংশ রান্নার কাজে, ১২ শতাংশ শিল্পে এবং চার শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে যানবাহনে।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম বলেন, এসব ক্ষেত্রে যেমন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা আছে তেমনি বড় দায়বদ্ধতা হচ্ছে কনজ্যুমারদের। গ্যাস দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যেসব বাসায় গ্যাস ব্যবহার করা হয় সেসব বাসা-বাড়িতে ভেন্টিলেশন থাকতে হবে। যেখানে গ্যাসের চুলা আছে সেখানে ভালো ভ্যান্টিলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। উপরে খোলামেলা থাকতে হবে যেন গ্যাস লিকেজ গলে সেটা বের হয়ে যায়। এসব দেখভাল করার দায়িত্ব তিতাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। একটা দুর্ঘটনা ঘটার পরে অনেক ধরনের কথা হয় কিন্তু আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় দেখা যায়, দোকানপাটে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে যেখানে বৈদ্যুতিক তারের যতটুকু সক্ষমতা তার থেকে বেশি ভোল্টেজ ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বিষয় তো দায় সবারই। যে অবৈধ সংযোগ নিচ্ছে তারও। আবার যারা দিচ্ছে তাদেরও। ভোক্তা পর্যায়ে সবকিছু সঠিকভাবে হচ্ছে কি না সেটা দেখার দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগের। মূল কথা আগে থেকে সবাই সচেতন হলে এসব দুর্ঘটনা এরানো সম্ভব।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, দেশজুড়ে অসংখ্য গ্যাস বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এসব দুর্ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, দেশের গ্যাস সরবরাহ ও সংযোগ কতটা ভঙ্গুর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি।


আরও খবর



জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৬ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনে লাখো মানুষের ঢল নামে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। বিজয়ের দৃপ্ত শপথ নিয়ে হাতে লাল সবুজের পতাকা আর ফুলের শোভায় সাধারণ মানুষ উদযাপন করছে স্বাধীনতার আজ ৫৪ বছর। 

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিসৌধের শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান। এরপর শহিদ বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। 

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ সর্ব-সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

এর পরপরই জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাধারণ মানুষের ঢল নামে।

শহীদ বেদী ভরে ওঠে ফুলে ফুলে। লাল-সবুজের পতাকায় ছেয়ে যায় চারপাশ। মানুষের হাতে হাতে ফুলের তোড়ায় রঙিন হয়ে উঠে সৌধ প্রাঙ্গণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। চারদিক থেকে মানুষের স্রোত যেন গিয়ে মেশে স্মৃতিসৌধে। মানুষের বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। 


আরও খবর



ঈদযাত্রায় বাইকারদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা

প্রকাশিত:শনিবার ০৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

ঈদ এলেই মহাসড়কে বেড়ে যায় মোটরসাইকেলের চলাচল। দুই চাকার এ মোটরযানে করে বাড়ি ফেরেন অনেকেই। তাই এ সময় মোটর সাইকেল দুর্ঘটনাও বেড়ে যায় চোখে পড়ার মতন। এবার এ বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে পুলিশ প্রশাসন। মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এবারের ঈদযাত্রায় মহাসড়কে ব্যবস্থা করা হচ্ছে আলাদা লেনের।

সূত্রমতে, দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন করে দেওয়া হবে এবারের ঈদযাত্রাকে ঘিরে। এক্সপ্রেসওয়ের ৪০ কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ১৩ কিলোমিটার মুন্সিগঞ্জ জেলার আওতাধীন। এই অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে অন্তত দুই শতাধিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে এবারের ঈদযাত্রায়। মহাসড়কে তিন চাকার যান নিয়ন্ত্রণেও তদারকি করবে পুলিশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই মোটরসাইকেল চলাচল বহুগুণ বেড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়েতে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে দুর্ঘটনাও। তাই এবার ঈদের আগে দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে পুলিশ।

এর অংশ হিসেবে সড়কের কোথাও যেন পণ্যবাহী ট্রাক কিংবা যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে না রাখা হয় সেটিও তদারকি করবেন পুলিশ সদস্যরা।

ঈদযাত্রা ঘিরে নিজেদের প্রস্তুতির ব্যাপারে মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বলেছেন, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অংশ চলে গেছে এ জেলার ওপর দিয়ে। তাই এবার ঈদে বাড়ি ফেরা নিরাপদ করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে আমাদের পক্ষ থেকে।

তিনি জানান, এবারই প্রথম মোটরসাইকেলের জন্য স্পেশাল লাইন থাকবে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে। তিন চাকার যানবাহন যেন ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করতে না পারে সে ব্যবস্থাও থাকবে।


আরও খবর



তরমুজ বয়কটে কপাল পুড়ছে ব্যবসায়ীদের

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

রাজধানীর বাজারে কমতে শুরু করেছে ফলের দাম। ক্রেতাদের বয়কটের কারণে কয়েকদিন আগে চোখ রাঙানো তরমুজের দামও এখন নেমে এসেছে অর্ধেকের কমে। তবুও ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

ইফতারে রোজাদারদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম একটি অনুসঙ্গ ফল। তবে এবার রোজার আগে থেকেই অস্থির ছিল দেশের ফলের বাজার। খেজুর, তরমুজ পেয়ারা, বেলের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। কিন্তু সেই অস্থিরতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে।

এতোদিন ১০০ টাকার কাছাকাছি কেজি দরে বিক্রি হওয়া তরমুজের বেচা-বিক্রি এখন নেই বললেই চলে। মূলত অতিরিক্ত দামের কারণে তরমুজ বয়কট করায় দাম কমছে বলে মনে করেন ভোক্তারা।

তাদের দাবি, বয়কট করায় কমতে শুরু করেছে তরমুজের দাম। ক্রেতারা জোটবদ্ধ হয়ে পচনশীল এ পণ্য কেনা সাময়িক বন্ধ করতে পারলেই দাম নেমে আসবে ৩০ টাকার নিচে। পাশাপাশি কেজির বদলে পিস হিসেবে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন ব্যবসায়ীরা।

হাকিম নামে এক ক্রেতা বলেন, ভোক্তারা তরমুজ কেনা বয়কট করলে দাম এমনিতেই কমে যাবে। না কিনলে ব্যবসায়ীরা কার কাছে বিক্রি করবে! তখন বাধ্য হবে দাম কমাতে।

বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ছিল ৫০-৬০ টাকা। আর চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হয়েছিল ৯০ টাকার ওপরে।

বিক্রেতারা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তরমুজ আসছে রাজধানীর বাজারে। এতে বেড়েছে তরমুজের সরবরাহ। কমেছে দামও। তবে বাজারে দেখা নেই পর্যাপ্ত ক্রেতার।

কারওয়ানবাজারে তরমুজ বিক্রেতা রাজ্জাক বলেন, তরমুজের সরবরাহ বেড়েছে। তবে রোজা শেষ দিকে হওয়ায় কমেছে চাহিদাও। তাছাড়া ক্রেতারা এখন কম কিনছেন ফলটি। এতে লোকসানে আছেন ব্যবসায়ীরা।

তিনি আরও বলেন, তরমুজের মৌসুম আছে আর মাত্র এক মাসের মতো। রোজার কারণে এখন কিছুটা হলেও বেচাকেনা আছে। ঈদের পর সেটিও থাকবে না হয়তো।

এদিকে, বাজারে প্রতি কেজি দাবাস খেজুর ৪৩০ থেকে ৪৫০ টাকা, জিহাদি খেজুর ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, আজওয়া খেজুর ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বরই খেজুর ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা ও মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, বিলাসী পণ্যের মতো শুল্ক আরোপ করা হয়েছে খেজুরে। এক বছরের ব্যবধানে খেজুর আমদানি খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। পাশপাশি রমজানকে কেন্দ্র করে বাড়ছে এর চাহিদা। এতে দাম আরও বাড়ছে।

তবে দাম কমছে অন্যান্য দেশি ও বিদেশি ফলের। প্রতি কেজি মাল্টা ৩০০ টাকা, কমলা মানভেদে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, সবুজ আপেল ৩২০ টাকা, রয়েল গালা আপেল ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা, ফুজি আপেল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, নাশপাতি ২৬০ টাকা, আনার ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি পিস বাঙ্গি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, বরই ৭০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপে ৯০ থেকে ১০০ টাকা ও মানভেদে প্রতি পিস আনারস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়।

বিক্রেতাদের দাবি, আমাদনি বাড়ায় কমছে ফলের দাম। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া ফল বিতানের বিক্রেতারা জানান, ফলের চাহিদা আগের মতোই আছে। তবে সরবরাহ বাড়ায় দাম কমছে।


আরও খবর

মুরগি ও সবজির বাজার চড়া

শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

দাম বাড়ল সয়াবিন তেলের

বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪




মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নে ঈদের চাল বিতরণ

প্রকাশিত:সোমবার ০৮ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ২০ এপ্রিল ২০24 |

Image

এম.পলাশ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক: 

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসবকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের বিশেষ ভিজিএফ চাল বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে। 

রবিবার সকাল থেকে এ সব চাল বিতরণের উদ্বোধন করেন ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মো. সাইফুল ইসলাম। ইউপি সচিব মো. সালাহউদ্দিন, ট্যাগ অফিসার মো.রিয়াজুল ইসলাম।

১৭৯৩ জন নারী পুরুষ সুবিধাভোগীরা নিচ্ছেন ১০ কেজি করে চাল।

এ চাল বিতরণকালে অন্যনোর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আব্দুর রহিম মৃধা, আবু বকর ফরাজী, মো. কাওসার হোসেন, সংরক্ষিত ইউপি সদস্য পারভীন বেগম।

চাল বিতরণকালে সকল সুবিধাভোগীদের কাছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য,  জন্য দোয়া চেয়েছেন।


আরও খবর