সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ আল মাইজভান্ডারি :
♦রহমতে আলম,নূরে মুজাস্সাম, হুজুর পূরনুর (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি, যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[৪র্থ পর্ব দেখুন]
★১৭. হযরত কাব আহবার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন যখন সৃষ্টি জগত সৃজন করার ইচ্ছা করলেন তখন মাটিকে সস্প্রসারিত করলেন,আকাশকে উঁচু করলেন এবং আপন নূর হতে এক মুষ্ঠি নূর গ্রহন করলেন। তারপর উক্ত নূরকে নির্দেশ দিলেন‘ তুঁমি মুহাম্মাদ হয়ে যাও।’অতএব সে নূর স্তম্ভের ন্যায় উপরের দিকে উঠতে থাকল এবং মহত্বের পর্দা পর্যন্ত পৈাছে সিজদায় পরে বলল,‘আলহামদুলিল্লাহ্’ তখন আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে ইরশাদ হল,এজন্যই তোঁমাকে সৃষ্টি করেছি আর তোঁমার নাম মুহাম্মাদ রেখেছি। তোঁমার হতেই সৃষ্টি কাজ শুরু করব এবং তোঁমাতেই রিসালাতের ধারা সমাপ্ত করব ।
[সিরাতুল হালাভিয়া ১ম খন্ড,পৃঃ ৫০]
★১৮. ইবনে জাওজী (রহ:) বলেন,
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এঁর বানী : “আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আঁমার নুর মোবারক সৃষ্টি করেছেন আর আঁমার নুর থেকে কুল কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন।
[ইবনে জাওজী : বয়ানুল মীলাদুন্নবী (ﷺ) :২২ পৃ:]
★১৯. হযরত আব্দুল কাদীর জিলানী (রহ:) বলেন,পরম গৌরবান্বিত ও মহিমান্বিত আল্লাহ পাক বলেছেন,আঁমি আঁমার নিঁজ জাতের কুদরতী জামালের নুর হতে মুহাম্মদ (ﷺ)-এঁর রুহ সৃষ্টি করেছি। এর প্রমান হল রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এঁর হাদিস আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন তা হল আঁমার নুর মুবারক।
ইমাম শাতনুফী : বাহজাতুল আসরার : ১২ পৃ:]
★২০. মাওলানা সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানী বলেন-
غرضیکہ حقیقت محمد صلی الله علیه وسلم التحیۃ واسطہ جملہ کمالات عالم عالمیہ ہے یہ ھی معنی لولاک لما خلقت الافلاک اور اول ما خلق اللہ نوری اور انا نبی الانبیاء کے ہیں
মোট কথা হলো সমস্ত কায়েনাত বা আলম হাকীকতে মুহাম্মদী তথা নূরে মুহাম্মদী থেকে সৃষ্ট। যেমন হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, যদি আঁপনি না হতেন তবে আঁমি সকল আসমান-যমীন কিছুই সৃষ্টি করতাম না। রাসূল صلی الله علیه وسلم এর বানী, মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম আঁমার নূর সৃষ্টি করেছেন এবং আরও বলেন আঁমি নবীদেরও নবী।
[আশ শিহাবুস সাক্বিব- পৃ: ৫০।
কুতুবখানায়ে রহিমিয়্যাহ,সাহানপুর, ভারত থেকে প্রকাশিত]
রাসুল (ﷺ)-এঁর নূর সম্পর্কে আমাদের নতুুুন করে বলার অবকাশ রাখে না কী চমৎকার করে বলে দিলেন দেওবন্দের মুহতারাম শায়খুল হাদিস! সবচেয়ে বড় কথা হল হুসাইন আহমদ মাদানী ওহাবীদের গুরু “আহমদ শফীর” পীর সাহেব!ওহাবীরা কি নিজেদের পীরের কথাও মানবে না?
★২১. আশরাফ আলী থানবী নিজেই উক্ত হাদীস শরীফকে তার কিতাব “নশরুত তীব” উল্লেখ করেছেন। তিনি সেখানে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন, তার নাম দিয়েছেন ” নূরে মুহম্মদীর বিবরন”।তাছাড়াও প্রথমে তিনি যা লিখেছেন তা হলো: “আব্দুর রাজ্জাক তাঁর সনদসহ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ননা করেছেন যে, আমি আরজ করলাম : ইয়া রসূল্লাল্লাহ আমার পিতা মাতা আঁপনার জন্য কোরবান হউক, আমাকে এই খবর দিন যে, আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম কোন বস্তুটি সৃষ্টি করেছেন?
জবাবে আশরাফ আলী থানবী তার কিতাবে লিখেছেন
يا جابر ان الله تعالي قد خلق قبل الاشياء نور نبيك
অর্থ: হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ মুবারক করেন, হে জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ! নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সব কিছুর পূর্বে আঁপনার নবীর নূর মুবারক সৃষ্টি করছেন।”
[ নশরুততীব ৫ পৃষ্ঠা]
✌এবার আসুন।একটু গভীর থেকে দেখা যাক; রাসুল (ﷺ)-এঁর সৃষ্টি বিষয়ে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী’র দৃষ্টিভঙ্গি কি রকম??
দেওবন্দের ওলামাগণ অর্থাৎ ওহাবীরা যাকে হাকিমুল উম্মত উপাধিতে ভূষিত করে থাকেন তিনি হলেন মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (মৃতঃ১৩৬২ হি.)।মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব এর অন্যতম সিরাত গ্রন্থ “ নশরুত্তীব ফি যিকরেন্নাবিয়িল হাবিব” এর ২৫ পৃষ্টায় রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি মর্মে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন।এই কিতাবটি বাংলা অনুবাদও করেছে বেহায়া ওহাবীরা, নাম দিয়েছে “যে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা” অনুবাদ করেছেন সাবেক ইমাম ও খতিব লালবাগ শাহী মসজিদ, মাওলানা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম।
✌যাক আশরাফ আলী থানবী অধ্যায়টির নাম দিয়েছেন, “নূরে মোহাম্মদী (ﷺ)-এঁর বর্ণনা”।👏
তারপর মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব হযরত জাবের (রা:) এর হাদিস এভাবে বর্ণনা শুরু করেন-
“প্রথম বর্ণনাঃ জাবের رضي الله عنه হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি আরজ করলাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মাতা পিতা আপনার প্রতি উৎসর্গ।আমাকে বলুন,আল্লাহ তা’আলা সবকিছুর পূর্বে কি সৃষ্টি করেছেন? হুজুর (ﷺ) ফরমালেন, হে জাবের! নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সবকিছুর পূর্বে তাঁর নূরের ফয়েজ হতে তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর ঐ নূর খোদায়ী কুদরতে যেখানে আল্লাহর ইচ্ছা ভ্রমণ করতে থাকে।তখন লওহ,কলম,জান্নাত,জাহান্নাম, ফেরেশতা,আসমান,জমীন,সূর্য,চন্দ্র,দানব,মানব কিছুই ছিল না।অতঃপর যখন আল্লাহপাক বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করলেন,তখন ঐ নূরকে চারভাগে বিভক্ত করেন।একভাগ দ্বারা কলম সৃষ্টি করলেন,দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা লওহ,আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা আরশ সৃষ্টি করেন……….” এরপর সুদীর্ঘ হাদিস রয়েছে।“
[আশরাফ আলী থানবী,নশরুত্তীব ফি যিকরেন্নাবিয়িল হাবিব,২৫ পৃঃ, মারকাযে মা’রিফ হাকিমুল উম্মত, বায়তুশ শরফ,থানাবন,মুজাফফর নগর,ইউপি, ভারত থেকে প্রকাশিত]
✌হযরত জাবের رضي الله عنه এর বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করে তিনি এর ব্যাখ্যায় লিখেন-“এ হাদিস দ্বারা বাস্তবিক পক্ষে সর্বপ্রথম নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)-সৃষ্টি হওয়া প্রমাণিত।কেননা যেসব সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রথম সৃষ্টি বলে হাদিসে বর্ণনায় এসেছে।ওইসব সৃষ্টি ‘নূরে মুহাম্মদী’ থেকে পরে সৃষ্টি হবার বিষয়টি আলোচ্য হাদিস দ্বারা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত।“
[নশরুত্তীব ফি যিকরেন্নাবিয়িল হাবিবঃ ২৫ পৃঃ]
✌শুধু তাই নয়, আশরাফ আলী থানবীকে সর্মথন করে তার বরাত দিয়ে দেওবন্দী ইউসুফ লুদইয়ানবী তার কিতাবে লিখেন:
اپ صلي الله عليه و سلم نے فرمايا-اءے جابر اللہ تعالي نے تمام اشیاء سے پھلے تیرے نبي كا نور اپنے نوسے… اس حديث سے نور محمدي صلي الله عليه و سلم كا اول الخلق هونا باوليت حقيقت ثابت هوا
অর্থ: হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, হে জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ! আল্লাহ পাক সব কিছুর পূর্বে আঁপনার নবীর নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন। এ হাদীস শরীফ দ্বারা হাক্বীক্বী ভাবে প্রমানিত হলো যে , নূরে মুহম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন প্রথম সৃষ্টি !”
[ আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল ৩ খন্ড ৮৩ পৃষ্ঠা]
★২২. বাংলাদেশের দেওবন্দীদের গর্ব শায়খুল হাদিস আজিজুল হক বুখারী শরীফে অনুবাদ করতে গিয়ে লিখেছেন: “নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম আল্লাহ পাক আঁপনার নবীর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন।”
[আজিজুল হক অনুদিত বুখারী শরীফ ৫ম খন্ড, ৩-পৃষ্ঠা]