Logo
শিরোনাম

মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে ১০০ কোটি মানুষ

প্রকাশিত:রবিবার ১৯ জুন ২০২২ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য সংকট নিয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। শনিবার (১৮ জুন) মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় তিনি এ কথা বলেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, লাখ লাখ শিশু ও যুবকসহ বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই চিকিৎসার আওতার বাইরে।

‘বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য-২০২২ : ট্রান্সফরমিং মেন্টাল হেলথ ফর অল’ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় তিনি আরও বলেন, আমরা মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে বসবাস করছি। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য বা পর্যাপ্ত নয়। যে মানসিক স্বাস্থ্যের সংকটে থাকা মানুষরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে বঞ্চনা এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, শুধু হতাশা ও উদ্বেগের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতি বছর আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়। পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে এমন কারণগুলোকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়িয়েছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, এটি ভালো দিক যে, মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব ও ভঙ্গুরতা সম্পর্কে আরও সতর্ক হওয়ার দিকে পরিচালিত করেছে।


সূত্র : এনডিটিভি


আরও খবর



গুরুতর অসুস্থ ফারিয়া, রয়েছেন নিবিড় পর্যবেক্ষণে

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

ঢালিউডের চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া গুরুতর অসুস্থ। বর্তমানে তিনি চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এক ফেসবুক পোস্টে চিত্রনায়িকা নিজেই এমনটি জানান।

ফেসবুক পোস্টে ফারিয়া লিখেছেন, আমি জানি, আপনারা অনেকেই আমার খোঁজখবর, সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য বারবার চেষ্টা করছেন। আপনাদের ভালোবাসা ও উদ্বেগ আমাকে সত্যিই ছুঁয়ে যাচ্ছে। তবে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে, বর্তমানে আমি গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছি এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছি। চিকিৎসার অংশ হিসেবে এখন কিছু সময়ের জন্য বাইরের সঙ্গে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে-ফোন ব্যবহারের ওপরও রয়েছে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা। এই পরিস্থিতিতে কারও সঙ্গে কথা বলতে না পারার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আশা করি, আপনারা বিষয়টি বুঝবেন। আমি বিশ্বাস করি, এই কঠিন সময়টা দ্রুতই পেরিয়ে আবার সুস্থভাবে আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পারব।

ফারিয়া আরও লিখেছেন, গত কয়েক দিন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃসহ ও সংবেদনশীল সময়। মানসিক ও শারীরিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু আপনাদের ভালোবাসা, সমর্থন ও সাহচর্য আমাকে এগিয়ে চলার শক্তি দিয়েছে। আপনাদের সকলের প্রতি-আপামর জনসাধারণের প্রতি আমি হৃদয়ের গভীর থেকে কৃতজ্ঞ।

সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি লিখেছেন, বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের বন্ধুদের, যাঁদের মানবিকতা ও ইতিবাচক ভূমিকাটি এই সময়ে আমার জন্য ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও অনুপ্রেরণাদায়ক। আপনারা পাশে না থাকলে হয়তো এত দ্রুত নিজের ভেতরের সাহস খুঁজে পেতাম না। আমি আজীবন মনে রাখব এই ভালোবাসা ও নিরন্তর সহমর্মিতার কথা। পোস্টের শেষে সবার প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফারিয়া লিখেছেন, খুব শিগগিরই আবার দেখা হবে।

উল্লেখ্য, গত রবিবার সকালে থাইল্যান্ডে যাওয়ার সময় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার আদালত থেকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। মঙ্গলবার সকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। সেদিন কারাগার থেকে বের হয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি এই অভিনেত্রী।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর ভাটারা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন এনামুল হক (৩৫)। চলতি বছরের ৩ মে এনামুল হক ঢাকার সিএমএম আদালতে ২৮৩ জনের বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করেন। মামলার দুই সপ্তাহ পর গ্রেপ্তার করা হয় নুসরাত ফারিয়াকে।


আরও খবর



ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে

প্রকাশিত:বুধবার ২৮ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন, ইরানি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীদের ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথ থেকে সরিয়ে আনতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের মরিসটাউন বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইরান বিষয়ে ভালো কোনও খবর দিতে পারব বলেই আমি আশা করি। দুদিন বাদে আমি ভালো না খারাপ খবর দিতে পারব, সে বিষয়ে নিশ্চিত নই। তবে, ভালোকিছু হবে বলেই আমি আশাবাদী।

ইরানের সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেন ট্রাম্প। অবশ্য ইরানি প্রতিনিধিদলে সঙ্গে বিশেষ মার্কিন কূটনীতিবিদ স্টিভ উইটকফের বৈঠকের বিষয়ে তেমন কোনও তথ্য দেননি তিনি।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমের সঙ্গে তেহরানের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে। এদিকে, ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নিজ মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাওয়ার অধিকার থেকে তারা সরে আসবে না। তবে সমৃদ্ধকরণের মাত্রা হ্রাস এবং উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম মজুদের পরিমাণ কমাতে আপত্তি নেই তেহরানের। তবে এই মাত্রা ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির উল্লিখিত হারের কম হতে পারবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে ইরান।

কয়েক দফা বৈঠকের পর, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তেহরান-ওয়াশিংটন একজায়গায় সম্মত হয়েছে-তারা উভয়েই সামরিক পন্থার বদলে কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। তবে, বেশ কিছু জায়গায় দু পক্ষেরই আপত্তির কারণে সমঝোতায় আসতে পারছেন না মধ্যস্থতাকারীরা। সামরিক আগ্রাসনের ঝুঁকি এড়াতে চাইলে এই মতবিরোধ প্রশমন করতে উভয় পক্ষেরই নমনীয় হতে হবে।

তবে, দু পক্ষের কেউই ছেড়ে কথা বলছেন না। যেমন, এক বক্তব্যে ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক সত্তা বলে অভিহিত করেন ট্রাম্প। স্বাভাবিকভাবেই তার মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি ইরান।

ওই মন্তব্যের জবাবে ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইরানকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছেন ট্রাম্প। তিনি মনে করেন, চাইলেই আমাদের ধামকি দিয়ে, নিষেধাজ্ঞার চাপে রেখে পরে এসে মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো যায়। অথচ তারাই মধ্যপ্রাচ্যে সবরকম অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী।

ইরানের অভিযোগ, তারা পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিবেচনা করলেও, যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বা শিথিলের কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। পারমাণবিক কর্মসূচির জের ধরে ইরানের ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় দেশটির অর্থনীতিতে প্রায় ধস নেমেছে।


আরও খবর



ইতালির নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাস হলো না

প্রকাশিত:সোমবার ০৯ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

পলাশ রহমান :

৮ ও ৯ জুন ২০২৫ তারিখে ইতালিতে অনুষ্ঠিত হয় গণভোট। নাগরিকত্ব আইন এবং শ্রমিক অধিকার সংশোধন বিষয়ক মোট পাঁচটি প্রশ্নে এ ভোট অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় গণভোটটি ব্যর্থ হয়। অনেক বিশ্লেষকের মতো আমিও ধারণা করেছিলাম, এমন একটি উদ্যোগ ইতালির সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় সফল হওয়া অসম্ভব প্রায়।


গণভোটের প্রেক্ষাপট:


গণভোটে পাঁচটি প্রশ্নের মধ্যে একটি ছিলো সবচেয়ে আলোচিত: বিদেশিদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার সময়সীমা ১০ বছর থেকে কমিয়ে ৫ বছর করা হবে কি না।


অন্য চারটি প্রশ্ন ছিলো শ্রম সংক্রান্ত- ২০১৫ সালের “Jobs Act” আইন সংশোধন করা হবে কিনা। 


এগুলো শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ক হলেও, জনসচেতনতা এবং রাজনৈতিক সমর্থনের অভাব বিষয়গুলোকে দুর্বল করে দেয়।


ভোটার উপস্থিতি:


ইতালির আইন অনুযায়ী, গণভোট কার্যকর হতে হলে- ৫০ শতাংশের বেশি ভোটার উপস্থিতি জরুরি। কিন্তু এই ভোটে উপস্থিতি ছিলো মাত্র ২২.৭%। সুতরাং গণভটটি বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়।


এই পরিসংখ্যান শুধুমাত্র ভোট ব্যর্থতার প্রতীক নয়, এটি এক গভীর গণতান্ত্রিক সংকটের প্রতিফলন। রাজনৈতিক উদাসীনতা, মিডিয়ার সীমিত কাভারেজ, ক্ষমতাসীন সরকারের ‘ভোট বর্জন’ কৌশল, সবকিছু মিলে ভোটারদের কাছে এই গণভোটের গুরুত্ব আগেই ফিকে হয়ে গিয়েছিলো।


আমার কাছে এই ব্যর্থতা অপ্রত্যাশিত ছিলো না। ইতালির রাজনীতি ও সমাজ এখনও বহুজাতিক, বহুসাংস্কৃতিক বাস্তবতা গ্রহণে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।

বিশেষ করে নাগরিকত্ব নিয়ে জনমনে এক ধরনের "ভয়" বা "রক্ষণশীলতা" কাজ করে। অনেকেই মনে করেন, সহজে নাগরিকত্ব দিলে “ইতালিয়ান পরিচয়ের” অবমূল্যায়ন হবে। এই মানসিকতা সমাজে গভীরভাবে গেঁথে আছে।


একইভাবে, শ্রম আইন সংস্কারও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর পছন্দের বিষয় ছিলো না। তারা স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আগ্রহী। গণভোট ব্যর্থ হওয়ায় মূলত মেলোনি সরকারের অবস্থান আরো মজবুত হলো।


ইতালির ২০২৫ সালের গণভোট প্রমাণ করে, শুধুমাত্র আইনি প্রক্রিয়া যথেষ্ট নয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা, জনসচেতনতা এবং সমাজের মানসিক প্রস্তুতি ছাড়া বড় কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়। নাগরিকত্ব কিংবা শ্রম অধিকার- উভয়ই মানবিক মূল্যবোধের প্রশ্ন।


আরও খবর



যিলহজ্ব, হজ্ব ও কুরবানী

প্রকাশিত:সোমবার ০৯ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

কুরবানী ইসলামের বিশেষ ইবাদত। এটা আদম আ.-এর যুগ থেকে বিদ্যমান ছিল। সূরা মাইদায় (আয়াত ২৭-৩১) আদম আ.-এর দুসন্তানের কুরবানীর কথা এসেছে। তবে প্রত্যেক নবীর শরীয়তে কুরবানীর পন্থা এক ছিল না। ইসলামী শরীয়তে কুরবানীর যে পদ্ধতি নির্দেশিত হয়েছে তার মূল সূত্র মিল্লাতে ইবরাহীমীতে বিদ্যমান ছিল। কুরআন মজীদ ও সহীহ হাদীস থেকে তা স্পষ্ট জানা যায়। এজন্য কুরবানীকে সুন্নতে ইবরাহীমী নামে অভিহিত করা হয়।

 

ফার্সী, উর্দু ও বাংলা ভাষায় কুরবানী শব্দটি আরবী কুরবান শব্দের স্থলে ব্যবহৃত হয়। কুরবান শব্দটি    

মূলধাতু (যার অর্থ হচ্ছে, নৈকট্য) থেকে নির্গত। তাই আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের জন্য শরীয়তসম্মত পন্থায় বান্দা যে আমল করে তাকে আভিধানিক দিক থেকে তাকে কুরবান বলা যেতে পারে। তবে শরীয়তের পরিভাষায় কুরবান শব্দের মর্ম তা-ই যা উপরে উল্লেখিত হয়েছে।

 

ইসলামী শরীয়তে এই পারিভাষিক অর্থে দু ধরনের কুরবানী রয়েছে।

 

১. যা হজ্বের মওসুমে হজ্ব ও উমরা কারীগণ নির্ধারিত (মক্কা ও মিনায়) স্থানে  আদায় করে থাকেন। এর বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। যথা-কিরান বা তামাত্তু হজ্ব আদায়কারীর ওয়াজিব কুরবানী, ইফরাদ হজ্বকারীর নফল কুরবানী, সঙ্গে করে নিয়ে আসা হাদি (কুরবানীর পশু) দ্বারা কুরবানী, হজ্ব আদায়ে অক্ষম হওয়ার কারণে বা কোনো নিষিদ্ধ কর্মের জরিমানারূপে অপরিহার্য কুরবানী, মানতের কুরবানী কিংবা দশ যিলহজ্বের সাধারণ কুরবানী।

এ কুরবানীর বিধান মৌলিকভাবে সূরা হজ্ব আয়াত ২৭-৩৭, সূরা বাকারা আয়াত ১৯৬, সূরা মাইদা আয়াত ২, ৯৫-৯৭, সূরা ফাতহ আয়াত ২৫-এ এসেছে। আর হাদীস শরীফে তা উল্লেখিত হয়েছে বিস্তারিতভাবে।

 

২. সাধারণ কুরবানী, যা হজ্ব-উমরার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এবং যার স্থানও নির্ধারিত নয়। তবে সময় নির্ধারিত। যে তারিখে হজ্ব আদায়কারীগণ মিনা-মক্কায় কুরবানী করে থাকেন সে তারিখে অর্থাৎ যিলহজ্বের দশ, এগারো, বারো তারিখে এ কুরবানী হয়ে থাকে। পৃথিবীর সকল মুসলিম পরিবারের জন্য; বরং প্রত্যেক আকেল-বালেগ মুসলমানের জন্য এই কুরবানীর বিধান এসেছে। তবে কারো জন্য তা ওয়াজিব, কারো জন্য নফল।

সূরা আনআমের ১৬১-১৬৩ আয়াতে এবং সূরা কাউসারের ২ আয়াতে এই কুরবানী উল্লেখিত হয়েছে। বিস্তারিত বিধি-বিধান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহতে  রয়েছে।

 

৪. সূরা আনআমে এসেছে-

قُلْ اِنَّنِیْ هَدٰىنِیْ رَبِّیْۤ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ ۚ۬ دِیْنًا قِیَمًا مِّلَّةَ اِبْرٰهِیْمَ حَنِیْفًا ۚ وَ مَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ۝۱۶۱ قُلْ اِنَّ صَلَاتِیْ وَ نُسُكِیْ وَ مَحْیَایَ وَ مَمَاتِیْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَۙ۝۱۶۲ لَا شَرِیْكَ لَهٗ ۚ وَ بِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْنَ۝۱۶۳

 আপনি বলে দিন, আমার প্রতিপালক আমাকে পরিচালিত করেছেন সরল পথের দিকে-এক বিশুদ্ধ দ্বীনের দিকে, অর্থাৎ একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের মিল্লাত (তরীকা), আর তিনি মুশরিকদের      অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। আপনি বলুন, নিঃসন্দেহে আমার সালাত, আমার নুসুক, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবকিছুই রাববুল আলামীন আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো শরীক নেই।  আমাকে এই আদেশই করা হয়েছে, সুতরাং আমি হলাম প্রথম আত্মসমর্পণ কারী।

এ আয়াতে নুসূক শব্দটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এটি নাসীকাহ শব্দের বহুবচন, যার অর্থ, আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য আল্লাহর নামে জবাইকৃত পশু। আর কুরবানীর স্থানকে আরবী ভাষায় এবং শরীয়তের পরিভাষায় মানসাক বলা হয়। দুটো শব্দের মূল ধাতু অভিন্ন। আরবী ভাষার যেকোনো অভিধানে এবং লুগাতুল কুরআন, লুগাতুল হাদীস ও লুগাতুল ফিকহের যেকোনো নির্ভরযোগ্য কিতাবে নুসুক শব্দের উপরোক্ত অর্থ পাওয়া যাবে।

 

(দেখুন : আসসিহাহ খ. ৪ পৃ. ১৬১২; লিসানুল আরব খ. ১৪ পৃ. ১২৭-১২৮; তাজুল আরূস খ. ৭ পৃ. ২৮৭; আলমুফরাদাত ফী গারীবিল কুরআন পৃ. ৮০২; আননিহায়া ফী গারীবিল হাদীসি ওয়াল আছার খ. ৫ পৃ. ৪৮; মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার খ. ৪ পৃ.৭১৪-৭১৫; আলমিসবাহুল মুনীর ফাইয়ুমী পৃ. ৩১১; আলমুগরিব, মুতাররিযী খ. ২ পৃ. ৩০০)

 

উপরোক্ত আয়াতের অর্থ পরিষ্কার। আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম আ.কে যে বিশুদ্ধ তাওহীদ ও সরল পথের সন্ধান দিয়েছিলেন তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিও নাযিল করেছেন এবং আদেশ করেছেন যে, বলুন, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সব আল্লাহ তাআলার জন্য।

সূরা বাকারার ১৯৬ নং আয়াতেও নুসূক শব্দ এই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

 

উল্লেখ্য আরবী ভাষায় নুসুক ইবাদত অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এজন্য ইবাদতকারীকে নাসেক ও ইবাদতের পদ্ধতিকে মানসাক বলা হয়। উল্লেখিত আয়াতে নুসুক শব্দের অর্থ যদি ইবাদতও করা হয়, তবুও তাতে কুরবানী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কেননা কুরবানীও একটি ইবাদত। রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার কুরবানীকে একাধিক হাদীসে নুসুক বলেছেন। কুরবানীর পশু যবেহ করার যে দুআ হাদীসে এসেছে তাতেও ওই আয়াত রয়েছে। পূর্ণ হাদীস লক্ষ করুন।

 

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন দুটি দুম্বা যবেহ করেছেন। যবেহর সময় সেগুলোকে কিবলামুখী করে বলেছেন-

اِنِّیْ وَجَّهْتُ وَجْهِیَ لِلَّذِیْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ حَنِیْفًا وَّ مَاۤ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ  اِنَّ صَلَاتِیْ وَ نُسُكِیْ وَ مَحْیَایَ وَ مَمَاتِیْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ  لَا شَرِیْكَ لَهٗ ۚ وَ بِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْنَ ، بِسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبرُ، اَللّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَّأُمَّتِهِ.

-সুনানে আবু দাউদ ৩/৯৫, হাদীস : ২৭৯৫; মুসনাদে আহমদ ৩/৩৭৫ হাদীস : ১৫০২২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৮৯৯

কুরবানীর শুরুতে তাঁর এই আয়াত ও দুআ পড়া থেকে যেমন প্রমাণ হয় কুরবানী খালিছ ইবাদত তেমনি একথাও প্রমাণ হয় যে, উল্লেখিত আয়াতে নুসুক শব্দের অর্থ ঈদুল আযহার কুরবানী অথবা কুরবানী তাতে অবশ্যই শামিল রয়েছে।

 

অন্য আয়াতটি হল সূরা কাউসারের দ্বিতীয় আয়াত। ইরশাদ হয়েছে-

اِنَّاۤ اَعْطَیْنٰكَ الْكَوْثَرَؕ۝۱ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَ انْحَرْؕ۝۲ اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْاَبْتَرُ۠۝۳

এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তাঁর মাধ্যমে গোটা উম্মতকে সালাত (নামায) ও নাহ্র (কুরবানীর) আদেশ দেওয়া হয়েছে। নাহর শব্দের মূল অর্থ উট যবেহ করা, তবে সাধারণ ব্যবহারে যেকোনো পশু যবেহ করাকেই নাহর বলে। আয়াতে এমন যবেহ উদ্দেশ্য, যা  ইবাদত হিসেবে করা হয়। সেটা হচ্ছে হজ্ব ও উমরার কুরবানী এবং ঈদুল আযহার সাধারণ কুরবানী।

 

এ কুরবানীর সময় তিন দিন : যিলহজ্বের দশ, এগারো ও বারো তারিখ। তবে উত্তম হল দশ তারিখ। সাধারণত এ তারিখেই অধিকাংশ কুরবানী হয়ে থাকে। এজন্য দশ যিলহজ্বের ইসলামী নাম ইয়াওমুন নাহর। -সহীহ বুখারী হাদীস ৫৫৫০

আয়াতে নামাযের যে আদেশ এসেছে তাতে ঈদের নামাযও শামিল রয়েছে। উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা যে বিধান দান করেছেন তা পালন করার পদ্ধতি নবীজী  তাঁর সুন্নাহর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। একটি হাদীস লক্ষ করুন।

সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য হাদীসের কিতাবে বহু সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন নামায পরবর্তী খুতবায় বলেছেন, এই দিনের প্রথম কাজ হল সালাত আদায় করা এরপর নহর (কুরবানী) করা। যে সালাত আদায়ের পর নুসুক (কুরবানী) করল তার নুসুক পূর্ণ হল এবং সে মুসলিমদের পথ অনুসরণ করল। আর যে সালাতের আগে যবেহ করল সেটা তার গোশতের প্রয়োজন পূরণ করবে, কিন্তু নুসুক হিসেবে গণ্য হবে না।

 

এই হাদীস বহু সহীহ সনদে বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে উল্লেখিত হয়েছে। কোথাও বিস্তারিতভাবে, কোথাও সংক্ষিপ্তভাবে।

(দেখুন : সহীহ বুখারী, হাদীস, ৯৫১, ৯৫৫, ৯৬৫, ৯৬৮, ৫৫৪৫, ৫৫৪৬; সহীহ মুসলিম হাদীস ১৯৬১, ৪, ৬, ৭; মুসনাদে আহমদ ৪/২৮১-২৮২, ৩০৩; জামে তিরমিযী হাদীস ১৫০৮, সুনানে নাসায়ী হাদীস ৪৩৯৪-৪৩৯৫; সহীহ ইবনে হিববান হাদীস ৫৯০৭, ৫৯১০, ৫৯১১)

 

এই হাদীসে সূরাতুল কাউসারের ব্যাখ্যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল থেকে পাওয়া গেল, যার সারমর্ম এই যে, সালাত আদায় করুন শব্দে ঈদের নামায এবং কুরবানী করুন শব্দে ঈদুল আযহার কুরবানীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একথাও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ঈদুল আযহার কুরবানী হচ্ছে নুসুক, যা সূরা আনআমের ১৬২ নং আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য গোশত ভক্ষণ করা বা গোশতের প্রয়োজন পূরণ করা নয়। এটা একটা ইবাদত। তবে কুরবানী হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহ তাআলা সে পশুর গোশত কুরবানীদাতার জন্য হালাল করেছেন এবং দশ যিলহজ্ব থেকে মোট চার দিন রোযা রাখতে নিষেধ করে যেন তাঁর মেহমানদারী কবুল করার আদেশ দিয়েছেন।

 

ঈদুল আযহা মুসলমানদের আনন্দের দিন। আরাফা দিবসের ব্যাপক মাগফিরাত, আল্লাহর দরবারে কুরবানী পেশ করার সৌভাগ্য এবং আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়া কুরবানী থেকে মেহমানদারী লাভ ওই আনন্দের কারণ। বলাবাহুল্য, এই তাৎপর্য অনুধাবন করার জন্য অন্তরে প্রয়োজন ঈমানের মিষ্টতা এবং খালিক ও মালিকের মহববত ও ভালোবাসা। বস্ত্তবাদী ও যুক্তিপূজারী হৃদয় দুঃখজনকভাবে এ নিয়ামত থেকে শূন্য।

 

সুন্নাহর আলোকে কুরবানী

কুরবানী বিষয়ক সহীহ ও হাসান হাদীস একত্র করা হলেও একটি দীর্ঘ কিতাব তৈরি হতে পারে। এখানে আরো কয়েকটি হাদীস পেশ করছি।

 

১. উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে কুরবানীর ইচ্ছা রাখে সে যেন যিলহজ্বের চাঁদ দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত তার নখ, চুল ইত্যাদি কর্তন না করে।

-সহীহ মুসলিম হাদীস ১৯৭৭/৩৯-৪২; তিরমিযী হাদীস ১৫২৩; আবু দাউদ, হাদীস ২৭৯১; নাসায়ী হাদীস ৪৩৬২-৪৩৬৪, সহীহ ইবনে হিববান হাদীস ৫৮৯৭, ৫৯১৬, ৫৯১৭

 

২.আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসে এসেছে যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দ্বীন বিষয়ে জানতে এসেছিল। ফিরে নিয়ে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন এবং বললেন, আমাকে ইয়াওমুল আযহার আদেশ করা হয়েছে (অর্থাৎ, এ দিবসে কুরবানী করার আদেশ করা হয়েছে।) এ দিবসকে আল্লাহ এ উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন। লোকটি বলল, আমার কাছে যদি শুধু পুত্রের দেওয়া একটি দুধের পশু থাকে আমি কি তা-ই কুরবানী করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, বরং তুমি সেদিন তোমার মাথার চুল কাটবে (মুন্ডাবে বা ছোট করবে) নখ কাটবে, মোচ কাটবে এবং নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর কাছে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে।

-মুসনাদে আহমদ ২/১৬৯; হাদীস ৬৫৭৫; সহীহ ইবনে হিববান হাদীস ৭৭৩, ৫৯১৪; আবু দাউদ হাদীস ২৭৮৯; নাসায়ী হাদীস ৪৩৬৫

 

৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যার সামর্থ্য আছে তবুও সে কুরবানী করল না (অর্থাৎ কুরবানী করার সংকল্প তার নেই) সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে। -মুসনাদে আহমদ ২/৩২১; মুসতাদরাক হাকিম ৪/২৩১, হাদীস ৭৬৩৯

৪. আলী রা. বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন আমরা যেন (কুরবানী পশুর) চোখ ও কান ভালো করে দেখে নিই এবং কান কাটা বা কান ফাড়া ও কানে গোলাকার ছিদ্র করা পশুর দ্বারা কুরবানী না করি। -মুসনাদে আহমদ ১/৮০; ১০৮, ১৪৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা হাদীস ২৯১৪-২৯১৫; আবু দাউদ হাদীস ২৮০৪; নাসায়ী হাদীস ৪৩৭৩-৪৩৭৪

 

৫. বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চার ধরনের পশুর দ্বারা কুরবানী করা যায় না। যে পশুর চোখের জ্যোতি ক্ষতিগ্রস্ত, যে পশু অতি অসুস্থ, যে পশু খোঁড়া আর যে পশু অতি শীর্ণ। -মুয়াত্তা মালিক ২/৪৮২; সহীহ ইবনে হিববান হাদীস ৫৯১৯; নাসায়ী হাদীস ৪৩৭০-৪৩৭১; তিরমিযী হাদীস ১৪৯৭

 

৬. আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানী করার জন্য একটি দুম্বা আনতে বললেন, যার শিং রয়েছে, যার পা কালো, পেটের চামড়া কালো এবং চোখ কালো। এ রকম একটি দুম্বা আনা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আয়েশা, আমাকে ছুরি দাও। আরো বললেন, একটি পাথরে ঘষে ধারালো করে দাও। তিনি ধারালো করে দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুম্বাটি মাটিতে শায়িত করলেন। এরপর বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করলেন এবং বললেন-

 

ইয়া আল্লাহ! মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে, মুহাম্মাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এবং মুহাম্মাদের উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করুন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬৭, সহীহ ইবনে হিববান হাদীস ৫৯১৫; আবু দাউদ হাদীস ২৭৯২

অন্য হাদীসে এসেছে যে, কুরবানীর পশু যবেহ করার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ পড়েছেন-

بِسْمِ اللهِ اَللّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ، اَللّهُمَّ عَنْ مُحَمَّدٍ.

আল্লাহর নামে। ইয়া আল্লাহ! তোমার নিকট থেকে এবং তোমার উদ্দেশ্যে। ইয়া আল্লাহ! মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। -আলমুজামুল কাবীর, তবারানী হাদীস ১১৩২৯; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২১

নবীজীর কথায়-ইয়া আল্লাহ! তোমার নিকট থেকে এবং তোমারই উদ্দেশ্যে চিন্তা-ভাবনা করলে খুব সহজেই বোঝা যায়, কুরবানীর হাকীকত কী। আল্লাহ-প্রদত্ত রিযক এবং আল্লাহর নেয়ামত আমরা লাভ করেছি আর আল্লাহর হুকুমে তা কুরবানী রূপে তাঁর দরবারে পেশ করার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আবার তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মেহমানদারী হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশনা পেয়েছি।

 

অতএব পূর্ণ তাওহীদ ও ইখলাসের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ অনুযায়ী কুরবানী করা কর্তব্য। কুরবানী নামায-রোযার মতো ফরয আমল নয়, তবে অন্যান্য সুন্নতে মুয়াক্কাদার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব আমল। সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত কুরবানী করেছেন, কোনো বছর বাদ দেননি

(আল ইসতিযকার, ইবনে আব্দিল বার ১৫/১৬৩-১৬৪) কখনো কখনো কুরবানী করার জন্য সাহাবীদের মধ্যে কুরবানীর পশু বণ্টন করেছেন। -সহীহ বুখারী হাদীস ৫৫৫৫

 

হযরত আলী রা.কে আদেশ করেছেন যেন (ইন্তেকালের পরেও) তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করা হয়। হযরত আলী রা. প্রতি বছর নিজের কুরবানীর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী করতেন। -মুসনাদে আহমদ হাদীস ৮৪৩, ১২৭৮, আবু দাউদ হাদীস ২৭৮৭

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত উম্মতের মধ্যে এই ইবাদত তাওয়ারুছ ও তাওয়াতুরের সঙ্গে চলমান রয়েছে এবং প্রতিবছর শিয়াররূপে (ইসলামের একটি প্রকাশ্য ও সম্মিলিতভাবে আদায়যোগ্য ইবাদত হিসেবে) তা আদায় করা হয়েছে। 

 


আরও খবর

আগামী ২৫ বছর গরমকালে হজ হবে না

মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫




ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি যে কারণে হয়ে থাকে

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

ডা. মো. তালহা চৌধুরী

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিতে স্নায়ুর ক্ষতি হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ঘটতে পারে, বিশেষ করে যদি দীর্ঘ সময় ধরে তার রক্তে শর্করার মাত্রা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়। এটি অসাড়তা, ঝনঝন, ব্যথা এবং পেশি দুর্বলতাসহ বিভিন্ন উপসর্গের কারণ হতে পারে। প্রায়ই পায়ে শুরু হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে অগ্রসর হতে পারে। ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির চিকিৎসার লক্ষ্যÑ লক্ষণগুলো উপশম করা, স্নায়ুর ক্ষতির অগ্রগতি ধীর করা এবং অন্তর্নিহিত ডায়াবেটিস পরিচালনা করা।

প্রকারভেদ : ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি বিভিন্ন ধরনের। প্রতিটি ধরন স্নায়ুকে প্রভাবিত করে এবং নির্দিষ্ট উপসর্গ সৃষ্টি করে। এ ধরনগুলোর অন্তর্ভুক্ত হলো-

পেরিফেরাল স্নায়ুরোগ : এটি সবচেয়ে সাধারণ ফর্ম এবং এটি হাত-পায়ের স্নায়ুকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে পায়ে।

অটোনমিক নিউরোপ্যাথি : এ ধরনের স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে, যা হজম, হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপের মতো অনিচ্ছাকৃত ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি : ডায়াবেটিক অ্যামিওট্রফি নামে এটি পরিচিত। এটি ঊরু ও নিতম্বকে প্রভাবিত করে এবং পেশি দুর্বলতা ও ব্যথা হতে পারে।

ফোকাল নিউরোপ্যাথি : এতে নির্দিষ্ট স্নায়ু বা স্নায়ুর গোষ্ঠীতে হঠাৎ এবং প্রায়ই গুরুতর দুর্বলতা বা ব্যথা হয়। এটি সাধারণত শরীরের একদিকে প্রভাবিত করে এবং বিভিন্ন অংশে ঘটতে পারে।

উপসর্গ : অসাড়তা এবং টিংলিং, জ্বলন্ত বা শ্যুটিং ব্যথা, পেশির দুর্বলতা, সংবেদন হারানো, অতি সংবেদনশীলতা, ভারসাম্য সমস্যা, হজমের সমস্যা, প্রস্রাবের সমস্যা, যৌন কর্মহীনতা, রক্তচাপের পরিবর্তন, পা, ত্বকের সমস্যা।

আমাদের করণীয় : রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ডায়াবেটিসের ওষুধ, যেগুলো সামঞ্জস্য করতে পারে বা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, এমন ইনসুলিন আপনার চিকিৎসক লিখে দিতে পারে। সুষম খাদ্য খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার অপরিহার্য উপাদান। ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথা উপশমকারী, যেমন- অ্যাসিটামিনোফেন বা ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস। প্রেসক্রিপশনের ওষুধ যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস (যেমন- অ্যামিট্রিপটাইলাইন, ডুলোক্সেটাইন), অ্যান্টিকনভালসেন্ট (যেমন- গ্যাবাপেন্টিন, প্রিগাবালিন) বা ওপিওড ওষুধ (আসক্তির আশঙ্কার কারণে সাবধানে ব্যবহার করা হয়)।

শারীরিক থেরাপি পেশি শক্তি এবং সমন্বয় উন্নত করতে, ব্যথা কমাতে এবং সামগ্রিক গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া সাময়িক চিকিৎসা হিসেবে ওভার-দ্য-কাউন্টার ক্রিম বা প্যাচযুক্ত ক্যাপসাইসিন (মরিচ থেকে প্রাপ্ত) স্থানীয় ব্যথা থেকে সাময়িক উপশম দিতে পারে। ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক্যাল নার্ভ স্টিমুলেশন থেরাপিতে এমন একটি যন্ত্রের ব্যবহার জড়িত যা স্নায়ুর প্রান্তে বৈদ্যুতিক আবেগ সরবরাহ করে, সম্ভাব্য ব্যথা উপশম প্রদান করে। এছাড়া জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। এজন্য নিয়মিত পায়ের যত্ন নিন এবং জটিলতা রোধ করতে পা পরিষ্কার ও ময়েশ্চারাইজ করুন। ধূমপান নিউরোপ্যাথির লক্ষণগুলো আরও খারাপ করতে পারে, জটিলতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বেশি অ্যালকোহল সেবন নিউরোপ্যাথির লক্ষণগুলো বাড়িয়ে তুলতে পারে।

চিকিৎসা : আপনি নির্দিষ্ট যেসব লক্ষণ অনুভব করেন, তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসক অতিরিক্ত চিকিৎসার সুপারিশ করতে পারেন।

নিয়মিত পর্যবেক্ষণ : নিউরোপ্যাথির অগ্রগতি নিরীক্ষণ করতে এবং প্রয়োজন অনুসারে আপনার চিকিৎসা পরিকল্পনা সামঞ্জস্য করতে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত চেক-আপ বজায় রাখা অপরিহার্য।

লেখক : কনসালট্যান্ট, ফ্যামিলি মেডিসিন, ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল

চেম্বার : আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা

হটলাইন : ১০৬৭২, ০৯৬৭৮৮২২৮২২


আরও খবর