মইনুল ইসলাম মিতুল : মেট্রোরেলের কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। ডিসেম্বরেরই শুরু হবে স্বপ্নের আরেক যাত্রার। প্রাথমিক লক্ষ্য উত্তরা থেকে আগারগাঁও। এরই মধ্যে ২০ কিলোমিটারের এই মেট্রোরেল নির্মাণকাজের প্রায় ৮৫ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে চালুর জন্য নির্ধারিত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশের কাজ ৯১ শতাংশ হয়েছে।
আসছে আগামী ১ অক্টোবর থেকে মেট্রোরেলের চূড়ান্ত পারফর্মেন্স টেস্ট শুরু করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এরপর কয়েকদিন যাত্রীবিহীন চলাচল শেষেই শুরু হবে বাণিজ্যিক যাত্রা। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক চলাচলের সব ধাপ শেষ হবে। পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় চলাচলের জন্য বসানো হয়েছে নিজস্ব নেটওয়ার্কের লাইন। এতে লাইনে থাকা একটি ট্রেনের গতি বাড়লে সমান হারে বাড়বে অন্যটির গতিও। একই লাইনে থাকলেও দুটি ট্রেনের একটি আরেকটিকে ধাক্কা দেবে না বা ঘটবে না সংঘর্ষ।
এদিকে, আগামী বছরের মার্চের মধ্যে দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে মেট্রোরেল চালু করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ হচ্ছে। ট্রেনগুলোর ট্রায়াল ও অন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হতে এই সময় লাগবে। স্টেশনে ওঠানামার সিঁড়ি, চলন্ত সিঁড়ি বা এস্কেলেটর এবং লিফট বসানোর কাজ এখনও শুরু হয়নি। বেশিরভাগ স্টেশনেরই এ অবস্থা।
কর্তৃপক্ষ বলছে দুটি ট্রেনের সর্বনিন্ম দূরত্ব হবে ২৫০ মিটার স্বয়ংক্রিয় চলাচলে একটির গতি বাড়লে আরেকটিও বাড়বে। ঠিক একই অবস্থা হবে গতি কমলেও। তাই একটি ট্রেনকে অপরটি ধাক্কা দেবে এমন ঘটনা ঘটবে না। থাকবে না দুটি ট্রেনের সামনাসামনি সংঘর্ষের শঙ্কা। আর এ সবই নিয়ন্ত্রণ করবে অটোমেটিক প্রটেকশন পদ্ধতি যা নিয়ন্ত্রণে বসানো হয়েছে নিজেস্ব নেটওয়ার্ক সিস্টেম।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে হবে, এটি দূর নিয়ন্ত্রিত হবে, ওয়াইফাই, জি ফাইভ সংযুক্ত হয়ে এটি চলবে। এটির দুটি টেস্ট আমরা করে ফেলেছি, আরও বেশকিছু টেস্ট বাকি আছে। আমরা যে দুটি টেস্ট করেছে সেটি হচ্ছে অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন। যে ট্রেনটি এখন অটোমেটিক চলাচল করতে পারে কি না। এই প্রক্রিয়া শেষে অক্টোবরের প্রথম দিনেই শুরু হচ্ছে ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট। মাসখানেক এ পরীক্ষামূলক চলাচলের পরেই শুরু করা যাবে বাণিজ্যিক যাত্রা।
এম এ এন ছিদ্দিক আরো বলেন, আগামী অক্টোবর মাসে যাত্রা আমরা শুরু করতে চাচ্ছি। এটি হলো ইন্টিগ্রেটেট টেস্ট, এটির পরে যাত্রী পারাপারে সেই রানটি আমরা করবো। তারপর আমরা বাণিজ্যিক চলাচলের দিকে যাবো। এ ছাড়া যে কোন অনাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে থাকবে ম্যান্যুয়াল পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা।
এদিকে, মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য ৯ ধরনের বিশেষায়িত যন্ত্র আমদানি করা হচ্ছে। এ ধরনের যন্ত্রপাতি এর আগে বাংলাদেশে আমদানি হয়নি। ফলে এসব যন্ত্রপাতি আমদানির এইচএস কোডও নেই। এ অবস্থায় মেট্রোরেলের এই নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি আমদানিতে নতুন এইচএস কোড নির্ধারণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আবেদন করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এনবিআর এখন এইচএস কোড নির্ধারণের কাজ করছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্ল্যাটফর্মের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি আমদানি করা হচ্ছে এর মধ্যে রয়েছে- টিকিট অফিস মেশিন বা টম, টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, কার্ড ইনিশিয়ালাইজিং ডিভাইস, ওয়েসাইড রেডিও সেট, স্বয়ংক্রিয় গেট বা প্যাসেঞ্জার গেট, এডিও এক্সিট এন্ট্রান্স ডোর ফর ড্রাইভার, প্ল্যাটফর্ম অ্যান্ড ডোর (পিইডি), প্ল্যাটফর্ম স্কিন ডোর ও বেলাইজ এনকোডার। এনবিআর এসব পণ্যের জন্য এইচএস কোড নির্ধারণ করে দেওয়ার পর ডিএমটিসিএল আমদানির এলসি খুলবে।