Logo
শিরোনাম

গাজায় মাহাথিরের হাসপাতাল ধ্বংস

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৭ নভেম্বর ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় দেড় মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন সাড়ে ১১ হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার স্কুল, মসজিদ এমনকি হাসপাতালের মতো স্থাপনাও।

অব্যাহত এই হামলার মধ্যে গাজায় ধ্বংস হয়ে গেছে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠিত একটি চিকিৎসা কেন্দ্র। মাহাথির মোহাম্মদ নিজেই এই তথ্য জানিয়েছেন বলে ১৭ নভেম্বর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন- গাজায় তার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠিত একটি চিকিৎসা কেন্দ্র ইসরায়েলি বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত এবং ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার নেতৃত্ব দিয়েছেন মাহাথির।

শুক্রবার তিনি বলেন, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে অবস্থিত ডা. সিতি হাসমাহ অ্যান্ড এনায়া ফিজিওথেরাপি সেন্টারটি ধ্বংস হয়ে গেছে তা জানতে পেরে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন।

মালয়েশিয়ার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার পেরদানা গ্লোবাল পিস ফাউন্ডেশন গাজায় এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছিল। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ২০১৯ সালে ওই চিকিৎসা কেন্দ্রটি চালু করা হয়।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মালয়েশিয়ার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসে অবস্থিত এই হাসপাতালে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের হামলার কোনও কারণ ছিল না।

তিনি বলেন, দক্ষিণের অবকাঠামোগুলোকে ইসরায়েল লক্ষ্যবস্তু করবে না বলে আগে ঘোষণা দেওয়া হলেও তা কেবল কথার কথা প্রমাণিত হয়েছে। হামলাগুলো এখন ফিলিস্তিনি বেসামরিক ও যোদ্ধা নন এমন মানুষকে গণহত্যার অভিযানে পরিণত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এটি সামরিক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ নয়, বরং গাজাকে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে মুক্ত করার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সেখানে গণহত্যা চালাচ্ছে। হাসপাতাল ও বাসস্থানে বোমা হামলার পর ফিজিওথেরাপি কেন্দ্রেও এই ধরনের হামলা এটাই প্রমাণ করেছে যে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে এসব স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া ইসরায়েলের এই বিমান হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল ও বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে।

ফিলিস্তিনি সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই সাড়ে ১১ হাজারে পৌঁছেছে। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭ হাজার ৮০০ জনের বেশি নারী ও শিশু।


আরও খবর



একযোগে ২৫২ বিচারককে বদলি

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের ২৫২ জন বিচারককে বদলি করা হয়েছে। সোমবার আইন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পৃথক পাঁচটি প্রজ্ঞাপনে তাদের বদলি করা হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন-১) এ এস এম গোলজার রহমান প্রজ্ঞাপনগুলেোতে সই করেন।

প্রজ্ঞাপনগুলো থেকে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলার ৩০ জন জেলা ও দায়রা জজ এবং সম-মর্যাদার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ও সমপদমর্যাদার ৩৮ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ও সমপদমর্যাদার ২২ জন বিচারক এবং সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ এবং সমপদমর্যাদার ১৬২ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে জেলা ও দায়রা জজ/মহানগর দায়রা জজ/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা/দপ্তর প্রধান মনোনীত কর্মকর্তার কাছে আগামীকাল ৩ জুন বর্তমান পদের দায়িত্বভার অর্পণ করে অবিলম্বে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের জন্য অনুরোধ করা হয়।

জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।


আরও খবর



গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আদালতের পরোয়ানা ছাড়াই আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) তদন্ত সংস্থা। এমন ক্ষমতা দিয়ে ২০১০ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যপ্রণালী বিধিমালায় সংশোধন আনা হয়েছে।

সংশোধিত আইসিটি আইনে তদন্ত সংস্থাকে এ ক্ষমতা দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার, সদস্য এম মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী ও মো. শফিউল আলম মাহমুদের আদেশে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এ এস এম রুহুল ইমরান এই প্রজ্ঞাপন জারি করেন।

এতে ট্রাইব্যুনাল কোনো আসামি বা আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটরও পরোয়ানাভুক্ত আসামি বা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারবেন।

এর আগে অভিযোগ ছিল, এতদিন এই ক্ষমতা না থাকায় পরোয়ানার তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় অনেক আসামিই পালিয়ে গেছে। তদন্ত সংস্থা এই ক্ষমতা পাওয়ায় এখন থেকে আর এ সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরোয়ানা জারির পরপরই জেনে যাচ্ছেন আসামি পুলিশ কর্মকর্তারা। এখন পর্যন্ত কর্মস্থল ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন ১৫ থেকে ২০ পুলিশ কর্মকর্তা। আইসিটির ২৩ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৯৪ জনকেই গ্রেপ্তার করা যায়নি।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সঙ্গে পর্যায়ক্রমে যুক্ত থাকে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা, চিফ প্রসিকিউটরের অফিস, ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিস, আদালতের এজলাস, আইজিপি অফিস ও আসামির সংশ্লিষ্ট থানা। প্রসিকিউশন জানায়, সরকারি এসব অফিসের কেউ না কেউ তথ্য পাচার করে আসামিদের পালাতে সাহায্য করছে।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের কার্যপ্রণালী বিধিমালার ২৪টি বিধিতে সংশোধন আনা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি বিধি একেবারেই বিলুপ্ত এবং বাকি ১৯টি বিধি আংশিক বা পুরোপুরি বিলুপ্ত করে নতুন কার্যপ্রণালী বিধি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।


আরও খবর

একযোগে ২৫২ বিচারককে বদলি

মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫




সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

প্রকাশিত:বুধবার ১১ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (১৫ জানুয়ারি ১৮২৬ ২৩ জানুয়ারি ১৯০৬) হলেন একজন সুফি সাধক ও মাইজভান্ডারী তরীকার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী নামেই বহুল পরিচিত। তার অনুসারীগণ যে সকল প্রচার- প্রকাশনা বাংলা, আরবি, উর্দু এবং ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষায় ছাপিয়ে আসছে, তাতে তার নাম গাউছুল আজম হযরত মৌলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী কেবলা কাবা কাদ্দাছা ছিররুহুল আজিজ /(কঃ) লিখতে দেখা যায়। এছাড়াও তিনি গাউছুল আজম, হযরত কেবলা, গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী, বড় মৌলানা, খাতেমুল অলদ, শাঁই-এ-লিল্লাহ প্রভৃতি উপনামেও পরিচিত।

 

জন্ম :

আহমদ উল্লাহ ১৮২৬ সালে ১৪ জানুয়ারী (১ম মাঘ, ১২৩৩ বাংলা সন) চট্টগ্রাম শহর হতে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে তৎকালীন প্রত্যন্ত মাইজভান্ডার গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ মতিউল্লাহ মাইজভান্ডারী ও মাতার নাম সৈয়দা খায়রুন্নেছা। তার পারিবারিক নাম ছিল সৈয়দ আহমদ উল্লাহ।

বংশ পরিচয় :

আহমদ উল্লাহর পুর্ব পুরুষ সৈয়দ হামিদ উদ্দিন, গৌড়নগরে ইমাম এবং কাজীর পদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি গৌড় নগরে মহামারীর কারণে ১৫৭৫ সনে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার কাঞ্চন নগরে বসতি স্হাপন করেন; সেখানে তার নামানুসারে হামিদ গাঁও নামে একটি গ্রাম আছে। তার এক পুত্র সৈয়দ আব্দুল কাদের ফটিকছড়ি থানার আজিমনগর গ্রামে ইমামতি উপলক্ষে এসে বসতি স্হাপন করেন। তার পুত্র সৈয়দ আতাউল্লাহ তৎ পুত্র সৈয়দ তৈয়বুল্লাহর মেজ, পুত্র সৈয়দ মতিউল্লাহ মাইজভাণ্ডার গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন।

শিক্ষা জীবন :

আহমদ উল্লাহ গ্রামের মক্তবের পড়ালেখা শেষ করার পর ১২৬০ হিজরীতে উচ্চ শিক্ষার্জনের উদ্দেশ্যে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তিনি ১২৬৮ হিজরীতে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে পরীক্ষায় পাশ করেন। সেখানেই তিনি তৎকালীন সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্ন  করে ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানাদিতে আমন্ত্রিত অতিথি বা বক্তা হিসাবে যথেষ্ট সুনামের সাথে ধর্মীয় প্রচার-প্রচারণার কাজে লিপ্ত ছিলেন।

কর্ম জীবন :

তিনি শিক্ষা জীবন শেষে করে হিজরী ১২৬৯ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতের যশোর অঞ্চলেরবিচার বিভাগীয় কাজী পদে যোগদান করেন এবং একই সঙ্গে মুন্সেফী অধ্যায়ন শুরু করেন। পরবর্তিতে ১২৭০ হিজরীতে কাজী পদে ইস্তফা দিয়ে তিনি কলিকাতায় মুন্সী আলী মাদ্রাসায় প্রধান মাদাররিছ (শিক্ষক) হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তি সময়ে মুন্সেফী পরীক্ষায় ও তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে ছিলেন। আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী হাদিস, তাফসির, ফিকহ, মানতিক, হিকমত, বালাগত, উছুল, আকায়েদ, ফিলছফা, ফারায়েজ সহ যাবতীয় বিষয়ে অত্যন্ত অভিজ্ঞ ছিলেন। আরবী, উর্দু, বাংলা ও ফারসি ভাষায় তিনি বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তৎকালীন সময়ে ওয়ায়েজ এবং বক্তা হিসেবে তার নাম ডাক বিশেষ ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অল্প কিছু দিন পরই তিনি আধ্যাত্মিক জীবন যাপনে আত্ম নিয়োগ করেন। তখন হতে তিনি বাকি জীবন একজন সুফি সাধক হিসাবে অতিবাহিত করেন।

বেলায়ত অর্জন :

আহমদ উল্লাহ হযরত বড়পীর সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (কঃ)-এর বংশধর ও উক্ত তরিকার খেলাফত প্রাপ্ত সৈয়দ আবু শাহামা মুহাম্মদ ছালেহ আল কাদেরী লাহোরী (রঃ) নিকট বায়েত গ্রহনের মাধ্যমে বেলায়ত অর্জন করেন এবং সৈয়দ দেলাওয়ার আলী পাকবাজ (রঃ) এর নিকট হতে এত্তাহাদী কুতুবিয়তের ক্ষমতা অর্জন করেন। তিনি দিনে দ্বীনি শিক্ষাদান ও রাতে এবাদত ও রেয়াজতের মাধ্যমে সময় কাটাতেন। এভাবে কঠোর সাধনার ফলে তিনি আধ্যাত্মিক জগতের সর্বোচ্চ বেলায়ত অর্জন করেছিলেন।

খলিফা :

আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী জীবদ্দশায় তাঁর সুফি তরীকার দীক্ষা সমাজে মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে বহু সুফি প্রতিনিধি বা খলিফা নিয়োগ করেন বলে উল্লেখ রয়েছে। তন্মধ্যে ২০৪ খলিফার নাম ইতঃপূর্বে বেশ কয়েকটি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

সাংসারিক জীবন :

আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী ১২৭৬ হিজরীতে ৩২ বছর বয়সে আজিম নগর নিবাসী মুন্সী সৈয়দ আফাজ উদ্দিন আহমদের কন্যা সৈয়দা আলফুন্নেছা বিবির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্ত বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তাঁর স্ত্রী মারা যান। সেই বছরই তিনি পুনরায় সৈয়দা লুৎফুন্নেছা বিবিকে বিয়ে করেন। ১২৭৮ হিজরী সালে তাঁর প্রথম মেয়ে সৈয়দা বদিউন্নেছা বিবি জন্মগ্রহন করেন।

কিন্তু মেয়েটি চার বছর বয়সে মারা যায়। এরপর তাঁর আরোও একটি ছেলে জন্মগ্রহন করে অল্প দিনের মধ্যে মারা যান। অতঃপর ১২৮২ হিজরীতে দ্বিতীয় পুত্র সৈয়দ ফয়জুল হক (রঃ) এবং ১২৮৯ হিজরী সালে দ্বিতীয় কন্যা সৈয়দা আনোয়ারুন্নেছা জন্মগ্রহন করেন। তাঁর দ্বিতীয় পুত্রও পিতার পুর্বে ইন্তেকাল করেন।

মাইজভান্ডারী তরিকা প্রতিষ্ঠা ও মাইজভান্ডার দরবার শরীফ- এর গোড়াপত্তন :

 

হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) তাঁর পীরে ত্বরিকতের নির্দেশে ১৮৫৭ সালে নিজ গ্রাম মাইজভান্ডারে ফিরে আসেন। আধ্যাত্মিক সাধক ও দোয়া প্রত্যাশীদের ভীড়ে এই সাধকের পবিত্র বাসগৃহ বিশ্ব মানবতার কল্যাণধারক এক উচ্চমার্গীয় আধ্যাত্মিক দরবারে পরিণত হয়। লোকসমাজে পরিচিতি পায় মাইজভান্ডার দরবার শরীফ হিসেবে। হযরত কেবলার (কঃ) অসংখ্যা কারামতের ঘটনা বিভিন্ন গ্রন্থে ও লোকমুখে প্রচারিত। যেমনঃ (১) হযরতে আধ্যাত্মিক প্রভাবে মাহছেনিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও মোদাররেছ নিযুক্তি। (২) হযেরতের আধ্যাত্মিক প্রভাবে এক রাতে মক্কা শরীফ হতে চট্টগ্রাম শহরে হাজীর প্রত্যাগমন। (৩) হযরতের বেলায়তী ক্ষমতায় বাহুতে হাত রেখে জনৈক হাজীর অলৌকিক ভাবে বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন (৪) হযরতের আধ্যাত্মিক প্রভাবে বাঘের মুখে লােটা নিক্ষেপে ভক্ত উদ্ধার (৫) হযরতের বেলায়তী প্রভাবে মৃত্যুকালে আজরাইল ফেরত ও ষাট বৎসর আয়ু বৃদ্ধি। (৬) হযরতের আদেশে রেয়াজ উদ্দিন উকিলের ভূ-সম্পত্তি খরিদ ও রেয়াজ উদ্দিন বাজারের পত্তন। (৭) হযরতের আশ্চর্য্য কেরামতে বগলের নীচে কাবা শরীফে মুসল্লির প্রবেশ করতে দেখা -ইত্যাদি। এই ধরনের উচ্চমাগীয় কেরামত গাউছে আজমিয়তের পরিচয় বহন করে। হযরত মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবীর ভবিষ্যৎবাণীঃ বিশিষ্ট ছুফী তাত্ত্বিক গবেষক ও বুযুর্গ হযরত মহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী তাঁর ফছুছুল হেকম গ্রন্থের ফচ্ছে শীচি অধ্যায়ে হযরত গাউছুল আজম মওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) এঁর আগমণ ও তাঁর গাউছুল আজম হওয়ার ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন।

বিশ্ব মানবতায় বেলায়তের স্বরূপ :

হযরত (কঃ)র বেলায়তের পরশ পেয়ে ধন্য হয়েছেন মাটিস্ত বুজুর্গানে দ্বীন এবং তারা জামালী হতে জালালীর মধ্যে রূপ ধারণ করেছেন। কামালিয়তের বা বুজুর্গীর কোন প্রশংসা তাঁর বুজুর্গীতে বাদ পড়েনা। তিনি এমন এক খােদা প্রদত্ত শ্রেষ্ঠত্ব সম্পন্ন অলি ,যিনি খোদার ইচ্ছা শক্তিতে তাঁর গাউছে আজমিয়তের প্রভাবে জনগণের না হওয়ার মত কাম্য বস্তুকে হওয়ার রূপ দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। তাঁর সাথে হযরত খাজা খিজির (আঃ) এর খুবই ঘনিষ্ট আধ্যাত্মিক সম্পর্ক ছিল। সমসাময়িক ওলামায়ে কেরাম ও বুজুর্গগণ তাঁর প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাপূর্ণ উচ্চ ধারণা পোষন করতেন যা তাদের লিখিত কসিদা, শের, কবিতা, মন্তব্য ইত্যাদি থেকে উপলদ্ধি করা যায়। তাঁর আধ্যাত্মিক পরশ প্রাপ্ত অসংখ্যা অলী-দরবেশ বিভিন্ন স্থানে আধ্যাত্মিকতার দাওয়াত পৌঁছে দিয়ে বিশ্ব মানবতার কল্যাণের অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। উত্তরাধিকারী খলিফা নির্ধারণ ও গদী অর্পণঃ গাউছুল আজম হযরত মওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) তাঁর নশ্বর জীবনের শেষ দিকে এক জুমাবারে এলাকার সমাজপতি ও জনগণের উপস্থিতিতে তাঁর পবিত্র হুজুরা শরীফ দোয়ার মেহরাবে নিজ পুত্র বংশীয় আদরের নাতি সাজ্জাদানশীনে গাউছুল আজম হযরত মাওলানা শাহ ছুফী সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ) -কে নিজ গদী শরীফ অর্পণে স্থলাভিষিক্ত আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী মনােনীত করেন।

ওফাত ও ওরশ :

গাউছুল আজম হযরত মওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) ৭৯ বছর বয়সে ২৩ জানুয়ারী ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ ,১০ মাঘ ১৩১৩ বঙ্গাব্দ ,সোমবার দিবাগত রাতে ইহধাম ত্যাগ করেন। তাঁর ওফাত দিবস উপলক্ষে প্রতি বছর ৮, ৯ ও ১০ মাঘ ৩ দিন ব্যাপী ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।

মাইজভান্ডারী তরিকা :

ইসলাম ধর্মে আধ্যাত্মিক সাধনার ধারাবাহিকতায় উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে কোরান ও হাদীসের শিক্ষাকে অনুসরণ করে গাউছুল আজম হযরত মওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ)-এর আধ্যাত্মিক শক্তি ও শিক্ষাকে ধারণ করে মাইজভান্ডারী তরিকা প্রচারের সূচনা হয়। হযরত মওলানা সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ) বলেন, এই ত্রিবিধ বেলায়তী ধারা, নবুয়তী ধারার সমন্বয়ে অর্থাৎ জাহের বাতেন তালীমে এরশাদী সহ শরীয়ত ,তরীকত ,হাকীকত ও মায়ারেফত প্রভাবে ও সংমিশ্রণে মাইজভান্ডারী তরীকারূপ মহা-সাগরের উৎপত্তি।

মাইজভান্ডারী তরিকার বৈশিষ্ট্যঃ

এই তরিকা ছিলছিলার দৃষ্টিকোণে কাদেরীয়া তরিকার সাথে সম্পর্কিত। অন্যান্য তরিকার আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যগুলাে মাইজভান্ডারী তরিকায় সন্নিবেশিত হয়েছে। এই তরিকা কুরআন ও হাদিসের শিক্ষাকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করে। একই সাথে এই তরিকা অসাম্প্রদায়িক ,উদার, নৈতিক ধর্ম-প্রাধান্য সম্পন্ন, শ্রেণি-বৈষম্যহীন ও মানবদরদী। মানুষের মনে ঐশী প্রেম জাগ্রত করে সুন্দর ও ন্যায়ের পথে জীবন যাপনে মানব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে মানবতার ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করার শিক্ষা ও দীক্ষা দেয়।

হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী(কঃ)-এর উত্তরাধিকারী:

 

হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) তাঁর ওফাতের পূর্বে আপন নাতি হযরত মওলানা সৈয়দ দেলাওর হােসাইন মাইজভান্ডারীকে (কঃ) বালেগ ঘোষণা করে মাইজভান্ডার দরবার শরীফে তাঁর গদীর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করে যান। হযরত কেবলা (কঃ) এই প্রসঙ্গে বলেন, আমার দেলাময়না বালেগ। দেলাময়নাই আমার গদীতে বসবে।

মাইজভান্ডারী তরিকার উসুলে সাবআ বা সপ্ত পদ্ধতি:

 

নফছে ইনসানীর কুপ্রবৃত্তি বন্ধ করে রূহে ইনসানীর সুপ্রবৃত্তি জাগ্রত করার জন্য হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) নির্বিঘ্ন ও সহজসাধ্য মাধ্যম হিসেবে সপ্ত-পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। সপ্ত-পদ্ধতি দুই স্তরে অনুশীলিত হয়।

ফানায়ে ছালাছা বা রিপুর ত্রিবিধ বিনাশ স্তর:

 

১। ফানা আনিল খালকঃ পরমুখাপেক্ষী না হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করা।

২। ফানা আনিল হাওয়াঃ অনর্থক কাজকর্ম ও কথাবার্তা হতে বিরত থাকা।

৩। ফানা আনিল এরাদাঃ নিজ ইচ্ছা বাসনাকে খোদার ইচ্ছায় বিলীন করে তাছলিম ও রজা অর্জন করা।

মাউতে আরবা বা প্রবৃত্তির চতুর্বিধ মৃত্যু :

 

১। মউতে আবয়্যাজ বা সাদা মৃত্যুঃ উপবাস ও সংযমের মাধ্যমে অর্জিত এই মৃত্যুতে মানব মনে উজ্জ্বলতা ও আলো দেখা দেয়।

২। মউতে আছওয়াদ বা কালো মৃত্যুঃ সমালোচনায় বিরক্ত বা রাগান্বিত না হয়ে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজকে সংশোধনের মনমানসিকতা অর্জনই কালো মৃত্যু।

৩। মউতে আহমর বা লাল মৃত্যুঃ কামস্পৃহা ও লোভ-লালসা হতে মুক্তিতে হাসিল হয়।

৪। মউতে আখজার বা সবুজ মৃত্যুঃ নির্বিলাস জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়ার মাধ্যমে সবুজ মৃত্যু লাভ হয়।

এই কোরআনী হেদায়তের সপ্তপদ্ধতি, মানবজীবনের এক নিখুত সহজ, সরল ও স্বাভাবিক পন্থা; যা মানব জীবন পদ্ধতিতে স্বাচ্ছন্দ্য আনয়ন করে।


আরও খবর



ফোনাশক্তি, মানসিক-স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা

প্রকাশিত:বুধবার ১১ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

প্রযুক্তিনির্ভর এই বিশ্বে স্মার্টফোন বর্তমান শিশু–কিশোরদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক সব কাজের অন্যতম অনুষঙ্গ। মানুষের জীবনে প্রযুক্তি যেমনি সুফল বয়ে আনছে, তেমনি এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে বাড়ছে নানাবিধ সমস্যা। অতিমাত্রায় মোবাইল ব্যবহারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ। মোবাইলের গেম আশক্তিতে নষ্ট হচ্ছে অর্থ বিনষ্ট হচ্ছে লেখাপড়া। বড়দের পাশাপাশি দিনের অধিকাংশ সময় মোবাইলের পেছনে ব্যয় করছে শিশুরা। সারাদেশের ন্যায় এমন চিত্র শালিখাতেও। শিশুদের মোবাইল অশক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকসহ সচেতন মহল। মাঝেমধ্যে ফোন কিনে না দেওয়ায় গলায় ফাঁস দেওয়া ও বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে এখানে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, টিকটক, ফেসবুক, ইউটিউব, গেমে আসক্ত হয়ে পড়াশোনাবিমুখ হচ্ছে শিশু–কিশোরেরা। একই সঙ্গে তাদের পরিপূর্ণ মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব ডিভাইসগুলো। মোবাইলের অপব্যবহারে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতাও। স্কুল-কলেজে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছে না অনেকে। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে তৈরি করছে টিকটক ও রিলস ভিডিও। অনলাইন থেকে পাওয়া অর্থের লোভে অধিকাংশ সময় মোবাইলের পেছনেই ব্যয় করছে কিশোরেরা।

এদিকে ফোন দিয়ে খাবার খাওয়ানো, ও শিশুর কান্না থামানো যেন এখনকার বাবা-মা’র আবশ্যকীয় কাজ। দুবছরের শিশু থেকে পঞ্চাশোর্ধ লোকেদের নিত্যসময়ের সঙ্গী এখন মোবাইল ফোন। শিশুদের মোবাইল অশক্তি দূর করতে শিশুদের পেছনে সময় দেওয়া, শিশুদের ভালো কাজের প্রশংসাপূর্বক পুরস্কৃত করা, শিশুদের সামনে মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করা, সৃজনশীল কাজে সম্পৃক্ত করা, সহনশীলতার সঙ্গে শিশুদের প্রতি সদাচার করা, খেলাধুলা সাথে সম্পৃক্ত করা, শিশুদেরকে অকারণে ফোন ব্যবহার করতে না দেওয়াসহ নানাবিধ পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ছয়-সাত ইঞ্চির এই ডিভাইস যেন শিশু–কিশোরদের ধ্যানজ্ঞান। প্রতিদিন রাত জেগে স্মার্টফোনের গেমসে বুঁদ হয়ে থাকে এই শিশু–কিশোরেরা। সামনে বই, খাতা, কলম রাখা থাকলেও কিন্তু তা থেকে তার নজর কিছুতেই সরছে না। অনলাইনের যুগে শিশুদের ঘাড়ে যেন অভিশাপ হয়ে এসেছে স্ক্রিন আসক্তি। স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারেই তাদের রাত-দিন পার হচ্ছে। এমনকি খাবার টেবিলে বসেও চলে ফোন চাপাচাপি। মোবাইল অশক্তি যেন চিন্তার বড় কারণ হয়প দাড়িয়েছে। যে বয়সে শিশু-কিশোরদের বইয়ের পাতা উল্টে নতুন নতুন অধ্যায় ধরার কথা, সে বয়সে তারা ব্যস্ত গেমসের লেভেল পার হওয়াতেই। অনেকে আবার বিভিন্ন ধরনের অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে।

সরকারি আইডিয়াল স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর অভিভাবক জানান, স্কুল ফাঁকি দিয়ে ফোন নিয়ে পড়ে থাকে তাঁদের সন্তান। আবার ফোন কিনে না দিলেও স্কুল যাওয়া বা নাওয়া–খাওয়া বন্ধ করে তারা। এমনকি আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে আদায় করছে ফোন। অনেকটা নিরুপায় হয়ে ফোন কিনে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকবৃন্দ।

শ্রী ইন্দ্রনীল গবেষণা ইনিস্টিউটের প্রধান সংগঠক ইন্দ্রনীল বিশ্বাস, ‘দার্শনিক জালাল উদ্দীনের’ একটি উক্তি উল্লেখ করে বলেন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা তাহাই বিষ আর প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে পাশাপাশি সন্তানকে চার দেয়ালের বাইরে মুক্ত হাওয়ায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়াসহ নানা কর্মকাণ্ড হতে পারে আসক্তির প্রতিষেধক। তা না হলে স্ক্রিনের আলো শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিয়ে যেতে পারে। শিশু-কিশোরদেরকে কাউন্সিল করে এই মোবাইল আশক্তি কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব বলেও মনে করেন এই গবেষক।

চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ বলেন, অতিরিক্ত মুঠোফোন আসক্তির কারণে চোখ ও মস্তিষ্কের নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। কিশোর বয়সে যারা মুঠোফোন আসক্ত হয়, তাদের চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, অস্থিরতা, ঘুমের সমস্যা হয়।পাশাপাশি মোবাইল আশক্তিতে মস্তিক থেকে ডেপামিন নিঃসরন হয়। যে কারণে তাদের শারীরিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।


আরও খবর



পাহাড়ে শান্তির অন্বেষায় প্রয়োজন কঠোর সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

কর্নেল মো. ইলিয়াস হোসেন, পিএসসি, পিইঞ্জ (অব.) : 

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলায়, গত বছর (১৮ সেপ্টেম্বর) একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামুন (৩০) নামে এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।  এর প্রতিবাদে দীঘিনালা কলেজের ছেলেরা মিছিল করতে গেলে পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায় এবং বাজারের দোকান পাটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে স্থানীয় প্রশাসন এবং  সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা সংঘর্ষ নিরসনে চেষ্টা করেও নিবৃত করতে না পারায় এক পর্যায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইউপিডিএফ(মূল) এর কয়েকজন সদস্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের ভিতর থেকে গোলা গুলি শুরু করে এবং সংঘর্ষের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় যা ব্যাপক আকারে ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত হয়ে খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি জেলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এতে খাগড়াছড়িতে তিন জন এবং রাঙ্গামাটিতে ১ জনের প্রাণহানি ঘটে। দেশের এই ক্রান্তি কালে এই ধরনের সংঘর্ষ কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। কারণ দেশে প্রচলিত আইন আছে, নিরাপত্তা বাহিনী আছে, অপরাধীদের বিচারের জন্য আদালত আছে, কিন্তু তার পরেও এক অদৃশ্য ইশারায় মাঝে মাঝেই পাহাড়ি বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ ধরনের সংঘর্ষ বাধিয়ে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানকে নস্যাৎ করতে কোন এক বিশেষ গোষ্ঠী সর্বদাই তৎপর।  

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি দুই জেলাতেই আমার চাকুরি করার সুযোগ হয়েছে। ২০০৮ সালে খাগড়াছরির দীঘিনালা উপজেলার কাসালং ক্যাম্পে থাকা কালীন সময়ে কোন একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর ইন্দনে, দীঘিনালার বাগাইহাট এলাকায় পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে একই ধরনের সংঘর্ষ বাধে। পরবর্তীতে তা প্যাসিফিকেশনের মাধ্যমে নিবৃত করা হয়। এরপর ২০০৯ সালে কাপ্তাই এলাকায় জোন উপ অধিনায়ক এবং জোন কমান্ডার হিসেবে আমি প্রায় তিন বছর চাকুরি করেছি। যদিও এই সময়ে তেমন কোন সমস্যা সংঘটিত হয় নাই। তবে পার্বত্য জেলার মৌলিক সমস্যা নিয়ে  আমার ভাবনা ওই সময়ে বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আসলে পাহাড়ের এই সংঘাত/সংঘর্ষের সাথে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব জড়িত।

স্বাধীনতার পর থেকেই কিছু বিছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বাহিরের মদদে আমাদের তিন পার্বত্য জেলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করে আসছিল, যার প্রেক্ষিতে আমাদের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের ভৌগোলিক অক্ষন্ডতা রক্ষার্থে তিন পার্বত্য জেলার গভীরে ক্যাম্প করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিল এবং বর্তমানেও আছে। এক সময়ে তিন পার্বত্য জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই দুর্গম ছিল।

তিন পার্বত্য জেলায় সমতলের জনগণের কোন সম্পৃক্ততাও তেমন ছিল না, ফলে ঐ অভয়ারণ্যে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছিল। দুর্গম পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প ছাড়া সমতলের কোন লোক বসবাস করতো না। এমনি এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে, তৎকালীন সরকারের দূরদর্শী সিদ্ধান্তে পার্বত্য জেলার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত সেনা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকার কিছু ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয় এবং প্রত্যেক পরিবারকে চাষাবাদের জন্য ৫  একর করে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাঙালিদের এই পুনর্বাসন এবং ভূমি বরাদ্দের কারণে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বাঙ্গালীদেরকে উচ্ছেদের জন্য ব্যাপক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে থাকে যা একসময়ে ইন্সার্জেন্সীতে রূপ নেয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর ব্যানারে এই সন্ত্রাসী গ্রুপের তখনকার নেত্তৃত্বে ছিল মি. যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সংক্ষেপে সন্তু লারমা।

অতঃপর, ১৯৯৭ সালে, ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস)এর সাথে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি হয়, এতে পার্বত্য জেলার শতভাগ বাঙালি এবং পাহাড়ি যে খুশি হয়েছিল তা বলা যাবে না। তবে তখনকার বাস্তবতার প্রেক্ষিতে চুক্তি অত্যন্ত সময়োপযোগী ছিল। কিন্তু চুক্তি পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে অনেক আলোচনা ও আন্দোলন হয়েছে। পাহাড়িদের মধ্যেও চুক্তি নিয়ে অনেক অসন্তোষ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বরে শান্তিচুক্তির বিপক্ষ দল হিসাবে ইউনাইটেড পিপুলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)এর আত্মপ্রকাশ ঘটে।

প্রাথমিকভাবে উক্ত সংগঠনের কার্যক্রম অত্যন্ত সীমিত থাকলেও ২০০৭ সালের পরে তারা ব্যাপক চাঁদাবাজিসহ সশস্ত্র দল গঠন এবং এর শক্তি বৃদ্ধির কাজে লিপ্ত হয়। সূত্রে জানা যায়, সমগ্র পার্বত্য জেলার ২০টি উপজেলায় তাদের সক্রিয় কার্যক্রম বিস্তৃত। উল্লেখ্য যে, ঐ শান্তি চুক্তিতে বেশ কিছু ক্লজ রয়েছে যা আমাদের সংবিধানের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। যেমন ভূমি আইন। পাহাড়ে সমতলের বাঙালিরা কোন জমি কিনতে পারে না।

এতে বলা হয়েছে পার্বত্য এলাকার ভূমির মালিক পাহাড়ীরা। পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনা বা ভূমি আইন সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের। যার ফলে পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভূমির মালিকানা, কেনা-বেচা ও দখল নিয়ে ব্যাপক জটিলতা রয়েছে। অনেক সময় বাঙালিদের সঙ্গে উপজাতিদের বা নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যেও ভূমি নিয়ে হানাহানি ও সংঘাতের ঘটনা অহরহই ঘটছে । এসব জটিলতা নিরসনে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন করার কথা থাকলেও এখনও তা সম্পন্ন হয়নি বলে জানা গেছে। এই চুক্তির আলোকে পাহাড়ীরা সকল খাস জমি অন্যান্য পাহাড়ীদেরকে চাষাবাদের জন্য বরাদ্দ দিলেও বাঙ্গালীদেরকে বঞ্চিত করেছে। এমনকি যে জমি তারা পূর্বে বরাদ্দ পেয়েছিল, তাও চাষাবাদে বাধা প্রদান করছে।

এতে পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হচ্ছে। পাহাড়িদের বক্তব্য, তিন পার্বত্য জেলা তাদের নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। কারণ আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর একটি রেজুলেশন পাশ করে, যার নম্বর ৬১/২৯৫। উক্ত রেজুলেশনে মোট ৪৬টি অনুচ্ছেদ আছে যা দ্বারা আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্পর্শকাতর  কয়েকটি অনুচ্ছেদের বিষদ বিবরণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো

অনুচ্ছেদ-১। অধিবাসী জন-গোষ্ঠীর একক বা  সমষ্টিগতভাবে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই মৌলিক স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-২। অধিবাসী জন-গোষ্ঠী একক বা  সমষ্টিগতভাবে মুক্ত এবং সম-অধিকারের নাগরিক। অধিবাসী পরিচয়ে তাদের অধিকারের বিষয়ে কোনো ধরনের বৈষম্য বিবেচিত হবে না।

অনুচ্ছেদ-৩। অধিবাসী জন-গোষ্ঠীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণের  পূর্ণ অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৪। অধিবাসী জন-গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ/স্থানীয় বিষয়ে নিজস্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন বা নিজ-সরকার (Self-Government) পরিচালনার অধিকার আছে।

অনুচ্ছেদ-৫। অধিবাসী জন-গোষ্ঠী তাদের আইনি ব্যবস্থাসহ স্বতন্ত্র রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজস্ব অবকাঠামো তৈরি এবং উন্নয়নের অধিকার সংরক্ষণ করে। তবে তারা চাইলে দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের পূর্ণ অধিকার ভোগ করতে পারবে।  

অনুচ্ছেদ-৬। প্রত্যেক আদিবাসী সংশ্লিষ্ট দেশের একজন নাগরিক।

অনুচ্ছেদ-৭। অধিবাসী প্রত্যেক জন-গোষ্ঠীর একক বা সমষ্টিগতভাবে শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা বিধানসহ স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার আছে। তারা স্বাধীন, শান্তিপ্রিয় এবং নিরাপদ। বিশেষ গ্রুপের জনগোষ্ঠী হওয়ায় কোনোভাবেই যেন তারা কোনো প্রকার গণহত্যা বা উচ্ছেদের মতো ঘটনার স্বীকার না হয় এবং কোনো প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে তাদের সন্তানদেরকে তাদের থেকে আলাদা করা না হয়।  

অনুচ্ছেদ-৮। কোনো অধিবাসী জন-গোষ্ঠীকে জোরপূর্বক মূল ধারায় আত্মীকরণ করা বা তাদের আচার/সংস্কৃতি ধ্বংস হয় এমন কাজ করা যাবে না। সরকার কার্যকর পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে আদিবাসীদের নিম্নলিখিত বিষয়গুলি নিশ্চিত করবেঃ

ক। এমন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করা যাতে তাদের নিজস্ব উপজাতীয় পরিচয় ধ্বংস হতে পারে।

খ। এমন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করা যাতে তাদের নিজস্ব ভূমি, এলাকা এবং সম্পদ বিনষ্ট হয়।
গ। কোনো গোষ্ঠীকে জোরপূর্বক স্থানান্তর না করা যাতে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হয় বলে মনে হতে পারে।

ঘ। এমন মতবাদ প্রচার না করা যাতে তারা জাতিগত বৈষম্যের স্বীকার হয়।  

অনুচ্ছেদ-৯। কোনো অধিবাসী দল বা ব্যক্তির যে কোনো অধিবাসী সমাজ বা জাতির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অধিকার আছে যদি সে উক্ত সমাজ বা জাতির রীতিনীতি এবং আচার-অনুষ্ঠানকে  অনূসরন করে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নাই।  

অনুচ্ছেদ-১০। অধিবাসী জন-গোষ্ঠীকে জোরপূর্বক তাদের ভূমি বা এলাকা থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। তাদের সম্মতিক্রমে এবং যথোপোযূক্ত ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষেই কেবল তাদেরকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা যাবে, তবে তারা চাইলে পূর্বের স্থানে পুনরায় ফিরে আসতে পারবে।

অনুচ্ছেদ-১১। অধিবাসী জন-গোষ্ঠীর নিজস্ব প্রচলিত আচার-অনুষ্ঠান এবং সংস্কৃতিকে পালন এবং পুনর্জীবনের অধিকার আছে। তাছাড়া তারা অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সকল প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনা, শিল্পকলা, আচার-অনুষ্ঠান, প্রযুক্তি, সাহিত্য-কলা ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়নের পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করে। সরকার কার্যকর এমন পদ্ধতি অনুসরণ করবে যাতে অননু্মােদিত ভাবে উপজাতীয় সংস্কৃতি, বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক সম্পদের ক্ষতিসাধনের সকল চেষ্টা ব্যাহত হয়। আরও অনেক ক্লজ রয়েছে তা এখানে উল্লেখ করা হল না।    

আদিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এধরনের নির্দেশনা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য এবং এতে কারও কোন দ্বি-মত নাই। তবে বাংলাদেশে যেহেতু কোন অধিবাসী নাই সেক্ষেত্রে উক্ত রেজুলেশনের কোন অনুচ্ছেদই বাংলাদেশ তথা পার্বত্য জেলার জন্য প্রযোজ্য নয়। বাংলাদেশের সার্বভৌম ভূখণ্ডের একাংশে বসবাসকারী ঐ পাহাড়ি জন-গোষ্ঠীরা কেবল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মাত্র, এ বিষয়ে ২০১২ সালের দিকে সংসদে একটি আইনও পাশ হয়েছে যেখানে তাদেরকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

 তাই পার্বত্য জেলা গুলোতে বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে কোনোভাবেই অধিবাসী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার কোন সুযোগ নাই। তাছাড়া, পার্বত্য জেলাগুলোতে বসবাসরত পাহাড়িদের আদি নিবাস কখনোই বাংলাদেশে ছিল না বরং তারা মঙ্গোলয়েড বংশোদ্ভুত এবং বার্মার আরাকান, ভারতের বিহার/মিজোরাম, থাইল্যান্ড এবং চায়না হতে আমাদের দেশে এসে বসতি স্থাপন  করেছে। অন্য দিকে বাঙালিদের ইতিহাস হাজার বছরের। বাংলাদেশের আদি-নিবাসী বাঙালিরাই। আদিবাসী মানে হল ভূমি সন্তান (SON OF THE SOIL ev NATIVE)। ইংরেজিতে যাকে বলে ABORIGINE OR ABORIGINAL PEOPLE ড. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী কর্তৃক সম্পাদিত  এবং বাংলা একাডেমি হতে প্রকাশিত ইংলিশ-বাংলা অভিধানে ABORIGINAL, বলতে ঐ মানুষ এবং প্রাণী গুলোকে বুঝিয়েছেন যারা আদিকাল থেকে একই স্থানে বসবাস করছেন এবং পরিচিতি পেয়েছেন।

Webster Nwe World Dictionar তেও একই বিষয়ে আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে The first people known to have lived in a certain place or region which was not under abodzs control/possession are to be termed as aborigines or adivashis. আমরা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিজি, সামোয়ার দিকে তাকালে আসল আদিবাসী সম্পর্কে ধারণা আরো স্পষ্ট হবে। সেখানে বসবাসকারী স্বতন্ত্র জন-গোষ্ঠি যারা ভূমি সন্তান (Native) নামে পরিচিত, তারা কোনো অঞ্চল থেকে যেয়ে উক্ত এলাকায় বসতি স্থাপন করে নাই। তাদের সংস্কৃতি এবং আচারের উৎসও তাদের নিজস্ব।

অপরদিকে পার্বত্য এলাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত উপজাতীয় গোষ্ঠীরা কেবল জীবিকার প্রয়োজনেই বিভিন্ন সময়ে এ এলাকায় আগমন করেছে। এসব উপজাতিদের সংস্কৃতি/আচারের উৎস এ অঞ্চলের নয়। প্রত্যেক গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি/আচারের উৎস তারা যে সব অঞ্চল থেকে এসেছে, সেখান থেকে আসা। তাই বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা গুলোতে বসবাসরত উপজাতীয় জন-গোষ্ঠিকে কেবল পাহাড়ি উপজাতি বলা যেতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই তাদেরকে আদিবাসী বলা বা আদিবাসী হিসাবে গণ্য করা যাবে না। আমাদের  দেশে যে সকল উপজাতি আছে তাদের পার্বত্য জেলাগুলোতে আগমন হয় মূলত ১৬০০ হতে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে। বর্তমানে পার্বত্য জেলাগুলোতে যে ১৩টি উপজাতির বসবাস করছে, তাদের প্রত্যেকের আদি-নিবাস এবং পার্বত্য জেলায় আগমনের তথ্য নিম্নরূপ

   
ক। মগ বা মার্মা জন-গোষ্ঠী ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে বার্মার আরাকান হতে বিতাড়িত হয়ে বর্তমান বাংলাদেশের কক্সবাজার, পটুয়াখালী এবং পার্বত্য তিন জেলাতে আগমন করে।

খ। মুরং জন-গোষ্ঠী ১৮০০ সালের শেষের দিকে বার্মার আরাকান রাজ্যের খুমিস নামক একটি উপজাতি কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে বান্দরবান জেলায় আগমন করে।

গ। বার্মার আরাকানে বসবাসরত খুমিস জন-গোষ্ঠী আনুমানিক ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে মুরং ও বোমাংদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল বান্দরবানের রুমা এবং থান্চি এলাকায় আগমন করে।

ঘ। বোমাং বা বম জনগোষ্ঠী ১৮৩৮ হতে ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে বার্মা হতে এসে বাংলাদেশের পার্বত্য জেলার দক্ষিণে বান্দরবান জেলায় বসতি স্থাপন করে।

ঙ। খিয়াং জন-গোষ্ঠী ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে আরাকানের উমাতাং হিল হতে বার্মিস  কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের পার্বত্য জেলায় প্রবেশ করে।

চ। রাখাইন জন-গোষ্ঠী ২০০ বৎসর আগে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, বিশেষ করে পটুয়াখালী, বরগুনা এবং কক্স-বাজার এলাকায় আগমন করে।  

ছ। ত্রিপুরা জন-গোষ্ঠীর আদি নিবাস হলো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। তারা মূলত জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে প্রথমে কুমিল্লা, সিলেট এবং চট্রগ্রামে বসতি স্থাপন করে।

জ। লুসাই জন-গোষ্ঠীর আদি নিবাস হলো ভারতের মিজোরাম প্রদেশে। তারা মূলত মিজোরামের লুসাই পাহাড় হতে আনুমানিক ১৫০ বছর পূর্বে বাংলাদেশে আগমন করে।  

ঝ। পাঙ্খু জন-গোষ্ঠীর আদি নিবাস ভারতের মিজোরামে। তারা লুসাই পাহাড়ের পাঙ্খয়া নামক একটি গ্রাম বসবাস করত। পরবর্তীতে জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে তারা বাংলাদেশের পার্বত্য জেলায় আগমন করে।

ঞ। কুকি জন-গোষ্ঠীর আদি নিবাস ভারতের মনিপুর, নাগাল্যান্ড, আসাম এবং মিজোরামে।  

ট। চাক জন-গোষ্ঠীর আদি নিবাস সুদূর চীনের উনান প্রদেশে। তারা প্রথমে আরাকানে প্রবেশ  এবং পরে বাংলাদেশের পার্বত্য জেলায় আগমন করে। যদিও এখনও আরাকানে তাদের বসতি আছে।

ঠ। তংচংঞ্যা চাকমা জন-গোষ্ঠীর একটা অংশ। তারা বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি, বান্দরবান,   কক্সবাজার এলাকা ছাড়াও ভারতের মিজোরাম এবং মায়ানমারের আরাকান রাজ্যে বসবাস করে।

ড। চাকমা হল তিব্বতীয়-বার্মিস বংশোদ্ভুত জন-গোষ্ঠি। এই উপজাতিও গোষ্ঠীর অতীত নিয়ে নানাধরনের কল্পকাহিনি প্রচলিত আছে। পৌরাণিক গল্পে উল্লেখ আছে চাকমাদের আদি নিবাস ছিল চম্পোকনগরবা চম্পাপুরি নামে এক প্রাচীন সম্রাজ্যে। ভারতের ভিতরে এবং বাইরে এরকম পাঁচটি এলাকা আছে, যার নাম চম্পোকনগর। যার একটি উত্তর বার্মার সানএ, তিনটি ভারতের বিহার রাজ্যের মাগাধা, আসামের কালাবাগা, এবং কোচীনএ, অন্য একটি হল মালয়েশিয়ার মালাক্কাতে। এক পৌরাণিক কাহিনি মতে, চাকমা জন-গোষ্ঠিরা বিজয়গিরি নামক এক কাল্পনিক যুবরাজ এর নেতৃত্বে ভারতের বিহার  রাজ্যের মাগাধা সাম্রাজ্য হতে প্রথমে বার্মার আরাকান রাজ্যে আগমন করে। পরবর্তীতে বার্মার রাজকীয় শক্তি আরাকানে বসবাসরত চাকমা জন-গোষ্ঠীকে আক্রমণ করলে তদানীন্তন বাংলার সুবেদার মানবিক বিবেচনায় তাদেরকে কর্নফুলী নদীর পূর্ব পাশে প্রথমবারের মত বসতি স্থাপনের অনুমতি দেন। এরপর ধীরে ধীরে বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলায় এবং ভারতের মিজোরামে চাকমাদের বিস্তার ঘটে।

পাহাড়ের গভীরে বসবাসকারী সাধারণ উপজাতিদের চাওয়া-পাওয়া কি, তা আমাদের সকলের জানা দরকার। আমি পার্বত্য এলাকায় অনেক  দিন থেকেছি। আর পার্বত্য এলাকার পাহাড়-পর্বতের সাথে, ওখানকার জন-গোষ্ঠির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকে পাহাড়ি জন-গোষ্ঠির চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে আমি যেটুকু জানতে পেরেছি শুধু সেটুকুই আমি আজ আপনাদের জন্য উল্লেখ করছি। এ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চাকমাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। এর পরে আছে মার্মারা। এই উপজাতিদের মধ্যে ৮০ শতাংশই বাস করে গভীর জঙ্গলে, যাদের জীবন/জীবিকার পুরটাই কৃষি নির্ভর। এদের কাছে জেএসএস, ইউপিডিএফ বা শান্তিচুক্তির কোন মূল্য নাই। তারা নেহায়েতই খেটে খাওয়া মানুষ। বাকী ২০ শতাংশ যারা শহরে বসবাস করে, তারাই সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে অতি-শিক্ষিত কতিপয় স্বার্থান্নেষী মহল পাহাড়ের গভীরে বসবাসকারী ঐ অনগ্রসর গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে সর্বদা ব্যস্ত। তারা উক্ত অনগ্রসর গোষ্ঠীর দৈন্যতার কথা বলে দেশের সাধারণ মানুষের সমর্থন লাভসহ বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে, যার সাথে খেটে খাওয়া ঐ সাধারণ পাহাড়িদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

এই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে অধিবাসী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে দেশের ভিতরের এবং বাহিরের ঐ বিশেষ চক্র বিভিন্ন ভাবে অপ-প্রয়াশ চালিয়ে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত  দুঃখজনক এবং দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশী জরুরি, দেশের ঐ বিশেষ চক্রের অপচেষ্টা দ্রুত বন্ধ করা। একই সাথে সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অধিবাসী শব্দের সঠিক মানে বুঝে তার ব্যবহার/উচ্চারণ করা উচিত। এজন্য আমাদের সকলকে বিশেষ করে সরকার এবং শিক্ষিত জন গোষ্ঠীকেই বেশী সচেতন এবং সতর্ক হতে হবে।

একই সাথে পাহাড়ে বসবাসকারী উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর স্বাধীন এবং  স্বতন্ত্র জাতি-সত্ত্বা যেন কোনোভাবেই বিনষ্ট না হয় সেদিকে আমাদের সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, তারা সমতলের অন্য সাধারণ মানুষের মতই স্বাধীন এবং সার্বভৌম এই দেশের নাগরিক। তাই দেশের অন্যান্য স্থানের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে মিল রেখে ঐ অনগ্রসর জাতি গোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নেও আমাদেরকে সমান গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। তবে গত ২০ বছরে পাহাড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তাতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবন মানে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। প্রচুর সংখ্যক সাধারণ পাহাড়িরা উন্নত লেখাপড়া শিখে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এখন কাজ করছে এবং আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। কিন্তু তারপরেও কিছু ভিন্ন মতের পাহাড়িরা দেশের এবং বাহিরের স্বার্থান্নাষী গোষ্ঠীর মদদে পার্বত্য জেলা গুলিতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। তাই এই বিষয়ে শান্তি প্রিয় পাহাড়ি জনগণেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

পাঠক, উল্লিখিত আলোচনায় এটা মনে হতে পারে, ভূমি সংক্রান্ত সমস্যার কারণেই পাহাড়ি এবং বাঙালিদের মধ্যে বৈরিতা তৈরি হচ্ছে। তবে তৎকালীন সরকারের পুনর্বাসন প্রকল্পের ফলে পাহাড়ে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্ন কিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হলেও পাহাড়ি- বাঙালি জনগোষ্ঠীর বর্তমান আনুপাতিক উপস্থিতি পার্বত্য এলাকাকে যে স্থায়ী শান্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা নির্বিধায় বলা যায়। এছাড়াও সরকার পাহাড়ীদেরকে বিশেষ কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করায়  তাদের মেইন-স্ট্রিমে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ আরও সুগোম হচ্ছে। তবে, ইদানীং কিছু স্বার্থান্নাষী মহলের মদদে বান্দরবানের কুকিচীনসহ পিসিজেএসএস এবং ইউপিডিএফ সদস্যদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় এলাকা কিছুটা অশান্ত হয়ে উঠছে। ফলে সমতলে লুকিয়ে থাকা সুযোগ সন্ধানী গ্রুপ সরকারকে বিপদে ফেলতে সার্বক্ষণিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, নিরাপত্তা বাহিনীসহ সরকারের নীতি নির্ধারক মহলকে সতর্ক হতে হবে। এমনও হতে পারে, সব ভুলে সকল সন্ত্রাসী গ্রুপ আবার একত্রিত হয়ে শান্তি বাহিনীর মত স্বাধীন ঝুমল্যান্ড প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পুনরায় পার্বত্য জেলাগুলোকে অশান্ত করে তুলতে পারে। তাই এই সংকটময় পরিস্থিতি হতে উত্তরণের জন্য সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। কুকীচীন সহ জেএসএস এবং ইউপিডিএফ এর শীর্ষ নেতৃত্বকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে নিষিদ্ধ করতে হবে ঐ সকল স্থানীয় রাজনৈতিক দলকে যারা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে লালন করছে।

৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে, যেখানে ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবে ম্যাস কিলিংয়ের কারণে বিলুপ্ত প্রায় পুলিশ বাহিনীর মনোবল চাঙ্গা করাসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে পার্বত্য অঞ্চলকে অশান্ত করার এই ঘৃণ্য প্রয়াস নিশ্চয়ই কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর পিছনে অবশ্যই পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারে দোসরদের মদদ দিচ্ছে। কারণ দেশের ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন, প্রতিবেশী দেশে পলায়ন এবং প্রতিবেশী দেশের একটি রাজ্যে অস্থিতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে এটা মোটামুটি  নিশ্চিত যে, আমাদের তিন পার্বত্য জেলাগুলোকেও যদি অশান্ত করা যায়, তাতে বাংলাদেশের উপরে একটা চাপ সৃষ্টি করা যাবে।

এতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়তো পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে পূর্বের সকল অসম চুক্তি বাস্তবায়নে কিছুটা নমনীয় হবে, যা তাদের জন্য খুবই দরকারি। এমন চিন্তাকে উড়িয়ে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। বরং সেটাই হয়তো করার চেষ্টা চলছে। তাই এই মুহূর্তে বর্তমান সরকারকে খুবই কৌশলী এবং সতর্ক হতে হবে। অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধানে পার্বত্য জেলার সকল স্টেক-হোল্ডারেদেরকে নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে এবং আন্তরিক আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করে ফেলতে হবে।

যদি এতেও সমাধান না হয়, তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশ শ্রীলংকার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে, নিরাপত্তা বাহিনীকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করে ঐ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে সমূলে ধ্বংস করতে হবে । প্রয়োজন হলে চুক্তির স্পর্শকাতর বিষয়গুলোও পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আর এভাবেই নিশ্চিত করতে হবে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, যা আপনার, আমার, আমাদের সকলের দায়িত্ব। অন্যথায় দেশকে শান্তি চুক্তির পূর্ববর্তী যে কোনো ভয়ানক পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতে পারে যা আমাদের কারও কাম্য নয়। তাই  আসুন আমরা সবাই একযোগে কাজ করি, নিশ্চিত করি সর্বত্র শান্তি ও নিরাপত্তা, আর রক্ষা করি আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের অখণ্ডতা।

লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা।


আরও খবর