Logo
শিরোনাম

মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা

প্রকাশিত:বুধবার ০৯ মার্চ ২০২২ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

একটি জাতির সংস্কৃতি তার ভাষার বাহনে চড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভাষা হারিয়ে ফেললে প্রজন্ম সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ফলে যেকোনো অশুভ শক্তি আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত করতে পারবে সহজেই। পাকিস্তানি শাসকচক্র এ সত্য ১৯৪৭ সালেই বুঝেছিল। তাই বাংলা ভাষার ওপরই প্রথম আঘাত হানে। আমাদের পূর্বসূরিরা আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করে আত্মপরিচয়কে সমুন্নত রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু বর্তমান চৈতন্য-বিচ্ছিন্ন আমরা নানাভাবে একে লালন করতে ব্যর্থ হচ্ছি।


ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা ভাষা প্রশ্নে নড়েচড়ে উঠি। বাংলা ভাষার মর্যাদা নিয়ে কথা বলি। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে পৃথিবীর তাবৎ ভাষার সংরক্ষণ ও উন্নয়ন নিয়ে আমাদের দায়দায়িত্বের কথাও বলি। টেলিভিশন চ্যানেলসমূহে মুখর-মুখরা জ্ঞানীজন টকশো মুখরিত করেন। চমৎকার শব্দমালায় বক্তৃতার মঞ্চ আমোদিত হয়। পত্রিকার পাতায় নানা শিরোনামে প্রকাশিত হয় নিবন্ধ।

যেমনটি আজ আমি লিখছি। আসলে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিনগুলোর গুরুত্ব এখানেই যে, অন্তত সেই বিশেষ দিন যে চৈতন্য ধারণ করে আছে, সারা বছর তা পাথরচাপা থাকলেও বছরের বিশেষ সময়ে দৃশ্যমান হয়। এতেও যদি নতুন করে প্রাণিত হতে পারে দেশের কিছু সংখ্যক মানুষ এবং নীতিনির্ধারকরা- তাহলেইবা মন্দ কী!

একুশে আমাদের জাতীয় অহঙ্কার হলেও একুশের মূল চেতনা থেকে আমরা ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছি শুধু সংস্কৃতিবোধ ও ইতিহাসচেতনা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে।

ভাষা আন্দোলনের পর প্রায় সত্তর বছর পার হতে চলল, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির যতটুকু বিকাশ ঘটার কথা ছিল তার সিকিভাগও হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপূর্ণ স্বাজাত্যবোধের কারণে ভূতের পায়ে হেঁটে পিছিয়েও গেছে। এমন কথাও চলে আসছে যে, বিশ্বায়নের যুগে বাংলা ভাষাচর্চা অত জরুরি কেন? এখন বিশ্ব-সংস্কৃতির জোয়ারে গা ভাসাব- বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে পড়ে থাকা কেন? ফলে একই দেশে তিন-চার ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা অসম প্রতিযোগিতায় এগোচ্ছে। এই জগাখিচুড়ির মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি।

স্পষ্টতই চারটি শিক্ষাধারা এখন প্রচলিত। মূলধারার বাংলা মাধ্যম স্কুল, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, আলিয়া ধারার মাদ্রাসা শিক্ষা এবং কওমি ধারার মাদ্রাসা শিক্ষা। আগে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলোর পাঠক্রম ও পরিচর্যায় বাংলাচর্চায় ছাত্র-শিক্ষক উভয়ের সচেতনতা যতটা ছিল, এখন আর তেমনটি নেই।

এসএসসি এবং এইচএসসির ফলাফলে অধুনা বিলুপ্ত তারকাচিহ্নিত ফলাফল করার প্রবণতা এবং বর্তমানে এ প্লাস বা স্বর্ণখচিত এ প্লাস পাওয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকগণ শুদ্ধ বানান ও ভাষায় বাংলাচর্চার দিকে মনোযোগ দেয়ার সময় পাচ্ছেন না। তাই দীর্ঘ প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মেধাবী ফল করা ।

ছাত্রছাত্রীরা যখন ভুল বানান আর দুর্বল বাক্য গঠনে উত্তরপত্র লেখে, তখন বোঝা যায় সংকটটি কোথায়। আমার মতো জীবনের ষাট দশক পার হওয়া মানুষ অনেকেই স্মরণ করতে পারবেন শুদ্ধ বানান আর বাক্যে বাংলা, ইংরেজি লেখাটা স্কুলই শিখিয়ে দিত। এখন এসবের ধার ধারে না কেউ। এক পৃষ্ঠা ইংরেজি লেখায় একটি শব্দের বানানে ‘ই’-এর বদলে ‘এ’ হয়ে গেলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়। এমন অকাট মূর্খ ছাত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন শিক্ষক-অভিভাবক।

অন্যদিকে বাংলা বানান পাঁচটা ভুল করলেও অর্ধেকটা মাত্র চোখে পড়ে শিক্ষকের। বাংলা বানানে ভুল আর বাক্য গঠনে সাধু-চলিত মিশে গেলেও তা গর্হিত অপরাধ নয় জেনে শিক্ষার্থী অবিচল থাকে। এ কারণে বর্তমানে শিক্ষকতায় আসা (স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত) তরুণ শিক্ষকদের একটি বড় অংশের বাংলা ভাষা আর বানানের দুর্বলতা তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পল্লবিত হচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্বায়নের অপূর্ণ ব্যাখ্যায় আর চারপাশের ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার দাপটে মূলধারার বাংলা মাধ্যমে পড়া শিক্ষার্থীরা এক ধরনের হতাশা ও বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে না ঘরকা না ঘাটকা দশায় পৌঁছেছে।

ইংরেজি মাধ্যমে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে দ্রুতই। দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি শেখার তেমন অবকাশ নেই এদের পাঠক্রমে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন এই প্রজন্মের অনেকেই। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, এই ধারার শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠক্রম বিন্যাসের দুর্বলতার কারণে যতটা ভালো ইংরেজি বলতে পারছে, ততটা ভালো দখল দেখাতে পারছে না ইংরেজি ভাষা ও গ্রামারে। বিশেষ করে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন এদের মধ্যে দেশাত্মবোধ তৈরি হওয়াটা খুব কঠিন।

আলিয়া ধারার মাদ্রাসা শিক্ষা বাংলা মাধ্যম মূলধারার সঙ্গে অনেকটাই সম্পর্কিত। তাই বাংলা মাধ্যম শিক্ষার অনুরূপ সংকট এই অঞ্চলেও রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সংকটে আছে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এ দেশের মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের এক-তৃতীয়াংশ কওমি মাদ্রাসায় পড়ে।

আরবি, ফারসি ও উর্দু কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা-মাধ্যম। বাংলা ও ইংরেজির সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। দেশ, জাতি ও জাতীয় ঐতিহ্য সম্পর্কে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীর অনেকের ধারণাই খুব অস্পষ্ট। এরা নিজেদের এবং দেশ ও সমাজের বোঝায় পরিণত হচ্ছে। একটি জাতির সংস্কৃতি তার ভাষার বাহনে চড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভাষা হারিয়ে ফেললে প্রজন্ম সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ফলে যেকোনো অশুভ শক্তি আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত করতে পারবে সহজেই। পাকিস্তানি শাসকচক্র এ সত্য ১৯৪৭ সালেই বুঝেছিল। তাই বাংলা ভাষার ওপরই প্রথম আঘাত হানে। আমাদের পূর্বসূরিরা আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করে আত্মপরিচয়কে সমুন্নত রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু বর্তমান চৈতন্য-বিচ্ছিন্ন আমরা নানাভাবে একে লালন করতে ব্যর্থ হচ্ছি। এক ধরনের উগ্র আধুনিকতা ও অপূর্ণ বৈশ্বিকভাবনা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাজার অর্থনীতির বিকৃত ধারণা থেকে আমরা বাঙালি সংস্কৃতির বিকলাঙ্গ অবয়ব উপস্থাপন করছি।

আমাদের চারপাশে অর্থবিত্তে আভিজাত্য খোঁজা অনেক পরিবারকেই পাওয়া যাবে, যাদের বাংলা ভালো বলতে না পারা বা লিখতে না পারার মধ্যে এক ধরনের অহমিকার ছোঁয়া থাকে। বেশ ক’বছর আগে এক টেলিভিশন চ্যানেল রাজধানীর কোনো এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিল। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে এদের যে কোনো ধারণা নেই তা ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছিল। টুয়েন্টি সিক্সের বাংলা কী?- এমন প্রশ্নের উত্তরে অসহায় হয়ে পড়ল শিক্ষার্থী।

আমার এক ছাত্রীর কথা মনে করতে পারি। বাঙালি ঘরের এই মেয়েটি দেশ-বিদেশে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেছে। তখন দেশের সেরা এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। এই সুবাদে আমার কাছে কয়েকটি রেফারেন্স বইয়ের নাম জানতে চাইলে আমি ইংরেজি ভাষায় লেখা কয়েকটি বইয়ের সঙ্গে একটি বাংলা ভাষায় লেখা বইও দেখার জন্য বললাম। আমি চমকে উঠলাম ওর অসহায় দৃষ্টি দেখে। আমাকে বিস্মিত করে বলল, ও বাংলা পড়তে পারে না। অর্থাৎ এতগুলো বসন্ত পেরোনোর পরও ওকে বাংলা পড়া শিখতে হয়নি।

আমার শিক্ষক প্রয়াত খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. এ আর মল্লিক ক্লাসে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে একটি গল্প বলেছিলেন। প্রতি ফেব্রুয়ারিতে এই গল্পটি নতুন করে মনে পড়ে আমার। মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকে স্যার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ছিলেন। সে সময়ে তাদের বাসায় এক বিহারি ভিক্ষুক আসতেন। ভিক্ষা চাইতেন তার প্রতিদিনের ভাষা উর্দুতে। মুক্তিযুদ্ধের পর একদিন স্যারের দরজায় সেই বৃদ্ধ ভিখারি। যথারীতি উর্দুতেই ভিক্ষা চাইছেন। আমার মুক্তিযোদ্ধা স্যারের কাছে এবার বিসদৃশ লাগল। তিনি বললেন, বাংলায় ভিক্ষা না চাইলে তিনি ভিক্ষা দেবেন না। এবার অসহায় হয়ে পড়লেন ভিক্ষুক। উপসংহার টানলেন স্যার। বললেন, ও বেচারা হয়ত ঢাকায় কাটিয়ে দিয়েছে জীবনের সবচেয়ে বড় সময়। কিন্তু জীবনযাত্রার কোনো পর্যায়েই তার বাংলা শেখার দায় পড়েনি। ভাঙা আধাভাঙা উর্দুতে তাকে সাহায্য করেই আমরা গৌরববোধ করেছি। অর্থাৎ আমরা আমাদের আত্মমর্যাদাবোধকেই যেন খুঁজে পাইনি।

সামাজিক জীব হিসেবে বসবাস করতে হয় বলে নিজের নেয়া শপথ নিজেকেই ভাঙতে হয় বারবার। বাঙালি পরিবারের বিয়ে বা উৎসব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে ইংরেজি ভাষায় দাওয়াতপত্র পেলে তেমন অনুষ্ঠানে যাব না ভাবলেও যেতে হয়। এই প্রবণতা ইদানীং অনেক বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমলা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারও ইংরেজিতে দাওয়াতপত্র লিখে আত্মপ্রসাদ লাভ করে।

আমাদের সমাজ বাস্তবতায় বিয়ে বা এ জাতীয় অনুষ্ঠানে শিক্ষিত-স্বল্পশিক্ষিত নানা স্তরের আত্মীয়কে দাওয়াত দিতে হয়। একসময় দেখতাম ডাকঘরে অশিক্ষিত মানুষের চিঠি লিখে দেয়ার জন্য পয়সার বিনিময়ে লেখক থাকত। এখন বোধ হয় বিয়ের দাওয়াতপত্র পড়ে দেয়ার জন্য আরেকটি পেশা সৃষ্টি হতে পারে।

প্রজন্মকে স্বাজাত্যবোধ থেকে দূরে সরাতে আমাদের টিভি চ্যানেল আর বেসরকারি রেডিও কম কসরত করছে না। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তৈরি অনেক অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ‘প্রিয় দর্শক’-এর বদলে ‘হাই ভিউয়ার্স’ বলে হাত-পা ছুড়ে মাঝে মধ্যে অদ্ভুত উচ্চারণে ইংরেজি শব্দ বলে এক কিম্ভূত খিচুড়ি বানাতে থাকে। এসব অনুষ্ঠানের প্রভাবও কম নয়। ক্যাম্পাসে বা পথেঘাটে তরুণ-তরুণীর শব্দচয়ন ও অঙ্গভঙ্গি দেখলে এর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

এ সকল অসংগতি দেখলে বোঝা যায়, একুশের চেতনা আমাদের চৈতন্যোদয় ঘটাতে পারেনি এখনও। একুশের চেতনা অন্য ভাষাকে বৈরী জ্ঞান করা নয়- নিজভাষা ও সংস্কৃতিকে সম্মান দেয়া। আত্মগৌরববোধ ছাড়া প্রজন্ম দেশপ্রেমিক হতে পারে না। নিজ দেশ নিয়ে বড় স্বপ্ন বুনতে পারে না। কিন্তু আমার ভয় হয় আমাদের চেতনার বিকলাঙ্গ দশা দেখে।

প্রতি ফেব্রুয়ারিতেই আমি নিবন্ধ লিখে হারিয়ে যাওয়া প্রভাতফেরিকে ফিরিয়ে আনার জন্য হা হুতাশ করি। কিন্তু পাত্তা পাই না কোনো অঞ্চল থেকেই। আমার মনে হয়, প্রভাতফেরি ছিনতাই হওয়ার পর থেকেই গুবলেট হয়ে গেছে একুশের চেতনা। প্রভাতফেরি শব্দটি শুধু একুশের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে। বাঙালি সংস্কৃতির এ যেন প্রতীকী শব্দ। বাঙালি সংস্কৃতিতে দিনের হিসাব প্রত্যুষ থেকে সন্ধ্যা। তাই একুশের প্রথম প্রহর প্রত্যুষে নগ্ন পায়ে একুশের গানের সুর-মূর্ছনায় শহিদ মিনারে যাওয়ার আলাদা রোমাঞ্চ ছিল। কিন্তু একপর্যায়ে সামরিক ও সামরিক মদতপুষ্ট শাসকরা নিজ নিরাপত্তার প্রশ্নে পাশ্চাত্যের হিসেবে মধ্যরাতে একুশের প্রহর গুনতে শুরু করে। মুখরিত করে শহিদ মিনার। আমাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ‘তথাস্তু’ বলে মেনে নেয়। এভাবে নতুন প্রজন্ম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে প্রভাতফেরি থেকে। ফলে একুশের চেতনায় যে স্বাতন্ত্র্য আছে তা এদের পক্ষে অনুভব করা কঠিন হয়ে পড়ে।

আমি বিশ্বাস করি, আমাদের রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঞ্চলের সকল দেশপ্রেমিক মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধভাবে একুশের চেতনাকে ফিরিয়ে এনে জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির নীতি প্রণয়ন করেন তবে নতুন প্রজন্মের প্রতি দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলা সম্ভব হবে। দেশাত্মবোধহীন জাতি কি দেশের সার্বিক উন্নয়নের দায়িত্ব নিতে পারে?

লেখক: অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়



আরও খবর



ঈদে বাড়তি ভাড়া চেয়ে হয়রানি করলেই ব্যবস্থা

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪ |

Image

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ঈদে যাত্রীদের কাছ থেকে গণপরিবহন বা ট্রেনে বাড়তি ভাড়া আদায় করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই সঙ্গে ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাজারবাগে পুলিশ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আজান, কিরাত ও রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীর মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

এসময় কেউ যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করলে, প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে অথবা সংশ্লিষ্ট থানায় ফোন করে সহায়তা নেওয়ার আহ্বান জানান আইজিপি।

তিনি বলেন, যাত্রী সাধারণকে অনুরোধ করবো আপনারা কোনো ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করবেন না। আমরা কিছুদিন আগেও সমন্বয় সভা করেছি। ১ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশের সব ইউনিটকে নিয়ে একটি সমন্বয় সভা হবে। এরই মধ্যে রেল মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে।

এসব সভার মাধ্যমে আমরা সমন্বয়ের কাজটি সেরে নিচ্ছি। ঢাকাসহ বিভিন্ন রেঞ্জ ডিআইজিদের আমরা ব্রিফ করবো। ডিএমপি কমিশনার ঢাকা মহানগরীর সমন্বয় করবেন। ঈদ যাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে নৌ-পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ তাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশাপাশি জেলা পুলিশও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আইজিপি আরও বলেন, এবার ঈদের ছুটি একটু লম্বা হবে। এজন্য পর্যটন স্থানগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় হতে পারে। তাই সার্বিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আমরা আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।

তিনি আরও বলেন, সরকার বহুমুখী উন্নয়ন করছে, রাস্তা অনেক প্রস্থ হয়েছে। উদাহরণে বলা যায়, চন্দ্রায় মাত্র একটি সড়ক ছিল। এখন রাস্তাও অনেক প্রস্থ, আবার ডাইভারশনও হয়েছে। সারাদেশের সড়ক ব্যবস্থাই অনেক উন্নত হয়েছে। এসব কারণে আমি আশা করছি, ঈদে আমরা যাত্রী সাধারণকে নিরাপদে, ও নির্বিঘ্নে তাদের গন্তব্যে পৌছাতে পারবো। সেই সঙ্গে যথা সময় সবার ঈদযাত্রা সমাপ্ত হবে বলে আশা করছি।

আইজিপি মামুন আরও বলেন, অন্যান্য বছর যেভাবে আমরা সফলভাবে যাত্রীদের নিরাপদে গমনে সচেষ্ট ছিলাম, এবারও যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করবো। প্রয়োজনে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের ছুটি বাদ দিয়ে হলেও ঈদযাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতে কাজ করবেন।

 


আরও খবর

তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা

বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪




নিত্যপণ্যের দামে দিশেহারা ভোক্তা

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে রোজাকে কেন্দ্র করে দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। বিভিন্ন সময় ভোক্তা অধিদপ্তর নানা উদ্যোগ নিলেও তেমন কোনো কাজে আসছে না।

রোজার মাসকে কেন্দ্র করে বাজারে প্রতিটি নিত্যপণ্যের নিজেদের মতো বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। এতে করে সাধারণ মানুষ নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না। দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে কিছু কিনতে গিয়েও থমকে দাঁড়ান মধ্যবিত্তরা।

তাছাড়া গত বছর রোজায় সাধারণ ক্রেতা যে দামে পণ্য কিনেছে। চালতি বছরের রমজানে তা বেড়েছে অনেক। ফলে খরচও বেড়েছে গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতিটি জিনিসের দাম দফায় দফায় প্রতিযোগিতামূলকভাবে বাড়ছে।

বাড়তি খরচের কথা চিন্তা করে সকল ক্রেতাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, রমজান আসলে আমাদের দেশে সকল জিনিসের দাম বেড়ে যায়। জিনিসের দাম বাড়লেও কারো আয় বাড়েনি। ফলে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্যপণ্যের দাম অস্থির হয়ে আছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগ যখন কাজে আসছে না। কারণ অতি মুনাফাখোর জোট বেঁধে সিন্ডিকেট করেছে। প্রতিটা পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত কোন না কোনোভাবে বেড়েই চলেছে। ফলে স্বস্তির দেখা যাচ্ছে না ক্রেতারা।

রোজাকে কেন্দ্র করে দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর কঠালবাগান বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, রোজাকে সামনে রেখে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। দাম বাড়লেও মান বাড়েনি। আমি গত সপ্তাহে যে-সকল দামে মালামাল কিনেছি আজ তা অনেকটাই বেড়েছে।

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, সব জিনিসের দাম বেড়েছে কথাটি ঠিক নয়। তবে আমাদের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুর দামই বাড়তি অবস্থায় রয়েছে। এতে করে ক্রেতা কমেছে আগের তুলনায় অনেক। আবার অনেকে দাম বেশির কারণে প্রয়োজনের তুলনায় কম জিনিস কিনেছে।

একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী মাহদীউজ্জামান কাঠাবাগান কাঁচাবাজারে আসেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, গত কিছু দিন আগে যে দাম ছিল আজ তা বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে। প্রতিদিনই কোন না কোন পণ্যের দাম বাড়ছে।

আরিফ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, রমজানে অন্য মাসের তুলনায় বেশি পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। কিন্তু প্রতিটি পণ্যের দামের বৃদ্ধির ফলে তা সম্ভব হবে না। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই দাম রাড়ছে।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখী ৮০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায়, শসা ৭০ টাকা, খিরাই ৬০ টাকা, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৩০  থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা এবং সজনে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস, বাঁধা কপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস, ব্রুকলি ৩০ টাকা পিস, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং গাজর ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  

এসব বাজারে লেবুর হালি ২০ থেকে ৬০ টাকা, ধনেপাতা কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।

লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ টাকা, মূলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৫০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৫০০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১০৫০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার ব্রয়লার মুরগি থেকে ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া সোনালি ৩২০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৪০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

মাছ বাজারে দেখা যায়, ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকা, এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায়, মাগুর মাছ ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পাঙাস ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৯০০ টাকায়, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, পোয়া মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়,  তেলাপিয়া ২২০ টাকায়,  কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৬০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রুপচাঁদা ১২০০ টাকা, বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, দেশি কই ১০০০ টাকা, মেনি মাছ ৭০০ টাকা, সোল মাছ ৬০০ থেকে ১০০০টাকা, বেলে মাছ ৭০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন  বলেন, ব্যবসায়ীরা রমজান মাসকে সুযোগ হিসাবে নিয়েছে। তাদের এক মাস ব্যবসা করে সারা বছরের লাভ করতে চায়। ব্যবসায়ীরা গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে দাম বাড়ার পেছনে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কথা বলছে। অথচ এসবই হচ্ছে ভিত্তিহীন অজুহাত। তারা অতি মুনাফা লাভের মনোভাব থেকেই দাম বৃদ্ধি করছে।

কিছুদিন আগে এস আলমের চিনি কারখানায় আগুন লাগার পরপরই চিনির দামটি বেড়ে গেছে। সেখানে যে চিনি নষ্ট হয়েছে তার রিফাইন যোগ্য চিনি ছিল না। কিন্তু তারপরেও দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা যখন অজুহাত পায় তখনই দাম বাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে এটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

ক্যাবের সহ-সভাপতি বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসার সাথে সাথে দেশের পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। অথচ অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ না আসার সাথে দাম বৃদ্ধির কোন নিয়ম নেই। ব্যবসার নিয়ম হচ্ছে পণ্য যদি বেশি দামি কেনা হয়, তাহলে বেশি দামে বিক্রি করবে। আর যদি কম দামে কেনা হয়, তাহলে কম দামে বিক্রি করতে হবে। এসবের পেছনে ব্যবসায়ীরা মূল দায়ী। আমাদের দেশীয় পণ্যের সাথে ডলারের কোন সম্পর্ক নেই। অথচ এই সকল জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, এরজন্য ব্যবসায়ীর সাথে সাথে যারা তদারকি করছেন তাদের গাফিলতি রয়েছে। সঠিক আইনের প্রয়োগ করলে তখনই এই অনিয়ম বন্ধ হওয়া সম্ভব। বিভিন্ন সময় অভিযান হলে সব জায়গায় হচ্ছে না। ফলে এর প্রভাব তেমন একটা নেই। মন্ত্রিপরিষদের বিরাট একটি অংশ ব্যবসায়ী শ্রেণি হওয়ার কারণে এসব দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বা দাম বাড়ার পরও কমছে না বলে মন্তব্য করেন ক্যাবের এই সহ-সভাপতি।


আরও খবর

গরমে ফ্যান এসির দাম বাড়ছে

মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ফের নয়া রেকর্ড গড়ল সোনা

সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪




প্রচণ্ড গরমে বাড়ছে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি

প্রকাশিত:রবিবার ২১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে। এ কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর এই চার বিভাগে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় এ তাপপ্রবাহ আরও বাড়তে পারে। এ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। হিট স্টোকে আক্রান্তদের সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না দিতে পারলে মৃত্যু হয়। শিশু ও বৃদ্ধরা হিট স্ট্রোকে বেশি মারা যান। পাশাপাশি তরুণদের মৃত্যু ভয় থাকে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মাথা ঘুরতে পারে, জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে ছায়ায় নিতে হবে। শরীর ঠান্ডা করতে বাতাস দিতে হবে। পাশাপাশি মাথায় পানি দিতে পারলে ভালো। যদি অবস্থা খারাপ থাকে তাহলে দ্রুত কাছের হাসপাতালে নিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা হয়, তত ভালো। দেরি করলে অঙ্গহানি হতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএসএমএমইউয়ে ইমার্জেন্সি বিভাগে ১৫ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে আটজন পুরুষ, সাতজন মহিলা। তাদের একজন স্ট্রোকের রোগী থাকলেও হিট স্ট্রোকের লক্ষণ নিয়ে কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়নি।


আরও খবর

তীব্র তাপপ্রবাহে সুস্থ থাকার উপায়

মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪




থামানো যাচ্ছে না কিশোর গ্যাং

প্রকাশিত:সোমবার ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

বাংলাদেশ পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী নানা উদ্যোগ নিলেও কিশোর গ্যাং এর তৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বড় শহরগুলোর গণ্ডি ছড়িয়ে এ সমস্যা এখন বিস্তৃত হচ্ছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও। এমনকি অনেক জায়গায় একাধিক কিশোর গ্যাং একে অন্যের সাথে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে।

গত শুক্রবার চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হওয়া চিকিৎসক কোরবান আলী বুধবার মারা গেছেন। ছেলেকে ওই গ্যাংয়ের হামলা থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মি. আলী।

পুলিশ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছে মূলত কিছু রাজনৈতিক নেতার পৃষ্ঠপোষকতাই কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য দায়ী। মাদক বাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্তৃত্ব তৈরির জন্য এলাকার শিশু কিশোরদের নিয়ে গ্যাং তৈরি করে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেন ওই ধরনের নেতারা।

পুলিশ প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। বছরে ৪/৫শ আটক হচ্ছে। মামলা হচ্ছে। সংশোধনাগারে দেয়া হচ্ছে অনেককে। কিন্তু শিশু কিশোরদের নিয়ে এ ধরনের কিশোর গ্যাং তারপরও বন্ধ হচ্ছে না মূলত কথিত কিছু বড় ভাই ও কিছু পলিটিক্যাল নেতার কারণে, বলছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র ফারুক হোসেন। অন্যদিকে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলছেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও সমাজ ব্যবস্থায় ঘাটতির কারণেই কিশোর অপরাধ বা গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ চট্টগ্রামেই সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন কিশোর গ্যাংগুলোর পেছনে যাদের মদদ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দেশে এটি (কিশোর গ্যাং) নতুন সমস্যা, এটিকে দূরীভূত করার জন্য সরকার কাজ করছে। কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে যেই থাকুক বা সে যে দলেরই হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং হচ্ছে, বলছিলেন তিনি।

এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও আলোচনায় এসেছে কিশোর গ্যাং ইস্যুটি এবং এ নিয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, কিশোর অপরাধীদের সংশোধনে প্রয়োজনীয়উদ্যোগ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন সরকার প্রধান

কিশোর গ্যাংয়ে সংখ্যা কত? কারা জড়িত হচ্ছে?


বাংলাদেশ রাজধানী ঢাকার উত্তরায় ২০১৭ সালে স্কুল শিক্ষার্থী আদনান খুনের ঘটনায় প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিলো কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তখন বেশ কয়েকজন কিশোরকে আটক করেছিলো র‍্যাব যারা একই গ্রুপের সদস্য ছিল।

সে সময় আলোচনায় এসেছিলো উত্তরা ডিসকো বয়েজ ও বিগ বস কিশোর গ্যাং নামের দুটো গ্রুপ।

কিন্তু এরপর থেকে নিয়মিতই ঢাকাসহ নানা জায়গায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা নিয়ে খবরাখবর প্রকাশ হচ্ছিলো গণমাধ্যমে।

২০১৯ সালে বরগুনায় রিফাত শরীফ নামের এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার পর আলোচনায় আসে 'বন্ড ০০৭' নামের একটি গ্রুপ।

ঢাকার উত্তরার ১২ নম্বরে সেক্টরে বসবাস করেন নাহিদ হোসেন। উত্তরা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা নিয়ে প্রায়শই খবর আসে গণমাধ্যমে।

মি. হোসেন বলছেন, এরা হুট করে এসে একেকটা ঘটনা ঘটায়। আর তাতে তাৎক্ষণিক কারও ক্ষতি হয়ে যায়। যেমন কারও সাথে এদের আরও একটু কথা কাটাকাটি হলো, কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা যাবে ৩০/৪০ জন এসে হামলা শুরু করলো

এলাকায় বস্তিগুলোতে থাকে এমন কিশোরদের পাশাপাশি পড়ালেখা করে এমন কিশোরদেরও দেখতে পাচ্ছি এসব গ্রুপগুলোতে, বলছিলেন মি. হোসেন।

কিন্তু ঢাকাসহ সারাদেশে এমন কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা কত বা কত কিশোর তরুণ এ ধরনের অপরাধে জড়িত তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া কঠিন।

তবে ২০২২ সালে পুলিশের এক প্রতিবেদনে সারাদেশে ১৭৩টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় থাকার তথ্য দেয়া হয়েছিলো। এতে বলা হয়েছিলো ঢাকাতেই ৬৬টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় আছে। আর এসব দলগুলোতে ১০ থেকে ৪০/৫০ জন পর্যন্ত সদস্য আছে।

গাংচিল, ম্যাক্স পলু, বাট্টু বাহিনী, পটেটো, কবজি কাটা গ্রুপ, লাল বাহিনী- এমন সব বাহারি নামের কিশোর গ্যাংগুলোর সদস্যরা ছিনতাই, নারীদের উত্ত্যক্ত করা, জমি দখলে সহায়তাসহ নানা ধরনের অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ার তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে।

তবে চলতি বছর জানুয়ারিতে ঢাকার মধুবাগে ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে দু'দল কিশোরের সংঘর্ষে একজন নিহত হবার পর র‍্যাব জানায় যে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে ১ হাজার ১২৬ জনকে শুধুই র‍্যাবই আটক করেছে কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে। এর মধ্যে ২০২৩ সালেই আটক হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচিও হাতে নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ ও র‍্যাব।

কিন্তু তারপরও কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েই চলেছে কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিএমপির মুখপাত্র ফারুক হোসেন বলছেন, কিছু রাজনৈতিক নেতা এ জন্য দায়ী।

তারাই কিশোর তরুণদের বিপথগামী করছে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের জন্য। আমরা রাজনৈতিক নেতা বিশেষ করে কাউন্সিলর ও অন্যদের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় করছি এবং উৎসাহিত করছি যাতে কিশোর গ্যাংকে কেউ প্রশ্রয় না দেয়, বলছিলেন তিনি।

আবার অনেক মামলায় কিশোর গ্যাংয়ের বড় ভাই বা মদদদাতা হিসেবে অনুসন্ধানে যাদের নাম উঠে এসেছে তাদেরকেও আসামি করা হয়েছে, বলছিলেন তিনি।

এর আগে, পুলিশের প্রতিবেদনেও ঢাকার একুশ জন কাউন্সিলের নাম উঠে এসেছিলো কিশোর গ্যাংয়ের প্রশ্রয়দাতা হিসেবে। যদিও তাদের কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

পুলিশ বলছে মূলত পাড়া মহল্লার কিশোরদের দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করার যে প্রবণতা সেটিকেই ব্যবহার করে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি এসব গ্যাং তৈরি করেন।

১৫/১৬ বছর বা কাছাকাছি বয়সের কিশোরদের মধ্যে একটা হিরোইজম কাজ করে। সেটাকেই ব্যবহার করে কিছু ব্যক্তি তাদের ভুল পথে ঠেলে দেয়। এভাবেই তারা জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধমূলক কার্যক্রমে, বলছিলেন মি. হোসেন।

যদিও সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলছেন কিশোর অপরাধীরা যেসব অপরাধ করে এবং এর মাধ্যমে যে অর্থ সংগ্রহ হয় তার ভাগবাটোয়ারা অনেক দূর পর্যন্ত যায় এবং এমনকি যাদের প্রতিরোধ করার কথা তারাও কেউ কেউ সুবিধা নিয়ে এসব কিশোর গ্যাংকে সুযোগ করে দেয়।

থামানো যাচ্ছে না কেন


তৌহিদুল হক বলছেন কিশোর অপরাধের ক্ষেত্রে 
বাংলাদেশ যে ব্যবস্থা নেয়া হয় সেটি একপক্ষীয় এবং সংশোধনাগারগুলোও মানসম্মত নয়, অর্থাৎ কিশোর অপরাধীদের সংশোধন করে ভালো নাগরিক করার জন্য সক্ষম নয়।

এখানে যে অপরাধ করছে শুধু তাকেই ধরা হচ্ছে। যারা কিশোরদের সংঘবদ্ধ করে অপরাধ করাচ্ছে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। অর্থাৎ মদদদাতা বড় ভাই বা রাজনৈতিক নেতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, বলছিলেন তিনি।

যদিও পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন বলছেন যে এর আগের মামলাগুলোর তদন্ত পর্যায়ে মদদদাতা হিসেবে যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের মামলার আসামি করা হয়েছে।

তবে পুলিশ ও সমাজ অপরাধ গবেষকরা সবসময়ই বলে আসছেন যে পরিবারের তরুণ সদস্যদের সঠিক নির্দেশনা দেয়ার ক্ষেত্রে সব পিতা মাতা কিংবা পরিবার সবসময় ভূমিকা রাখতে পারছে না।

বিশেষ করে দরিদ্র অর্থাৎ প্রান্তিক পরিবারগুলোতে সঠিক অভিভাবকত্ব দেখা যায় না বলে সেসব পরিবারের কিশোররা সহজে ভুল পথে যায়, এমন অনেক উদাহরণের কথা জানাচ্ছেন তারা।

অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকের সাথে সন্তানের দূরত্ব, সঠিক নির্দেশনা বা সঠিক প্যারেন্টিং না থাকার সুযোগে অপরাধের সাথে কিশোর বয়সেই অনেকের পরিচয় ঘটে যায়। আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ে ধরা পড়লে যেসব সংশোধনাগারে পাঠানো হয় সেগুলো খুবই সেকেলে। পাশাপাশি সামাজিক অনুশাসন একেবারেই ঢিলেঢালা পর্যায়ে চলে যাওয়ার কারণেই কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তার থামানো যাচ্ছে না,

ফারুক হোসেন বলে শুধু কয়েকজনকে শাস্তি দিয়ে বা আইনের প্রয়োগ করেই কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি বন্ধ করা অসম্ভব, বরং এজন্য সবার সহযোগিতা জরুরি।

সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কিশোর তরুণরা যেন ভুল পথে না যায় সেজন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব পরিবার থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি সবার। পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা করছে সবাইকে মোটিভেট করার যাতে অল্প বয়সী বাচ্চারা ব্যবহৃত না হয়, বলছিলেন তিনি।

ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকার বাইরেও


গত ত্রিশে মার্চ দক্ষিণাঞ্চলীয় পিরোজপুর জেলায় তরুণীকে জিম্মি করে টাকা আদায়ের ঘটনায় ১৮ জনকে আটক করে সেখানকার পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, আটককৃতরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, যাদের বয়স ১৫ থেকে সতের বছরের মধ্যে।

ওই সংবাদ সম্মেলনে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত হাসান খান জানান পিরোজপুর শহর ও এর আশেপাশে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েই চলেছে।

এর আগে, পনেরই মার্চ মাদারীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয় এবং পুলিশ দুজনকে আটক করতে সক্ষম হয়।

ভোলার দৌলতখান উপজেলায় গত ফেব্রুয়ারিতে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হন এক যুবক।  খেলার সময় কথা কাটাকাটির জের ধরে এ ঘটনা ঘটে।

ওই মাসেই জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ে ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

ত্রিশে জানুয়ারি কুমিল্লায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের অস্ত্রের মহড়া ও গুলি করার ঘটনা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো।

গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের অনেক ঘটনায় উঠে এসেছে কিশোর গ্যাংয়ের নাম।


আরও খবর

তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা

বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪




ঈদের পর রাজধানীতে আর রঙচটা বাস নয়

প্রকাশিত:বুধবার ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪ |

Image

আগামী ৩১ মের পর রাজধানীতে কোনো রঙ উঠে যাওয়া বা রঙচটা বাস চলাচল করতে পারবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ ভবনে ফিটনেসবিহীন, বায়ু দূষণকারী ও রুটপারমিটবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধকরণসংক্রান্ত সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ ছাড়া সভায় ঢাকার সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিকে নিয়ে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। তবে বাস মালিকরা কথা দিয়েছেন, এপ্রিলের মধ্যে ২০ শতাংশ বাস রঙ করা হবে। বাকিটা ধাপে ধাপে সম্পন্ন করবেন।

সভায় বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার পরিবহন মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ঢাকার রাস্তায় আগামী ৩১ মের পর কোনো ধরনের রঙ ওঠা বাস চলতে দেওয়া হবে না। আমরা এর জন্য অভিযানে বের হবো। আশা করবো, মালিকরা নিজ উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন বাস উপহার দেবেন। আমরা পুরো বিষয়টি মনিটর করবো।

সভায় বিআরটিএ থেকে জানানো হয়- রাজধানীতে ৩৯টি কোম্পানির ৫২৮টি ফিটনেসবিহীন গাড়ি ছিল, এর মধ্যে ২৫৭টি ঠিক করা হয়েছে। তবে এ তালিকা পূর্ণাঙ্গ আকারে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার তাগিদ রয়েছে বিআরটিএর। আগামী ৩০ মের মধ্যে ঢাকার সড়কে চলাচলকারী সব বাস-মিনিবাসের তালিকা ও মালিকদের নাম বিআরটিএ-তে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, রাস্তায় যেন রঙ ওঠা গাড়ি চলতে না পারে সে বিষয়ে ঈদুল ফিতরের পরে সমিতির জোনাল অফিসগুলো থেকে গাড়িগুলোর মনিটরিং বাড়ানো হবে। ভাঙাচোরা গাড়িগুলোর মালিকদের ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। তারপরেও কেউ সড়ক এসব বাস নামালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হবে।

তবে বাস মালিকদের দাবি, ঢাকার ৬০ শতাংশ বাস মালিকের আর্থিক সচ্ছলতা নেই যে দ্রুত সময়ের মধ্যে গাড়ি ঠিক করে রাস্তায় নামাবে। কেননা এইসব মালিকদের অধিকাংশ একটা দুইটা পুরানো বাস কিনেই মালিক হয়েছেন। এদের কেউ কেউ গাড়ির মেকানিক থেকে, কেউ আবার বাসচালক থেকে বাস মালিক হয়েছেন।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির হিসাব দেখিয়ে তারা বলেন, ঢাকার সড়কে এখন সাড়ে ৩ হাজার বাস-মিনিবাস যাত্রী পরিবহন করছে যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এখন পুরোপুরি ফিটনেস ঠিক করা পর্যন্ত যদি ১ থেকে দেড় হাজার গাড়ি যদি বসিয়ে রাখা হয় তবে নগরে গণপরিবহন সংকট তীব্র হবে। মালিকদেরও ১ থেকে দেড় লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি হবে।

এর আগে, গত রোববার (৩১ মার্চ) বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহনের কালো ধোঁয়া এবং উন্মুক্ত স্থানে নির্মাণ সামগ্রী না রাখা এবং বায়োম্যাস বর্জ্য পোড়ানো বন্ধের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছিলেন, বায়ু দূষণ রোধে ২০ বছরের বেশি পুরানো বাস রাজধানীতে চলতে দেওয়া হবে না।

মন্ত্রী নির্দেশ দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ৮ এপ্রিলের মধ্যে ঢাকা শহরে চলাচলকারী এরকম পুরনো বাসের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। আর পরিবহন মালিক সমিতি ২০ এপ্রিলের মধ্যে ২০ বছরের অধিক বয়সী বাস তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া পুরাতন যানবাহন পুরোপুরি নিয়ম মেনে স্ক্র্যাপ করতে হবে।


আরও খবর

তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা

বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪