মুজাহিদ সরকারঃ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহার 'গ্রাম হবে শহর' তা যেন এই গ্রামে অপরিচিত এক রূপ কথার গল্প। কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা সদর ইউনিয়নের চিপাহাটি গ্রামের ৫ হাজার মানুষের চলাচলের জন্য নাই কোনা রাস্তাঘাট। ইটনা পুরান বাজার থেকে ২০০ মিটারের দূরত্বের অবস্থিত গ্রামের মানুষদের জনদুর্ভোগ দেখার যেন কেউ নেই। বাড়িঘরের ভিতর দিয়ে চলাচলের জন্য যে রাস্তা যা এতটাই সরু যে দুইজন মানুষ আসা-যাওয়া করলে একজনকে দাড়িয়ে থাকতে হয়! মৃত লাশ দাফনের জন্য নিতে হলে পোহাতে হয় সীমাহীন বিরম্বনা।
গত পহেলা জুলাই (শুক্রবার) চিপাহাটি গ্রামের বাসিন্দা মোঃ কাচু মিয়া বয়সজনিত কারণে মৃত্যু বরণ করলে তার লাশবাহী খাটিয়াধারীরা রাস্তা না পেয়ে পুকুর দিয়ে কোমর পানি ভেঙে লাশটি দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়।
স্থানীয় গণমাধ্যম আসল তথ্য অনুসন্ধানে গিয়ে জানতে পারেন, অনেকদিন আগে পুকুরের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু পুকুরে প্রটেকশন ওয়াল না থাকায় রাস্তাটি ভেঙে পুকুরে পড়ে যায় যা এখন অদৃশ্যমান।
স্থানীয় গ্রামবাসী অভিযোগ করছে রাস্তার পাশের পুকুরের জন্য রাস্তাটি নষ্ট হয়ে গেছে এবং রাস্তাটি নতুনভাবে করার জন্য চেষ্টা করেও পুকুর মালিককে রাজি করানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে পুকুর মালিক শেখ আলমগীর(৪৫) অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তাদের রাস্তার জায়গা বাড়ির মালিকরা দখল করে রাখছেন। তিনি আরো বলেন, যায়গা ম্যাপে যদি উনার পুকুরে রাস্তার যায়গা পাওয়া যায় উনি ছেড়ে দিবেন।
সদর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ সারোয়ার আলম জানান, রাস্তাটি করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে গেলও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না কারণ পুকুর মালিক রাস্তা ছাড়তে চাচ্ছেনা।
সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সোহাগ মিয়া র সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, রাস্তাটি করার জন্য আমরা আগ্রহী কিন্তু বাড়ির মালিক এবং পুকুরের মালিক কেউ ছাড় দিতে রাজি না। তিনি আরো জানান, এই রাস্তার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাজেট আনার পরও ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।
ইটনা উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসানের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি জানান আমি নিজেও দুইবার রাস্তাটি দেখার জন্য গিয়েছি বাড়ি মালিক এবং পুকুর মালিকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি তারা আমাদের প্রস্তাবে রাজি হতে পারছে না এই জন্য রাস্তাটা আমরা করতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, পুকুর মালিক এবং বাড়ির মালিক যদি এক হয়ে রাস্তার যায়গাটা ছেড়ে দেন তাহলে আমি নিজ দায়িত্বে নিজ অর্থায়নে হলেও রাস্তাটা করে দিবো।
লাশ দাফনের জনদুর্ভোগের বিষয়ের কথা বলার জন্য ইটনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাফিসা আক্তার এর নিজ কার্যালয়ে গিয়ে না পেয়ে মুঠো ফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেন নাই।