মিঠাপুকুর প্রতিনিধি ঃ
রংপুরের মিঠাপুকুরে মীমাংসায় বাধ্য করতে অপহরণ মামলার হুমকির অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৮ অক্টোবর উপজেলার ভাংনী দক্ষিণপাড়া মাটিয়াখোলা গ্রামের শরিফুল ইসলামের বাড়িতে রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ টার সময় প্রতিবেশী রুবেল মিয়া ও আলমগীর হোসেন জুস ও জিলাপির সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে শরিফুলের মা শাহিদা বেগম ও ছেলে আরাফাত ইসলাম(৪) কে খাওয়ায়। শরিফুলের স্ত্রী আদুরি আক্তারকে অনেক চেষ্টা করেও জুস খাওয়াইতে ব্যর্থ হয় ।
পরবর্তীতে শরিফুলের মা ও স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়লে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে শিং দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে রুবেল,আলমগীর ও অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনসহ ওয়ার ড্রপের ভিতরে থাকা জমি ক্রয়ের উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত ৬ লাখ টাকা চুরি করে নেয় ।এসময় ড্রয়ারের শব্দে গৃহবধূ আদুরির ঘুম ভেঙে গেলে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। তার চিৎকারে দেবর আরিফুল ইসলাম ছুটে আসলে দুষ্কৃতকারীরা কৌশলে পালিয়ে যায়।
এঘটনায় ভুক্তভোগী শরিফুল বাদী হয়ে ৯ অক্টোবর মিঠাপুকুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ১০ অক্টোবর মিঠাপুকুর থানায় একটি এজাহার দায়ের করে শরিফুল।
এদিকে এজাহার দায়েরের সময় মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ ভুক্তভোগীকে জানান, পূজার ডিউটি নিয়ে আমরা খুবই ব্যস্ত। এসময় এর চেয়ে বড় কোন ক্ষতি হলেও আপনার জন্য কিছু করতে পারবো নাহ। পূজার পর ১৪ অক্টোবর এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ১৪ অক্টোবর ভুক্তভোগী যোগাযোগ করলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজিবুর পুনরায় আরেকটি এজাহার থানার মুন্সির সামনে স্বাক্ষরের পর জমা নিয়ে জানায় রাতেই মামলা হবে। ১৫ অক্টোবর সকালে পুনরায় থানায় ডেকে আবারো এজাহারের ফন্টে সমস্যার কথা বলে নতুন করে স্বাক্ষর নিয়ে আরেকটি এজাহার জমা নিয়ে মামলা একটু পরেই হবে বলে জানায় এসআই নাজিবুর। এদিকে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে অভিযুক্ত রুবেলকে ঢাকার সাভারে ভুক্তভোগী শরিফুল কিডনাপ করে মুক্তিপণের দাবি করেছে বলে অভিযোগ তোলে বিবাদী রুবেলের পিতা লালচাঁদ।
বিবাদীর কিডনাপের অভিযোগের পরেই ১৫ অক্টোবর রাতে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বিষয়টি মীমাংসার আদেশ দেন। অন্যথায় দুই পক্ষের মামলাই গ্রহণ করবেন বলে ভুক্তভোগী শরিফুলকে হুমকি প্রদান করেন।
ভুক্তভোগী শরিফুল জানান, আমার মাকে ও সন্তানকে চেতনানাশক খাইয়ে জমি ক্রয়ের জন্য সঞ্চয় করা ৬ লাখ টাকা চুরি করলো। আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করলো। এখন পুলিশ বলতেছে আমার টাকা হারায়নি।আমি নাকি উল্টা কিডনাপ করছি আসামিকে। আমার অভিযোগ সত্য নাহলে আমাকে মামলা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে গত সাতদিনের মধ্যে ৩ দিনে ৩ বার এজাহার জমা নেয়া কেন হলো ? আসামিরা এলাকায় বলে বেড়াচ্ছে ওরা থানা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করছে। মামলা হলে আমার নামেই হবে। ঢাকার সাভারের কিডনাপের ঘটনা উল্লেখ করে মিঠাপুকুর থানা পুলিশের উল্টো আমার নামে মামলা করার হুমকি প্রমাণ করে এখানে ঘুষের লেনদেন হয়েছে।
মিঠাপুকুর থানার এসআই নাজিবুর জানান, জুস খাওয়ানোর কথাটি সত্য হলেও টাকা চুরির বিষয়টি মিথ্যা বলে মনে হয়েছে। অপরদিকে বিবাদীদের করা অপহরণের অভিযোগটিও মিথ্যা। ওসি স্যার বলেছেন দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দিতে। টাকা চুরির বিষয়টি মিথ্যা হলে জুসের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে কেন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যকে খাওয়ানো হলো ও বিবাদী তার মুঠোফোন ঘটনাস্থলে রেখে কেন পালালো?এই প্রশ্নের কোন জবাব পাওয়া যায়নি পুলিশের এই কর্মকর্তার কাছে।
এবিষয়ে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ মুঠোফোনে জানান, দুই পক্ষ থেকে দুটি অভিযোগ এসেছে। ভুক্তভোগী শরিফুলের দায়ের করা অভিযোগে বিবাদীদের বিরুদ্ধে জুস খাওয়ানোর অভিযোগ সত্য হলেও ৬ লাখ টাকা চুরির বিষয়টি মিথ্যা। আমি দুইপক্ষের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়ার জন্য বলেছি। বাদী শরিফুলের টাকা চুরির অভিযোগ মিথ্যা হলে বিষয়টি তদন্তের পর মামলা গ্রহণের কেন আশ্বাস দেয়া হলো ও এক সপ্তাহ পরে শরিফুলের বিরুদ্ধে ঢাকার কিডনাপের ঘটনায় বিবাদীদের করা অভিযোগ মিঠাপুকুর থানায় গ্রহণ করে বাদী শরিফুলকে উল্টো অপহরণ মামলার হুমকি থানা পুলিশের বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহণ করার অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণ করে কিনা এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন শেষ করার আগেই মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ।