মাজহারুল ইসলাম মাসুম ,সিনিয়র সাংবাদিক ,লেখক ও গবেষক :
মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জ্বত তাঁহার কিছু কিছু বান্দাকে পয়গম্বর আ.
অথবা অলি আল্লাহর পবিত্র আত্মা হইতে সরাসরি ফয়েজ দান করিয়া এবং তাঁহাদেরকে
বেলায়েতের মর্য্যাদায় উন্নীত করিয়া যোগ্যতা সম্পন্ন করেন।
কাদেরিয়া ও চিশতিয়া তরিকার
সংমিশ্রণে মাইজভান্ডারি তরিকা। এই তরিকার প্রবর্তন করেন তিনি আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী নামেই বহুল পরিচিত। তার অনুসারীগণ যে সকল
প্রচার-প্রকাশনা বাংলা, আরবি, উর্দু এবং
ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষায় ছাপিয়ে আসছে, তাতে তার নাম
গাউছুল আজম হযরত মৌলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী কেবলা ক্বাবা কাদ্দাছাল্লাহু ছিরহুল আজিজ (কঃ) লিখতে দেখা যায়। । তৎপর এই তরিকার উন্নয়ন সাধন করেন তাঁহার জগৎ বিখ্যাত মুরিদ-খলিফা
হযরত গোলামুর রহমান (প্রকাশ বাবা ভান্ডারি) রহ.। তাঁহার মতে ইলাহিয়াত বা ঐশী
সত্তার বিকাশ ও স্ফূরণ হয় আদমিয়াত বা মানবত্বে। তিনি ইত্তেহাদের ভিত্তি মূলে হযরত
আদম আ.কে সর্ব্ব প্রথম আল্লাহর শারীরিক বিকাশ বলিয়া মনে করেন। মানবীয় দৈহিক সত্তায়
ঐশী সত্তার প্রকাশই এক চিরন্তন রহস্য। আল্লাহর সকল সিফাত বা গুণ মানুষের মধ্যেই
বিকশিত হয়। এই জন্যই মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত হিসাবে সৃষ্টি জগতের উপর কর্তৃত্ব
করিতেছে। মানুষ ব্যতীত কেহই আল্লাহর রহস্য উদঘাটন করিতে পারে না।
মাইজভান্ডারী তরিকা প্রতিষ্ঠা ও
মাইজভান্ডার দরবার শরীফ - এর গোড়াপত্তনঃ
হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) তাঁর
পীরে ত্বরিকতের নির্দেশে ১৮৫৭ সালে নিজ গ্রাম মাইজভান্ডারে ফিরে আসেন। আধ্যাত্মিক
সাধক ও দোয়া প্রত্যাশীদের ভীড়ে এই সাধকের পবিত্র বাসগৃহ বিশ্ব মানবতার কল্যাণধারক
এক উচ্চমার্গীয় আধ্যাত্মিক দরবারে পরিণত হয়। লোকসমাজে পরিচিতি পায় ‘মাইজভান্ডার দরবার শরীফ’ হিসেবে। হযরত কেবলার (কঃ) অসংখ্যা কারামতের ঘটনা বিভিন্ন গ্রন্থে ও
লোকমুখে প্রচারিত। যেমনঃ (১) হযরতে আধ্যাত্মিক প্রভাবে মোহছেনিয়া মাদ্রাসা
প্রতিষ্ঠা ও মোদার্রেছ নিযুক্তি। (২) হযরতের আধ্যাত্মিক প্রভাবে এক রাতে মক্কা
শরীফ হতে চট্টগ্রাম শহরে হাজীর প্রত্যাগমন। (৩) হযরতের বেলায়তী ক্ষমতায় বাহুতে হাত
রেখে জনৈক হাজীর অলৌকিক ভাবে বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন (৪) হযরতের আধ্যাত্মিক প্রভাবে
বাঘের মুখে লোটা নিক্ষেপে ভক্ত উদ্ধার (৫) হযরতের বেলায়তী প্রভাবে মৃত্যূকালে
আজরাইল ফেরত ও ষাট বৎসর আয়ু বৃদ্ধি। (৬) হযরতের আদেশে রেয়াজ উদ্দিন উকিলের
ভূ-সম্পত্তি খরিদ ও রেয়াজ উদ্দিন বাজারের পত্তন। (৭) হযরতের আশ্চর্য্য কেরামতে
বগলের নীচে কাবা শরীফে মুছল্লির প্রবেশ করতে দেখা -ইত্যাদি। এই ধরনের উচ্চমার্গীয়
কেরামত গাউছে আজমিয়তের পরিচয় বহন করে।
১. নূর ও হাকিকত সম্বন্ধে আলোচনা।
২. নূর বিষয়ক শৃঙ্খলা।
৩. নূরুল আনোয়ার, আনোয়ারে কাহিরা, আনোয়ারে
মুর্জারাদা সম্পর্কে আলোচনা।
৪. বরজখের প্রকার ভেদ ও নমুনা।
৫. নবুয়াত, মনামত, মা’আদ (প্রত্যাবর্তন) বিষয়ক আলোচনা।
উক্ত পাঁচ বিভাগে রমুজ ও ইশারার সংক্ষিপ্ত আলোচনা রহিয়াছে। নূর ও
জুলমাত সম্বন্ধে বিস্তারিত ব্যাখ্যা রহিয়াছে। তিনি নূর বলিতে রূহ, জুলমাত বলিতে শরীর এবং আনোয়ার আক্লকে বুদ্ধিবৃত্তি বলিয়া ব্যক্ত
করিয়াছেন। আক্ল দ্বারা উকুলে আফলাক - ইহার দ্বারা আনোয়ারে কাহিরা এবং আনোয়ারে
মুর্জারাদার সংক্ষিপ্ত আলোচনা পরিবেশিত হইয়াছে। আলমে বরজখ দ্বারা আলমে আজসাম
বুঝাইয়াছেন। এই ভাবে: জাতে এলাহী, সিফাতে আফয়াল, লজ্জত (স্বাদ), মারেফাত, হেকমতে ইলমে কালাম, দর্শন ও তাসাউস ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করিয়াছেন।
কুরআন-হাদিসের সূক্ষ্ম রহস্য পূর্ণ আয়াত ও হাদিস শরীফের উপর
প্রতিষ্ঠিত দর্শন ও তরিকা। ইরান, ইরাক সহ পৃথিবীর
বিভিন্ন দেশে এই তরিকার অনুসারী রহিয়াছেন।