অধ্যাপক ড, মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী, শিক্ষাবিদ :
পৃথিবীটা খুব অদ্ভুত | যে মানুষটা জানেনা তার জন্ম হয়েছে কার গর্ভ থেকে, সে মানুষটা হয়তো সারাজীবন মা নামের একজন মানুষকে খুঁজে বেড়ায়, কিন্তু চরম সত্য হলো যে মা তাকে জন্ম দিয়েছে সেই তাকে একদিন ডাস্টবিনে ফেলে গিয়েছিলো, হয়তো মন চায়নি,, তারপরও এমনটা করতে হয়েছিল, কখনো কখনো বাস্তবতা খুব ভয়ংকর হয় | কে জানে কার অপরাধ? কার অসহায়ত্ব ? কি পরিস্থিতি ? দিন যায়, রাত যায়, সময় গড়িয়ে গড়িয়ে অনেকটা পথ পেরিয়ে যায় | রেখে যায় কিছু প্রশ্ন, রেখে যায় অন্ধকারে হাতড়ানো কিছু উত্তর | মা কি তার সন্তানের অনাগত ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কথা চিন্তা করে এমনটা করেছে, নাকি নিজের সুখের জন্য এমনটা করেছে ? সবটাই যে অমীমাংসিত, সবাই যে দোদুল্যমান |
পৃথিবীর সবাই যার যার মতো ব্যস্ত হয়ে পরে, সবাই ভুলে যায় সবকিছু, তবে পৃথিবীর দুই জায়গায় দুটি মানুষ জীবনকে টেনে টেনে অনেকটা দূর নিয়ে গেলেও আপনজনের অভাবটা অনুভব করতে পারে, অসীম শুন্যতায় খাঁ-খাঁ করা বুকটার স্পন্দন শুনতে পায় কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে হাসিমুখে মানিয়ে নেয় আরেক নতুন জীবন, চোখের পানিকে বুকের ভিতর আটকে রেখে বলে, না, না, আমি অনেক সুখী, আমার চেয়ে সুখী পৃথিবীতে আর কেউ নেই |
পৃথিবীর যে মায়েরা অভাবের তাড়নায় সন্তানকে বিক্রি করে দেয়, পৃথিবীর সবার কাছে তারা নিন্দিত হয় | কিন্তু এর পিছনের কারণটা কেউ হয়তো কখনো খুঁজে দেখেনা ? সাদা চোখ যেভাবে দেখে মাথা থেকে চিন্তাটা সেভাবেই বেরিয়ে আসে | হয়তো সেখানে মনোবিজ্ঞানের কোনো থিওরি কাজ করে, যেটা অর্থনীতির থিওরির সাথে লড়াই করে কোনো একটা জায়গায় এসে থেমে যায়, তারপর অনেকগুলো প্রশ্ন সভ্য দুনিয়ার মানুষের মুখের সামনে ছুড়ে দিয়ে নির্বাক চলচিত্রের জন্ম দেয় | পৃথিবীও অদ্ভুত, ভালোবাসার বন্ধন খুঁজেনা বরং এমন ঘটনা পেলে চলচিত্রের দামটা বাড়িয়ে দেয় |
কোথায় যেন একটা লেখা দেখেছিলাম, শরীর থেকে রক্ত ঝরলে কষ্ট লাগেনা, কিন্ত এক ফোটা চোখের জল বের হওয়ার আগে মনে হয় হৃদপিন্ডটা ছিড়ে যাচ্ছে | মায়ের হৃদপিন্ডটাও কি সেদিন সেভাবে ছিড়েছিলো, যেদিন নিজে সন্তান বুকের ধন না হয়ে বাজারের পণ্য হয়েছিল? কে জানে কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা | মা কি তার খাদ্যের মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতে সন্তানকে বিক্রি করেছিল, নাকি সন্তানকে অভাব থেকে মুক্ত করে নতুন জীবনের সন্ধান করে দিতে পাষানের মতো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল | সময় সব জানেনা, ওই দুটো মানুষ জানেনা, কারণ সময় যে তখন পৌঁছে গেছে আরেক সময়ে |
মা একটা শব্দ নয়, একটা অনুভূতির নাম | তারপরও চোখে দেখা সাধারণ পৃথিবীর বাইরে অন্য এক পৃথিবীতে এই সম্পর্কটা কখনো কখনো খুব দুর্বোধ্য হয়, খুব অচেনা মনে হয়, খুব বিচিত্র হয় যেখানে চাঁদ সূর্যের আলোয় রূপবতী হলেও পরাধীনতার কলংক বয়ে বেড়ায়, কিন্তু চাঁদের যে কিছুই করার থাকেনা | সব যে নিয়তি, সবটাই যে অসহায়ত্ব |