অধ্যাপক ড. আলা উদ্দিন :চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় :
গত ২৮ মার্চ, ২০২৫ দক্ষিণ-পূর্ব
এশিয়ায় মিয়ানমারে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ
এবং প্রাণহানি ঘটে। রিখটার স্কেলে ৭.৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল
মিয়ানমারের মান্দালয় অঞ্চল। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, লাওস, কম্বোডিয়া এমনকি
বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও কম্পন অনুভূত হয়েছিল। চট্টগ্রামে নিজেই অনুভব
করেছি। তখন চেয়ারে বসা অবস্থায় টের পেয়েছিলাম। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে আঘাত হানা
শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা ৩০০০ ছাড়িয়েছে, থাইল্যান্ডেও বহু
হতাহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরো অন্তত কয়েক হাজার। আমাদের এই বাংলা অঞ্চলে
১৯১৮ সালে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাত ঘটেছিল সিলেটের শ্রীমঙ্গলে। ভৌগোলিক
অবস্থানের বিবেচনায় ভূমিকম্পের জন্য সংবেদনশীল এই অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে ভূমিকম্প না
ঘটায় এবং পার্শবর্তী দেশ মিয়ানমারের এই সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশ
বর্তমানে ভূমিকম্পের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। এমতাবস্থায় একটি
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে- ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কি
পরবর্তীতে ৭ এর অধিক মাত্রার ভূমিকম্পের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত? অতীত
দুর্যোগ থেকে বাংলাদেশ কি কোনো শিক্ষা নেয়? পরিত্রাণেরই বা কী উপায়?
মিয়ানমারে
ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং এর তীব্র প্রভাব : মিয়ানমারে আঘাত হানা ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময়
দুপুর ১২:৫০ মিনিটে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আঘাত হানে, যার গভীরতা ভূপৃষ্ঠের
মাত্র ১০ কিলোমিটার। এর মাত্র ১২ মিনিট পরেই ৬.৪ মাত্রার একটি আফটারশক আঘাত হানে।
মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা ৩০০০ ছাড়িয়েছে, আহত হয়েছেন কয়েক হাজার এবং ক্ষয়ক্ষতি ছিল ভয়াবহ।
নেপিদো, মান্দালয় এবং সাগাইংয়ের মতো প্রধান শহরগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছিল, অনেক ভবন ধসে পড়েছিল। শক্তিশালী সেতু ধ্বংস হয়েছে এবং পুরো এলাকা
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমার ঘোষণা করেছিল জরুরি অবস্থা। অন্যদিকে প্রতিবেশী
থাইল্যান্ডও গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হয়েছিল। ব্যাঙ্ককে ধসে পড়া ৩০ তলা ভবনের
ধ্বংসস্তূপের নিচে কমপক্ষে তিনজন মারা গেছেন এবং ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আটকা
পড়েছিলেন। সৌভাগ্যবশত, ভবনটি নির্মাণাধীন ছিল। যদি এটি কোনো ব্যবহৃত আবাসিক ভবন বা
অফিস হতো, তবে মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারত।
এই বিধ্বংসী
ঘটনাটি ওই অঞ্চলের দুর্বলতা তুলে ধরেছে। বিশেষ করে মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের মতো
দেশসমূহে, যেখানে প্রায়শই এত তীব্র ভূমিকম্পের প্রভাব সহ্য করার জন্য অবকাঠামো
তৈরি করা হয় না। মিয়ানমারের কাছাকাছি অবস্থিত বাংলাদেশ তার নিজস্ব অনন্য
চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যদিও বাংলাদেশ অতীতে ছোট আকারের ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়েছে।
তবে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ভূমিকম্প দুর্যোগের জন্য দেশের প্রস্তুতি নিয়ে গুরুতর
উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
বাংলাদেশ
ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ : অবকাঠামোগত দুর্বলতা ছাড়াও, মিয়ানমারের
জটিল ফল্ট লাইনের কাছাকাছি অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত
সংবেদনশীল। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কম্পন সমগ্র বাংলাদেশে অনুভূত হয়েছে, যা
ভূপৃষ্ঠের নিচে লুকিয়ে থাকা হুমকির কথা স্পষ্ট স্মরণ করিয়ে দেয়। ভূমিকম্পের
কেন্দ্রস্থল ছিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৫৯৭ কিলোমিটার দূরে, যা এই
অঞ্চলের ভূমিকম্পের ঝুঁকির খুব কাছাকাছি অবস্থিত। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ৬ মাত্রার
বেশি ভূমিকম্প মাঝারি বলে মনে হলেও, এটি ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মতো ঝুঁকিপূর্ণ
শহরগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে, যেখানে দুর্বল অবকাঠামো এবং উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্ব
ঝুঁকিকে প্রকট করে তুলবে।
বিশ্বের
২০টি ঝুঁকিপূর্ণ শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। দুই কোটিরও বেশি বাসিন্দার ঢাকা বিশ্বের
সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি। শহরটি অপরিকল্পিত নগরায়ন, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো
এবং দুর্বলভাবে নির্মিত ভবন দ্বারা জর্জরিত। উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের আরেকটি প্রধান
শহর চট্টগ্রামও একই ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন। যদি একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্প আঘাত
হানে তবে উভয় শহরই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ১৯১৮ সালের পর বাংলাদেশ মূলত বড়
ধরনের ভূমিকম্পের ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ কারণে ঝুঁকি রয়ে গেছে এবং ভূতাত্ত্বিকরা
দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে এই অঞ্চলে একটি বড় ভূমিকম্পের সমূহ সম্ভাবনা
রয়েছে। সিলেট থেকে কক্সবাজারের মধ্যে মাটির নিচে অবস্থানগত কারণে ৮ মাত্রার
ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি জমা আছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী কেবল এই উদ্বেগকেই আরো
বাড়িয়ে তোলে।
প্রস্তুতির
প্রয়োজনীয়তা : বড় ভূমিকম্পের জন্য বাংলাদেশের ঝুঁকি গভীরভাবে এর অপর্যাপ্ত
অবকাঠামোর সঙ্গে জড়িত। অনেক ভবন, বিশেষ করে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুরোনো
অংশগুলোতে, বড় ভূমিকম্পের ধাক্কা সহ্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে,
অনেক কাঠামো নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে নির্মিত, ভূমিকম্প প্রতিরোধের বিষয়টি
খুব কমই বিবেচনা করা হয়। ফলে বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে এগুলো ধসে পড়ার সম্ভাবনা
বেশি। ভবনগুলো এমনভাবে নির্মিত যে, কোনো ভবনে আগুন লাগলে দমকল বাহিনীর গাড়ি কিংবা
জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াতের ব্যবস্থাও থাকে না। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে
দেড় লাখ এবং ঢাকায় আরো কয়েকগুণ বেশি ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে চিহ্নিত
হয়েছে। তবে নেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এতো অবহেলা ও উদাসীনতার পর ভূমিকম্পের ফলে
ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদ বিনষ্ট হলে কেবল ভূমিকম্প, ভৌগোলিক অবস্থান বা
দুর্ভাগ্যকে দোষারোপ করা সমীচীন হবে না। তদুপরি, বাংলাদেশের জরুরি প্রতিক্রিয়া
ব্যবস্থা তার চাহিদার তুলনায় অনুন্নত। যদিও দেশটি দুর্যোগ প্রস্তুতিতে
উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, বিশেষ করে বন্যা ব্যবস্থাপনা এবং ঘূর্ণিঝড়
প্রতিক্রিয়ায়- তারপরও ভূমিকম্প প্রস্তুতি অপর্যাপ্ত। আধুনিক বিল্ডিং কোডের অভাব,
সীমিত ভূমিকম্প মহড়া এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে বৃহৎ আকারের জরুরি অবস্থা
মোকাবিলা করার অপর্যাপ্ত সচেতনতা ও ক্ষমতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই ঘাটতিসমূহ
যদি একটি বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে তাহলে ধ্বংস এবং প্রাণহানিকে আরো বাড়িয়ে তুলতে
পারে।
একটি তীব্র
ভূমিকম্পের ফলে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে, বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়
যেখানে মানুষ দুর্বলভাবে নির্মিত ভবনে বসবাস করছেন। তাছাড়া, জল, বিদ্যুৎ এবং
পরিবহনের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো ব্যাহত হলে উদ্ধার ও ত্রাণ প্রচেষ্টা ব্যাহত
হবে, যা ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য সাহায্য সরবরাহকে জটিল করে তুলবে
সন্দেহাতীতভাবে।
আঞ্চলিক
প্রেক্ষাপট- মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ : সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের সঙ্গে মিয়ানমারের
অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোকে বৃহত্তর ভূমিকম্পের ঝুঁকি স্মরণ
করিয়ে দেয়। মিয়ানমার, যদিও গত দুই দশকে বড় আকারের ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়নি, তবুও
ভূমিকম্পের দিক থেকে সক্রিয় হিমালয় বৃত্তের মধ্যে অবস্থিত। এই টেকটোনিক অঞ্চলটি
ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং সাম্প্রতিক ভূমিকম্প থেকে বোঝা যায় যে এই অঞ্চলে
ভূমিকম্পের কার্যকলাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মিয়ানমারের
চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং মানবিক সংকট ভূমিকম্পের প্রতিক্রিয়ায় মুখোমুখি
চ্যালেঞ্জকে আরো জটিল করে তুলেছে। ত্রিশ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং
অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতির সঙ্গে, মিয়ানমার এখন দ্বৈত সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে- চলমান
সংঘাত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিণতি। মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া
বাংলাদেশ, একটি বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার
ঝুঁকিতে রয়েছে। তাছাড়া, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ উভয়ের ঘন জনসংখ্যা ও দুর্বল
অবকাঠামোর অর্থ হলো একটি বৃহৎ আকারের দুর্যোগের ভয়াবহ পরিণতির সমূহ সম্ভাবনা। উভয়
দেশেই মানবিক প্রতিক্রিয়া, লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ, সীমিত সম্পদ এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক
অস্থিরতা ও সামাজিক অস্থিতিশীলতার কারণে ব্যাহত হবে। কারণ নানা প্রেক্ষাপট
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ সাধারণত অতীতের কোনো দুর্যোগ থেকে শিক্ষা গ্রহণ
করে না এবং ভবিষ্যতের দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেয় না। তাৎক্ষণিক মানবিক
ব্যবস্থাপনাই যেন ভরসা।
অতীত
থেকে শিক্ষা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পণা : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ এখনো কোনো বড়
ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয়নি। তবে মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক ঘটনা
বাংলাদেশ সরকার এবং নাগরিকদের জন্য একটি জাগরণের সংকেত হিসেবে কাজ করা উচিত। এই
দুর্যোগ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাগুলো ভবিষ্যতের অনিবার্য ভূমিকম্পের জন্য বাংলাদেশ
কীভাবে আরো ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি
প্রদান করে। প্রথমত, ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে ভবনগুলো যাতে
ভূমিকম্পের কার্যকলাপের জন্য আরো স্থিতিশীল হয় তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে
বিল্ডিং কোড এবং নির্মাণ অনুশীলন শক্তিশালী করতে হবে। আধুনিক ভূমিকম্প-প্রতিরোধী
প্রযুক্তি বাস্তবায়ন এবং নিয়মিত ভবন পরিদর্শন পরিচালনা ভূমিকম্পের সময় কাঠামোগত
ধসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে।
দ্বিতীয়ত,
বাংলাদেশের জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বিনিয়োগ করা উচিত। এর
মধ্যে রয়েছে ভূমিকম্পের প্রতিক্রিয়া জানাতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা উন্নত করা,
নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া পরিচালনা করা এবং বৃহৎ আকারের দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি
পরিষেবাগুলো সুসজ্জিত রয়েছে তা নিশ্চিত করা। ভূমিকম্পের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি
নিতে হবে এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে সে সম্পর্কে নাগরিকদের শিক্ষিত করার জন্য
জনসচেতনতামূলক প্রচারণাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, সরকারের উচিত ভূমিকম্প
প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট কৌশলসহ একটি বিস্তৃত জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
পরিকল্পনা তৈরিকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এই পরিকল্পনায় জরুরি সাহায্য বিতরণের জন্য
পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, সরিয়ে নেওয়ার পথ এবং আকস্মিক কৌশলের উন্নয়নের রূপরেখা
থাকা উচিত। সর্বোপরি দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া এবং প্রস্তুতি উন্নত করার জন্য
বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা অপরিহার্য। এই
অঞ্চলের আন্তঃসংযুক্ত প্রকৃতির কারণে, জ্ঞান, সম্পদ এবং দক্ষতা ভাগাভাগি ভূমিকম্প
এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সম্মিলিত স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করবে।
কার্যকর
পদক্ষেপ গ্রহণ : মিয়ানমারে সাম্প্রতিক ভূমিকম্প এবং এর ব্যাপক প্রভাব বাংলাদেশের
মুখোমুখি ভূমিকম্পের ঝুঁকির স্পষ্ট স্মারক হিসেবে কাজ করবে। যদিও দেশ সাম্প্রতিক
সময়ে বড় আকারের ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়নি, তবে এই অঞ্চলটি এমন সংকটের মুখোমুখি
হওয়া সম্ভবত সময়ের ব্যাপার। মিয়ানমারের দুর্যোগ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা বাংলাদেশে
ভূমিকম্পের প্রস্তুতি এবং স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ
গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করবে।
অবকাঠামো
শক্তিশালীকরণ, জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা উন্নতকরণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির
মাধ্যমে, বাংলাদেশ তার নাগরিকদের একটি বড় ভূমিকম্পের বিধ্বংসী প্রভাব থেকে আরো
ভালোভাবে রক্ষা করতে পারে। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। দেশের ঘনবসতিপূর্ণ জনসংখ্যা
এবং দুর্বল অবকাঠামো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মুখোমুখি করে। সম্মিলিত
প্রচেষ্টা এবং সক্রিয় পরিকল্পনার মাধ্যমে, বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে পারে যে এটি
ভবিষ্যতের অনিবার্য চ্যালেঞ্জের জন্য আরো ভালোভাবে প্রস্তুত।
ভূমিকম্পপ্রবণ
দেশ জাপান ইতোমধ্যে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নকশায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে,
এয়ার ড্যানশিনের ‘ভাসমান’
ভবন উদ্ভাবন, যা ভূমিকম্পের সময় কাঁপুনি রোধ করার জন্য লেভিটেশন ব্যবহার করে। এই প্রযুক্তি
জাপানকে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নির্মাণের অগ্রভাগে রেখেছে। ভূমিকম্পের সময় মাটি থেকে
ভবন উপরে ভাসমান করে রাখার বিষয়েও তারা অগ্রগতি সাধিত করেছে। যদিও বাংলাদেশে এখনো
এই ধরনের অগ্রগতি সম্ভব না হলেও, কাছাকাছি ধরনের অনুশীলন বাস্তবায়ন বড় ভূমিকম্পের
ক্ষেত্রে জীবন বাঁচাতে পারে। ভবিষ্যতের ভূমিকম্পের ঝুঁকি থেকে জনগণকে রক্ষা করার
জন্য বাংলাদেশের নিজস্ব, উদ্ভাবনী এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ এখন
সময়ের চূড়ান্ত দাবি।